পাঠকের মন্তব্য-তাঁদের ব্যর্থতার দায়ভার মানুষ বহন করছে

প্রথম আলোর অনলাইনে (prothom-alo.com) প্রতিদিন রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, খেলা, প্রযুক্তি, ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে পাঠকের মতামত প্রকাশিত হয়। তাঁদের এই মতামত চিন্তার খোরাক জোগায় অন্যদের। গত কয়েক দিনে বিভিন্ন বিষয়ে পাঠকদের কিছু মন্তব্য ঈষৎ সংক্ষেপিত আকারে ছাপা হলো।


বাংলাদেশি নারীর প্রথম এভারেস্ট জয়
নিশাত মজুমদারের এভারেস্ট জয়ের এই কাহিনি পাঠককে বিপুলভাবে আপ্লুত করেছে। রুবেল রাজ নামে এক পাঠক লিখেছেন: এভারেস্ট-চূড়ায় বাংলাদেশের প্রথম নারী। অভিনন্দন, অভিনন্দন, অভিনন্দন। দেশের মানুষ দেশের চেয়ে যে এগিয়ে যাচ্ছে, এটা তারই আরেকটি উদাহরণ। ধন্যবাদ, নিশাত মজুমদার। আপনি আমাদের গর্ব, অহংকার। আপনার কাছ থেকে আমাদের নেত্রীদের অনেক কিছু শেখার আছে।
মো. নূরুজ্জামান খান: বাংলাদেশের প্রথম নারী হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করায় নিশাত মজুমদারকে অভিনন্দন। আশা করছি আগামীকালের পত্রিকায় প্রথম আলো যথাযথ লিড নিউজ করবে। এর আগে যেরকম করা হয়েছিল। (প্রথম আলো পত্রিকার ছাপা সংস্করণে পরদিন প্রথম পাতায় প্রধান সংবাদ হিসেবে ছাপা হয়েছে। বি.স)
কাইসুল খান আনাবিল: যেদিন তাঁর যাত্রা নিয়ে মিডিয়ায় একটি অনুষ্ঠানে নিশাতকে দেখেছিলাম। মনে হচ্ছিল তিনি আত্মবিশ্বাসী। আজ তাঁর সেই বিশ্বাসের সফল বাস্তবায়ন হয়েছে। কোনো অভিনন্দনই আপনার জন্য যথেষ্ট না। আপনি প্রমাণ করেছেন, আমাদের নারীরা আজ বিশ্ব জয় করতে পারেন। এই জয় সব নারীর জয়। ইতিহাস আপনাকে স্থান করে দিতে নতমস্তকে অপেক্ষা করছে।

এসএসসি ’১২ অদম্য মেধাবী যেন একেকটি হীরার টুকরা
নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় যারা অত্যন্ত ভালো ফল করেছে, তাদের কাহিনি উঠে এসেছে এই প্রতিবেদনে। শফিকুর রহমান লিখেছেন: গরিবের ঘরেও যে মেধা আছে, এই ফল তার প্রমাণ। আমাদের দেশে বৈষম্যমূলক শিক্ষাব্যবস্থার কারণে অনেক মেধা প্রস্ফুটিত হতে পারে না। ক্যাডেট কলেজ, সরকারি স্কুলের বাইরে কিছু স্কুল, যার বেশির ভাগ শহরে অবস্থিত, এদের পেছনে শিক্ষা বাজেটের অধিকাংশ খরচ হয়ে যায়। সরকার যদি এ ধরনের মেধাবীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি সুদমুক্ত শিক্ষাঋণের ব্যবস্থা করে, তাহলে ভালো হয়। পাশাপাশি ওরা লেখাপড়া শেষে চাকরিতে ঢুকে অল্প টাকা কিস্তিতে যাতে তা পরিশোধ করতে পারে, তার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
আহমদ ময়েজ: প্রতিবেদক ঠিকই বলেছেন—যেন একেকটা হীরার টুকরা। অথচ এই বাংলাদেশটাকে আমাদের রাজনৈতিক ব্যক্তিরা গড়তে পারলেন না। তাঁদের ব্যর্থতার জন্যই আজ রাষ্ট্রের সমস্ত দায়ভার মানুষ বহন করছে। মানুষ যখন হাজারো অভাবের মধ্য দিয়েও স্বপ্ন রচনা করে, তখন এই রাজনীতিবদেরা সেই স্বপ্নে ছাই ঢালেন। আমরা একজন ছাত্র লিমনের কথা ভুলিনি, যাকে র‌্যাব পঙ্গু করে দিয়েছে। সবশেষে ব্র্যাক ও প্রথম আলোর বৃত্তি-ভাতায় তারা যেন তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে সেই প্রত্যাশা রইল।
আরিপ হোসেন: স্যালুট আমার দেশের প্রকৃত সোনার ছেলেমেয়েদের। সত্যি ভাবতে অবাক লাগে, আমরা প্রতিদিন কত টাকা অপচয় করি। অথচ এই মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা তাদের পড়ালেখার খরচ জোগাতে নিজেই মাথার ঘাম পায়ে ফেলে। এদের দিকে যদি একটু তাকাই, তাহলে হয়তো এরাই একদিন আমাদের সম্মান বাড়াবে।

সুশাসন না থাকার কারণ দুর্নীতি
সুশাসনবিষয়ক এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এই মন্তব্য করেছেন। তাঁর এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কামরুল হাসান লিখেছেন: সুজন থাকলেই তো দেশে সুশাসন থাকবে। আমাদের দেশে তো দুর্জনের সংখ্যা বেশি, তাই সুশাসন এর দেখা পাওয়া দুষ্কর।
আজাদ: মাননীয় মন্ত্রী, আপনার কথা ঠিক। কিন্তু সুশাসন না থাকার জন্য আপনি, আপনার দলসহ সব রাজনৈতিক দলই দায়ী। আপনারা ইচ্ছা করলেই সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। আমরা শুধু আপনাদের কথা শুনি আর আফসোস করি।

তত্ত্বাবধায়কের দাবি নাকচ করলেন প্রধানমন্ত্রী
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী আরও একবার তাঁর সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন। কিন্তু অনেক পাঠক তাঁর এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত হননি। মো. শহিদুল ইসলাম লিখেছেন: ‘হ্যাঁ/না’ ভোট নিয়ে দেখুন, সাধারণ জনগণ কী চায়। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়। পারলে সারা জীবনের জন্য চায়।
গাজী দীন মাহমুদ টিটু: সব দল একই ধারায় চলে, এই নিয়ম বদলাবার নয়। আপনি কেন বদলাবেন! যদিও দিন বদলের কথা দিয়ে এসেছেন, দিন আপনাদের বদলাবে, জনগণের নয়।
মাসুম আলম: কাদের দানব বলছেন? সেদিন তো বলেছিলেন, তারা আপনার আন্দোলনের ফসল। তাদের শপথে কে গিয়েছিল—জাতি কিন্তু তা ভুলে যায়নি। আর আজ জনগণ যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলছে, তা আপনার সেই দানব নয়, জনগণ চায় বিচারপতি সাহাবুদ্দিনের মতো তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
কাওসার মাহমুদ: প্রধানমন্ত্রী, যখন ঘন ঘন লোডশোডিং হয়, তখন ছাত্রছাত্রীরা বেশি বিরক্ত হয়। আপনি সোজাসুজি বলে দেন না কেন, ২০২১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবেন যেকোনো কিছুর বিনিময়ে।
মাহতাফ হোসেন: প্রধানমন্ত্রী, আপনি যেটা বলেছেন, তা আপনার মনের কথা, মানুষের তথা জনগণের কথা নয়। এই মুহূর্তে দেশের কমপক্ষে ৮০ শতাংশ লোক তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়। আমি এ দেশের একজন নাগরিক এবং ভোটার, আমিও চাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি স্থায়ীভাবে বহাল করা হোক।
পি পত্রপুট: প্রধানমন্ত্রী, আমি আপনার সঙ্গে একমত। আপনি একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনে মন দিন। প্রমাণ করুন, আপনি গণতন্ত্রের বিপদ জানা সত্ত্বেও আস্থাশীল। প্রমাণ করুন জনপ্রতিনিধি নির্বাচন আস্থাশীল জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমেই সম্ভব। এটিই দেখতে সুন্দর যে একজন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী অপর নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর হাতে সহাস্যে দেশের তথা মানুষের দায়িত্বভার অর্পণ করছেন। আমরা গণতান্ত্রিক বোধসম্পন্ন, সহনশীল ও আধুনিক মনস্ক জাতি।

ইতিহাসের কাছে ঔপন্যাসিকের দায়
হুমায়ূন আহমেদের প্রকাশিতব্য উপন্যাস ‘দেয়াল’ সম্পর্কে অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেনের এই লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে গত শুক্রবার সাহিত্য সাময়িকীতে। এ সম্পর্কে তন্ময় রহমান লিখেছেন: যেখানে স্বাধীনতার ঘোষক কে—এই ঐতিহাসিক বিষয়টি এখনো আমরা জাতি হিসেবে নিষ্পত্তি করতে পারিনি, সেখানে একটা আস্ত ঐতিহাসিক উপন্যাস লিখতে গিয়ে এটুকু সমস্যা হওয়াটাই স্বাভাবিক! তবে সব খারাপেরই একটা ভালো দিক থাকে। দেয়াল-এর উপজাত হিসেবে মো. আনোয়ার হোসেনের এই অসাধারণ লেখাটা পড়ার সৌভাগ্য হয়ে গেল আমাদের। সব সমস্যা কাটিয়ে বেরিয়ে আসুক ‘দেয়াল’। আমরা পাঠক তারই প্রতীক্ষায় রইলাম।
সাফিজ: ইতিহাসকে ভিত্তি করে নির্মিত অনেক ছবি দেখেছি, অনেক উপন্যাস পড়েছি। শতভাগ মিল কোথাও থাকা সম্ভব নয়। সত্য ঘটনার ওপর নির্মিত ছবির শুরুতে লেখা থাকে ‘based on a true story’। কিন্তু এটা লেখা থাকে না, ‘a true story’। এই দেশের নাম বাংলাদেশ! এটা বুঝতে হবে। অন্য কোন দেশ হলে এটা নিয়ে কোনো কথাবার্তা হতো না।

আমাদের কাঁধে শিক্ষকের লাশ
বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের ওপর পুলিশের লাঠিপেটা, পরবর্তীতে এক শিক্ষকের মৃত্যু—সামগ্রিক বিষয়টি ‘প্রথম আলো’র পাঠকদের জন্য তুলে ধরেছিলেন ফারুক ওয়াসিফ। তাঁর লেখার প্রতিক্রিয়ায় আহমেদ বুলবুল লিখেছেন: ইংরেজ পরিদর্শকের কুকুরের জন্য ৭৫ টাকা ব্যয় হতো। কিন্তু পণ্ডিত মশাইয়ের বেতন ছিল ২৫ টাকা। কুকুরটির এক পায়ের সমান বেতন পেতেন পণ্ডিতমশাই। তাঁর সংসারে সদস্য ছিল আটজন। সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘পণ্ডিতমশাই’ গল্পটির তথ্য এ রকমই ছিল। এখনো বোঝা যায়, শিক্ষকেরা আগেও কত অবহেলিত ছিলেন এবং এখনো কতটা আছেন।
মো. রেজাউল করিম: মন্তব্য করার সব সাহসই হারিয়ে ফেলেছি। শুধু এটুকুই বলব—আজ সত্যিই আমরা খুব ছোট হয়ে গেলাম।
(পাঠকের মতামত বিস্তারিত পড়তে ও আপনার মতামত জানাতে ভিজিট করুন prothom-alo.com)

No comments

Powered by Blogger.