ফরমালিনমুক্ত বাজার- সচেতনতা জরুরি
কাগজে-কলমে ফরমালিন বিক্রি ও ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও নিত্যপ্রয়োজনীয় বহু খাদ্যদ্রব্যে এ ক্ষতিকর রাসায়নিক বিপজ্জনক মাত্রায় ব্যবহৃত হচ্ছে। আর ফরমালিনের ব্যবহার এতটাই অপ্রতিরোধ্য যে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান, গণমাধ্যমের প্রচার, সরকারের উদ্যোগ কোনো কিছুই কাজে আসছে না।
এ অবস্থায় অনেকেই ফরমালিনসহ বিভিন্ন প্রিজারভেটিভ মিশ্রিত খাদ্যদ্রব্যকে ভবিতব্য মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর একটি শুভ উদ্যোগ সবাইকে আশান্বিত করেছিল। এফবিসিসিআই ব্যবসায়ীদের সহায়তায় পর্যায়ক্রমে রাজধানীর কয়েকটি কাঁচাবাজার ফরমালিনমুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছিল। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে প্রথমে মালিবাগ বাজারে ফরমালিন পরীক্ষার যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়। বাজারে যাতে ফরমালিনযুক্ত মাছ ও সবজি ঢুকতে না পারে, সে জন্য নিয়মিত তদারকির ব্যবস্থাও করা হয়। উদ্যোগটি গণমাধ্যমে বিপুল প্রশংসিত হয়েছিল। ক্রেতাদের মধ্যেও ইতিবাচক প্রভাব পড়েছিল। ক্রেতারা ফরমালিনমুক্ত খাদ্যপণ্য কেনার প্রত্যাশায় মালিবাগ বাজারে অধিক হারে ভিড় জমাচ্ছেন_ এমন খবর তখন সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল। প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হয়েছিল, উদ্যোগটি যেন ধীরে ধীরে রাজধানীর অন্যান্য বাজারে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আশা ছিল, দেশের অন্যান্য বাজারেও এ পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে। জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী, রাজধানীর ৭টি কাঁচা বাজারকে একে একে ফরমালিনমুক্ত ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু ফরমালিনমুক্ত বলে ঘোষিত কাঁচা বাজারগুলো কি সত্যিই ফরমালিনের অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়েছে? এ বিষয়ে সমকাল মঙ্গলবার যে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে হতাশাব্যঞ্জক চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, মালিবাগ ছাড়া বাকি বাজারগুলোতে ফরমালিন পরীক্ষা ও ফরমালিনযুক্ত দ্রব্য বাজারজাতকরণ বন্ধে তদারকি প্রক্রিয়া আর কার্যকর নেই। বাজারগুলোতে দেদারসে ফরমালিনযুক্ত ক্ষতিকর খাদ্যদ্রব্য বিক্রি হচ্ছে। ফরমালিনমুক্ত বাজারের ঘোষণা দিয়ে সেখানে ফরমালিন মেশানো পণ্য বিক্রি প্রতারণার শামিল। এটি ক্রেতাদের হতাশ করার জন্য যথেষ্ট। মঙ্গলবার সমকালে এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর ফরমালিনমুক্ত ঘোষিত বাজারগুলো আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে খবর মিলেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের তরফে বাজার তদারকির উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। খবর প্রকাশের পর এ উদ্যোগ ইতিবাচক হলেও আশাপ্রদ নয়। ফরমালিন থেকে মুক্ত হতে হলে তদারকি প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ী সংগঠন ও বিক্রেতাদের সার্বক্ষণিক তৎপরতা দরকার। ফরমালিনমুক্ত পণ্য বিক্রি করার উদ্যোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা সকলের আস্থা ও প্রশংসাভাজন হয়েছিলেন। বাজারগুলোতে বিক্রিও বেড়ে গিয়েছিল। নতুন করে ফরমালিনের অনুপ্রবেশে ক্রেতাদের আস্থার সংকট দেখা দেওয়াটাই স্বাভাবিক। এ অবস্থায় সুনাম ধরে রাখতে কার্যকর উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা চাই, ঘোষিত বাজারগুলো ফরমালিনমুক্ত থাকুক। ধীরে ধীরে নতুন নতুন বাজার এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হোক। তবে এ কথাও সত্য, ব্যবসায়ীদের উদ্যোগের পাশাপাশি বাজারগুলোতে নিয়মিত তদারকি নিশ্চিত করতে হবে। ফরমালিন বিক্রি ও ব্যবহার বন্ধ করা খুবই প্রয়োজন। ক্রেতাদেরও সচেতন হতে হবে। তারা ফরমালিনযুক্ত ক্ষতিকর খাদ্যদ্রব্য না কিনলে বাজারে এর সরবরাহ কমতে বাধ্য। মালিবাগ বাজার যে উদাহরণ
তৈরি করেছে এবং তা অনুসরণ করছে_ তা সকলের জন্য প্রেরণা হয়ে উঠুক, সেটাই প্রত্যাশা।
তৈরি করেছে এবং তা অনুসরণ করছে_ তা সকলের জন্য প্রেরণা হয়ে উঠুক, সেটাই প্রত্যাশা।
No comments