শ্রদ্ধাঞ্জলি-গণমানুষের কাছের এক নেতা by মো. মুজিবুর রহমান
আজ ৭ মে, শুক্রবার। ছয় বছর আগে সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হয়েছিলেন জননেতা আহসানউল্লাহ মাস্টার। গাজীপুর-২ আসনের আওয়ামী লীগের সাংসদ ও জাতীয় শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতি আহসানউল্লাহ মাস্টার ছিলেন স্থানীয় জনগণ ও সারা দেশের শ্রমিকদের অত্যন্ত প্রিয়জন, সবার শ্রদ্ধেয় ‘স্যার’।
আহসানউল্লাহ মাস্টারের জন্ম ১৯৫০ সালের ৯ নভেম্বর, তৎকালীন ঢাকা জেলার (বর্তমান গাজীপুর) পুবাইল ইউনিয়নের হায়দরাবাদ গ্রামে। রেলপথ ঘেঁষে ছবির মতন সাজানো ছায়া ঢাকা পাখি ডাকা একটি সুন্দর গ্রাম হায়দরাবাদ।
আহসানউল্লাহর শিক্ষাজীবন শুরু হয় নিজ গ্রামের হায়দরাবাদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষাজীবন শেষ করে টঙ্গী হাইস্কুলে ভর্তি হন তিনি। ১৯৬২ সালে হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে রাজনীতিতে তাঁর হাতেখড়ি। তখন তিনি ছাত্রলীগ করতেন। আহসানউল্লাহ ১৯৬৫ সালে এসএসসি পাস করে তৎকালীন কায়েদে আযম কলেজে (বর্তমান শহীদ সোহরাওয়ার্দী সরকারি কলেজ) একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুঘোষিত বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা দাবি নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা যখন রাজপথে, তখনো আহসানউল্লাহ রাজপথের সাহসী সৈনিক। ১৯৬৯ সালে ১১ দফার আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন তিনি।
১৯৭০ সালে ডিগ্রি পাস করার পর আহসানউল্লাহ টঙ্গীর নোয়াগাঁও এম এ মজিদ মিয়া হাইস্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীকালে তিনি ওই স্কুলে সহকারী প্রধান শিক্ষক (১৯৭৭-১৯৮৪) ও প্রধান শিক্ষকের (১৯৮৪-২০০৪) দায়িত্ব আমৃত্যু যোগ্যতার সঙ্গে পালন করেন। আহসানউল্লাহ মাস্টার টঙ্গী এলাকার শিক্ষকদের নেতা ছিলেন। টঙ্গীর শিক্ষক সমিতির সভাপতি হিসেবে শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি আদায়ের সব কার্যক্রমে অংশ নিয়ে সবার প্রিয়ভাজন হয়ে ওঠেন।
আহসানউল্লাহ মাস্টার ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার আগে তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে আটক ও নির্যাতিত হয়েছিলেন। ভারতের দেরাদুনের তান্দুয়া থেকে গেরিলা ট্রেনিং নিয়ে পুবাইল, টঙ্গী, ছয়দানাসহ বিভিন্ন জায়গায় গেরিলা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
১৯৮৩ সালের পুবাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচন থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদ—প্রতিটি নির্বাচনে তিনি জয়ী হয়েছেন বিপুল ভোটে। ১৯৮৮ সালে পুবাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯২ সালে ক্ষমতাসীন বিএনপি সরকার উপজেলা পদ্ধতি বিলোপ করে দেয়। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী যে আন্দোলন হয়, তাতে নেতৃত্ব দেন আহসানউল্লাহ মাস্টার।
আহসানউল্লাহ মাস্টার ছিলেন একজন ব্যতিক্রমী নেতা, যিনি নিজের আরাম-আয়েশের কথা ভাবেননি, গণমানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন। এলাকাকে মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত রাখতে যখন তিনি জোরদার আন্দোলন গড়ে তোলেন, তখনই কুচক্রীরা তাঁর ওপর চূড়ান্ত আঘাত হানে। তাঁর জ্যেষ্ঠ ছেলে মো. জাহিদ আহসান রাসেল বর্তমানে জাতীয় সংসদের সদস্য, ছোট ছেলে জাবিদ আহসান সোহেল বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।
আহসানউল্লাহ মাস্টার এলাকার উন্নয়নের পাশাপাশি শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি আদায়েও বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন। জাতীয় শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এর আগে তিনি ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এ ছাড়া আহসানউল্লাহ মাস্টার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) চেয়ারম্যান ছিলেন।
জনকল্যাণকে আহসানউল্লাহ মাস্টার ব্রত হিসেবে নিয়েছিলেন। অসুস্থ রাজনীতি থেকে তিনি নিজেকে সযত্নে দূরে রাখতে পেরেছিলেন। এ কারণেই তাঁর হত্যাকাণ্ডের খবর শুনে গাজীপুরসহ সারা দেশের মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। মাটি ও মানুষের প্রতি তাঁর নাড়ির যে টান ছিল, তা সহজেই অনুমেয়। আহসানউল্লাহ মাস্টার ছিলেন পরীক্ষিত দেশপ্রেমিক। আহসানউল্লাহ মাস্টার ছিলেন গণমানুষের কাছাকাছি একজন রাজনীতিক ও শ্রমিক নেতা। রাজনীতি যখন পেশি ও অর্থশক্তির হাতে বন্দী, তখন এই ব্যতিক্রমী রাজনীতিকের নীতি ও আদর্শঅনুকরণীয়।তিনি একটি দলের নেতা ছিলেন, কিন্তু এলাকায় দলমতনির্বিশেষে সুব শ্রেণীর মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা কুড়িয়েছেন। তাঁর আদর্শবাদ আমাদের প্রেরণা জোগাবে, তাঁর সাহস আমাদের পথ চলতে সহায়ক হবে।
তাঁর ঘাতকেরা শাস্তি পেয়েছে, এটি স্বস্তির কথা। কিন্তু তিনি যে অপশক্তির বিরুদ্ধে আজীবন লড়াই করেছেন, সেই অপশক্তিকে সমাজ থেকে নির্মূল করা যায়নি। আজ সেই অপশক্তির বিরুদ্ধে শুভবোধের জাগরণ ঘটুক—আহসানউল্লাহ মাস্টারের মৃত্যুবার্ষিকীতে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
আহসানউল্লাহর শিক্ষাজীবন শুরু হয় নিজ গ্রামের হায়দরাবাদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষাজীবন শেষ করে টঙ্গী হাইস্কুলে ভর্তি হন তিনি। ১৯৬২ সালে হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে রাজনীতিতে তাঁর হাতেখড়ি। তখন তিনি ছাত্রলীগ করতেন। আহসানউল্লাহ ১৯৬৫ সালে এসএসসি পাস করে তৎকালীন কায়েদে আযম কলেজে (বর্তমান শহীদ সোহরাওয়ার্দী সরকারি কলেজ) একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুঘোষিত বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা দাবি নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা যখন রাজপথে, তখনো আহসানউল্লাহ রাজপথের সাহসী সৈনিক। ১৯৬৯ সালে ১১ দফার আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন তিনি।
১৯৭০ সালে ডিগ্রি পাস করার পর আহসানউল্লাহ টঙ্গীর নোয়াগাঁও এম এ মজিদ মিয়া হাইস্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীকালে তিনি ওই স্কুলে সহকারী প্রধান শিক্ষক (১৯৭৭-১৯৮৪) ও প্রধান শিক্ষকের (১৯৮৪-২০০৪) দায়িত্ব আমৃত্যু যোগ্যতার সঙ্গে পালন করেন। আহসানউল্লাহ মাস্টার টঙ্গী এলাকার শিক্ষকদের নেতা ছিলেন। টঙ্গীর শিক্ষক সমিতির সভাপতি হিসেবে শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি আদায়ের সব কার্যক্রমে অংশ নিয়ে সবার প্রিয়ভাজন হয়ে ওঠেন।
আহসানউল্লাহ মাস্টার ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার আগে তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে আটক ও নির্যাতিত হয়েছিলেন। ভারতের দেরাদুনের তান্দুয়া থেকে গেরিলা ট্রেনিং নিয়ে পুবাইল, টঙ্গী, ছয়দানাসহ বিভিন্ন জায়গায় গেরিলা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
১৯৮৩ সালের পুবাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচন থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদ—প্রতিটি নির্বাচনে তিনি জয়ী হয়েছেন বিপুল ভোটে। ১৯৮৮ সালে পুবাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯২ সালে ক্ষমতাসীন বিএনপি সরকার উপজেলা পদ্ধতি বিলোপ করে দেয়। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী যে আন্দোলন হয়, তাতে নেতৃত্ব দেন আহসানউল্লাহ মাস্টার।
আহসানউল্লাহ মাস্টার ছিলেন একজন ব্যতিক্রমী নেতা, যিনি নিজের আরাম-আয়েশের কথা ভাবেননি, গণমানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন। এলাকাকে মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত রাখতে যখন তিনি জোরদার আন্দোলন গড়ে তোলেন, তখনই কুচক্রীরা তাঁর ওপর চূড়ান্ত আঘাত হানে। তাঁর জ্যেষ্ঠ ছেলে মো. জাহিদ আহসান রাসেল বর্তমানে জাতীয় সংসদের সদস্য, ছোট ছেলে জাবিদ আহসান সোহেল বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।
আহসানউল্লাহ মাস্টার এলাকার উন্নয়নের পাশাপাশি শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি আদায়েও বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন। জাতীয় শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এর আগে তিনি ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এ ছাড়া আহসানউল্লাহ মাস্টার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) চেয়ারম্যান ছিলেন।
জনকল্যাণকে আহসানউল্লাহ মাস্টার ব্রত হিসেবে নিয়েছিলেন। অসুস্থ রাজনীতি থেকে তিনি নিজেকে সযত্নে দূরে রাখতে পেরেছিলেন। এ কারণেই তাঁর হত্যাকাণ্ডের খবর শুনে গাজীপুরসহ সারা দেশের মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। মাটি ও মানুষের প্রতি তাঁর নাড়ির যে টান ছিল, তা সহজেই অনুমেয়। আহসানউল্লাহ মাস্টার ছিলেন পরীক্ষিত দেশপ্রেমিক। আহসানউল্লাহ মাস্টার ছিলেন গণমানুষের কাছাকাছি একজন রাজনীতিক ও শ্রমিক নেতা। রাজনীতি যখন পেশি ও অর্থশক্তির হাতে বন্দী, তখন এই ব্যতিক্রমী রাজনীতিকের নীতি ও আদর্শঅনুকরণীয়।তিনি একটি দলের নেতা ছিলেন, কিন্তু এলাকায় দলমতনির্বিশেষে সুব শ্রেণীর মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা কুড়িয়েছেন। তাঁর আদর্শবাদ আমাদের প্রেরণা জোগাবে, তাঁর সাহস আমাদের পথ চলতে সহায়ক হবে।
তাঁর ঘাতকেরা শাস্তি পেয়েছে, এটি স্বস্তির কথা। কিন্তু তিনি যে অপশক্তির বিরুদ্ধে আজীবন লড়াই করেছেন, সেই অপশক্তিকে সমাজ থেকে নির্মূল করা যায়নি। আজ সেই অপশক্তির বিরুদ্ধে শুভবোধের জাগরণ ঘটুক—আহসানউল্লাহ মাস্টারের মৃত্যুবার্ষিকীতে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
No comments