বেবী জামানের প্রতি শ্রদ্ধা by সৌমিক হাসান
চলে গেলেন বেবী জামান। চলচ্চিত্র অভিনেতা বেবী জামান ২৫ জানুয়ারি পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। চলচ্চিত্র-দর্শকদের কাছে তিনি যুগের পর যুগ থাকবেন সেলুলয়েডের মাধ্যমে।
দেশীয় চলচ্চিত্রের একসময়কার জনপ্রিয় এই অভিনেতা দীর্ঘ তিন দশকে প্রায় ৫০টির মতো ছবিতে অভিনয় করে দর্শকনন্দিত হয়েছেন। চলচ্চিত্রকে পেশা হিসেবে না নিলেও এর প্রতি ছিল তাঁর অন্য রকম এক ভালোবাসা। চলচ্চিত্রে বেবী জামান নামে পরিচিত হলেও পৈতৃক নাম চৌধুরী বদরুজ্জামান। জন্ম ২৮ জানুয়ারি ১৯৩৩ সালে, পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলায়। একই গ্রামে জন্মেছিলেন এই দেশের স্বনামধন্য চলচ্চিত্র অভিনেতা শওকত আকবর ও হাসান ইমাম।
বাবা চৌধুরী আজফার হোসেন ছিলেন একজন আইনজীবী। বেবী জামান বর্ধমান টাউন হল স্কুলে লেখাপড়া করেন। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। ১৯৫০ সালে দাঙ্গার সময় ১৮ বছর বয়সে ঢাকায় আসেন। বড় ভাই চৌধুরী কামারুজ্জামান খুলনায় বসবাস শুরু করেন। বেবী জামান ঢাকায় এসে অনেকের পরামর্শে ইপিআরে যোগ দিতে গেলে গড়নে ছোটখাটো বলে ইপিআরের ড্রামবাদক হিসেবে সুরকার মালিক মনসুরের সঙ্গে কাজ শুরু করেন। কিছুদিন ইপিআরে কাজ করার পর কেমিক্যাল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন। ছোট দুই ভাই চৌধুরী মনিরুজ্জামান ও চৌধুরী আনিসুজ্জামান ব্যবসা শুরু করেন ঢাকায়। একসময় বাবা-মাসহ সবাই ঢাকায় স্থায়ী হন। ১০ নম্বর পাটুয়াটুলী লেনে বেবী কেমিক্যাল নামে কেমিক্যাল ব্যবসার পাশাপাশি নাটক-সিনেমার লোকদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। কাজী খালেক, আকতার হোসেন, বুলবুল আহমেদ, শওকত আকবর, হাসান ইমামদের সঙ্গে ঢাকায় বিভিন্ন মঞ্চনাটকে অভিনয় করতেন। ১৯৬৩ সালে কাজী খালেকের পরিচালনায় প্রথম মেঘ ভাঙ্গা রোদ ছবিতে অভিনয় শুরু করলেও বেবী জামান অভিনীত প্রথম ছবি হিসেবে মুক্তি পায় সুভাষ দত্ত পরিচালিত সুতরাং। এরপর ষাটের দশকের মাঝামাঝি থেকে স্বাধীনতা-পরবর্তী আশির দশক পর্যন্ত আমাদের দেশের খ্যাতিমান বেশির ভাগ পরিচালকের ছবিতে কাজ করেন। ১৯৬২ সালে মামাতো বোন রওশন আরা মিনাকে বিয়ে করেন। ১৯৬৭ সালে বড় ছেলে চৌধুরী সাইদুজ্জামান, ১৯৬৮ সালে ছোট ছেলে চৌধুরী মাহামুদুজ্জামান এবং ১৯৭২ সালে একমাত্র মেয়ে শারমিন জামানের জন্ম হয়।
১৯৭৬ সালের জানুয়ারি থেকে লালমাটিয়ার সি ব্লকে বাড়ি নির্মাণ করে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকেন। এই বাড়িতে একসময় বেশ আড্ডা ছিল চলচ্চিত্রের মানুষদের। বেবী জামান ব্যক্তিজীবনে একজন সদালাপি, হাসিখুশি, প্রাণচঞ্চল মানুষ ছিলেন। অনেকের অনুরোধে ছবিতে অভিনয় করলেও সম্মানী হিসেবে যে যা দিয়েছেন, তা-ই নিয়েছেন হাসিমুখে। চলচ্চিত্রকে বেবী জামান ভালোবাসতেন বলেই প্রযোজনা করেছেন যাহা বলিব সত্য বলিব, অপবাদ, রাজার হলো সাজা ও মোহনা ছবি।
শারীরিক অসুস্থতা এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের হারিয়ে কিছুটা একা হয়ে যান জীবনের শেষ দিকে। চলচ্চিত্রে খান জয়নুল, আলতাফ, মঞ্জুর হোসেনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল খুবই নিবিড়। নায়ক রাজ্জাক তাঁর কাছের একজন ছিলেন। চরিত্রাভিনেতা হিসেবে বেশ কিছু ছবিতে অসাধারণ অভিনয় করেছেন বেবী জামান। নায়ক বা খলনায়ক কোনোটাই হওয়ার ইচ্ছে ছিল না, শুধু একজন অভিনেতা হতে চেয়েছেন। হয়েছেনও তাই, একজন দর্শকপ্রিয় পরিশীলিত অভিনেতা।
বেবী জামান অভিনীত কিছু চলচ্চিত্র
সুতরাং (১৯৬৪), মেঘ ভাঙ্গা রোদ (১৯৬৪), রহিম বাদশাহ ও রূপবান (১৯৬৬), ১৩ নং ফেকু ওস্তাগার লেন (১৯৬৬), কাগজের নৌকা (১৯৬৬), আগুন নিয়ে খেলা (১৯৬৭), হীরামন (১৯৬৭), আয়না ও অবশিষ্ট (১৯৬৭), আনোয়ারা (১৯৬৭), মনের মত বউ (১৯৬৯), বেদের মেয়ে (১৯৬৯),জীবন থেকে নেয়া (১৯৭০), পীচ ঢালা পথ (১৯৭০), টাকা আনা পাই (১৯৭০), জীবন নিয়ে জুয়া (১৯৭৫), জাল থেকে জ্বালা (১৯৭৬), অচেনা অতিথি (১৯৭৮), দুটি মন দুটি আশা (১৯৭৯), দেনা পাওনা (১৯৮১), বাসরঘর (১৯৮৩), শিরি ফরহাদ (১৯৮৬), রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত (১৯৮৭), নতিজা (১৯৯৪)।
বাবা চৌধুরী আজফার হোসেন ছিলেন একজন আইনজীবী। বেবী জামান বর্ধমান টাউন হল স্কুলে লেখাপড়া করেন। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। ১৯৫০ সালে দাঙ্গার সময় ১৮ বছর বয়সে ঢাকায় আসেন। বড় ভাই চৌধুরী কামারুজ্জামান খুলনায় বসবাস শুরু করেন। বেবী জামান ঢাকায় এসে অনেকের পরামর্শে ইপিআরে যোগ দিতে গেলে গড়নে ছোটখাটো বলে ইপিআরের ড্রামবাদক হিসেবে সুরকার মালিক মনসুরের সঙ্গে কাজ শুরু করেন। কিছুদিন ইপিআরে কাজ করার পর কেমিক্যাল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন। ছোট দুই ভাই চৌধুরী মনিরুজ্জামান ও চৌধুরী আনিসুজ্জামান ব্যবসা শুরু করেন ঢাকায়। একসময় বাবা-মাসহ সবাই ঢাকায় স্থায়ী হন। ১০ নম্বর পাটুয়াটুলী লেনে বেবী কেমিক্যাল নামে কেমিক্যাল ব্যবসার পাশাপাশি নাটক-সিনেমার লোকদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। কাজী খালেক, আকতার হোসেন, বুলবুল আহমেদ, শওকত আকবর, হাসান ইমামদের সঙ্গে ঢাকায় বিভিন্ন মঞ্চনাটকে অভিনয় করতেন। ১৯৬৩ সালে কাজী খালেকের পরিচালনায় প্রথম মেঘ ভাঙ্গা রোদ ছবিতে অভিনয় শুরু করলেও বেবী জামান অভিনীত প্রথম ছবি হিসেবে মুক্তি পায় সুভাষ দত্ত পরিচালিত সুতরাং। এরপর ষাটের দশকের মাঝামাঝি থেকে স্বাধীনতা-পরবর্তী আশির দশক পর্যন্ত আমাদের দেশের খ্যাতিমান বেশির ভাগ পরিচালকের ছবিতে কাজ করেন। ১৯৬২ সালে মামাতো বোন রওশন আরা মিনাকে বিয়ে করেন। ১৯৬৭ সালে বড় ছেলে চৌধুরী সাইদুজ্জামান, ১৯৬৮ সালে ছোট ছেলে চৌধুরী মাহামুদুজ্জামান এবং ১৯৭২ সালে একমাত্র মেয়ে শারমিন জামানের জন্ম হয়।
১৯৭৬ সালের জানুয়ারি থেকে লালমাটিয়ার সি ব্লকে বাড়ি নির্মাণ করে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকেন। এই বাড়িতে একসময় বেশ আড্ডা ছিল চলচ্চিত্রের মানুষদের। বেবী জামান ব্যক্তিজীবনে একজন সদালাপি, হাসিখুশি, প্রাণচঞ্চল মানুষ ছিলেন। অনেকের অনুরোধে ছবিতে অভিনয় করলেও সম্মানী হিসেবে যে যা দিয়েছেন, তা-ই নিয়েছেন হাসিমুখে। চলচ্চিত্রকে বেবী জামান ভালোবাসতেন বলেই প্রযোজনা করেছেন যাহা বলিব সত্য বলিব, অপবাদ, রাজার হলো সাজা ও মোহনা ছবি।
শারীরিক অসুস্থতা এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের হারিয়ে কিছুটা একা হয়ে যান জীবনের শেষ দিকে। চলচ্চিত্রে খান জয়নুল, আলতাফ, মঞ্জুর হোসেনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল খুবই নিবিড়। নায়ক রাজ্জাক তাঁর কাছের একজন ছিলেন। চরিত্রাভিনেতা হিসেবে বেশ কিছু ছবিতে অসাধারণ অভিনয় করেছেন বেবী জামান। নায়ক বা খলনায়ক কোনোটাই হওয়ার ইচ্ছে ছিল না, শুধু একজন অভিনেতা হতে চেয়েছেন। হয়েছেনও তাই, একজন দর্শকপ্রিয় পরিশীলিত অভিনেতা।
বেবী জামান অভিনীত কিছু চলচ্চিত্র
সুতরাং (১৯৬৪), মেঘ ভাঙ্গা রোদ (১৯৬৪), রহিম বাদশাহ ও রূপবান (১৯৬৬), ১৩ নং ফেকু ওস্তাগার লেন (১৯৬৬), কাগজের নৌকা (১৯৬৬), আগুন নিয়ে খেলা (১৯৬৭), হীরামন (১৯৬৭), আয়না ও অবশিষ্ট (১৯৬৭), আনোয়ারা (১৯৬৭), মনের মত বউ (১৯৬৯), বেদের মেয়ে (১৯৬৯),জীবন থেকে নেয়া (১৯৭০), পীচ ঢালা পথ (১৯৭০), টাকা আনা পাই (১৯৭০), জীবন নিয়ে জুয়া (১৯৭৫), জাল থেকে জ্বালা (১৯৭৬), অচেনা অতিথি (১৯৭৮), দুটি মন দুটি আশা (১৯৭৯), দেনা পাওনা (১৯৮১), বাসরঘর (১৯৮৩), শিরি ফরহাদ (১৯৮৬), রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত (১৯৮৭), নতিজা (১৯৯৪)।
No comments