একসঙ্গে রুখে দাঁড়াতে হবে-বখাটে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ

সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত গণমাধ্যম সম্পাদক, সাংস্কৃতিক আন্দোলনের নেতা ও ব্যক্তিত্বসহ সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আলোচনায় নারী, বিশেষত ছাত্রীদের উত্ত্যক্তকারীর বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার যে আহ্বান জানানো হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ।


তবে পরিস্থিতি যে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে, তাতে একই সঙ্গে আইনের কঠোর প্রয়োগেরও বিকল্প নেই। নারায়ণগঞ্জে ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করার দায়ে ছয় বখাটেকে গ্রেপ্তার করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির এবং তাদের সাত দিন করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ রকম দৃষ্টান্তস্থানীয় ত্বরিত পদক্ষেপ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে। প্রয়োজনে বখাটেদের সুনির্দিষ্ট অভিযোগে গ্রেপ্তার করে দ্রুত বিচার আইনে দেওয়া যেতে পারে।
বখাটে ছেলেদের উত্ত্যক্ততায় অতিষ্ঠ হয়ে একের পর এক কিশোরী ও তরুণী যখন বাধ্য হয়ে আত্মহত্যা করছে, তখন গত ২৮ এপ্রিল জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান বলেছেন, নারী নিজের কারণেই উত্ত্যক্ত হয়। এই উক্তি বখাটে সন্ত্রাসীদের আরও বেপরোয়া করে তুলবে। বখাটে ছেলেরা নারীদের উত্ত্যক্ত করেই ক্ষান্ত হয় না, তাদের অপহরণসহ নির্যাতন ও হত্যা করে। এমনকি ঘর থেকে মেয়েকে জোর করে তুলে নিতে চাইলে বাধা দেওয়ায় মা-বাবাকে গুলি করে হত্যা ঘটনাও ঘটেছে। এখন বখাটে খুনিদের পক্ষ নিয়ে জামায়াত নেতা দায়ী করছেন হত্যার শিকার সেই নির্যাতিত নারীদের। খারাপ কাজের নিন্দা না করে যারা বখাটেপনার যৌক্তিকতা খুঁজে বেড়ায়, তারা সমাজের চোখে সেই বখাটেদের দোসর ছাড়া আর কিছু নয়।
স্কুলে যাওয়া-আসার পথে বখাটেরা উৎপাত করে, জামায়াত নেতা কি বলতে চান যে মেয়েদের স্কুলে পড়া বন্ধ করতে হবে? পয়লা বৈশাখ বা জাতীয় উৎসবে চিরকাল ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও অংশ নিয়েছে। কিছু উচ্ছৃঙ্খল ছেলে যদি এর সুযোগ নিয়ে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে, নির্যাতন করে; তাহলে আইনের চোখে সেই উত্ত্যক্তকারীকেই দায়ী করতে হবে।
সরকার বখাটেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। অনেক উত্ত্যক্তকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে। এদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। পাশাপাশি প্রতিটি এলাকায়, বিশেষভাবে মেয়েদের স্কুলকে কেন্দ্র করে শিক্ষক, অভিভাবক ও এলাকার জনগণের সমন্বয়ে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সম্মিলিতভাবে রুখে দাঁড়ানো এখন সময়ের দাবি।

No comments

Powered by Blogger.