চিরতরে দখলমুক্ত করার দায়িত্ব এখন সরকারের-নদী বাঁচাতে উচ্চ আদালতের রায়

বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা নদী না বাঁচলে ঢাকার অস্তিত্ব বিপন্ন হবে—এই সত্য জানতে ঢাকার নদী ও পরিবেশের দিকে তাকানোই যথেষ্ট। তাহলেও সর্বোচ্চ আদালতের একটি রায়ের প্রয়োজন ছিল। গত সোমবার আপিল বিভাগ ওই চার নদ-নদীর ওপর গড়া সব ধরনের স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ বহাল রেখে সেই সত্য ঘোষণা করেছেন।


এই রায় বাস্তবায়িত হলে প্রকৃতি বাঁচবে, মানুষও হবে উপকৃত।
দীর্ঘদিন থেকে নাগরিক মহলে ঢাকার নদ-নদীগুলো দখল ও দূষণমুক্ত করার জোরদার দাবি ছিল; কিন্তু কথায় কাজ হয়নি। অবশেষে একটি পরিবেশবাদী সংগঠনের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ২৫ জুন হাইকোর্ট ওই চার নদীর সীমানা নির্ধারণ করে নদীর ভেতরের সব স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ দেন। কিন্তু নদী গ্রাসকারী কয়েকটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান আপিলের মাধ্যমে রায় বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করে। অবশেষে গত সোমবার আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ে সেই বাধাও অপসারিত হলো। এখন আর নদীর এলাকা নদীকে ফিরিয়ে দিতে কোনো বাধা বা ওজর-আপত্তি ধোপে টিকবে না। অন্যদিকে জবরদখলকারীরাও শক্তিশালী; তাদের কাছে মানুষ ও প্রকৃতির স্বার্থের চেয়ে বাণিজ্যটাই বড়। এদের হাত থেকে নদীকে মুক্ত করতে হলে সরকারকে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও সদিচ্ছা দেখাতে হবে। সেই কাজের আইনি শক্তি সরকারের রয়েছে। অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার যদি র‌্যাংগস ভবন ভেঙে সড়ক তৈরি করতে পারে, তাহলে নির্বাচিত সরকার কেন নদী বাঁচানোয় পিছপা হবে? এই ভূখণ্ডের মানুষ ও প্রকৃতির দায়িত্ব সরকারের ওপরই বর্তায়।
এই চার নদীতে বড় বড় কারখানার বাইরেও ছোট-বড় অজস্র অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। এদের বিরুদ্ধে মামুলি উচ্ছেদ অভিযান সমুদ্রে ঢিল ছোড়ার মতোই অর্থহীন। দরকার ব্যাপক, আপসহীন ও নিঃস্বার্থ রাষ্ট্রীয় আলোড়ন ও জাতীয় উদ্যোগ। সর্বনাশের ষোলোকলা যেখানে পূর্ণ, সেখানে প্রতিকারের সর্বশক্তি ছাড়া সুফল পাওয়া দুরাশামাত্র। তাই উচ্চ আদালতের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালিত হতে হবে। কেবল অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করলেই হবে না, ভবিষ্যতের দখলদারদের থাবা থেকে সুরক্ষার বন্দোবস্তও করতে হবে। নদীর সীমানা সুস্পষ্ট করে, দুই পাড় বাঁধিয়ে উদ্যান করে দিতে হবে। দখল ও দূষণ ঠেকাতে নদী-পুলিশ গঠন করে নিয়মিত নজরদারি চলতে হবে। ঢাকার প্রাণভোমরা ওই চার নদ-নদী। এগুলো না বাঁচলে যে আমরাও বাঁচব না, সেই হুঁশ আজ খুবই জরুরি।

No comments

Powered by Blogger.