৩৭ লাশের পরিচয় শনাক্ত-৩২ স্বজন অধীর অপেক্ষায় by শরীফুল আলম সুমন
তাজরীন গার্মেন্টে অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের মধ্যে অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে কবর দেওয়া হয়েছিল ৫৯ জনকে। তাঁদের মধ্যে ৩৭ জনের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। নিকটাত্মীয়দের ডিএনএ প্রোফাইলের সঙ্গে লাশের ডিএনএ মিলে যাওয়ায় তাঁদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। সরকার এখনো তাঁদের পরিচয় প্রকাশ করেনি।
তবে ৩২টি লাশের স্বজনের সঙ্গে গতকাল কালের কণ্ঠের যোগাযোগ হয়। স্বজনরা কালের কণ্ঠের প্রতিনিধির কাছ থেকেই ফোনে জেনেছেন তাঁদের প্রিয়জনের লাশের পরিচয়।
রংপুরের শাহেদা বেগমের ডিএনএ মিলে যাওয়ার খবর শুনে তাঁর স্বামী মো. দুলাল কান্নাজড়িত কণ্ঠে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'অন্তত যা-ই হোক, লাশটা চিহ্নিত করতে পারলাম। আমার ছেলেকে তার মায়ের কবরটা দেখাতে পারব। লাশের পরিচয় না পেলে ছেলে বড় হলে কী জবাব দিতাম? এখন আমি লাশ জুরাইন থেকে উঠিয়ে দেশের বাড়িতে কবর দিতে চাই। সরকার যেন আমাদের এ ইচ্ছাটা পূরণ করে।'
জামালপুরের বাসিন্দা মো. খলিলের মেয়ে লিপি আক্তারের ডিএনএ শনাক্ত হয়েছে। তিনি বলেন, 'আমার জীবনে মেয়ের লাশ শনাক্ত ছাড়া আর কিছুই চাওয়ার ছিল না। আল্লাহ আমার সেই ইচ্ছাটা পূরণ করেছে। আর কিছুই চাওয়ার নেই।'
ডিএনএ শনাক্ত হওয়া নিহতদের স্বজনদের অনেকের সঙ্গে কালের কণ্ঠ ফোনে যোগাযোগ করলে তাঁরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। বেশির ভাগই জানান, নমুনা হিসেবে রক্ত দিয়ে আসার পর আর কিছুই জানেন না তাঁরা। এখন তাঁরা কী করবেন, সে বিষয়ে জানতে চান। আবার অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিজিএমইএ বা শ্রম অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তাঁদের কিছুই জানানো হয়নি বলে।
অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে কবর দেওয়া ভোলার ইয়ানুর বেগমের স্বামী মোজাম্মেল হক বলেন, 'আপনারা পত্রিকার লোক হয়ে আমাদের খবরটা দিলেন। অথচ যাদের দায়িত্ব, তারা কেউ জানাল না। দুই মাস এ রিপোর্টের জন্য প্রতিটি ক্ষণ অপেক্ষা করছি। আমার ছোট ছেলেকে তার মায়ের কাছে নিয়ে যাব বলে বলেছি। ছেলে বারবার মায়ের কাছে যেতে চাইলেও এত দিন নিয়ে যেতে পারিনি। আমি কালই জুরাইনে তার মায়ের কবরের কাছে নিয়ে যাব।'
স্বজনদের অনেকের কাছে কোনো ধরনের কাগজপত্র বা ডিএনএ পরীক্ষার রসিদ না থাকায় তাঁরা কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না।
ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরি থেকে লাশের ডিএনএর মিল পাওয়া স্বজনদের ঠিকানা সংগ্রহ করে এবং তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কালের কণ্ঠ ৩২টি লাশের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে। পরিচয়গুলো হলো- ১ নম্বর ডেড বডি-জেসমিন আক্তার, ২-ফাতেমা, ৪-আতিকুল, ৫-শাহনাজ, ৮-লিপি আক্তার, ৯-হামিদা, ১১-লাকি বেগম, ১৩-সোমা আক্তার, ১৫-মোসাম্মাৎ তাসলিমা, ১৬-শাহিন/জান্নাতুল, ১৭-হাবিবুর রহমান, ২১-ইয়ানুর বেগম, ২২-এমিলি বেগম, ২৪-নিলুফার, ২৬-রূপালী খাতুন, ১৭-সান্ত্বনা বেগম, ২৯-শাহীন/জান্নাতুল, ৩০-নাজমা, ৩১-সিরাজুল, ৩৩-রোজিনা/মাকসুদা, ৩৫-রাহেলা খাতুন, ৩৯-মুক্তা বানু, ৪৩-নার্গিস, ৪৬-মেরিনা, ৪৭-শাহেদা বেগম, ৫০-জাহেদা, ৫১-রোকসানা, ৫২-আমেনা আক্তার, ৫৪-রেহানা, ৫৫-তারা বানু, ৫৬-রাশিদা খাতুন ও ৫৯ নম্বর ডেড বডি নুরুন নেছা বেগমের।
এই ডিএনএ পরীক্ষার ব্যাপারে ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরির প্রধান অধ্যাপক ডা. শরীফ আকতারুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এত তাড়াতাড়ি এত ডেড বডির ডিএনএর ফল দেওয়ার নজির খুব কমই আছে। ডেড বডির অবস্থাও ভালো ছিল না। এ ছাড়া হাড় থেকে ডিএনএ ফলাফলের সফলতাও খুব কম; কিন্তু আমরা শতভাগ সফল হয়েছি।'
এখনো ২২ জনের শনাক্ত না হওয়া সম্পর্কে শরীফ আকতারুজ্জামান বলেন, "ডিএনএর নমুনা দিতে আসা কয়েকজনকে দেখে আমাদের সন্দেহও হয়েছিল, তারা 'যদি মিলে যায়' এ জন্য এসেছে। আবার অনেকে সুপারিশ নিয়েও এসেছিল। এ জন্য কিছু নমুনা মেলেনি।" পরিচয় শনাক্ত হওয়াদের এখনো নাম প্রকাশ না করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমরা শ্রম অধিদপ্তরে আমাদের ফলাফল পাঠিয়ে দিয়েছি। নাম প্রকাশ করা আমাদের দায়িত্ব নয়।'
এদিকে শনাক্ত হওয়া লাশের স্বজনদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সবেমাত্র ডিএনএ ফল পাওয়া গেছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও শ্রম অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে যত দ্রুত সম্ভব টাকা দেওয়ার চেষ্টা করব। খুব সম্ভব এক সপ্তাহ লাগতে পারে। তবে যাঁদের পরিচয় পাওয়া গেছে, তাঁদের স্বজনরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। আর যাঁদের ফল পাওয়া যায়নি তাঁদের পুনঃপরীক্ষার সুযোগ রয়েছে। আমাদের আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই।'
শ্রমিক নেত্রী মোশরেফা মিশু কালের কণ্ঠকে বলেন, 'যতজন নিখোঁজ হয়েছে আমরা সবার পরিচয় চাই। অনেকেই আজ জুরাইন কবরস্থানে গিয়ে কেঁদেছে। সরকারকে যে করেই হোক সবার পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে।'
রংপুরের শাহেদা বেগমের ডিএনএ মিলে যাওয়ার খবর শুনে তাঁর স্বামী মো. দুলাল কান্নাজড়িত কণ্ঠে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'অন্তত যা-ই হোক, লাশটা চিহ্নিত করতে পারলাম। আমার ছেলেকে তার মায়ের কবরটা দেখাতে পারব। লাশের পরিচয় না পেলে ছেলে বড় হলে কী জবাব দিতাম? এখন আমি লাশ জুরাইন থেকে উঠিয়ে দেশের বাড়িতে কবর দিতে চাই। সরকার যেন আমাদের এ ইচ্ছাটা পূরণ করে।'
জামালপুরের বাসিন্দা মো. খলিলের মেয়ে লিপি আক্তারের ডিএনএ শনাক্ত হয়েছে। তিনি বলেন, 'আমার জীবনে মেয়ের লাশ শনাক্ত ছাড়া আর কিছুই চাওয়ার ছিল না। আল্লাহ আমার সেই ইচ্ছাটা পূরণ করেছে। আর কিছুই চাওয়ার নেই।'
ডিএনএ শনাক্ত হওয়া নিহতদের স্বজনদের অনেকের সঙ্গে কালের কণ্ঠ ফোনে যোগাযোগ করলে তাঁরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। বেশির ভাগই জানান, নমুনা হিসেবে রক্ত দিয়ে আসার পর আর কিছুই জানেন না তাঁরা। এখন তাঁরা কী করবেন, সে বিষয়ে জানতে চান। আবার অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিজিএমইএ বা শ্রম অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তাঁদের কিছুই জানানো হয়নি বলে।
অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে কবর দেওয়া ভোলার ইয়ানুর বেগমের স্বামী মোজাম্মেল হক বলেন, 'আপনারা পত্রিকার লোক হয়ে আমাদের খবরটা দিলেন। অথচ যাদের দায়িত্ব, তারা কেউ জানাল না। দুই মাস এ রিপোর্টের জন্য প্রতিটি ক্ষণ অপেক্ষা করছি। আমার ছোট ছেলেকে তার মায়ের কাছে নিয়ে যাব বলে বলেছি। ছেলে বারবার মায়ের কাছে যেতে চাইলেও এত দিন নিয়ে যেতে পারিনি। আমি কালই জুরাইনে তার মায়ের কবরের কাছে নিয়ে যাব।'
স্বজনদের অনেকের কাছে কোনো ধরনের কাগজপত্র বা ডিএনএ পরীক্ষার রসিদ না থাকায় তাঁরা কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না।
ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরি থেকে লাশের ডিএনএর মিল পাওয়া স্বজনদের ঠিকানা সংগ্রহ করে এবং তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কালের কণ্ঠ ৩২টি লাশের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে। পরিচয়গুলো হলো- ১ নম্বর ডেড বডি-জেসমিন আক্তার, ২-ফাতেমা, ৪-আতিকুল, ৫-শাহনাজ, ৮-লিপি আক্তার, ৯-হামিদা, ১১-লাকি বেগম, ১৩-সোমা আক্তার, ১৫-মোসাম্মাৎ তাসলিমা, ১৬-শাহিন/জান্নাতুল, ১৭-হাবিবুর রহমান, ২১-ইয়ানুর বেগম, ২২-এমিলি বেগম, ২৪-নিলুফার, ২৬-রূপালী খাতুন, ১৭-সান্ত্বনা বেগম, ২৯-শাহীন/জান্নাতুল, ৩০-নাজমা, ৩১-সিরাজুল, ৩৩-রোজিনা/মাকসুদা, ৩৫-রাহেলা খাতুন, ৩৯-মুক্তা বানু, ৪৩-নার্গিস, ৪৬-মেরিনা, ৪৭-শাহেদা বেগম, ৫০-জাহেদা, ৫১-রোকসানা, ৫২-আমেনা আক্তার, ৫৪-রেহানা, ৫৫-তারা বানু, ৫৬-রাশিদা খাতুন ও ৫৯ নম্বর ডেড বডি নুরুন নেছা বেগমের।
এই ডিএনএ পরীক্ষার ব্যাপারে ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরির প্রধান অধ্যাপক ডা. শরীফ আকতারুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এত তাড়াতাড়ি এত ডেড বডির ডিএনএর ফল দেওয়ার নজির খুব কমই আছে। ডেড বডির অবস্থাও ভালো ছিল না। এ ছাড়া হাড় থেকে ডিএনএ ফলাফলের সফলতাও খুব কম; কিন্তু আমরা শতভাগ সফল হয়েছি।'
এখনো ২২ জনের শনাক্ত না হওয়া সম্পর্কে শরীফ আকতারুজ্জামান বলেন, "ডিএনএর নমুনা দিতে আসা কয়েকজনকে দেখে আমাদের সন্দেহও হয়েছিল, তারা 'যদি মিলে যায়' এ জন্য এসেছে। আবার অনেকে সুপারিশ নিয়েও এসেছিল। এ জন্য কিছু নমুনা মেলেনি।" পরিচয় শনাক্ত হওয়াদের এখনো নাম প্রকাশ না করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমরা শ্রম অধিদপ্তরে আমাদের ফলাফল পাঠিয়ে দিয়েছি। নাম প্রকাশ করা আমাদের দায়িত্ব নয়।'
এদিকে শনাক্ত হওয়া লাশের স্বজনদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সবেমাত্র ডিএনএ ফল পাওয়া গেছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও শ্রম অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে যত দ্রুত সম্ভব টাকা দেওয়ার চেষ্টা করব। খুব সম্ভব এক সপ্তাহ লাগতে পারে। তবে যাঁদের পরিচয় পাওয়া গেছে, তাঁদের স্বজনরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। আর যাঁদের ফল পাওয়া যায়নি তাঁদের পুনঃপরীক্ষার সুযোগ রয়েছে। আমাদের আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই।'
শ্রমিক নেত্রী মোশরেফা মিশু কালের কণ্ঠকে বলেন, 'যতজন নিখোঁজ হয়েছে আমরা সবার পরিচয় চাই। অনেকেই আজ জুরাইন কবরস্থানে গিয়ে কেঁদেছে। সরকারকে যে করেই হোক সবার পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে।'
No comments