মামলার নামে মাত্রাছাড়ানো রাজনৈতিক হয়রানি- আইনের দুর্গতি গৃহসঙ্ঘাতকে চরমে নেবে
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের চরম সময়গুলোতে গানের একটি কলি মানুষের
মুখে মুখে ছিল। সেই কলিটি ছিল, ‘বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা আজ জেগেছে
সেই জনতা’।
একটি সমাজ বা রাষ্ট্রে যখন প্রশাসন ও বিচারব্যবস্থা সম্পর্কে
অনাস্থা চরমপর্যায়ে পৌঁছে তখন সরকার, কোনো কোনো সময় রাষ্ট্রব্যবস্থার ওপর
মানুষ আস্থা রাখতে পারে না। তখন এ ধরনের গানের কলি উচ্চারিত হয়। মাত্রা
যা-ই হোক না কেন, আইন-আদালতের প্রতি মানুষের আস্থায় আবার যেন চিড় ধরতে
শুরু করেছে। বেশ ক’দিন ধরে রাজনৈতিক স্বার্থে আইন-আদালত, পুলিশ ও অন্য
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহারের ব্যাপারে সংবাদপত্রে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো
প্রতিবেদন প্রকাশ হচ্ছে। যুগান্তরের এক প্রতিবেদন অনুসারে সারা দেশে
রাজনৈতিক হয়রানির মামলার সংখ্যা হবে প্রায় ২০ হাজার। এর মধ্যে শুধু
রাজধানী ঢাকা শহরেই প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার মামলা দায়ের হয়েছে। আর
এসব মামলার আসামি দুই থেকে আড়াই লাখের মতো। বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের
প্রায় সবার বিরুদ্ধেই একাধিক মামলা রয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা
জিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে ২৭টি। এর মধ্যে বেশ
কিছু মামলার বিচারও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। অন্য দিকে মতায় আসার পর
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার তাদের নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা প্রায় সাড়ে
সাত হাজারের মতো মামলা রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এ
ছাড়া দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে বিগত সরকার ও
ওয়ান-ইলেভেন-পরবর্তী দায়ের করা প্রায় সব মামলা ও মামলায় দেয়া সাজার
রায় হাইকোর্ট থেকে বাতিল হয়ে গেছে। এসব রায়ের বেশির ভাগের বিরুদ্ধেই
কোনো আপিল করা হয়নি। নয়া দিগন্তেÍ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা
হয়েছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে হাইকোর্ট
জামিন দিলেও তার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দিয়ে এবং শ্যোন অ্যারেস্ট করে
তার মুক্তিতে বাধা দেয়া হচ্ছে। অর্ধশত মামলা দিয়ে তাকে কারাগারে রাখা
হয়েছে। রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে পুলিশের দায়ের করা মামলায়
বিএনপির আরো কয়েক হাজার নেতাকর্মী জেলে রয়েছেন। বিরোধী জোটের অন্যতম শরিক
দল জামায়াতে ইসলামীর প্রথম ও দ্বিতীয় সারির প্রায় সব নেতাকে রাজনৈতিক
মামলায় আটক রাখা হয়েছে। বর্তমানে তাদের পাঁচ হাজারেরও বেশি নেতাকর্মী
রাজনৈতিক মামলায় আটক রয়েছেন। নিম্নœ আদালত থেকে তারা জামিন পাচ্ছেন না।
সিনিয়র নেতাদের কেউ জামিন পেলেও অন্য আরো মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট করে
মুক্তিতে বাধা দেয়া হচ্ছে।
আইনজ্ঞদের অনেকের মধ্যে এ ধারণা তৈরি হয়েছে যে, বিচার বিভাগ সরকারের অঙ্গুলি হেলনে চলছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই ধারণা থাকা অত্যন্ত ভয় ও আশঙ্কার ব্যাপার। রাজনৈতিক ও মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ঘরছাড়া করা এবং হাজার হাজার নেতাকর্মীকে জেলে রাখার কারণে দেশ গৃহসঙ্ঘাতের দিকে যেতে পারে মর্মে আশঙ্কা প্রবল হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের ‘সরকার কোনো অবস্থায়ই আদালতের ওপর প্রভাব ফেলছে না আর বিচারকেরা স্বাধীন ও নিরপে থেকে আদেশ দিচ্ছেন’ মর্মে দেয়া বক্তব্য সেভাবে বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে না।
বাংলাদেশে প্রতিটি সরকারকে ক্ষমতায় এসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আইন-আদালতকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের একটি প্রবণতা দেখা যায়। কিন্তু প্রবণতা একটি মাত্রার মধ্যে থাকলে তা সমাজ বা রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্য বড় কোনো বিপত্তি সৃষ্টি করে না। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখন আইন-আদালত ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রাজনৈতিক ব্যবহারের মাত্রা বেড়ে গেছে। আমরা মনে করি না যে, রাজনৈতিক সহিংসতা বা আইন হাতে তুলে নেয়ার কোনো প্রবণতা থাকলে এ ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নেয়া যাবে না। কিন্তু আইনকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে না দিয়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় তার গতি নির্ণয় করতে থাকলে তা আইন প্রয়োগে দুর্গতি ডেকে আনতে পারে। আজ যাদের নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন রয়েছে কাল তারা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে না-ও থাকতে পারেন। কিন্তু রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো স্থায়ী। এসব প্রতিষ্ঠানকে বিদ্যমান আইন ও রীতিনীতি অনুসারে চলতে দিলে শেষ পর্যন্ত আইনের আশ্রয় লাভের সুবিধা দল-মত নির্বিশেষে সবাই পাবে। প্রশাসনকে আইনের প্রয়োগ যেমন নিশ্চিত করতে হবে, তেমনিভাবে বাড়াবাড়ি বা অপপ্রয়োগ না হওয়ার বিষয়টিও করতে হবে নিশ্চিত। রাজনৈতিক পরিচয়ের আগে ‘মানুষ’ ও ‘বাংলাদেশের নাগরিক’ পরিচয়কে সামনে রেখে ‘আইনের চোখে সবাই সমান ব্যবহার পাবে’ সংবিধানের এই গ্যারান্টির বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
আইনজ্ঞদের অনেকের মধ্যে এ ধারণা তৈরি হয়েছে যে, বিচার বিভাগ সরকারের অঙ্গুলি হেলনে চলছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই ধারণা থাকা অত্যন্ত ভয় ও আশঙ্কার ব্যাপার। রাজনৈতিক ও মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ঘরছাড়া করা এবং হাজার হাজার নেতাকর্মীকে জেলে রাখার কারণে দেশ গৃহসঙ্ঘাতের দিকে যেতে পারে মর্মে আশঙ্কা প্রবল হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের ‘সরকার কোনো অবস্থায়ই আদালতের ওপর প্রভাব ফেলছে না আর বিচারকেরা স্বাধীন ও নিরপে থেকে আদেশ দিচ্ছেন’ মর্মে দেয়া বক্তব্য সেভাবে বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে না।
বাংলাদেশে প্রতিটি সরকারকে ক্ষমতায় এসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আইন-আদালতকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের একটি প্রবণতা দেখা যায়। কিন্তু প্রবণতা একটি মাত্রার মধ্যে থাকলে তা সমাজ বা রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্য বড় কোনো বিপত্তি সৃষ্টি করে না। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখন আইন-আদালত ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রাজনৈতিক ব্যবহারের মাত্রা বেড়ে গেছে। আমরা মনে করি না যে, রাজনৈতিক সহিংসতা বা আইন হাতে তুলে নেয়ার কোনো প্রবণতা থাকলে এ ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নেয়া যাবে না। কিন্তু আইনকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে না দিয়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় তার গতি নির্ণয় করতে থাকলে তা আইন প্রয়োগে দুর্গতি ডেকে আনতে পারে। আজ যাদের নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন রয়েছে কাল তারা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে না-ও থাকতে পারেন। কিন্তু রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো স্থায়ী। এসব প্রতিষ্ঠানকে বিদ্যমান আইন ও রীতিনীতি অনুসারে চলতে দিলে শেষ পর্যন্ত আইনের আশ্রয় লাভের সুবিধা দল-মত নির্বিশেষে সবাই পাবে। প্রশাসনকে আইনের প্রয়োগ যেমন নিশ্চিত করতে হবে, তেমনিভাবে বাড়াবাড়ি বা অপপ্রয়োগ না হওয়ার বিষয়টিও করতে হবে নিশ্চিত। রাজনৈতিক পরিচয়ের আগে ‘মানুষ’ ও ‘বাংলাদেশের নাগরিক’ পরিচয়কে সামনে রেখে ‘আইনের চোখে সবাই সমান ব্যবহার পাবে’ সংবিধানের এই গ্যারান্টির বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
No comments