পরিবর্তন! by সুভাষ সাহা
আমাদের সমাজ নাকি এক লাফে অনেক ওপরে উঠে পড়েছে। দেশের অর্থনীতির শনৈঃ শনৈঃ উন্নতিযোগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নাকি আমাদের চেতন জগতেও একটা বিপ্লব ঘটে চলেছে। একদিকে পুরনো মূল্যবোধগুলো খসে পড়ছে, অন্যদিকে দেখা দিচ্ছে নতুন বোধ।
কিন্তু সেই নতুন বোধ কি পুরনোর চাইতে অগ্রসর, নাকি আমরা কাম-ক্রোধ মত্ততাকে নানাভাবে নানারূপে প্রকাশ ঘটিয়ে চলেছি? জানি এর উত্তর সহজ নয়। পরিবর্তনশীল সমাজে স্থিরভাবে এসব ঠাওর করা দুরূহ। কিন্তু রাস্তায় সহিংস উন্মত্ততাকে রাজনৈতিক হোক আর সম্মিলিত প্রতিরোধের নামেই হোক, আমাদের সমাজ অনেকটা সহনীয় করে নিয়েছে। চুরি-ডাকাতি, ভেজাল, ঘুষ-দুর্নীতি এসব ঘটমান বর্তমান। অনৈতিকতা কি রাষ্ট্র ও সমাজের প্রশ্রয়েই বেড়ে উঠছে না! আর নারীর প্রতি অবমাননা তো পুরুষ শাসিত সমাজের তথাকথিত শ্রেষ্ঠত্বের উলঙ্গ প্রকাশ। এখানে নারীর সৌন্দর্যে পুরুষের মধ্যে জীবনানন্দ দাশের কবিতার মতো বিমোহিত-বিনম্র ভাবের দ্যোতনা সৃষ্টি হয় না অনেকের মধ্যে। কবির মতো বলে উঠতে পারে না অনেক পুরুষ_
'তাদের পায়ের ধুলোমাখা পথে বিকায় দিয়াছি আমি মন
বাঙালি নারীর কাছে চাল-ধোয়া সি্নগ্ধ হাত, ধান-মাখা চুল,
হাতে তার শাড়িটির কস্তা
পাড়_ ...।'
কেউ কেউ বলেন, ইদানীং নারীকে কর্মস্থল, রাস্তাঘাট, চলন্ত গাড়ি ইত্যাদি স্থানে অসম্মানিত হওয়ার কারণ তাদের পরিবর্তিত স্বল্প বসন, প্রগলভতা ও ড্যামকেয়ার চলাফেরা। এদের ব্যবহৃত বাক্যের সঙ্গে কেমন যেন মধ্যযুগের ধর্মগুরুদের নারীর ওপর বিধিনিষেধ আরোপের একটা অদ্ভুত মিল পাওয়া যায়। নারীর বেশভূষা কেমন হবে, কোন আসরে কীভাবে নাচবে, কীভাবে সে অঙ্গভঙ্গি করবে_ সবই ঠিক করার এখতিয়ার এভাবে পুরুষরা নিজেদের বিষয়বস্তু করে রেখেছে। কিন্তু যাদের চেতনার বড় উল্লম্ফন হয়েছে বা আধুনিক হয়েছে বলে দাবি করেন, তারা কি একবারও ভেবে দেখেছেন যে, এই সেদিন মানিকগঞ্জে চলন্ত বাসে যে গার্মেন্ট কর্মীটি ড্রাইভার ও হেলপার দ্বারা ধর্ষণের শিকার হলো, সে তো আর স্বল্প বসনা ছিল না! এখনই হয়তো একদল কলমবাজ বলে বসবেন, ওরা রগরগে সিনেমা, নাটক বা রিয়েলিটি শো দেখে দেখে এসব শিখেছে। হ্যাঁ, হয়তো মানুষের মধ্যে এ ধরনের ধর্ষকামিতা বৃদ্ধিতে এসব রগরগে ছবি বা প্রদর্শনীর কিছুটা অবদান থাকলেও থাকতে পারে। তবে এ জন্য নারীর ওপর উন্মত্ত লালসার বশে ঝাঁপিয়ে পড়া, এমনকি হত্যা পর্যন্ত করে ফেলাকে মেলানো যায়? আসলে সামাজিক বোধের ক্ষেত্রে তথা সম্মিলিতভাবে পুরুষদের মধ্যে নারীকে ভোগের সামগ্রী এবং যেমন খুশি তেমন ব্যবহার ও অবনমিত চরিত্র হিসেবে চিন্তা করার কারণেই এসব অনায়াসে ঘটতে পারে। আর এসব অন্যায় করেও যখন নানা কায়দায় অপরাধী মাফ পেয়ে যায়, তখন সমাজে এ ধরনের নেতিবাচক প্রবণতা আরও বৃদ্ধি পায়। একইভাবে রাজনৈতিক ক্ষমতাকে ব্যবহার করে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ বনা আমাদের সমাজে একটা অতি স্বীকৃত বিষয়ে পরিণত হওয়ায় রাজনীতি গণতান্ত্রিক লেবাসে অগণতান্ত্রিকতাকে সবখানে প্রশ্রয় দিয়ে চলেছে। এ কারণেই এখানে ব্যবসায়ীরা বড় রাজনীতিবিদ বনার সাধনা করেন বিত্তবৈভব গড়ে তোলার মানসেই। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের চেতন জগতে এক সময় মধ্যযুগীয় বর্বরতা সম্মানীয়-বরণীয় হয়ে উঠতে পারে। তাই সমাজ ও রাষ্ট্র উভয়কেই প্রকৃত আধুনিকতাকে গ্রহণ করে পরিবর্তনের নামে অন্যায়-অনাচার, অসত্য, নির্লজ্জ ভোগবাদিতা ত্যাগ করে সুপথে চলার সাধনা করতে হবে। আসলে আমরা এক যুগসন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি। এখনই সময় পরিবর্তনের সঠিক পথটি চিনে নেওয়ার।
'তাদের পায়ের ধুলোমাখা পথে বিকায় দিয়াছি আমি মন
বাঙালি নারীর কাছে চাল-ধোয়া সি্নগ্ধ হাত, ধান-মাখা চুল,
হাতে তার শাড়িটির কস্তা
পাড়_ ...।'
কেউ কেউ বলেন, ইদানীং নারীকে কর্মস্থল, রাস্তাঘাট, চলন্ত গাড়ি ইত্যাদি স্থানে অসম্মানিত হওয়ার কারণ তাদের পরিবর্তিত স্বল্প বসন, প্রগলভতা ও ড্যামকেয়ার চলাফেরা। এদের ব্যবহৃত বাক্যের সঙ্গে কেমন যেন মধ্যযুগের ধর্মগুরুদের নারীর ওপর বিধিনিষেধ আরোপের একটা অদ্ভুত মিল পাওয়া যায়। নারীর বেশভূষা কেমন হবে, কোন আসরে কীভাবে নাচবে, কীভাবে সে অঙ্গভঙ্গি করবে_ সবই ঠিক করার এখতিয়ার এভাবে পুরুষরা নিজেদের বিষয়বস্তু করে রেখেছে। কিন্তু যাদের চেতনার বড় উল্লম্ফন হয়েছে বা আধুনিক হয়েছে বলে দাবি করেন, তারা কি একবারও ভেবে দেখেছেন যে, এই সেদিন মানিকগঞ্জে চলন্ত বাসে যে গার্মেন্ট কর্মীটি ড্রাইভার ও হেলপার দ্বারা ধর্ষণের শিকার হলো, সে তো আর স্বল্প বসনা ছিল না! এখনই হয়তো একদল কলমবাজ বলে বসবেন, ওরা রগরগে সিনেমা, নাটক বা রিয়েলিটি শো দেখে দেখে এসব শিখেছে। হ্যাঁ, হয়তো মানুষের মধ্যে এ ধরনের ধর্ষকামিতা বৃদ্ধিতে এসব রগরগে ছবি বা প্রদর্শনীর কিছুটা অবদান থাকলেও থাকতে পারে। তবে এ জন্য নারীর ওপর উন্মত্ত লালসার বশে ঝাঁপিয়ে পড়া, এমনকি হত্যা পর্যন্ত করে ফেলাকে মেলানো যায়? আসলে সামাজিক বোধের ক্ষেত্রে তথা সম্মিলিতভাবে পুরুষদের মধ্যে নারীকে ভোগের সামগ্রী এবং যেমন খুশি তেমন ব্যবহার ও অবনমিত চরিত্র হিসেবে চিন্তা করার কারণেই এসব অনায়াসে ঘটতে পারে। আর এসব অন্যায় করেও যখন নানা কায়দায় অপরাধী মাফ পেয়ে যায়, তখন সমাজে এ ধরনের নেতিবাচক প্রবণতা আরও বৃদ্ধি পায়। একইভাবে রাজনৈতিক ক্ষমতাকে ব্যবহার করে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ বনা আমাদের সমাজে একটা অতি স্বীকৃত বিষয়ে পরিণত হওয়ায় রাজনীতি গণতান্ত্রিক লেবাসে অগণতান্ত্রিকতাকে সবখানে প্রশ্রয় দিয়ে চলেছে। এ কারণেই এখানে ব্যবসায়ীরা বড় রাজনীতিবিদ বনার সাধনা করেন বিত্তবৈভব গড়ে তোলার মানসেই। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের চেতন জগতে এক সময় মধ্যযুগীয় বর্বরতা সম্মানীয়-বরণীয় হয়ে উঠতে পারে। তাই সমাজ ও রাষ্ট্র উভয়কেই প্রকৃত আধুনিকতাকে গ্রহণ করে পরিবর্তনের নামে অন্যায়-অনাচার, অসত্য, নির্লজ্জ ভোগবাদিতা ত্যাগ করে সুপথে চলার সাধনা করতে হবে। আসলে আমরা এক যুগসন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি। এখনই সময় পরিবর্তনের সঠিক পথটি চিনে নেওয়ার।
No comments