স্বর্ণকন্যা মাহফুজা by তাসনীম হাসান
২০০৬ সাল। সেবার শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোতে বসেছিল এস এ গেমসের আসর। সাঁতারের সবচেয়ে কনিষ্ঠ প্রতিযোগী বাংলাদেশের মাহফুজা খাতুন। পুলে বড় বড় প্রতিযোগীর সঙ্গে অংশগ্রহণ করে এই খুদে প্রতিযোগী অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন—বড়জোর এমনটিই আশা ছিল বাংলাদেশের।
কিন্তু পুলে নেমেই করলেন বাজিমাত। ৫০ ও ১০০ মিটার সাঁতারে ঝড় তুললেন মাহফুজা। বাঘা বাঘা প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে উভয় মিটারে জিতলেন ব্রোঞ্জ।
এ জয় নিয়ে দেশ-বিদেশে বেশ মাতামাতি হয়েছিল। অনেক পুরস্কারও মাহফুজার হাতে উঠেছিল। তবে তারও আগ থেকে সাঁতারে দেশের পরিচিত মুখ মাহফুজা। ৫০ মিটারে একবার লক্ষ্যচ্যুত হওয়া ছাড়া ২০০৩ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ৫০ ও ১০০ মিটার সাঁতারে মাহফুজার টানা স্বর্ণজয়রথ চলছেই। সর্বশেষ ফিনা ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ র্যাংকিংয়ে মেয়েদের মধ্যে মাহফুজা খাতুনের অবস্থান ৪৭। দক্ষিণ এশিয়াতেই তা দ্বিতীয়। আর দেশের সাঁতারে তো সেরা সেই ২০০৩ সাল থেকেই।
খেলাধুলার পাশাপাশি পড়ালেখাও সমান তালে চালিয়ে যাচ্ছেন মাহফুজা। বর্তমানে স্নাতকে পড়ছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে। সম্প্রতি তৃতীয় বর্ষ সমাপনী পরীক্ষা দিয়েছেন। পড়ালেখার বইখাতা গুছিয়ে আবারও সুইমিংপুলে ব্যস্ততা। ঢাকার বাইরে হওয়ায় এ নিয়ে তাঁকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। সারা বছর ঢাকা-চট্টগ্রামে আসা-যাওয়া।
কীভাবে এত দূর আসা? এমন প্রশ্নে মাহফুজা ফিরে গেলেন সেই অতীতে। ‘সময়টা ২০০২ সালের শেষ দিকে। সাঁতার ও দৌড়ের কল্যাণে বৃহত্তর খুলনাতে তখন আমার বেশ নামডাক। হঠাৎ একদিন পাড়ার এক ক্রীড়ানুরাগী বড় ভাইয়ের চোখে পড়া। তিনি আমাকে পরামর্শ দিলেন বাংলাদেশ ক্রীড়া সংস্থা পরিষদে (বিকেএসপি) ভর্তি হওয়ার। গ্রামের ওই ভাইয়ের হাত ধরেই ২০০৩ সালের কোনো এক সকালে বিকেএসপিতে অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি হই। ভর্তির সব খরচপাতিও ওই বড় ভাই দেন।’
সেই শুরু। পরেরটা তো ইতিহাস! পুরস্কারের ঝুলিতে রয়েছে ২০০৭, ০৮ ও ১০ সালে ইন্দোবাংলা গেমসে স্বর্ণজয়। ২০১০ সালে নেপালের সঙ্গে ফ্রেন্ডশিপ প্রতিযোগিতায়ও স্বর্ণ জিতেন মাহফুজা। এ ছাড়া দেশ-বিদেশে আরও অনেক অর্জন তো রয়েছেই।
সাঁতারের বাইরে মাহফুজার কিন্তু ছোট্ট মজার একটি ইতিহাসও রয়েছে। খুলনা বিভাগে দৌড়ে চ্যাম্পিয়ন ছিলেন মাহফুজা। বিকেএসপি জীবনের প্রথম ভাগে সাঁতারের চেয়ে দৌড়টাকেই বেশি ভালোবাসতেন তিনি। পরে কোচের পরামর্শে সাঁতারেই স্থায়ী। ২০০৪ সালে মজার এক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন মাহফুজা। বিকেএসপির হয়ে সেবার জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিলেন। কথা ছিল শুধু সাঁতারেই অংশ নেবেন। কিন্তু ৪০০ মিটার দৌড়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লেন বিকেএসপির প্রতিযোগী। কী আর করা। সোজা পুল থেকে তুলে এনে ট্র্যাকে নামিয়ে দেওয়া হলো মাহফুজাকে। বেশ হয়ে গেল। বিকেএসপির মান রাখলেন মাহফুজা। সবাইকে অবাক করে দিয়ে সবার আগেই দৌড় শেষ করলেন মাহফুজা। পরের বছরও নিজের জাত চিনিয়ে ৪০০ মিটারে মেয়েদের মধ্যে আবারও দেশসেরা।
পুলের ক্ষিপ্ত এই মানুষটি কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে বেশ আমোদী ও প্রাণোচ্ছল। সময় পেলেই বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা আর আড্ডা। দেশসেরা মহিলা এই সাঁতারুর এত সব অর্জনের পরও পা মাটিতেই রাখছেন।
বিনয়ের সঙ্গে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করলেন তাঁর কোচ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজ বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। তাঁদের সহযোগিতা না পেলে এত দূর আসা যেত না—বললেন মাহফুজা।
সারা বছর প্রশিক্ষণ আর পড়ালেখার ব্যস্ততায় থাকতে হয়। আর সময় পেলেই এক ছুটে যশোরের পাঁচ কবর গ্রাম। বাবা আলী আহমদ গাজী, মা করিমুন নেছার আর প্রতিবেশীদের সময় দিয়েই আবার নিজের কাজে ফেরা। এক যুগ ধরে এভাবেই চলছে মাহফুজার।
ভবিষ্যৎ লক্ষ্য? ক্যারিয়ারটা সর্বোচ্চ চূড়ায় নিয়ে শেষ করতে চান। আর তা অবশ্যই দুই বছরের মধ্যেই। স্নাতকোত্তরটা শেষ করার অপেক্ষায় রয়েছেন। তবে স্বপ্ন ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন দ্য আর্থ’খ্যাত অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার।
এ জয় নিয়ে দেশ-বিদেশে বেশ মাতামাতি হয়েছিল। অনেক পুরস্কারও মাহফুজার হাতে উঠেছিল। তবে তারও আগ থেকে সাঁতারে দেশের পরিচিত মুখ মাহফুজা। ৫০ মিটারে একবার লক্ষ্যচ্যুত হওয়া ছাড়া ২০০৩ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ৫০ ও ১০০ মিটার সাঁতারে মাহফুজার টানা স্বর্ণজয়রথ চলছেই। সর্বশেষ ফিনা ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ র্যাংকিংয়ে মেয়েদের মধ্যে মাহফুজা খাতুনের অবস্থান ৪৭। দক্ষিণ এশিয়াতেই তা দ্বিতীয়। আর দেশের সাঁতারে তো সেরা সেই ২০০৩ সাল থেকেই।
খেলাধুলার পাশাপাশি পড়ালেখাও সমান তালে চালিয়ে যাচ্ছেন মাহফুজা। বর্তমানে স্নাতকে পড়ছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে। সম্প্রতি তৃতীয় বর্ষ সমাপনী পরীক্ষা দিয়েছেন। পড়ালেখার বইখাতা গুছিয়ে আবারও সুইমিংপুলে ব্যস্ততা। ঢাকার বাইরে হওয়ায় এ নিয়ে তাঁকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। সারা বছর ঢাকা-চট্টগ্রামে আসা-যাওয়া।
কীভাবে এত দূর আসা? এমন প্রশ্নে মাহফুজা ফিরে গেলেন সেই অতীতে। ‘সময়টা ২০০২ সালের শেষ দিকে। সাঁতার ও দৌড়ের কল্যাণে বৃহত্তর খুলনাতে তখন আমার বেশ নামডাক। হঠাৎ একদিন পাড়ার এক ক্রীড়ানুরাগী বড় ভাইয়ের চোখে পড়া। তিনি আমাকে পরামর্শ দিলেন বাংলাদেশ ক্রীড়া সংস্থা পরিষদে (বিকেএসপি) ভর্তি হওয়ার। গ্রামের ওই ভাইয়ের হাত ধরেই ২০০৩ সালের কোনো এক সকালে বিকেএসপিতে অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি হই। ভর্তির সব খরচপাতিও ওই বড় ভাই দেন।’
সেই শুরু। পরেরটা তো ইতিহাস! পুরস্কারের ঝুলিতে রয়েছে ২০০৭, ০৮ ও ১০ সালে ইন্দোবাংলা গেমসে স্বর্ণজয়। ২০১০ সালে নেপালের সঙ্গে ফ্রেন্ডশিপ প্রতিযোগিতায়ও স্বর্ণ জিতেন মাহফুজা। এ ছাড়া দেশ-বিদেশে আরও অনেক অর্জন তো রয়েছেই।
সাঁতারের বাইরে মাহফুজার কিন্তু ছোট্ট মজার একটি ইতিহাসও রয়েছে। খুলনা বিভাগে দৌড়ে চ্যাম্পিয়ন ছিলেন মাহফুজা। বিকেএসপি জীবনের প্রথম ভাগে সাঁতারের চেয়ে দৌড়টাকেই বেশি ভালোবাসতেন তিনি। পরে কোচের পরামর্শে সাঁতারেই স্থায়ী। ২০০৪ সালে মজার এক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন মাহফুজা। বিকেএসপির হয়ে সেবার জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিলেন। কথা ছিল শুধু সাঁতারেই অংশ নেবেন। কিন্তু ৪০০ মিটার দৌড়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লেন বিকেএসপির প্রতিযোগী। কী আর করা। সোজা পুল থেকে তুলে এনে ট্র্যাকে নামিয়ে দেওয়া হলো মাহফুজাকে। বেশ হয়ে গেল। বিকেএসপির মান রাখলেন মাহফুজা। সবাইকে অবাক করে দিয়ে সবার আগেই দৌড় শেষ করলেন মাহফুজা। পরের বছরও নিজের জাত চিনিয়ে ৪০০ মিটারে মেয়েদের মধ্যে আবারও দেশসেরা।
পুলের ক্ষিপ্ত এই মানুষটি কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে বেশ আমোদী ও প্রাণোচ্ছল। সময় পেলেই বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা আর আড্ডা। দেশসেরা মহিলা এই সাঁতারুর এত সব অর্জনের পরও পা মাটিতেই রাখছেন।
বিনয়ের সঙ্গে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করলেন তাঁর কোচ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজ বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। তাঁদের সহযোগিতা না পেলে এত দূর আসা যেত না—বললেন মাহফুজা।
সারা বছর প্রশিক্ষণ আর পড়ালেখার ব্যস্ততায় থাকতে হয়। আর সময় পেলেই এক ছুটে যশোরের পাঁচ কবর গ্রাম। বাবা আলী আহমদ গাজী, মা করিমুন নেছার আর প্রতিবেশীদের সময় দিয়েই আবার নিজের কাজে ফেরা। এক যুগ ধরে এভাবেই চলছে মাহফুজার।
ভবিষ্যৎ লক্ষ্য? ক্যারিয়ারটা সর্বোচ্চ চূড়ায় নিয়ে শেষ করতে চান। আর তা অবশ্যই দুই বছরের মধ্যেই। স্নাতকোত্তরটা শেষ করার অপেক্ষায় রয়েছেন। তবে স্বপ্ন ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন দ্য আর্থ’খ্যাত অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার।
No comments