কালের আয়নায়-এক-এগারো এবং মইন-ফখরুদ্দীনের ওপর বিএনপি এত নাখোশ কেন? by আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী
জেনারেল মইন 'জিয়া হতে চেয়েছিলেন' বা বিএনপির প্রতি আনুগত্য হারিয়ে ক্ষমতার লোভে এক-এগারোর ঘটনা ঘটিয়েছিলেন এটা সর্বাংশে সঠিক বলে অনেকে মনে করেন না। তারা মনে করেন, দেশের ভেতরের ও বাইরের শক্তিশালী মহলের চাপেই তিনি এবং তার সমমতের সেনা কর্মকর্তারা এক-এগারো সংঘটন এবং মাইনাস টু থিয়োরি বাস্তবায়নে এগিয়েছিলেন
ঢাকার একটি দৈনিকে খালেদা জিয়ার একটি মজার মন্তব্য পাঠ করলাম। তিনি এক-এগারোর আমলের সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদ সম্পর্কে নানা কটু-কাটব্য করে মন্তব্য করেছেন, 'মইন চেয়েছিলেন জিয়া (জিয়াউর রহমান) হতে।' মন্তব্যটি দ্ব্যর্থবোধক। এর এক অর্থ হতে পারে, জিয়াউর রহমানের মতোই জেনারেল মইন ক্ষমতা দখল করতে চেয়েছিলেন। অন্য অর্থ হতে পারে, তিনি একই চরিত্রের (শঠতা, চক্রান্ত ও মুক্তিযোদ্ধা-হত্যা) অধিকারী হতে চেয়েছিলেন। খালেদা জিয়া কোন অর্থে কথাটি বলতে চেয়েছেন, নাকি দুই অর্থেই বলেছেন, তা বিএনপি নেত্রী নিজে ব্যাখ্যা করে না বললে আমরা শুধু অনুমান করতে পারি।
জেনারেল মইনের ওপর খালেদা জিয়ার ভয়ানক রাগ। তিনি অনেককে ডিঙিয়ে তাকে সেনাপ্রধান করেছিলেন। আশা করেছিলেন, বিনিময়ে জেনারেল মইন সাবেক বিএনপি-জামায়াত সরকার ও হাওয়া ভবনের আনুগত্য মেনে চলবেন। চাই কি খালেদা জিয়া তার হাতের পুতুল রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনের মাধ্যমে যে ইলেকশন মেকানিজম ও ম্যানুভারিং দ্বারা আবার ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিলেন, তাতেও জেনারেল মইন তার সেনাবাহিনী নিয়ে চোখ বুজে সমর্থন জানাবেন।
গোড়ার দিকে জেনারেল মইন তাই করেছেন। নইলে সংবিধানসম্মতভাবে ২০০৬ সালে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়েছিল, তা ভেঙে দিয়ে ইয়াজউদ্দিন যখন অবৈধভাবে নিজে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ দখল করে সর্বময় ক্ষমতা নিজের হাতে তুলে নিয়েছিলেন (চালিত হতেন একটি লাল টেলিফোনের মাধ্যমে খালেদা জিয়া ও তার পুত্র তারেক রহমানের নির্দেশে), তখন সামরিক বাহিনীর সমর্থন ছাড়া তা তিনি করতে পারতেন না। নিজের হাতে সর্বময় ক্ষমতা নেওয়ার পর ইয়াজউদ্দিন সেনাপ্রধানদের এক সমাবেশে স্পষ্টভাবে তার সরকার সম্পর্কে বলেছিলেন, 'এটা এখন আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়, প্রেসিডেন্সিয়াল সরকার।'
জেনারেল মইন সম্ভবত ইচ্ছা করলে এবং অন্যান্য সেনা কর্মকর্তা তার পেছনে ঐক্যবদ্ধ থাকলে তখনই এই অবৈধ প্রেসিডেন্সিয়াল সরকারের কর্তৃত্ব অস্বীকার করতে পারতেন, তিনি তা করেননি। বরং রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন 'নামের খসম আজিজের' মতো বিএনপি নেত্রীর অঙ্গুলি হেলনে চালিত হয়ে সংবিধান লঙ্ঘন করে দেশ শাসন করছেন, এটা জেনেও এই সরকারকে আনুগত্য প্রদান করেছেন এবং ইয়াজউদ্দিনের মাধ্যমে বিএনপি বিরাটভাবে ইলেকশন মেকানিজম দ্বারা আবার ক্ষমতায় আসার যে চক্রান্ত চলছিল তার দিকে চোখ মুদে ছিলেন। কেন জেনারেল মইন তখন চোখ মুদে ছিলেন, তার ব্যাখ্যা তিনি পরবর্তীকালে তার স্মৃতিকথায় দেননি। ভবিষ্যতেও দেবেন কি-না জানি না।
পরে তিনি কেন দেশে ইয়াজউদ্দিন সরকারের অবৈধ তৎপরতা সম্পর্কে সচেতন হলেন এবং একটি নিশ্চিত গৃহযুদ্ধ থেকে দেশকে রক্ষায় এগিয়ে এলেন, তার কারণ সম্পর্কে এখন একেকজন একেক রকম অনুমান করেন। কেউ বলেন, তারেক রহমান যখন জেনারেল মইনের চেয়েও অনুগত ও বশংবদ এক সেনা কর্মকর্তাকে (বর্তমানে তিনি কারাগারে) সেনাপ্রধান করার সব গোপন ব্যবস্থা সমাধা করে ফেলেছেন এবং রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন তাতে সম্মতি জানিয়ে আদেশপত্রে সই দিতে যাচ্ছেন, সেই মুহূর্তে খবর পেয়ে জে. মইন বঙ্গভবন ঘেরাও করেন। সর্বপ্রথম ওই সেনা কর্মকর্তাকে বঙ্গভবন থেকে অপসারণ করা হয়। বিএনপি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিবকে চড়-থাপ্পড় দিয়ে বঙ্গভবন থেকে বের করে দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানের পদ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করা হয়। সেনাপ্রধানদের হ্যান্ডপিক্ড ড. ফখরুদ্দীন আহমদকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানের পদে বসানো হয়। অর্থাৎ পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সব নেপথ্য খেলার এখানেই শেষ।
এক-এগারোর কেয়ারটেকার গভর্নমেন্টের প্রধান ড. ফখরুদ্দীন আহমদের ওপরও খালেদা জিয়া ও বিএনপির শীর্ষ এবং পাতি নেতারাও ক্ষুব্ধ। কথায় কথায় তারা জে. মইনের সঙ্গে ড. ফখরুদ্দীনেরও বিচার দাবি করেন। এরও কারণ, ফখরুদ্দীন আহমদও বিএনপির প্রতি আনুগত্য ও বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন বলে নিশ্চয়ই তারা মনে করেন। ফখরুদ্দীন আহমদ দীর্ঘকাল বিশ্বব্যাংকের চাকরির কারণে বিদেশে বসবাস করায় দেশে তেমন উল্লেখযোগ্য বা পরিচিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন না। বিএনপির অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানই তাকে বিদেশ থেকে টেনে এনে অনেককে ডিঙিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর করে দেন।
এই গভর্নর পদ ছাড়ার পরও ফখরুদ্দীনকে আরেকটি চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। খালেদা জিয়া নিশ্চয়ই তার কাছ থেকেও অটুট আনুগত্য আশা করেছিলেন। ফখরুদ্দীন সেই আশা পূর্ণ করেননি; বরং জে. মইনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিএনপির ক্রীড়নক ইয়াজউদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছারখার করে দিয়ে নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হন। এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ এসেছে। বিএনপি তা বয়কট করেছে।
জেনারেল মইন 'জিয়া হতে চেয়েছিলেন' বা বিএনপির প্রতি আনুগত্য হারিয়ে ক্ষমতার লোভে এক-এগারোর ঘটনা ঘটিয়েছিলেন এটা সর্বাংশে সঠিক বলে অনেকে মনে করেন না। তারা মনে করেন, দেশের ভেতরের ও বাইরের শক্তিশালী মহলের চাপেই তিনি এবং তার সমমতের সেনা কর্মকর্তারা এক-এগারো সংঘটন এবং মাইনাস টু থিয়োরি বাস্তবায়নে এগিয়েছিলেন। তা সাহসের সঙ্গে প্রতিরোধ করেছেন শেখ হাসিনা। অন্যদিকে খালেদা জিয়া সেনানিয়ন্ত্রিত সরকারের সব নির্দেশ মেনে নিয়ে (এমনকি তারেকের রাজনীতি ত্যাগ ও স্বেচ্ছানির্বাসনে বিদেশ যাওয়া), কেবল কিছুদিন সাবজেলে কাটিয়েই শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের আন্দোলনের সব সাফল্যের ভাগ নিয়েছেন এবং এক-এগারোর নায়কদের বিরুদ্ধে আবার সুযোগ বুঝে আপসহীন নেত্রীর চেহারা ধারণ করেছেন।
এক-এগারোর আগে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল যে, জাল ভোটার তালিকা প্রণয়ন, নির্বাচন কমিশন দলীয়করণ এবং রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনের মুঠোবন্দি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে বিএনপি বিরোধী দলগুলোর সব আপত্তি অগ্রাহ্য করে এমন এক নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে চায়, যার ফলে বাংলাদেশে নৈরাজ্য ও অরাজকতা দেখা দেওয়া অনিবার্য ছিল। দাতা দেশগুলো, বিশেষ করে আমেরিকা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় দেখতে চায়নি; কিন্তু দেশটিতে নিজেদের অর্থলগি্নর নিরাপত্তার স্বার্থেই চেয়েছে অরাজকতা ঠেকাতে। পশ্চিমা কূটনীতিক, বিশেষ করে ব্রিটেন ও আমেরিকার রাষ্ট্রদূতদের তখনকার কথাবার্তা ও তৎপরতা দেখেই এটা স্পষ্ট বোঝা যায়।
অন্যদিকে রাজনীতি থেকে দুই নেত্রীকে অপসারণ (আসল টার্গেট ছিলেন শেখ হাসিনা), নির্বাচন অথবা মনোনয়ন যে কোনো পদ্ধতিতে বাংলাদেশে একটি সিভিল এলিট ক্লাসের সরকার প্রতিষ্ঠা এবং তদ্বারা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা স্থায়ী করার একটা পেট থিয়োরি প্রচার করা শুরু করে দেশের একটি বিশেষ সুশীল সমাজ। এই তত্ত্বের প্রধান উদ্ভাবক ছিলেন ড. কামাল হোসেন এবং তার সহমতের 'সুশীল' বুদ্ধিজীবীরা। যাদের মধ্যে ড. ইউনূস, রেহমান সোবহান এবং আরও অনেককে ধরা যায়।
এক-এগারোর আগের ঘটনাপঞ্জির দিকে তাকালে দেখা যাবে, এক-এগারো ঘটার ঠিক আগে ড. কামাল হোসেন তুচ্ছ অজুহাতে বিনা ঘোষণায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ত্যাগ করেন এবং এক-এগারোর আমলে শেখ হাসিনাকে সাবজেলে বন্দি রেখে তার বিরুদ্ধে যেসব মামলা-মোকদ্দমা করা হয়, তাতে শেখ হাসিনার আইনজীবী হিসেবে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানান। অন্যদিকে ড. ইউনূসের নিজেরই এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হওয়ার কথা ছিল। কৌশলগত কারণে তিনি এই পদ গ্রহণ করেননি। তার মনোনয়নে, বলতে গেলে তখনকার প্রায় অজ্ঞাত কুলশীল ফখরুদ্দীন আহমদকে ধরে বেঁধে এনে সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের পদে বসিয়ে দেওয়া হয়। বেচারার হাতে কোনো ক্ষমতা ছিল না, তিনি ক্ষমতা পরিচালনাও করেননি। তিনি একটি চাকরি পেয়েছেন এবং হুকুম মেনে চাকরি করেছেন। এটা যদি অপরাধ হয়, তাহলে তার চাকরিদাতাদেরও কি একই অপরাধের জন্য বিচার হওয়া উচিত নয়?
ড. ফখরুদ্দীনের হাতে তখন যে কোনো ক্ষমতাই ছিল না, তার একটা প্রমাণ দিই। বাংলাদেশের সংবাদপত্রগুলো তখন নিউজপ্রিন্টের ওপর ধার্য করা বিরাট শুল্কের জন্য সমস্যায় ভুগছিল। তাদের দাবি ছিল এই শুল্ক হ্রাস অথবা বিলোপের। সেনানির্ভর তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধানের কাছে এ দাবি জানানোর সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু একটি 'নিরপেক্ষ' ইংরেজি দৈনিকের সম্পাদক প্রস্তাব দেন, এ দাবি নিয়ে সরকারপ্রধান ফখরুদ্দীন আহমদের কাছে না গিয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল মইনের কাছে যাওয়া যাক। কারণ, আসল ক্ষমতা তার হাতে।
কিন্তু সেনাপ্রধান জে. মইনের কাছে কীভাবে পেঁৗছা যায়? শেষ পর্যন্ত ইংরেজি দৈনিকের সম্পাদক দেশের প্রবীণ সাংবাদিক এবিএম মূসাকে ধরেন। তার সঙ্গে জে. মইনের হৃদ্যতা রয়েছে এবং জে. মইন মূসা সম্পর্কে বলেছেন, 'তিনি আমাদের জাতীয় মুরবি্ব (মঁধৎফরধহ)।' মূসার মধ্যস্থতায় জে. মইনের সঙ্গে সম্পাদকদের এই বৈঠকটি হয় এবং তাদের দাবি-দাওয়া জেনারেল মন দিয়ে শোনেন। তিনি ভদ্রলোক। ফখরুদ্দীনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারটি যে তার হুকুমবরদার নয়, তা দেখানোর জন্য সম্পাদকদের তিনি জানান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধানই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের মালিক। তিনি নিউজপ্রিন্টের ওপর ধার্য শুল্ক কমানোর জন্য সরকারপ্রধানকে অনুরোধ জানাবেন। বলাবাহুল্য, তিনি এই অনুরোধ জানিয়েছিলেন কি-না কে বলবে; কিন্তু তার হুকুম তামিল হয়েছিল।
এই ইংরেজি দৈনিকের সম্পাদক এবং তার বাংলা সহযোগী দৈনিকের সম্পাদকও ছিলেন এক-এগারো এবং মাইনাস টু থিয়োরির সমর্থক। এখন তারা সাধু সেজে এক-এগারোর যতই নিন্দা করুন, তাদের মাইনাস টু থিয়োরির পক্ষে (তাদেরও আসল টার্গেট ছিলেন শেখ হাসিনা) জোরালো অবস্থান, সম্পাদকীয় ও উপ-সম্পাদকীয়তে জোরালো সমর্থন দান এত শিগগির তো কারও ভুলে যাওয়ার কথা নয়।
আমার ধারণা (সঠিক কি-না তিনিই বলতে পারেন), জেনারেল মইনের হয়তো ক্ষমতা হাতে পাওয়ার পর দেশের রাষ্ট্রপতি হওয়ার খায়েস হয়েছিল। কিন্তু জিয়া হওয়ার সাধ ও সাধ্য কোনোটাই তার ছিল না। তিনি জেনারেল জিয়া এবং জেনারেল এরশাদের মতো চক্রান্ত করেও ক্ষমতায় আসেননি। দেশের এবং বিদেশের একাধিক শক্তিশালী মহলের (পশ্চিমা দেশসহ) চাপে তিনি ক্ষমতায় এসেছিলেন (নইলে বাংলাদেশে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ ঠেকানো যেত না) এবং তাদের চাপেই ক্ষমতা ছেড়ে চলে গেছেন। যাওয়ার আগে একটি ভালো কাজ করে গেছেন, তা হলো সঠিক ভোটার তালিকা প্রণয়ন করে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা। মাঝখানে সামরিক বাহিনীর একশ্রেণীর কর্মকর্তা যদি দুর্নীতি, নির্যাতন, লুটপাটের সব সীমা অতিক্রম না করতেন এবং নির্দিষ্ট সময়ে ক্ষমতা ত্যাগ করতেন, তাহলে এক-এগারোর বিরুদ্ধে বর্তমানের হুজুগে সমালোচনার অবকাশ হয়তো থাকত না।
এক-এগারোর উদ্ভাবক এবং তাকে সমর্থন ও সহায়তাদানকারীদের মধ্যে যেমন রয়েছে বিদেশি কয়েকটি দেশ, তেমনি রয়েছে দেশের সুশীল সমাজের একাংশ, ড. কামাল হোসেন, ড. ইউনূসের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব, নিরপেক্ষতার দাবিদার দুটি প্রচারবহুল সংবাদপত্র এবং জানা-অজানা অনেক চক্র। যদি এক-এগারোর জন্য জেনারেল মইন ও ড. ফখরুদ্দীনের বিচার করতে হয়, তাহলে এই এক-এগারো এবং 'মাইনাস টু থিয়োরি'র যারা আসল উদ্ভাবক এবং তা কার্যকর করার উদ্যোগের প্রধান দোসর, তাদেরও কেন বিচার হবে না, তা আমি বুঝতে পারি না। বিএনপি নেত্রী কেন তাদের নাম মুখে আনেন না?
লন্ডন, ১০ জুন শুক্রবার, ২০১১
জেনারেল মইনের ওপর খালেদা জিয়ার ভয়ানক রাগ। তিনি অনেককে ডিঙিয়ে তাকে সেনাপ্রধান করেছিলেন। আশা করেছিলেন, বিনিময়ে জেনারেল মইন সাবেক বিএনপি-জামায়াত সরকার ও হাওয়া ভবনের আনুগত্য মেনে চলবেন। চাই কি খালেদা জিয়া তার হাতের পুতুল রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনের মাধ্যমে যে ইলেকশন মেকানিজম ও ম্যানুভারিং দ্বারা আবার ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিলেন, তাতেও জেনারেল মইন তার সেনাবাহিনী নিয়ে চোখ বুজে সমর্থন জানাবেন।
গোড়ার দিকে জেনারেল মইন তাই করেছেন। নইলে সংবিধানসম্মতভাবে ২০০৬ সালে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়েছিল, তা ভেঙে দিয়ে ইয়াজউদ্দিন যখন অবৈধভাবে নিজে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ দখল করে সর্বময় ক্ষমতা নিজের হাতে তুলে নিয়েছিলেন (চালিত হতেন একটি লাল টেলিফোনের মাধ্যমে খালেদা জিয়া ও তার পুত্র তারেক রহমানের নির্দেশে), তখন সামরিক বাহিনীর সমর্থন ছাড়া তা তিনি করতে পারতেন না। নিজের হাতে সর্বময় ক্ষমতা নেওয়ার পর ইয়াজউদ্দিন সেনাপ্রধানদের এক সমাবেশে স্পষ্টভাবে তার সরকার সম্পর্কে বলেছিলেন, 'এটা এখন আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়, প্রেসিডেন্সিয়াল সরকার।'
জেনারেল মইন সম্ভবত ইচ্ছা করলে এবং অন্যান্য সেনা কর্মকর্তা তার পেছনে ঐক্যবদ্ধ থাকলে তখনই এই অবৈধ প্রেসিডেন্সিয়াল সরকারের কর্তৃত্ব অস্বীকার করতে পারতেন, তিনি তা করেননি। বরং রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন 'নামের খসম আজিজের' মতো বিএনপি নেত্রীর অঙ্গুলি হেলনে চালিত হয়ে সংবিধান লঙ্ঘন করে দেশ শাসন করছেন, এটা জেনেও এই সরকারকে আনুগত্য প্রদান করেছেন এবং ইয়াজউদ্দিনের মাধ্যমে বিএনপি বিরাটভাবে ইলেকশন মেকানিজম দ্বারা আবার ক্ষমতায় আসার যে চক্রান্ত চলছিল তার দিকে চোখ মুদে ছিলেন। কেন জেনারেল মইন তখন চোখ মুদে ছিলেন, তার ব্যাখ্যা তিনি পরবর্তীকালে তার স্মৃতিকথায় দেননি। ভবিষ্যতেও দেবেন কি-না জানি না।
পরে তিনি কেন দেশে ইয়াজউদ্দিন সরকারের অবৈধ তৎপরতা সম্পর্কে সচেতন হলেন এবং একটি নিশ্চিত গৃহযুদ্ধ থেকে দেশকে রক্ষায় এগিয়ে এলেন, তার কারণ সম্পর্কে এখন একেকজন একেক রকম অনুমান করেন। কেউ বলেন, তারেক রহমান যখন জেনারেল মইনের চেয়েও অনুগত ও বশংবদ এক সেনা কর্মকর্তাকে (বর্তমানে তিনি কারাগারে) সেনাপ্রধান করার সব গোপন ব্যবস্থা সমাধা করে ফেলেছেন এবং রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন তাতে সম্মতি জানিয়ে আদেশপত্রে সই দিতে যাচ্ছেন, সেই মুহূর্তে খবর পেয়ে জে. মইন বঙ্গভবন ঘেরাও করেন। সর্বপ্রথম ওই সেনা কর্মকর্তাকে বঙ্গভবন থেকে অপসারণ করা হয়। বিএনপি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিবকে চড়-থাপ্পড় দিয়ে বঙ্গভবন থেকে বের করে দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানের পদ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করা হয়। সেনাপ্রধানদের হ্যান্ডপিক্ড ড. ফখরুদ্দীন আহমদকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানের পদে বসানো হয়। অর্থাৎ পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সব নেপথ্য খেলার এখানেই শেষ।
এক-এগারোর কেয়ারটেকার গভর্নমেন্টের প্রধান ড. ফখরুদ্দীন আহমদের ওপরও খালেদা জিয়া ও বিএনপির শীর্ষ এবং পাতি নেতারাও ক্ষুব্ধ। কথায় কথায় তারা জে. মইনের সঙ্গে ড. ফখরুদ্দীনেরও বিচার দাবি করেন। এরও কারণ, ফখরুদ্দীন আহমদও বিএনপির প্রতি আনুগত্য ও বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন বলে নিশ্চয়ই তারা মনে করেন। ফখরুদ্দীন আহমদ দীর্ঘকাল বিশ্বব্যাংকের চাকরির কারণে বিদেশে বসবাস করায় দেশে তেমন উল্লেখযোগ্য বা পরিচিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন না। বিএনপির অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানই তাকে বিদেশ থেকে টেনে এনে অনেককে ডিঙিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর করে দেন।
এই গভর্নর পদ ছাড়ার পরও ফখরুদ্দীনকে আরেকটি চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। খালেদা জিয়া নিশ্চয়ই তার কাছ থেকেও অটুট আনুগত্য আশা করেছিলেন। ফখরুদ্দীন সেই আশা পূর্ণ করেননি; বরং জে. মইনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিএনপির ক্রীড়নক ইয়াজউদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছারখার করে দিয়ে নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হন। এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ এসেছে। বিএনপি তা বয়কট করেছে।
জেনারেল মইন 'জিয়া হতে চেয়েছিলেন' বা বিএনপির প্রতি আনুগত্য হারিয়ে ক্ষমতার লোভে এক-এগারোর ঘটনা ঘটিয়েছিলেন এটা সর্বাংশে সঠিক বলে অনেকে মনে করেন না। তারা মনে করেন, দেশের ভেতরের ও বাইরের শক্তিশালী মহলের চাপেই তিনি এবং তার সমমতের সেনা কর্মকর্তারা এক-এগারো সংঘটন এবং মাইনাস টু থিয়োরি বাস্তবায়নে এগিয়েছিলেন। তা সাহসের সঙ্গে প্রতিরোধ করেছেন শেখ হাসিনা। অন্যদিকে খালেদা জিয়া সেনানিয়ন্ত্রিত সরকারের সব নির্দেশ মেনে নিয়ে (এমনকি তারেকের রাজনীতি ত্যাগ ও স্বেচ্ছানির্বাসনে বিদেশ যাওয়া), কেবল কিছুদিন সাবজেলে কাটিয়েই শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের আন্দোলনের সব সাফল্যের ভাগ নিয়েছেন এবং এক-এগারোর নায়কদের বিরুদ্ধে আবার সুযোগ বুঝে আপসহীন নেত্রীর চেহারা ধারণ করেছেন।
এক-এগারোর আগে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল যে, জাল ভোটার তালিকা প্রণয়ন, নির্বাচন কমিশন দলীয়করণ এবং রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনের মুঠোবন্দি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে বিএনপি বিরোধী দলগুলোর সব আপত্তি অগ্রাহ্য করে এমন এক নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে চায়, যার ফলে বাংলাদেশে নৈরাজ্য ও অরাজকতা দেখা দেওয়া অনিবার্য ছিল। দাতা দেশগুলো, বিশেষ করে আমেরিকা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় দেখতে চায়নি; কিন্তু দেশটিতে নিজেদের অর্থলগি্নর নিরাপত্তার স্বার্থেই চেয়েছে অরাজকতা ঠেকাতে। পশ্চিমা কূটনীতিক, বিশেষ করে ব্রিটেন ও আমেরিকার রাষ্ট্রদূতদের তখনকার কথাবার্তা ও তৎপরতা দেখেই এটা স্পষ্ট বোঝা যায়।
অন্যদিকে রাজনীতি থেকে দুই নেত্রীকে অপসারণ (আসল টার্গেট ছিলেন শেখ হাসিনা), নির্বাচন অথবা মনোনয়ন যে কোনো পদ্ধতিতে বাংলাদেশে একটি সিভিল এলিট ক্লাসের সরকার প্রতিষ্ঠা এবং তদ্বারা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা স্থায়ী করার একটা পেট থিয়োরি প্রচার করা শুরু করে দেশের একটি বিশেষ সুশীল সমাজ। এই তত্ত্বের প্রধান উদ্ভাবক ছিলেন ড. কামাল হোসেন এবং তার সহমতের 'সুশীল' বুদ্ধিজীবীরা। যাদের মধ্যে ড. ইউনূস, রেহমান সোবহান এবং আরও অনেককে ধরা যায়।
এক-এগারোর আগের ঘটনাপঞ্জির দিকে তাকালে দেখা যাবে, এক-এগারো ঘটার ঠিক আগে ড. কামাল হোসেন তুচ্ছ অজুহাতে বিনা ঘোষণায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ত্যাগ করেন এবং এক-এগারোর আমলে শেখ হাসিনাকে সাবজেলে বন্দি রেখে তার বিরুদ্ধে যেসব মামলা-মোকদ্দমা করা হয়, তাতে শেখ হাসিনার আইনজীবী হিসেবে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানান। অন্যদিকে ড. ইউনূসের নিজেরই এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হওয়ার কথা ছিল। কৌশলগত কারণে তিনি এই পদ গ্রহণ করেননি। তার মনোনয়নে, বলতে গেলে তখনকার প্রায় অজ্ঞাত কুলশীল ফখরুদ্দীন আহমদকে ধরে বেঁধে এনে সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের পদে বসিয়ে দেওয়া হয়। বেচারার হাতে কোনো ক্ষমতা ছিল না, তিনি ক্ষমতা পরিচালনাও করেননি। তিনি একটি চাকরি পেয়েছেন এবং হুকুম মেনে চাকরি করেছেন। এটা যদি অপরাধ হয়, তাহলে তার চাকরিদাতাদেরও কি একই অপরাধের জন্য বিচার হওয়া উচিত নয়?
ড. ফখরুদ্দীনের হাতে তখন যে কোনো ক্ষমতাই ছিল না, তার একটা প্রমাণ দিই। বাংলাদেশের সংবাদপত্রগুলো তখন নিউজপ্রিন্টের ওপর ধার্য করা বিরাট শুল্কের জন্য সমস্যায় ভুগছিল। তাদের দাবি ছিল এই শুল্ক হ্রাস অথবা বিলোপের। সেনানির্ভর তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধানের কাছে এ দাবি জানানোর সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু একটি 'নিরপেক্ষ' ইংরেজি দৈনিকের সম্পাদক প্রস্তাব দেন, এ দাবি নিয়ে সরকারপ্রধান ফখরুদ্দীন আহমদের কাছে না গিয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল মইনের কাছে যাওয়া যাক। কারণ, আসল ক্ষমতা তার হাতে।
কিন্তু সেনাপ্রধান জে. মইনের কাছে কীভাবে পেঁৗছা যায়? শেষ পর্যন্ত ইংরেজি দৈনিকের সম্পাদক দেশের প্রবীণ সাংবাদিক এবিএম মূসাকে ধরেন। তার সঙ্গে জে. মইনের হৃদ্যতা রয়েছে এবং জে. মইন মূসা সম্পর্কে বলেছেন, 'তিনি আমাদের জাতীয় মুরবি্ব (মঁধৎফরধহ)।' মূসার মধ্যস্থতায় জে. মইনের সঙ্গে সম্পাদকদের এই বৈঠকটি হয় এবং তাদের দাবি-দাওয়া জেনারেল মন দিয়ে শোনেন। তিনি ভদ্রলোক। ফখরুদ্দীনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারটি যে তার হুকুমবরদার নয়, তা দেখানোর জন্য সম্পাদকদের তিনি জানান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধানই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের মালিক। তিনি নিউজপ্রিন্টের ওপর ধার্য শুল্ক কমানোর জন্য সরকারপ্রধানকে অনুরোধ জানাবেন। বলাবাহুল্য, তিনি এই অনুরোধ জানিয়েছিলেন কি-না কে বলবে; কিন্তু তার হুকুম তামিল হয়েছিল।
এই ইংরেজি দৈনিকের সম্পাদক এবং তার বাংলা সহযোগী দৈনিকের সম্পাদকও ছিলেন এক-এগারো এবং মাইনাস টু থিয়োরির সমর্থক। এখন তারা সাধু সেজে এক-এগারোর যতই নিন্দা করুন, তাদের মাইনাস টু থিয়োরির পক্ষে (তাদেরও আসল টার্গেট ছিলেন শেখ হাসিনা) জোরালো অবস্থান, সম্পাদকীয় ও উপ-সম্পাদকীয়তে জোরালো সমর্থন দান এত শিগগির তো কারও ভুলে যাওয়ার কথা নয়।
আমার ধারণা (সঠিক কি-না তিনিই বলতে পারেন), জেনারেল মইনের হয়তো ক্ষমতা হাতে পাওয়ার পর দেশের রাষ্ট্রপতি হওয়ার খায়েস হয়েছিল। কিন্তু জিয়া হওয়ার সাধ ও সাধ্য কোনোটাই তার ছিল না। তিনি জেনারেল জিয়া এবং জেনারেল এরশাদের মতো চক্রান্ত করেও ক্ষমতায় আসেননি। দেশের এবং বিদেশের একাধিক শক্তিশালী মহলের (পশ্চিমা দেশসহ) চাপে তিনি ক্ষমতায় এসেছিলেন (নইলে বাংলাদেশে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ ঠেকানো যেত না) এবং তাদের চাপেই ক্ষমতা ছেড়ে চলে গেছেন। যাওয়ার আগে একটি ভালো কাজ করে গেছেন, তা হলো সঠিক ভোটার তালিকা প্রণয়ন করে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা। মাঝখানে সামরিক বাহিনীর একশ্রেণীর কর্মকর্তা যদি দুর্নীতি, নির্যাতন, লুটপাটের সব সীমা অতিক্রম না করতেন এবং নির্দিষ্ট সময়ে ক্ষমতা ত্যাগ করতেন, তাহলে এক-এগারোর বিরুদ্ধে বর্তমানের হুজুগে সমালোচনার অবকাশ হয়তো থাকত না।
এক-এগারোর উদ্ভাবক এবং তাকে সমর্থন ও সহায়তাদানকারীদের মধ্যে যেমন রয়েছে বিদেশি কয়েকটি দেশ, তেমনি রয়েছে দেশের সুশীল সমাজের একাংশ, ড. কামাল হোসেন, ড. ইউনূসের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব, নিরপেক্ষতার দাবিদার দুটি প্রচারবহুল সংবাদপত্র এবং জানা-অজানা অনেক চক্র। যদি এক-এগারোর জন্য জেনারেল মইন ও ড. ফখরুদ্দীনের বিচার করতে হয়, তাহলে এই এক-এগারো এবং 'মাইনাস টু থিয়োরি'র যারা আসল উদ্ভাবক এবং তা কার্যকর করার উদ্যোগের প্রধান দোসর, তাদেরও কেন বিচার হবে না, তা আমি বুঝতে পারি না। বিএনপি নেত্রী কেন তাদের নাম মুখে আনেন না?
লন্ডন, ১০ জুন শুক্রবার, ২০১১
No comments