অভিমত- নিশিরাতের টকশো by মোহাম্মদ সায়েদুল বারী
সারা দিনের কর্মকান্তি শেষে মাগরিবের নামাজের পর বাসার দিকে রওনা হই। ফেরার সময়ই খেয়াল রাখি কখন সাতটা বাজবে।
সাতটা
থেকেই বিভিন্ন চ্যানেলের সংবাদগুলো অধীর আগ্রহে দেখতে থাকি। ঘটে যাওয়া
দেশ-বিদেশের সব খবরই অতি সহজেই মিডিয়ার বদৌলতে পাচ্ছি। রাত একটু বাড়তেই
শুরু হয় বিভিন্ন চ্যানেলের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান টকশো।
আমি বরাবরই টকশোর নিয়মিত দর্শক। টকশোতে ঘটে যাওয়া অনেক ঘটনা এবং দুর্ঘটনা আমি প্রত্যক্ষ করেছি। দু-একটি ঘটনা দেশে-বিদেশে অবস্থিত সব দর্শককেই ব্যথিত, বিব্রত ও হতভম্ভ করে। তা ছাড়া দীর্ঘ সময় চলে আসা টকশোগুলো আমাদের অজানাকে জানায়, অদেখাকে দেখায় এবং মন ও মননের খোরাক জোগায়। সব সময়ই আলোচনার বিষয়বস্তুতে একটা মান এবং ঘটনাপ্রবাহের প্রাসঙ্গিকতা বজায় থাকে।
অতিসম্প্রতি লক্ষ করছি যে বিষয় নিয়ে টকশো শুরু হচ্ছে সেই বিষয়ের ওপর বেশিক্ষণ আলোচনা হচ্ছে না, বিজ্ঞ আলোচকেরা সুকৌশলে মূল বিষয় থেকে বেরিয়ে অন্য একটি ইস্যুতে চলে যাচ্ছেন। অনেক সময় সঞ্চালক আলোচককে মূল বিষয়ে ফিরে আসতে সাহায্যও করছেন। তাতেও খুব একটা কাজ হচ্ছে না। আলোচনার বিষয়টাও ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রায় একই রাখা হচ্ছে। দীর্ঘ দিন একই বিষয়ের অবতারণা করতে গিয়ে লক্ষ করা যাচ্ছে, একই ঘরানার আলোচকেরা অনুষ্ঠানগুলোতে হাজির হচ্ছেন। একই স্টাইলে তাদের দীর্ঘ দিনের লালন করা মতাদর্শের ভিত্তিতে কথা বলছেন, যা সাধারণ দর্শকদের কাছে কাক্সিত মনে হচ্ছে না। সাধারণ দর্শকেরা তাদের আলোচনার সবটুকু নিচ্ছেন না।
আলোচকেরা তাদের কথোপকথনের মধ্যে নিরপেক্ষতা হারিয়ে ফেলছেন। বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের নাম ধরে যেভাবে নিজেদের বক্তব্য উপস্থাপন করছেন, তা মোটেও সমীচীন ও শোভন নয়। আলোচকেরা একই চিন্তাচেতনা ও মতাদর্শের হতে পারেন কিন্তু দেশে-বিদেশে অগণিত শ্রোতা-দর্শক যারা প্রতিনিয়ত টেলিফোনে প্রশ্ন করেন, তারা কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শের ধারক ও বাহক। আলোচকেরা যখনি ক্যামেরার সামনে আলোচনার টেবিলে কোনো বক্তব্য উপস্থাপন করেন, তখন এ কথা স্মরণে থাকা দরকার যেন তার বা তাদের বক্তব্য একপেশে বা একটি নির্দিষ্ট মতাদর্শের দর্শকদের কাছে উপভোগ্য হয়ে না ওঠে। রাত জেগে টকশো দেখা হয় অনেক প্রশ্নের সমাধান পাওয়ার জন্য। একপেশে বক্তব্য এ সময় কাক্সিত মনে করা হয় না। আলোচনা হতে হবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য এবং উপভোগ্য।
কাউকে ছোট করা বা কাউকে ওপরে ওঠানোর প্রবণতা দেখতে চাই না। দীর্ঘকাল ধরে রাজনীতিবিদদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি দেখতে দেখতে কান্ত, অবসন্ন ও ত্যক্তবিরক্ত হয়ে উঠছি।
টেলিভিশনের টকশোতেও যদি এভাবে রাজনীতিবিদদের মত নিজেদের ধারণকৃত মতাদর্শ অন্যের ওপর চাপাতে চান এবং নানা কটুবাক্য প্রয়োগ করেন তাহলে সাধারণ দর্শক হিসেবে চ্যানেলটি ঘুরিয়ে অন্যত্র যাওয়া ছাড়া আমাদের উপায় থাকে না। এখন তাই করছি। আকর্ষণীয় অনুষ্ঠানগুলো তাদের দর্শক হারাচ্ছে। কথার ফুলঝুরিতে বক্তারা টিকে থাকলেও দর্শকেরা তাদের সব কথা শুনতে ও মানতে বাধ্য নন। কাজেই দর্শক ধরে রাখতে হলে অনুষ্ঠানের কাক্সিত মান বজায় রাখতে হবে, সব শ্রেণীর মানুষের কাছে উপভোগ্য করে তুলতে হবে। কয়েক দিন আগে একটি চ্যানেলে সম্পাদকীয় শিরোনামের আলোচনা দেখছিলাম। দুই-চারজন ফোনেও প্রশ্ন রাখলেন, অনেক দিন আমিও ফোন করার চেষ্টা করেছি। সব সময়ই ব্যস্ত পাই। আমি দেখছি ফোনে কেউ কথা বলছেন না অথচ যতবারই ফোন দেই শুধু ব্যস্তই পাই। প্রতি রাতেই দেখি ঠিক বিজ্ঞাপনের বিরতিতে যাওয়ার আগে কোনো একজন দর্শক লাইনে থাকেন। তিনি সব সময়ই ওই একই মতাদর্শের প্রশ্ন করেন। ভিন্ন ধাঁচের প্রশ্নকর্তা পাওয়া যায় না। আমরা ফোন করলে লাইনটি ব্যস্ত দেখায়। এ থেকে আমরা কী বুঝতে পারি? ভিন্ন মত ও পথের কোনো আলোচক আনা হচ্ছে না। ভিন্ন ধাঁচের কোনো প্রশ্নকর্তার টেলিফোন আসতে পারে ভেবে লাইনগুলো তুলে রাখা হচ্ছে। একই ঘরানার আলোচক এনে যাচ্ছে তাই বলাচ্ছেন, আলোচনার মধ্য দিয়ে বক্তাদের রাজনৈতিক পরিচয় বেরিয়ে আসছে, তাদের দীর্ঘ দিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের প্রকাশ ঘটানো হচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন ডিসেম্বর মাসে অমুকদের কোনো কর্মসূচি থাকতে পারবে না অথচ তারা এই ডিসেম্বরে একটা সফল হরতাল করে ফেলল! কত বড় দুঃসাহস! আর এ দুঃসাহস জুগিয়েছে দেশের বৃহত্তর একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল ইত্যাদি।
কেউ বলবেন ডিসেম্বর মাস আমাদের, আবার কেউ বলবেন রমজান আমাদের। আসলে ১২টি মাসের কোনো একটি মাসও কারোর কাছে ইজারা দেয়া হয়নি। যেকোনো বৈধ রাজনৈতিক দলই যেকোনো গণতান্ত্রিক কর্মসূচি তাদের ইচ্ছানুযায়ী দেবে, তাতে আপত্তির কী আছে? এসব বিষয়ে অতিউৎসাহী বক্তব্য বিশেষ করে টকশোতে না দেয়াই ভালো।
অনেক অবান্তর বিষয়ের অবতারণা দেখছি, দেখছি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের আবদার, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার ব্যাপকভিত্তিক বিশ্লেষণ, কিন্তু দেখছি না, রাজনৈতিক কারণে নিষ্ঠুরভাবে মানুষ গুম, হলমার্ক, ডেসটিনি, পদ্মা সেতু এবং বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের মতো নারকীয় তাণ্ডবের ওপর দীর্ঘ আলোচনা।
তাহলে কেন আমরা একপেশে আলোচনা দেখার জন্য নিশিরাত পর্যন্ত জেগে থাকব?
আমি বরাবরই টকশোর নিয়মিত দর্শক। টকশোতে ঘটে যাওয়া অনেক ঘটনা এবং দুর্ঘটনা আমি প্রত্যক্ষ করেছি। দু-একটি ঘটনা দেশে-বিদেশে অবস্থিত সব দর্শককেই ব্যথিত, বিব্রত ও হতভম্ভ করে। তা ছাড়া দীর্ঘ সময় চলে আসা টকশোগুলো আমাদের অজানাকে জানায়, অদেখাকে দেখায় এবং মন ও মননের খোরাক জোগায়। সব সময়ই আলোচনার বিষয়বস্তুতে একটা মান এবং ঘটনাপ্রবাহের প্রাসঙ্গিকতা বজায় থাকে।
অতিসম্প্রতি লক্ষ করছি যে বিষয় নিয়ে টকশো শুরু হচ্ছে সেই বিষয়ের ওপর বেশিক্ষণ আলোচনা হচ্ছে না, বিজ্ঞ আলোচকেরা সুকৌশলে মূল বিষয় থেকে বেরিয়ে অন্য একটি ইস্যুতে চলে যাচ্ছেন। অনেক সময় সঞ্চালক আলোচককে মূল বিষয়ে ফিরে আসতে সাহায্যও করছেন। তাতেও খুব একটা কাজ হচ্ছে না। আলোচনার বিষয়টাও ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রায় একই রাখা হচ্ছে। দীর্ঘ দিন একই বিষয়ের অবতারণা করতে গিয়ে লক্ষ করা যাচ্ছে, একই ঘরানার আলোচকেরা অনুষ্ঠানগুলোতে হাজির হচ্ছেন। একই স্টাইলে তাদের দীর্ঘ দিনের লালন করা মতাদর্শের ভিত্তিতে কথা বলছেন, যা সাধারণ দর্শকদের কাছে কাক্সিত মনে হচ্ছে না। সাধারণ দর্শকেরা তাদের আলোচনার সবটুকু নিচ্ছেন না।
আলোচকেরা তাদের কথোপকথনের মধ্যে নিরপেক্ষতা হারিয়ে ফেলছেন। বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের নাম ধরে যেভাবে নিজেদের বক্তব্য উপস্থাপন করছেন, তা মোটেও সমীচীন ও শোভন নয়। আলোচকেরা একই চিন্তাচেতনা ও মতাদর্শের হতে পারেন কিন্তু দেশে-বিদেশে অগণিত শ্রোতা-দর্শক যারা প্রতিনিয়ত টেলিফোনে প্রশ্ন করেন, তারা কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শের ধারক ও বাহক। আলোচকেরা যখনি ক্যামেরার সামনে আলোচনার টেবিলে কোনো বক্তব্য উপস্থাপন করেন, তখন এ কথা স্মরণে থাকা দরকার যেন তার বা তাদের বক্তব্য একপেশে বা একটি নির্দিষ্ট মতাদর্শের দর্শকদের কাছে উপভোগ্য হয়ে না ওঠে। রাত জেগে টকশো দেখা হয় অনেক প্রশ্নের সমাধান পাওয়ার জন্য। একপেশে বক্তব্য এ সময় কাক্সিত মনে করা হয় না। আলোচনা হতে হবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য এবং উপভোগ্য।
কাউকে ছোট করা বা কাউকে ওপরে ওঠানোর প্রবণতা দেখতে চাই না। দীর্ঘকাল ধরে রাজনীতিবিদদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি দেখতে দেখতে কান্ত, অবসন্ন ও ত্যক্তবিরক্ত হয়ে উঠছি।
টেলিভিশনের টকশোতেও যদি এভাবে রাজনীতিবিদদের মত নিজেদের ধারণকৃত মতাদর্শ অন্যের ওপর চাপাতে চান এবং নানা কটুবাক্য প্রয়োগ করেন তাহলে সাধারণ দর্শক হিসেবে চ্যানেলটি ঘুরিয়ে অন্যত্র যাওয়া ছাড়া আমাদের উপায় থাকে না। এখন তাই করছি। আকর্ষণীয় অনুষ্ঠানগুলো তাদের দর্শক হারাচ্ছে। কথার ফুলঝুরিতে বক্তারা টিকে থাকলেও দর্শকেরা তাদের সব কথা শুনতে ও মানতে বাধ্য নন। কাজেই দর্শক ধরে রাখতে হলে অনুষ্ঠানের কাক্সিত মান বজায় রাখতে হবে, সব শ্রেণীর মানুষের কাছে উপভোগ্য করে তুলতে হবে। কয়েক দিন আগে একটি চ্যানেলে সম্পাদকীয় শিরোনামের আলোচনা দেখছিলাম। দুই-চারজন ফোনেও প্রশ্ন রাখলেন, অনেক দিন আমিও ফোন করার চেষ্টা করেছি। সব সময়ই ব্যস্ত পাই। আমি দেখছি ফোনে কেউ কথা বলছেন না অথচ যতবারই ফোন দেই শুধু ব্যস্তই পাই। প্রতি রাতেই দেখি ঠিক বিজ্ঞাপনের বিরতিতে যাওয়ার আগে কোনো একজন দর্শক লাইনে থাকেন। তিনি সব সময়ই ওই একই মতাদর্শের প্রশ্ন করেন। ভিন্ন ধাঁচের প্রশ্নকর্তা পাওয়া যায় না। আমরা ফোন করলে লাইনটি ব্যস্ত দেখায়। এ থেকে আমরা কী বুঝতে পারি? ভিন্ন মত ও পথের কোনো আলোচক আনা হচ্ছে না। ভিন্ন ধাঁচের কোনো প্রশ্নকর্তার টেলিফোন আসতে পারে ভেবে লাইনগুলো তুলে রাখা হচ্ছে। একই ঘরানার আলোচক এনে যাচ্ছে তাই বলাচ্ছেন, আলোচনার মধ্য দিয়ে বক্তাদের রাজনৈতিক পরিচয় বেরিয়ে আসছে, তাদের দীর্ঘ দিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের প্রকাশ ঘটানো হচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন ডিসেম্বর মাসে অমুকদের কোনো কর্মসূচি থাকতে পারবে না অথচ তারা এই ডিসেম্বরে একটা সফল হরতাল করে ফেলল! কত বড় দুঃসাহস! আর এ দুঃসাহস জুগিয়েছে দেশের বৃহত্তর একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল ইত্যাদি।
কেউ বলবেন ডিসেম্বর মাস আমাদের, আবার কেউ বলবেন রমজান আমাদের। আসলে ১২টি মাসের কোনো একটি মাসও কারোর কাছে ইজারা দেয়া হয়নি। যেকোনো বৈধ রাজনৈতিক দলই যেকোনো গণতান্ত্রিক কর্মসূচি তাদের ইচ্ছানুযায়ী দেবে, তাতে আপত্তির কী আছে? এসব বিষয়ে অতিউৎসাহী বক্তব্য বিশেষ করে টকশোতে না দেয়াই ভালো।
অনেক অবান্তর বিষয়ের অবতারণা দেখছি, দেখছি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের আবদার, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার ব্যাপকভিত্তিক বিশ্লেষণ, কিন্তু দেখছি না, রাজনৈতিক কারণে নিষ্ঠুরভাবে মানুষ গুম, হলমার্ক, ডেসটিনি, পদ্মা সেতু এবং বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের মতো নারকীয় তাণ্ডবের ওপর দীর্ঘ আলোচনা।
তাহলে কেন আমরা একপেশে আলোচনা দেখার জন্য নিশিরাত পর্যন্ত জেগে থাকব?
No comments