ঢাকা ও চট্টগ্রামে আধা বেলা, সারা দেশে পুরো দিন, বিএনপির সমর্থন- হরতাল ডেকেই তাণ্ডব শুরু!
সারা দেশে তাণ্ডবের এক দিন পর গতকাল বুধবার ঢাকায় সমাবেশ করার অনুমতি না দেওয়ায় আজ বৃহস্পতিবার সারা দেশে হরতাল ডেকেছে জামায়াতে ইসলামী। আবার চট্টগ্রামে পুলিশ অনুমতি দিলেও সমাবেশ করেনি দলটি।
ঢাকায় হরতালের ঘোষণা দেওয়ার দুই ঘণ্টার মধ্যেই রাস্তায় নেমে নির্বিচারে গাড়ি ভাঙচুর শুরু করেন জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। রাতে জামায়াতের এই হরতালে সমর্থন জানায় বিএনপি।
সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডাকলেও ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে তা হবে আধা বেলা। আধা বেলার ব্যাখ্যায় জামায়াত বলেছে, বেলা দুইটা পর্যন্ত হরতাল করবে তারা।
শিবিরের কেন্দ্রীয় দুই নেতাকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে গতকালও রাজশাহী, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও লক্ষ্মীপুরে আধা বেলা হরতাল পালন করে শিবির। এসব জায়গায় অন্তত ১৮টি যানবাহন ভাঙচুর করে তারা। আজকের হরতাল ঘোষণার পর বিকেল থেকে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন শহরে রাস্তায় টায়ারে আগুন দিয়ে যান চলাচলে বাধা, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করেন শিবিরের কর্মীরা।
তবে পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ গতকাল কিছুটা হলেও খণ্ডনের চেষ্টা দেখা গেছে। গতকাল সকাল থেকেই জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর সড়কে জামায়াতের সমাবেশ নিয়ে সতর্ক অবস্থায় ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন ছিল। ছিল জলকামান ও সাঁজোয়া যানের মহড়া। কিন্তু দুপুর ১২টার দিকে হরতালের ঘোষণা দিলে এই কড়া নিরাপত্তার মধ্যেই বিভিন্ন স্থানে শিবির ভাঙচুর শুরু করে। শহরে যান চলাচল কমে যায়। রাস্তায় বাস কমে যাওয়ায় সাধারণ মানুষকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
মূলত যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধ, আটক নেতাদের মুক্তির দাবিতে জামায়াত আন্দোলন করে আসছে। গত ৩ ডিসেম্বর বায়তুল মোকাররমের উত্তর ফটকে সমাবেশ করতে না দেওয়ায় ৪ ডিসেম্বর একবার হরতাল ডেকেছিল দলটি। ওই হরতালে মাঝরাতে ঘোষণা দিয়ে নৈতিক সমর্থন জানিয়েছিল বিএনপি। আর আজকের হরতালে গতকাল সন্ধ্যারাতেই নিজেদের পূর্ণ সমর্থনের কথা জানিয়ে দেয় দলটি।
বিএনপির সমন্বয়ক তরিকুল ইসলামের পক্ষে দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সাংবাদিকদের টেলিফোনে বলেন, বুধবার জামায়াতের পূর্বনির্ধারিত সমাবেশ ছিল। এর অনুমতি না দিয়ে সরকার রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করেছে। যেহেতু জামায়াত এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হরতাল ডেকেছে, তাই বিএনপি এই হরতালে সর্বাত্মক সমর্থন জানাচ্ছে। এদিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ জামায়াতের ‘ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ’ প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে। গতকাল দলের ঢাকা মহানগর কমিটির বর্ধিত সভায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, জামায়াত-শিবির যাতে কোনোভাবেই নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে না পারে, সে জন্য প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ হলে জামায়াতের দোসর বিএনপির রাজনীতিও দুর্বল হয়ে যাবে। এ জন্যই বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে মাঠে নেমেছে। মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী কোনো এলাকা থেকে জামায়াত-শিবির মিছিল বের করলে সেই এলাকার কমিটিকে সাংগঠনিকভাবে জবাবদিহি করতে হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন।
অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ: হরতাল ঘোষণার পরপরই বেলা দুইটার দিকে কমলাপুরে আইসিডির (ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো) সামনে জামায়াত-শিবিরের একদল কর্মী প্রাইভেট কারে ভাঙচুর চালান। তাঁরা আরও অন্তত ১০টি গাড়ি ভাঙচুর করেন। এ সময় রাস্তায় পেট্রল ঢেলে আগুন জ্বালানো হয়। কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। পুলিশ অবিস্ফোরিত দুটি ককটেল উদ্ধার করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রথমে আট থেকে দশটি কালো রঙের মোটরসাইকেলে করে ২০ জনের মতো যুবক কমলাপুর স্টেশনের সামনে দিয়ে সায়েদাবাদমুখী রাস্তাটির মোড়ে এসে থামেন। এঁদের মধ্যে একজন হুইসেল বাজানোর সঙ্গে সঙ্গে মোটরসাইকেলের পেছনে বসা যুবকেরা নেমে পড়েন এবং রাস্তার পাশে আগে থেকে রাখা ক্রিকেটের স্টাম্পসদৃশ লাঠি হাতে চলন্ত গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ভাঙচুর শুরু করেন। সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত এসব গাড়ির চালক ও যাত্রীরা গাড়ি ছেড়ে নেমে কোনোমতে আত্মরক্ষা করেন। কেউ কেউ লাঠি ও কাচের আঘাতে আহত হন। ঘটনাস্থলের পাওয়া ছবিতে দেখা গেছে, রাস্তার এক পাশে কিছু যুবক তাণ্ডব চালাচ্ছেন, আরেক পাশে অন্য যুবকেরা মোটরসাইকেল নিয়ে অপেক্ষা করছেন। তাঁদের একজন হুইসেল বাজালে সবাই আবার অপেক্ষমাণ চালকদের পেছনে বসে মোটরসাইকেলে করে চলে যান।
বেলা তিনটার দিকে পশ্চিম তেজতুরী বাজারের একটি গলি দিয়ে জামায়াত-শিবিরের একটি মিছিল কারওয়ান বাজারের প্রধান সড়কে আসে। সঙ্গে সঙ্গে সড়কের আশপাশে অবস্থান নেওয়া পুলিশ নিরাপদ দূরত্বে চলে যায়। শিবিরের কর্মীরা পান্থপথ হয়ে গ্রিন রোড ট্রাফিক মোড়ে গেলে ছাত্রলীগের কর্মীদের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষ হয়। এতে শিবিরের কয়েকজন কর্মী আহত হন।
বিকেল পাঁচটার দিকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দুটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। পুলিশ অবিস্ফোরিত অবস্থায় দুটি ককটেল উদ্ধার করে। এখান থেকে পুলিশ দুজনকে আটক করেছে।
পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে মগবাজার ওয়্যারলেস গেটে মতিঝিল-বনানী রুটের একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়া হয়। সেখানে দুটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
রাত সোয়া আটটার দিকে মিরপুর ১১ নম্বরে ঢাকা ব্যাংকের সামনে যাত্রীবাহী একটি বাসের পেছনে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। আগুন ছড়িয়ে পড়ার আগে সারা দিন কাজ করে ঘরে ফেরায় উদ্গ্রীব যাত্রীরা নেমে যান।
রাত সাড়ে আটটার দিকে মিরপুর ১০ নম্বরে, যাত্রাবাড়ী ও পুরান ঢাকার ইসলামবাগে তিনটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়া হয়। তবে এতে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
এ ছাড়া রাত পৌনে নয়টার দিকে টঙ্গী এলাকায় যাত্রীবাহী একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখা থেকে বলা হয়েছে, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জামায়াত-শিবিরের ৩৮ জন নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে। শিবিরের হামলায় পুলিশের এক সদস্য আহত হয়েছেন।
সব হরতাল ট্রাইব্যুনালকেন্দ্রিক: দলের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার যুক্তিতর্ক শেষ হওয়ার আগে আগে হরতাল ডাকে জামায়াত। ৬ ডিসেম্বর ওই মামলার যুক্তিতর্ক শেষ হলেও স্কাইপ আলোচনার কারণে সাময়িকভাবে থমকে যায় সাঈদীর মামলার রায়। আবার যুক্তিতর্ক শুরু করে গত মঙ্গলবার তা শেষ করেন ট্রাইব্যুনাল। এখন যেকোনো সময় এই মামলার রায় হতে পারে।
জামায়াতের আরেক নেতা আবদুল কাদের মোল্লার মামলাও রায়ের অপেক্ষায় আছে। আর যুদ্ধাপরাধের দায়ে এ দলেরই সাবেক নেতা আবুল কালাম আযাদের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
দুটি হরতালই ট্রাইব্যুনালের রায়কেন্দ্রিক কি না, জানতে চাইলে জামায়াতের ঢাকা মহানগর কমিটির সহকারী সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘রায়কে কেন্দ্র করে আমরা কর্মসূচি পালন করছি না। তবে আমরা মনে করি, এই ট্রাইব্যুনালের সবাই দলীয়। তাই এটি ভেঙে দেওয়াই আমাদের দাবি।’
দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান এক বিবৃতিতে জানান, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির অনুরোধে ঢাকায় এবং বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষের (বিপিএল) অনুরোধে চট্টগ্রাম মহানগর এলাকায় অর্ধদিবস হরতাল পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা গেছে, আজ বেলা সোয়া একটায় সমিতির বার্ষিক ভোজসভা। তাই সমিতির সভাপতি সংবাদ সম্মেলন করে হরতাল প্রত্যাহার বা তা আধা বেলা করার অনুরোধ জানান।
সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডাকলেও ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে তা হবে আধা বেলা। আধা বেলার ব্যাখ্যায় জামায়াত বলেছে, বেলা দুইটা পর্যন্ত হরতাল করবে তারা।
শিবিরের কেন্দ্রীয় দুই নেতাকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে গতকালও রাজশাহী, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও লক্ষ্মীপুরে আধা বেলা হরতাল পালন করে শিবির। এসব জায়গায় অন্তত ১৮টি যানবাহন ভাঙচুর করে তারা। আজকের হরতাল ঘোষণার পর বিকেল থেকে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন শহরে রাস্তায় টায়ারে আগুন দিয়ে যান চলাচলে বাধা, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করেন শিবিরের কর্মীরা।
তবে পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ গতকাল কিছুটা হলেও খণ্ডনের চেষ্টা দেখা গেছে। গতকাল সকাল থেকেই জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর সড়কে জামায়াতের সমাবেশ নিয়ে সতর্ক অবস্থায় ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন ছিল। ছিল জলকামান ও সাঁজোয়া যানের মহড়া। কিন্তু দুপুর ১২টার দিকে হরতালের ঘোষণা দিলে এই কড়া নিরাপত্তার মধ্যেই বিভিন্ন স্থানে শিবির ভাঙচুর শুরু করে। শহরে যান চলাচল কমে যায়। রাস্তায় বাস কমে যাওয়ায় সাধারণ মানুষকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
মূলত যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধ, আটক নেতাদের মুক্তির দাবিতে জামায়াত আন্দোলন করে আসছে। গত ৩ ডিসেম্বর বায়তুল মোকাররমের উত্তর ফটকে সমাবেশ করতে না দেওয়ায় ৪ ডিসেম্বর একবার হরতাল ডেকেছিল দলটি। ওই হরতালে মাঝরাতে ঘোষণা দিয়ে নৈতিক সমর্থন জানিয়েছিল বিএনপি। আর আজকের হরতালে গতকাল সন্ধ্যারাতেই নিজেদের পূর্ণ সমর্থনের কথা জানিয়ে দেয় দলটি।
বিএনপির সমন্বয়ক তরিকুল ইসলামের পক্ষে দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সাংবাদিকদের টেলিফোনে বলেন, বুধবার জামায়াতের পূর্বনির্ধারিত সমাবেশ ছিল। এর অনুমতি না দিয়ে সরকার রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করেছে। যেহেতু জামায়াত এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হরতাল ডেকেছে, তাই বিএনপি এই হরতালে সর্বাত্মক সমর্থন জানাচ্ছে। এদিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ জামায়াতের ‘ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ’ প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে। গতকাল দলের ঢাকা মহানগর কমিটির বর্ধিত সভায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, জামায়াত-শিবির যাতে কোনোভাবেই নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে না পারে, সে জন্য প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ হলে জামায়াতের দোসর বিএনপির রাজনীতিও দুর্বল হয়ে যাবে। এ জন্যই বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে মাঠে নেমেছে। মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী কোনো এলাকা থেকে জামায়াত-শিবির মিছিল বের করলে সেই এলাকার কমিটিকে সাংগঠনিকভাবে জবাবদিহি করতে হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন।
অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ: হরতাল ঘোষণার পরপরই বেলা দুইটার দিকে কমলাপুরে আইসিডির (ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো) সামনে জামায়াত-শিবিরের একদল কর্মী প্রাইভেট কারে ভাঙচুর চালান। তাঁরা আরও অন্তত ১০টি গাড়ি ভাঙচুর করেন। এ সময় রাস্তায় পেট্রল ঢেলে আগুন জ্বালানো হয়। কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। পুলিশ অবিস্ফোরিত দুটি ককটেল উদ্ধার করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রথমে আট থেকে দশটি কালো রঙের মোটরসাইকেলে করে ২০ জনের মতো যুবক কমলাপুর স্টেশনের সামনে দিয়ে সায়েদাবাদমুখী রাস্তাটির মোড়ে এসে থামেন। এঁদের মধ্যে একজন হুইসেল বাজানোর সঙ্গে সঙ্গে মোটরসাইকেলের পেছনে বসা যুবকেরা নেমে পড়েন এবং রাস্তার পাশে আগে থেকে রাখা ক্রিকেটের স্টাম্পসদৃশ লাঠি হাতে চলন্ত গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ভাঙচুর শুরু করেন। সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত এসব গাড়ির চালক ও যাত্রীরা গাড়ি ছেড়ে নেমে কোনোমতে আত্মরক্ষা করেন। কেউ কেউ লাঠি ও কাচের আঘাতে আহত হন। ঘটনাস্থলের পাওয়া ছবিতে দেখা গেছে, রাস্তার এক পাশে কিছু যুবক তাণ্ডব চালাচ্ছেন, আরেক পাশে অন্য যুবকেরা মোটরসাইকেল নিয়ে অপেক্ষা করছেন। তাঁদের একজন হুইসেল বাজালে সবাই আবার অপেক্ষমাণ চালকদের পেছনে বসে মোটরসাইকেলে করে চলে যান।
বেলা তিনটার দিকে পশ্চিম তেজতুরী বাজারের একটি গলি দিয়ে জামায়াত-শিবিরের একটি মিছিল কারওয়ান বাজারের প্রধান সড়কে আসে। সঙ্গে সঙ্গে সড়কের আশপাশে অবস্থান নেওয়া পুলিশ নিরাপদ দূরত্বে চলে যায়। শিবিরের কর্মীরা পান্থপথ হয়ে গ্রিন রোড ট্রাফিক মোড়ে গেলে ছাত্রলীগের কর্মীদের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষ হয়। এতে শিবিরের কয়েকজন কর্মী আহত হন।
বিকেল পাঁচটার দিকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দুটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। পুলিশ অবিস্ফোরিত অবস্থায় দুটি ককটেল উদ্ধার করে। এখান থেকে পুলিশ দুজনকে আটক করেছে।
পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে মগবাজার ওয়্যারলেস গেটে মতিঝিল-বনানী রুটের একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়া হয়। সেখানে দুটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
রাত সোয়া আটটার দিকে মিরপুর ১১ নম্বরে ঢাকা ব্যাংকের সামনে যাত্রীবাহী একটি বাসের পেছনে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। আগুন ছড়িয়ে পড়ার আগে সারা দিন কাজ করে ঘরে ফেরায় উদ্গ্রীব যাত্রীরা নেমে যান।
রাত সাড়ে আটটার দিকে মিরপুর ১০ নম্বরে, যাত্রাবাড়ী ও পুরান ঢাকার ইসলামবাগে তিনটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়া হয়। তবে এতে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
এ ছাড়া রাত পৌনে নয়টার দিকে টঙ্গী এলাকায় যাত্রীবাহী একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখা থেকে বলা হয়েছে, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জামায়াত-শিবিরের ৩৮ জন নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে। শিবিরের হামলায় পুলিশের এক সদস্য আহত হয়েছেন।
সব হরতাল ট্রাইব্যুনালকেন্দ্রিক: দলের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার যুক্তিতর্ক শেষ হওয়ার আগে আগে হরতাল ডাকে জামায়াত। ৬ ডিসেম্বর ওই মামলার যুক্তিতর্ক শেষ হলেও স্কাইপ আলোচনার কারণে সাময়িকভাবে থমকে যায় সাঈদীর মামলার রায়। আবার যুক্তিতর্ক শুরু করে গত মঙ্গলবার তা শেষ করেন ট্রাইব্যুনাল। এখন যেকোনো সময় এই মামলার রায় হতে পারে।
জামায়াতের আরেক নেতা আবদুল কাদের মোল্লার মামলাও রায়ের অপেক্ষায় আছে। আর যুদ্ধাপরাধের দায়ে এ দলেরই সাবেক নেতা আবুল কালাম আযাদের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
দুটি হরতালই ট্রাইব্যুনালের রায়কেন্দ্রিক কি না, জানতে চাইলে জামায়াতের ঢাকা মহানগর কমিটির সহকারী সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘রায়কে কেন্দ্র করে আমরা কর্মসূচি পালন করছি না। তবে আমরা মনে করি, এই ট্রাইব্যুনালের সবাই দলীয়। তাই এটি ভেঙে দেওয়াই আমাদের দাবি।’
দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান এক বিবৃতিতে জানান, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির অনুরোধে ঢাকায় এবং বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষের (বিপিএল) অনুরোধে চট্টগ্রাম মহানগর এলাকায় অর্ধদিবস হরতাল পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা গেছে, আজ বেলা সোয়া একটায় সমিতির বার্ষিক ভোজসভা। তাই সমিতির সভাপতি সংবাদ সম্মেলন করে হরতাল প্রত্যাহার বা তা আধা বেলা করার অনুরোধ জানান।
No comments