আন্দোলনের নামে বিরোধী দলের সাথে তলে তলে যোগাযোগ রাখবেন আর সব কিছু হয়ে যাবে তা হবে না শিক্ষকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিকরণ ও জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আন্দোলনের নামে বিরোধী দলের সাথে তলে তলে যোগাযোগ রাখবেন, আর সব কিছু হয়ে যাবে, এটা তো সম্ভব নয়। এটা হওয়া উচিত নয়।
তা তো হবে না। তা ছাড়া আন্দোলন করতে হবে কেন, আমরাতো সব কিছু দিচ্ছি। সংসদে প্রশ্নোত্তরে গতকাল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। বিকেলে স্পিকার অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদের সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।

হাফিজ উদ্দিন আহমেদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার্থীদের পড়াশুনা করানো বাদ দিয়ে ঢাকায় এসেছেন দাবি আদায় করতে এটা উচিত নয়। আমরা কোনো ধরনের আন্দোলন-দাবি ছাড়াই শিক্ষকদের বেতন ১০০ ভাগ করেছি। কখন কোথায় কতটুকু করতে হবে সেটা সম্পর্কে আমরা সচেতন। আমাদের বাজেটও তো বিবেচনা করতে হবে। শিক্ষকদের দাবি পূরণ করতে হলে বাজেটে ৪০ হাজার কোটি টাকা লাগবে। আমরা কি রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ, ব্রিজ-কালভার্টসহ সব উন্নয়নের কাজ বাদ রেখে শুধু বেতনভাতা দিয়ে যাব? আয় বাড়–ক আমরা বিষয়টা ভেবে দেখব।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, এমপিওভুক্তির জন্য একটা নীতিমালা আছে। এসব নিয়মনীতি মেনে শর্তগুলো পূরণ এমপিওভুক্তি চাইবে। তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দেখতে হবে। কেউ ইচ্ছামতো স্কুল তৈরি করে বলবে এখনই এমপিওভুক্ত করতে হবে, জাতীয়করণ করতে হবেÑ এটা কি সম্ভব?

গোলাম দোস্তগীর গাজীর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার ভিশন-২০২১ কে সামনে রেখে সুশিক্ষিত ও দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার লক্ষ্যে একটি জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে। প্রণীত জাতীয় শিক্ষানীতিতে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে উন্নতি করা এবং শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একাধিক লক্ষ্য ও কৌশল বিবৃত করা হয়েছে। বর্তমান সরকার পর্যায়ক্রমে এ সব লক্ষ্য বাস্তবায়নের কাজ করে যাচ্ছে। এমপিওভুক্তকরণ ও এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে তিনি বলেন, এ পর্যন্ত এক হাজার ৬২৪টি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করেছে সরকার।



ডা: সিরাজুল আকবরের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অটিজম বিষয়ে বর্তমানে অনেক সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিটি সেবাকেন্দ্রে কিভাবে একটি করে অটিজম কর্নার সৃষ্টি করা যায় আমরা সে চেষ্টাই করছি। তিনি আরো বলেন, অটিজম শিশুদের আলাদা করে রাখা উচিত নয়।

মো: শফিকুল ইসলামের এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীন সেতু বিভাগের দায়িত্ব হলো ১৫০০ মিটার এবং তদূর্ধ্ব দৈর্ঘ্যরে সেতু, টোল সড়ক, ফাইওভার, এক্সপ্রেসওয়ে, ক্রসওয়ে, লিংক রোড, টানেল ইত্যাদি নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ। এ বিভাগের অধীনে বর্তমান সরকার পূর্ববর্তী মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকালীন সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তিন হাজার ৭৪৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ বঙ্গবন্ধু সেতুর নির্মাণ সমাপ্তির পর ১৯৯৮ সালে ২৩ জুন যানবাহন পারাপারের জন্য সেতু খুলে দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধু সেতু দেশের অর্থনৈতিক মাইলফলক হিসেবে কাজ করছে।

বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর মাওয়া-জাজিরা অবস্থানে পদ্মা সেতু নির্মাণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে পদ্মা সেতুর বিস্তারিত ডিজাইন প্রণয়ন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের প্রস্তাব ১৯ জানুয়ারি ২০০৯ তারিখে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির প্রথম সভায় অনুমোদন, ২৯ জানুয়ারি ২০০৯ তারিখে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর এবং ২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ তারিখ হতে ডিজাইন প্রণয়ণের কাজ শুরু হয়। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের সব উপাঙ্গ যথাÑমূল সেতু, নদী শাসন, সেতুর উভয় প্রান্তের সংযোগ সড়ক ও ব্রিজ অ্যান্ড ফ্যাসিলিটিসের বিস্তারিত ডিজাইন চূড়ান্ত করা হচ্ছে। চারটি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সাথে ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। তা ছাড়া ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের কাজও শেষের দিকে। বর্তমানে বিশ্বব্যাংকের সাথে অমীমাংসিত বিষয় নিরসনের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। ২ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু।

No comments

Powered by Blogger.