এভারেস্টে আবারও বাংলাদেশ-অভিনন্দন নিশাত মজুমদার

বাংলার লাল সবুজের পতাকা আবারও পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়ায় স্থান করে নিল নিশাত মজুমদারের হাত ধরে। এভারেস্টে প্রথম বাংলাদেশি নারীর উপস্থিতির মাধ্যমে আবারও প্রমাণ হলো বাংলার নারীরাও পারে শীর্ষে যেতে। গত শনিবার সকালে নিশাত মজুমদার এভারেস্টশৃঙ্গে আরোহণের মাধ্যমে আরেকটি ইতিহাস তৈরি করলেন।


বাংলাদেশের মেয়েরা রাজনীতি, প্রশাসন ও অন্যান্য পেশায় ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করে সাম্প্রতিক বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হওয়ার পর নিশ্চয়ই এভারেস্টে আরোহণ আরেকটি মাত্রা যোগ করল।
১৯৫৩ সালের এমনই এক মে মাসের ২৯ তারিখে হিমালয়ের এই পর্বতশৃঙ্গে প্রথম পদচিহ্ন পড়েছিল নিউজিল্যান্ডের স্যার অ্যাডমন্ড হিলারি এবং নেপালের শেরপা তেনজিংয়ের। প্রথম মানব পদচিহ্ন পড়ার পর দীর্ঘদিন চলে গেছে। অনেকেই হিলারি আর তেনজিংয়ের পথ ধরে সেখানে পৌঁছেছেন। কিন্তু বাংলাদেশ হিমালয়ের কাছাকাছি দেশ হওয়ার পরও বাঙালির কাছে হিমালয় চূড়ায় পৌঁছানোটা ছিল স্বপ্নের মতো। সেই স্বপ্নই প্রথম পূরণ করেন বাংলাদেশের তরুণ মুসা ইব্রাহীম। তিনি সেখানে গিয়েছিলেন ২০১০ সালের মে মাসে। দ্বিতীয় আরোহণকারী এম এ মুহিত গিয়েছিলেন পরের বছর ২৩ মে। ২০১২ সালের ১৯ মে নিশাত মজুমদারের এভারেস্টে পৌঁছানোর মাধ্যমে বাংলাদেশের বিজয়ের পালা দৃঢ়তর হলো। পর পর তিন বছর এভারেস্টে আরোহণের গৌরব অর্জন করল বাংলাদেশ। মুসা ইব্রাহীম, এম এ মুহিত ও সাম্প্রতিক সাফল্য লাভকারী নিশাত আমাদের তরুণ সমাজের অনুপ্রেরণা হিসেবে গণ্য হলেন। বাংলাদেশের মেয়ে নিশাতের এ অভিযানে কৃতিত্ব বিশ্বের অন্য দশটা দেশের পর্বতারোহীদের চেয়ে ভিন্নতর। বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থা, ভৌগোলিক অবস্থান বিশেষ করে সমতলভূমির একজন মানুষ হয়েও বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতের চূড়ায় আরোহণ করার মতো সাফল্য সংগত কারণেই অন্যদের থেকে তাঁকে আলাদা করে মূল্যায়নের দাবি রাখে। অন্যদিকে এখানকার প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধাও অতি সাম্প্রতিক ঘটনা। নিশাতের যাত্রাও সীমিত সুবিধাকে কেন্দ্র করেই। ২০০৩ সালে এভারেস্ট বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পাহাড়চূড়া কেওক্রাডংয়ে আরোহণ করেছিলেন। এটা ছিল নিতান্তই শখের বশে। ২০০৬ সালের মার্চ মাসে বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে নারী অভিযাত্রী দলের হয়ে তিনি আবারও সেখানে আরোহণ করেন। এরপর থেকে তিনি আর থেমে থাকেননি। হিমালয়ের চূড়া থেকে চূড়ায় আরোহণ করে সাফল্যকে ধারাবাহিকতায় পরিণত করেন। সর্বশেষ এভারেস্টে পৌঁছানোর মাধ্যমে আরেকটি স্বপ্ন পূরণ করলেন তিনি। দেখিয়ে দিলেন বাংলাদেশের মেয়েরাও পিছিয়ে নেই। এই সাফল্য আমাদের আশার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। আমরা আশা করতে পারি, এ তারুণ্যই হয়তো লাল সবুজের পতাকাকে চন্দ্র কিংবা মঙ্গলেও স্থান করে দিতে সক্ষম হবে। অভিনন্দন নিশাত মজুমদারকে।

No comments

Powered by Blogger.