জন্মদিন-বীরকন্যা প্রীতিলতা by নাসির উদ্দিন হায়দার ও আব্দুর রাজ্জাক
জরাজীর্ণ দুটি ঘর। সামনে এক চিলতে মাঠ। উড়ছে লাল-সবুজ পতাকা। একঝাঁক শিশুর কলকাকলিতে মুখর চারদিক। মাঠ পেরোতেই চোখ আটকে গেল একটি আবক্ষমূর্তির দিকে। মাঠে দাপাদাপি করে ক্লান্ত শিশুটির কাছে জানতে চাইলাম, আবক্ষমূর্তিটি কার? সে অবাক হয়ে প্রশ্ন করল, ‘আপনারা ওনাকে চেনেন না? উনি বীরকন্যা প্রীতিলতা।
ওনার নামেই তো আমাদের এ বিদ্যালয়।’
তিনি কে ছিলেন বলতে পারো?
প্রশ্ন শেষ না হতেই শিশুটির কথা শুরু হয়ে যায়, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার একজন শিক্ষিকা ছিলেন। তাঁর বাড়ি এই ধলঘাটে। তিনি মুক্তিযোদ্ধা, দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছেন।
পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী পাত্রী দের সঙ্গে কথা শেষ করে আমরা ঢুকলাম বিদ্যালয়ে।
একটু পরই শ্রেণীকার্যক্রম শুরু হবে। তার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন প্রধান শিক্ষক অরুণ বিকাশ চৌধুরী। তিনি জানালেন, ১৯৯৬ সালে বীরকন্যা প্রীতিলতা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। প্রথম দিকে ৩৫০ জন শিক্ষার্থী ছিল। কমতে কমতে এখন ৬০ জনে এসে ঠেকেছে।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অগ্নিকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের নামে পটিয়ার ধলঘাট গ্রামে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয় দেখে মনে যে আনন্দের ঝিলিক দেখা দিয়েছিল, প্রধান শিক্ষকের কথা শুনে তা অনেকটাই ম্লান।
জানতে চাইলাম বিদ্যালয়ের এই করুণ পরিণতির কারণ। ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা ট্রাস্টের উদ্যোগে পরিচালিত বিদ্যালয়টি ১৫ বছর ধরে সরকারীকরণের জন্য চেষ্টা চলছে, অথচ নিবন্ধনই পায়নি। এবার প্রথম সরকারি বই পেয়েছে শিক্ষার্থীরা, কিন্তু উপবৃত্তি পায় না। ফলে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় ছাড়ছে।’ বলেন অরুণ বিকাশ চৌধুরী।
বর্তমানে মাত্র ১২টি টুল ও তিনটি করে টেবিল-চেয়ার নিয়ে শ্রেণীকার্যক্রম চলে। তিনজন শিক্ষক আছেন, তাঁরা ৫০০ টাকা ভাতা পান মাত্র।
ধলঘাট ক্যাম্প এলাকায় কথা হয় ষাটোর্ধ্ব ফেরদৌস আহমেদের সঙ্গে। প্রীতিলতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই মাইয়া দেশরলাই যুদ্ধ গইজ্জে। আজিয়া আঁরা স্বাধীন। কিন্তু স্বাধীনতার আন্দোলন শুরু গইজ্জে তাঁরা। ব্রিটিশর লয় যুদ্ধ গরি জীবন দিয়ে সূর্য সেন, প্রীতিলতা। আইজকাইল্যা পোয়াঅল কি তারারে চিনে?’
ফেরদৌস আহমেদের কথার প্রমাণ পাওয়া গেল প্রীতিলতার গ্রাম দক্ষিণ সমুরার কলেজছাত্র আবদুল হকের কথায়, ‘প্রীতিলতার নাম শুনেছি, কিন্তু তাঁর সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানি না। তাঁর কথা তো বইপত্রেও নেই।’
ধলঘাটের দক্ষিণ সমুরা এলাকায় ১৯১১ সালের ৫ মে জন্মগ্রহণ করেন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অগ্নিকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। প্রীতিলতার বাবা জগদ্বন্ধু ওয়াদ্দেদার, মা প্রতিভাময়ী দেবী। বাবা মিউনিসিপ্যাল অফিসের প্রধান কেরানি ছিলেন। পাঁচ পুত্র-কন্যা নিয়ে থাকতেন চট্টগ্রাম শহরের আসকার দীঘি এলাকায়। প্রীতিলতা লেখাপড়া করেছেন ডা. খাস্তগীর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, ঢাকার ইডেন কলেজ ও কলকাতার বেথুন কলেজে। বিপ্লবী পূর্ণেন্দু দস্তিদারের সহায়তায় ১৯২৮ সালে মাস্টারদার বিপ্লবী দলের সদস্য হন প্রীতিলতা। দলে ঢোকার শর্ত হলো, ‘প্রয়োজন হইলে দেশের মুক্তিসংগ্রামে আমার সর্বস্ব, আমার জীবন পর্যন্ত আমি ত্যাগ করিতে প্রস্তুত।’
চট্টগ্রামের নন্দনকাননে অপর্ণাচরণ উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষিকা প্রীতিলতা মাস্টারদার সঙ্গে বৈঠক করতে গিয়েছিলেন ধলঘাটের সাবিত্রী দেবীর বাড়িতে। সেখানে ব্রিটিশ পুলিশ ও বিপ্লবীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সেটি পরে ধলঘাট যুদ্ধ হিসেবে খ্যাত হয়। ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর প্রীতিলতার নেতৃত্বে পাহাড়তলীর ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করেন বিপ্লবীরা, যে ক্লাবের বাইরে লেখা থাকত ‘কুকুর ও ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ’। ওই অভিযানে শত্রুর গুলিতে আহত হন প্রীতিলতা। পরে বিষপান করে তিনি আত্মাহুতি দেন।
দক্ষিণ সমুরায় প্রীতিলতার ভিটেবাড়িতে এখন বাস করেন শোভারানী দাশের পরিবার। তাঁরা সরকারের কাছ থেকে জমি লিজ নিয়েছেন। বসতভিটার পশ্চিম দিকে প্রীতিলতা ও অর্ধেন্দু দস্তিদার স্মরণে ১৯৭০ সালে একটি স্মৃতিফলক স্থাপন করেন বিপ্লবী পূর্ণেন্দু দস্তিদার।
ধলঘাটের আরেক মহীয়সী নারীর নাম সাবিত্রী দেবী। যে দুজনকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ১০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিল ব্রিটিশ সরকার, সেই বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্য সেন ও নির্মল সেন এবং প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারসহ কয়েকজন বিপ্লবীকে নিজের বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিলেন তিনি। পাশের কুখ্যাত ধলঘাট ক্যাম্প থেকে সাবিত্রীর বাড়িতে হানা দিয়েছিল ব্রিটিশ ক্যাপ্টেন ক্যামেরন ও তাঁর সিপাহিরা। ব্রিটিশ পুলিশ আর বিপ্লবীদের সেই যুদ্ধে শহীদ হন বিপ্লবী নির্মল সেন আর অপূর্ব সেন। নির্মলের গুলিতে প্রাণ যায় ক্যামেরনের। ধলঘাট যুদ্ধ হয়েছিল ১৯৩২ সালের ১৩ জুন।
১৯৪৬ সালে অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের মামলায় বন্দীদের মুক্তি দেন। বিপ্লবী নেতা অম্বিকা চক্রবর্তী, গণেশ ঘোষ ও অনন্ত সিংহ চট্টগ্রামে ফিরে আসার পর ছুটে এসেছিলেন ধলঘাটের সেই সাবিত্রী দেবীর বাড়িতে। শ্রদ্ধা জানান শহীদ নির্মল সেন ও অপূর্ব সেনের স্মৃতির প্রতি।
ফিরে আসা বিপ্লবীদের উদ্দেশে সাবিত্রী তখন সজল নয়নে ধলঘাট সংঘর্ষের কথা সবিস্তারে বলেন, ‘আমি জানি, তোমরা যখন ফিরে এসেছ, এর প্রতিশোধ তোমরা নেবে।’
হ্যাঁ, মাস্টারদা, প্রীতিলতা ও সাবিত্রীর স্বপ্ন সফল হয়েছে। তাঁদের পরবর্তী প্রজন্ম ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি শোষকদের তাড়িয়েছেন দেশ থেকে। বুকের তাজা রক্তে ছিনিয়ে এনেছেন লাল-সবুজ পতাকা।
প্রীতিলতার স্মৃতিরক্ষার কাজ করে যাচ্ছেন স্থানীয় পংকজ চক্রবর্তীর মতো কয়েকজন দেশপ্রেমিক। তাঁর একান্ত চেষ্টায় গঠিত হয়েছে প্রীতিলতা স্মৃতি ট্রাস্ট। এ ট্রাস্টের অধীনে চলছে বীরকন্যা প্রীতিলতা প্রাথমিক বিদ্যালয়।
প্রীতিলতা নাকি কালো ছিলেন। আত্মীয়স্বজনের বিরূপ মন্তব্যের উত্তরে মা প্রতিভাময়ী দেবী বলেছিলেন, ‘আমার কালো মেয়ে তোমাদের সবার মুখ আলো করবে।’ হ্যাঁ, প্রীতিলতা আলোর যে মশাল জ্বেলেছিলেন ধলঘাটের মতো প্রত্যন্ত গ্রামে, সেই আলো ছড়িয়ে যাক সারা দেশে, সারা বিশ্বে—এ প্রত্যাশা আজ তাঁর ৯৯তম জন্মদিনে।
তিনি কে ছিলেন বলতে পারো?
প্রশ্ন শেষ না হতেই শিশুটির কথা শুরু হয়ে যায়, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার একজন শিক্ষিকা ছিলেন। তাঁর বাড়ি এই ধলঘাটে। তিনি মুক্তিযোদ্ধা, দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছেন।
পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী পাত্রী দের সঙ্গে কথা শেষ করে আমরা ঢুকলাম বিদ্যালয়ে।
একটু পরই শ্রেণীকার্যক্রম শুরু হবে। তার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন প্রধান শিক্ষক অরুণ বিকাশ চৌধুরী। তিনি জানালেন, ১৯৯৬ সালে বীরকন্যা প্রীতিলতা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। প্রথম দিকে ৩৫০ জন শিক্ষার্থী ছিল। কমতে কমতে এখন ৬০ জনে এসে ঠেকেছে।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অগ্নিকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের নামে পটিয়ার ধলঘাট গ্রামে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয় দেখে মনে যে আনন্দের ঝিলিক দেখা দিয়েছিল, প্রধান শিক্ষকের কথা শুনে তা অনেকটাই ম্লান।
জানতে চাইলাম বিদ্যালয়ের এই করুণ পরিণতির কারণ। ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা ট্রাস্টের উদ্যোগে পরিচালিত বিদ্যালয়টি ১৫ বছর ধরে সরকারীকরণের জন্য চেষ্টা চলছে, অথচ নিবন্ধনই পায়নি। এবার প্রথম সরকারি বই পেয়েছে শিক্ষার্থীরা, কিন্তু উপবৃত্তি পায় না। ফলে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় ছাড়ছে।’ বলেন অরুণ বিকাশ চৌধুরী।
বর্তমানে মাত্র ১২টি টুল ও তিনটি করে টেবিল-চেয়ার নিয়ে শ্রেণীকার্যক্রম চলে। তিনজন শিক্ষক আছেন, তাঁরা ৫০০ টাকা ভাতা পান মাত্র।
ধলঘাট ক্যাম্প এলাকায় কথা হয় ষাটোর্ধ্ব ফেরদৌস আহমেদের সঙ্গে। প্রীতিলতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই মাইয়া দেশরলাই যুদ্ধ গইজ্জে। আজিয়া আঁরা স্বাধীন। কিন্তু স্বাধীনতার আন্দোলন শুরু গইজ্জে তাঁরা। ব্রিটিশর লয় যুদ্ধ গরি জীবন দিয়ে সূর্য সেন, প্রীতিলতা। আইজকাইল্যা পোয়াঅল কি তারারে চিনে?’
ফেরদৌস আহমেদের কথার প্রমাণ পাওয়া গেল প্রীতিলতার গ্রাম দক্ষিণ সমুরার কলেজছাত্র আবদুল হকের কথায়, ‘প্রীতিলতার নাম শুনেছি, কিন্তু তাঁর সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানি না। তাঁর কথা তো বইপত্রেও নেই।’
ধলঘাটের দক্ষিণ সমুরা এলাকায় ১৯১১ সালের ৫ মে জন্মগ্রহণ করেন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অগ্নিকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। প্রীতিলতার বাবা জগদ্বন্ধু ওয়াদ্দেদার, মা প্রতিভাময়ী দেবী। বাবা মিউনিসিপ্যাল অফিসের প্রধান কেরানি ছিলেন। পাঁচ পুত্র-কন্যা নিয়ে থাকতেন চট্টগ্রাম শহরের আসকার দীঘি এলাকায়। প্রীতিলতা লেখাপড়া করেছেন ডা. খাস্তগীর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, ঢাকার ইডেন কলেজ ও কলকাতার বেথুন কলেজে। বিপ্লবী পূর্ণেন্দু দস্তিদারের সহায়তায় ১৯২৮ সালে মাস্টারদার বিপ্লবী দলের সদস্য হন প্রীতিলতা। দলে ঢোকার শর্ত হলো, ‘প্রয়োজন হইলে দেশের মুক্তিসংগ্রামে আমার সর্বস্ব, আমার জীবন পর্যন্ত আমি ত্যাগ করিতে প্রস্তুত।’
চট্টগ্রামের নন্দনকাননে অপর্ণাচরণ উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষিকা প্রীতিলতা মাস্টারদার সঙ্গে বৈঠক করতে গিয়েছিলেন ধলঘাটের সাবিত্রী দেবীর বাড়িতে। সেখানে ব্রিটিশ পুলিশ ও বিপ্লবীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সেটি পরে ধলঘাট যুদ্ধ হিসেবে খ্যাত হয়। ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর প্রীতিলতার নেতৃত্বে পাহাড়তলীর ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করেন বিপ্লবীরা, যে ক্লাবের বাইরে লেখা থাকত ‘কুকুর ও ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ’। ওই অভিযানে শত্রুর গুলিতে আহত হন প্রীতিলতা। পরে বিষপান করে তিনি আত্মাহুতি দেন।
দক্ষিণ সমুরায় প্রীতিলতার ভিটেবাড়িতে এখন বাস করেন শোভারানী দাশের পরিবার। তাঁরা সরকারের কাছ থেকে জমি লিজ নিয়েছেন। বসতভিটার পশ্চিম দিকে প্রীতিলতা ও অর্ধেন্দু দস্তিদার স্মরণে ১৯৭০ সালে একটি স্মৃতিফলক স্থাপন করেন বিপ্লবী পূর্ণেন্দু দস্তিদার।
ধলঘাটের আরেক মহীয়সী নারীর নাম সাবিত্রী দেবী। যে দুজনকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ১০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিল ব্রিটিশ সরকার, সেই বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্য সেন ও নির্মল সেন এবং প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারসহ কয়েকজন বিপ্লবীকে নিজের বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিলেন তিনি। পাশের কুখ্যাত ধলঘাট ক্যাম্প থেকে সাবিত্রীর বাড়িতে হানা দিয়েছিল ব্রিটিশ ক্যাপ্টেন ক্যামেরন ও তাঁর সিপাহিরা। ব্রিটিশ পুলিশ আর বিপ্লবীদের সেই যুদ্ধে শহীদ হন বিপ্লবী নির্মল সেন আর অপূর্ব সেন। নির্মলের গুলিতে প্রাণ যায় ক্যামেরনের। ধলঘাট যুদ্ধ হয়েছিল ১৯৩২ সালের ১৩ জুন।
১৯৪৬ সালে অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের মামলায় বন্দীদের মুক্তি দেন। বিপ্লবী নেতা অম্বিকা চক্রবর্তী, গণেশ ঘোষ ও অনন্ত সিংহ চট্টগ্রামে ফিরে আসার পর ছুটে এসেছিলেন ধলঘাটের সেই সাবিত্রী দেবীর বাড়িতে। শ্রদ্ধা জানান শহীদ নির্মল সেন ও অপূর্ব সেনের স্মৃতির প্রতি।
ফিরে আসা বিপ্লবীদের উদ্দেশে সাবিত্রী তখন সজল নয়নে ধলঘাট সংঘর্ষের কথা সবিস্তারে বলেন, ‘আমি জানি, তোমরা যখন ফিরে এসেছ, এর প্রতিশোধ তোমরা নেবে।’
হ্যাঁ, মাস্টারদা, প্রীতিলতা ও সাবিত্রীর স্বপ্ন সফল হয়েছে। তাঁদের পরবর্তী প্রজন্ম ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি শোষকদের তাড়িয়েছেন দেশ থেকে। বুকের তাজা রক্তে ছিনিয়ে এনেছেন লাল-সবুজ পতাকা।
প্রীতিলতার স্মৃতিরক্ষার কাজ করে যাচ্ছেন স্থানীয় পংকজ চক্রবর্তীর মতো কয়েকজন দেশপ্রেমিক। তাঁর একান্ত চেষ্টায় গঠিত হয়েছে প্রীতিলতা স্মৃতি ট্রাস্ট। এ ট্রাস্টের অধীনে চলছে বীরকন্যা প্রীতিলতা প্রাথমিক বিদ্যালয়।
প্রীতিলতা নাকি কালো ছিলেন। আত্মীয়স্বজনের বিরূপ মন্তব্যের উত্তরে মা প্রতিভাময়ী দেবী বলেছিলেন, ‘আমার কালো মেয়ে তোমাদের সবার মুখ আলো করবে।’ হ্যাঁ, প্রীতিলতা আলোর যে মশাল জ্বেলেছিলেন ধলঘাটের মতো প্রত্যন্ত গ্রামে, সেই আলো ছড়িয়ে যাক সারা দেশে, সারা বিশ্বে—এ প্রত্যাশা আজ তাঁর ৯৯তম জন্মদিনে।
No comments