শেয়ারবাজারের উর্ধ গতি থেমে যাওয়ায় হত্যার হুমকি- শীর্ষ কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়ে হুমকি
পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) শীর্ষ কর্মকর্তাদের হত্যার হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে একটি চক্র।
চিঠিতে শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে গৃহিত সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার করা না হলে ওই কর্মকর্তাদের হত্যা করা হবে বলে জানানো হয়েছে। কমিশনের চেয়ারম্যান জিয়াউল হক খন্দকার, সদস্য মনসুর আলম, ইয়াসিন আলী, নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ারুল কবীর ভুঁইয়া এবং ডিএসই সভাপতি রকিবুর রহমানের নামে পৃথক খামে একই বক্তব্য সংবলিত চিঠির ফটোকপি পাঠানো হয়েছে। সোমবার দুপুরে ডাকযোগে এসইসি ও ডিএসই কর্মকর্তাদের কাছে চিঠিগুলো পৌঁছে। এ বিষয়ে মতিঝিল থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।প্রেরকের নাম-ঠিকানাবিহীন হাতে লেখা চিঠিতে এসইসি'র সাম্প্রতিক কিছু সিদ্ধানত্মের বিষয়ে ৰোভ প্রকাশ করে বলা হয়, 'ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ইতিহাসে গুলি খেয়ে এখনও মানুষ মরে নাই। তোদেরকে এবং তোদের পরিবারের সদস্যদের গুলি করে নিশ্চিহ্ন করে দিতে আমরা সিদ্ধানত্ম নিয়েছি। .... একজনকে গুলি করে মারলেই বাকিরা সোজা হয়ে যাবি। মার্কেট ও মার্কেটের নিয়ম-কানুন ভাল কর। আর না হয় আগামী ৪৮ ঘণ্টার পর থেকে তোদের মৃতু্যদ- কার্যকর করতে আমরাও সিদ্ধানত্ম নিলাম। আমরা লস দিতে রাজি না।' বেনামি এই চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে এসইসি'র মুখপাত্রের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী পরিচালক আনোয়ারম্নল কবীর ভুঁইয়া জনকণ্ঠকে বলেন, লোকসানের ঝুঁকির বিষয়টি মাথায় রেখেই শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে হয়। অনেকে এই সত্যটি মনে রাখেন না। তারা শুধু লাভের আশা করেন। কিন্তু শেয়ারবাজারে যেমন উত্থান আছে, তেমনি যে কোনও সময় বাজার সংশোধনও স্বাভাবিক। এৰেত্রে এসইসি'র কোনও ভূমিকা নেই। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে বাজারকে স্থিতিশীল রাখা এবং সব রকম কারসাজির বিরম্নদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াই এসইসি'র কাজ। সম্প্রতি কমিশন যেসব নির্দেশনা দিয়েছে_ তার সবটাই বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রৰার জন্য। হত্যার হুমকির চিঠি পাওয়ার পর ডিএসই'র মহাব্যবস্থাপক ও সচিব শেখ মোহাম্মদউলস্নাহ বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। এসইসি'র পৰ থেকেও আজ (মঙ্গলবার) জিডি করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
গত কিছুদিন ধরে দেশের শেয়ারবাজারে 'অস্বাভাবিক' উর্ধমুখী প্রবণতা তৈরি হয়েছিল। বিপুল পরিমাণ নতুন বিনিয়োগ যুক্ত হওয়ায় অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দর ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। বাজারে উলেস্নখযোগ্যসংখ্যক শেয়ার অতি মূল্যায়িত হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় বড় ধরনের অস্থিতিশীলতা এড়াতে এসইসি'র পৰ থেকে বেশ কিছু পদৰেপ নেয়া হয়। মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসের মার্জিনের ঋণ প্রদানের ৰমতা কমিয়ে ১ঃ১ করা হয়। এছাড়া কোনও কোম্পানির শেয়ারের দর ও আয়ের (পিই) অনুপাত ৫০-এর বেশি হলে ওই শেয়ারের বিপরীতে মার্জিন ঋণ প্রদান বন্ধ করা হয়। এছাড়া গ্রামীণফোনের শেয়ার লেনদেনে আর্থিক সমন্বয় (ফাইন্যান্সিয়াল নেটিং) সুবিধা বন্ধ করা হয়। এছাড়া গ্রামীনফোন ও ম্যারিকোর লেনদেন নগদ টাকায় সম্পন্ন করার জন্য স্পট মার্কেটে পাঠানো হয়। সর্বশেষ এসইসি'র অনুমোদনের আগেই বোনাস ও রাইট শেয়ার প্রদানের সিদ্ধানত্ম ঘোষণা করায় অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধি এড়াতে এইমস ফার্স্ট মিউচু্যয়াল ফান্ডের লেনদেন স্থগিত করা হয়।
শেয়ারবাজারের দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতার জন্য এসইসি'র সিদ্ধানত্মগুলো বিশেস্নষকরা ইতিবাচক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। কিন্তু এসব সিদ্ধানত্মের কারণে ৰতিগ্রসত্ম অনেক সাধারণ বিনিয়োগকারীও ৰোভ প্রকাশ করেছেন। তবে সবচেয়ে বেশি ৰুব্ধ হয়েছে শেয়ারবাজারে সক্রিয় একাধিক জুয়াড়ি চক্র। এই চক্রের সদস্যরাই বাজারে আতঙ্ক ছড়াতে এসইসি'র শীর্ষ কর্মকর্তাদের হত্যার হুমকি দিয়ে চিঠিটি পাঠিয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। চিঠিতে এসইসি'র সাম্প্রতিক সিদ্ধানত্মগুলোর বিরম্নদ্ধে যেসব যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে_ তাতে এর সঙ্গে শেয়ারবাজার বিষয়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন চক্র জড়িত বলে সংশিস্নষ্টদের ধারণা।
চিঠিতে এসইসি'র সাম্প্রতিক সিদ্ধানত্মের সমালোচনা করে বলা হয়েছে, 'আর্নিং যাই থাকুক ছোট পেইড আপ -এর শেয়ারের পিই এবং বড় পেইড আপ-এর পিই একই হতে পারবে না। ছোট পেইড আপের শেয়ার অল্প লেনদেনে পিই দ্রম্নত বেড়ে যায়। তাই মার্কেটের সামঞ্জস্যতা রাখার জন্য পেইড আপ অনুযায়ী পিই নির্ধারণ করা উচিত।'
চিঠিতে আরও বলা হয়, 'এখন মিথ্যা আর্নিং দেখিয়ে পিই কম দেখিয়ে মার্কেটে গেম হচ্ছে। টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।... পিই-এর ফাঁদে পড়ে অনেক শেয়ার বাড়তে পারছে না।... লোন যারা দেবে এবং লোন যারা নেবে সম্পূর্ণ উভয়পৰের ব্যাপার। কিন্তু এসইসির হসত্মৰেপে আমাদের মধ্যে অনেকে দেউলিয়া হয়ে গেছে।'
জানা গেছে, গত কিছুদিন আগে এসইসি'র নির্বাহী পরিচালক আনোয়ারম্নল কবীর ভুঁইয়াকে মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে একই রকম হুমকি দেয়া হয়। এ বিষয়ে মতিঝিল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। পরে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ওই হুমকিদাতাকে গ্রেফতার করতে সৰম হয়।
No comments