চালচিত্র-শিল্প ও কৃষিতে অগ্রগতিতেই দিন বদলের সূচনা by শুভ রহমান

সারা বিশ্বে উচ্চ খাদ্যমূল্যসহ নানা দিকে যখন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা শুধু আমাদের দেশেরই নয়, বিশ্বের ভবিষ্যৎকেই অনিশ্চয়তা ও চরম হতাশার অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে, তখন বাংলাদেশে এক ভিন্ন চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে। উচ্চ খাদ্যমূল্য, লিবিয়াসহ গোটা আরব মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক তুলকালাম অবস্থা,


হাজার হাজার প্রবাসীর বাংলাদেশে ফিরে আসার অনাকাঙ্ক্ষিত ও আকস্মিক বিপর্যয়, দেশের অভ্যন্তরে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা যানজট, চরম অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যখন আমাদের হতাশার শেষ প্রান্তে ঠেলে দিতে চাইছে; তখন অত্যন্ত আশ্চর্যজনকভাবেই শিল্প ও কৃষির কোনো কোনো খাতে আমরা আশার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছি। আমাদের দেশের অত্যন্ত ভরসার স্থল দেশ অন্তপ্রাণ কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী গাঢ় অন্ধকারে উজ্জ্বল আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে দিয়েছেন। তিনি সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, সারের দাম কমিয়ে আমরা দিন বদল করছি।
ডুবন্ত মানুষ খড়কুটো ধরেই বাঁচতে চায়। আমাদের দৃঢ়বিশ্বাস, আমরাও অর্থনীতির দুই প্রধান খাত, কৃষি আর শিল্পের ক্ষেত্রে সূচিত অভাবিত ও অভূতপূর্ব অগ্রগতির হাত ধরেই উঠে দাঁড়াতে পারব এবং সত্যিই পুব আকাশে নতুন সূর্যোদয়ের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে অন্ধকার ঘুচিয়ে আলোর পথের অভিযাত্রী হতে পারব।
সার হচ্ছে কৃষি উৎপাদনের একেবারে ভিত্তিমূলের উপাদান। সারে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া, কৃষকের কাছে সারকে শুধু সুলভ নয়, সহজপ্রাপ্য ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিনা মূল্যে কিংবা অতি স্বল্পমূল্যে সারপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা সৃষ্টি অবশ্যই কৃষি উৎপাদনে বৈপ্লবিক অগ্রগতিরই আভাস দিচ্ছে।
সারের দাম কমানোর বিষয়টিকে আমরা কখনোই হালকা করে দেখিনি। সারের জন্য কৃষকের মাথাকুটে মরা, বিক্ষোভ, পুলিশের গুলিতে অকাতরে প্রাণ দেওয়া_এ সবই আজ অতীতের বিএনপি-জামায়াত চারদলীয় জোটের নির্দয় ও নির্মম শোষণ এবং দুঃশাসনের কথাই মনে করিয়ে দেয়। সব প্রতিকূলতার মধ্যেই নতুন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে সবচেয়ে উজ্জ্বল নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি হিসেবে সারের মূল্যহ্রাসের, কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিনা মূল্যেও সার বিতরণের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন ও এ যাবৎকালের সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে উদ্যোগী হয়। আমরা দেখছি, মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ১০ মাসের মধ্যেই নন-ইউরিয়া সারের দাম দ্বিতীয় দফা হ্রাস করে কৃষকদের স্থায়ীভাবে নতুন দিনের সূচনা করতে উৎসাহিত করে তোলে। সে সময় কৃষকপর্যায়ে প্রতি কেজি টিএসপি সার ৪০ থেকে কমিয়ে ২২ টাকা, এমওপি ৩৫ থেকে কমিয়ে ২৫ টাকা এবং ডিএপি ৪৫ থেকে কমিয়ে ৩০ টাকায় নির্ধারণ ও কৃষকের তা প্রাপ্তি নিশ্চিত করে দেওয়া হয়। বাংলাদেশের কৃষির ইতিহাসে এ এক অভাবিত ও অভূতপূর্ব অত্যাশ্চর্য ঘটনা। দিন বদলের পালা তো বস্তুত তখনই এর মধ্য দিয়ে সূচিত হয়ে গেছে।
সারের মূল্য দীর্ঘসময় হ্রাসপ্রাপ্তই থাকে ও কৃষকের তা যথাসময়ে সরকার নির্ধারিত মূল্যে পাওয়াটাও নিশ্চিত থাকে। কৃষিমন্ত্রী তখন জানান, সারের মূল্য পুনর্নির্ধারণের ফলে অতিরিক্ত ৫০০ কোটি টাকা সরকারকে ভর্তুকি দিতে হবে। সারের ভর্তুকির পরিমাণ তখন দাঁড়ায় তিন হাজার কোটি টাকা। সে সময় সারের ভেজালের বিরুদ্ধেও অভিযান চালানো হয় এবং এই ভেজাল সার প্রস্তুতকারকদের ধরার পদক্ষেপও নেওয়া হয়। কৃষিই অর্থনীতির প্রধান একটি ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়ায় যেখানে, সেখানে ভেজাল, দুর্নীতি, মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে মুনাফা লুণ্ঠন দৃঢ়ভাবে রোধ করা হয়।
শুধু দ্বিতীয় দফা সারের মূল্যহ্রাসেই সরকার থেমে থাকেনি, তার প্রায় ১১ মাসের মধ্যেই ২০১০ সালের অক্টোবরে সরকার তৃতীয় দফায় সারের মূল্যহ্রাসের উদ্যোগ নেয়। এমওপি ও ডিএপি সারের দাম আবারও কমিয়ে দেয়। এর ফলে কৃষক এমওপি ১৫ টাকা ও ডিএপি ২৭ টাকা কেজি দরে কিনতে পারে। আর সে জন্য সরকারকে ভর্তুকি গুনতে হয় ৫২০ কোটি টাকা। টিএসপি ও ইউরিয়া সারের দাম আগের মতোই যথাক্রমে ২২ ও ১২ টাকা কেজি দরেই বিক্রি হয়। সব রকম সারের ভর্তুকি মিলিয়ে সরকারের এ বছরে মোট ভর্তুকির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকা।
মহাজোট সরকারের ক্ষমতায় আসার আড়াই বছরেই তিনবার সারের মূল্যহ্রাস এ দেশে গণতান্ত্রিক শাসনামলের এক বিস্ময়কর রেকর্ড।
কৃষককে ভর্তুকিযুক্ত হ্রাসকৃত মূল্যে সার জোগাতে গিয়ে মহাজোট সরকারকে অবশ্য গ্যাসসংযোগ বন্ধের কারণে চার সার কারখানায় উৎপাদন বন্ধ থাকা ও আমদানি খাতে গচ্চা দিতে হয় প্রায় ৫৩০ কোটি টাকা। দেশের ছয় সার কারখানায় উৎপাদন এখন পর্যন্ত সারের মোট চাহিদার মাত্র অর্ধেক পূরণ করতে সক্ষম হচ্ছে। আমদানিনির্ভরতা এ ক্ষেত্রে এখনো ব্যাপক। পত্র-পত্রিকার এসব হিসাবেই জানা যায়, উৎপাদন হচ্ছে সাড়ে ১১ লাখ টন, অবশিষ্ট ১৬ লাখ ৬৬ হাজার টন জোগান দিতে হয় আমদানি খাত থেকে। এ অবস্থার গুণগত পরিবর্তন দরকার এবং দেশে সার কারখানার প্রসার ঘটানো জরুরি।
তা সত্ত্বেও কৃষি উৎপাদনের প্রধান উপকরণ সার উৎপাদন ও সরবরাহ এবং কৃষকের কম মূল্যে প্রাপ্তির নিশ্চয়তা কৃষি উৎপাদনের ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতারই অবসান ঘটিয়েছে। এই সঙ্গে সরকারকে সেচের সময় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, ন্যায্য মূল্যে ও চাহিদামাফিক বীজ ও কীটনাশক সরবরাহও নিশ্চিত করতে হবে। কৃষিপ্রধান দেশে সত্যিকার দিন বদলের সূচনা অব্যাহত রাখতে এর বিকল্প নেই।
বর্তমানে খাদ্যপণ্যসহ নিত্যপণ্যের মূল্য আকাশচুম্বী হয়ে ওঠা ও মধ্যবিত্তসহ সীমিত আয়ের মানুষের চরম দুর্ভোগ লাঘবে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং কৃষিতে স্বয়ংসম্পন্ন হওয়ার বিকল্প নেই। আশপাশের দেশের জনকল্যাণমুখী সরকারগুলো খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য ক্রেতাসাধারণের জন্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে যা যা করছে, আমাদের মহাজোট সরকারকেও সে পথ অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। দিন বদলের প্রক্রিয়া যে সত্যিই শুরু হয়েছে, সাধারণ মানুষের খাওয়া-পরা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়েই তাদের সেটা আন্তরিকভাবে উপলব্ধি করতে দিতে হবে। বিশ্বব্যাপী খাদ্যমূল্য ও কৃষি উপকরণ নিয়ে করপোরেট পুঁজিবণিকদের হৃদয়হীন মুনাফার লোভ-লালসা আজ সারা বিশ্বের শত-কোটি মানুষকে অনাহারি ও আরো শত কোটি মানুষকে ক্ষুধার্ত থাকতে বাধ্য করছে। প্রকৃত গণতান্ত্রিক সরকারগুলোকে নিজস্ব শিল্প-কৃষির উৎপাদন ও বিতরণব্যবস্থাকে আমলাতন্ত্র, দুর্নীতি ও অব্যবস্থা থেকে মুক্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে করপোরেট পুঁজিওয়ালাদের লোভের আগ্রাসনকে কার্যকরভাবে প্রতিরোধ করতে হবে। ৬ মার্চের পত্রিকান্তরের খবরে দেখা গেল, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী নালিতাবাড়ী উপজেলা পরিষদ চত্বরে একটি প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেছেন, যারা কৃষকদের জন্য চিন্তা করে না, তাদের জন্য দিন বদল নেই। তিনি জানান, তিন ব্যাগ ইউরিয়া সারের বদলে এক ব্যাগ গুটি ইউরিয়া সার দিলে সমান কাজ করবে। এতে ফলন ২৫ ভাগ বাড়বে। আমরা পরিবর্তন চাই, পরিবর্তন করতে পারি। এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে এখন খাদ্যের উচ্চমূল্য। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমার সরকার 'ফিড দ্য ফিউচার' কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আমি গর্বিত যে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ইউএস-এইডের মাধ্যমে বাংলাদেশকে পাঁচ কোটি ৫০ লাখ ডলার মূল্যের গুটি ইউরিয়া সার সহায়তা দিচ্ছে। গুটি ইউরিয়া একটি চমৎকার প্রযুক্তি।
দুনিয়াব্যাপী যেখানে করপোরেট পুঁজির অতি মুনাফানীতির শিকার হয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলো তীব্র খাদ্য সংকটে ভুগছে, সেখানে মহাজোট সরকারের কৃতিত্বই বলতে হবে_যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে আমাদের দেশের প্রতি বদান্যতা প্রদর্শন করে বিপুল অঙ্কের অর্থসহায়তা জুগিয়ে তিনগুণ ফলনের নিশ্চয়তা সৃষ্টিকারী গুটি সার সরবরাহে নিয়োজিত করা। যে যুক্তরাষ্ট্র অতীতে আমাদের দেশে কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির জন্য খাদ্যবাহী জাহাজ ডুবিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে, আজ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাদের বৈশ্বিক ভূমিকার ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ বাংলাদেশের জন্য গ্রহণ করতে দেখে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নতুন প্রশাসনের পরিবর্তনের স্লোগান হয়তো কিছুটা অর্থবহ মনে হবে এ দেশের কাছে। এ ক্ষেত্রে বিশ্ব কূটনীতিতে বাংলাদেশের সাফল্যের নতুন পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে। এ কূটনীতি অব্যাহত থাকলে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকটের মুখেও বাংলাদেশে ক্রমেই খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, খাদ্যমূল্য হ্রাস ও সীমিত আয়ের মানুষের কষ্ট লাঘবের সম্ভাবনা নিশ্চিত হবে। পাশের দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বলয় কাজ করলেও দরিদ্র ও সীমিত আয়ের মানুষের জন্য খাদ্যপণ্যের মূল্য ব্যাপকভাবেই সহনীয় করা সম্ভব হচ্ছে শুধু সরকারের কূটনৈতিক পারদর্শিতার কারণেই। সেখানে ব্যাপক রেশনিং-ব্যবস্থার মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য প্রায় বিনা মূল্যেই খাদ্যপণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। এখানে এখন পর্যন্ত খাদ্যসহ নিত্যপণ্যের ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধি রোধ করা হচ্ছে না, মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ হচ্ছে, ওএমএস, দুস্থ খাদ্য সহায়তা কার্যক্রম, ফেয়ার প্রাইস কার্ড এখন পর্যন্ত সীমিত পর্যায়েই রয়ে গেছে, আট টাকা কেজির চাল মাত্র হতদরিদ্ররা পেলেও তারও পরিধি সীমিত এবং সর্বোপরি বণ্টনব্যবস্থা এখন পর্যন্ত মজুদদার, মুনাফাখোর, কালোবাজারি সিন্ডিকেটের হাতেই বন্দি হয়ে রয়েছে। সরকার শুধু সারের ভর্তুকি বাড়িয়ে ও গুটি ইউরিয়া বিতরণ করেই দিন বদলের সূচনা করতে পারবে না, উলি্লখিত সব রকম সামাজিক অপরাধ ও দুর্বৃত্তায়ন শক্ত এবং নির্মম হাতে দমন ও সেই সঙ্গে পাশের দেশের মতো গ্রাম ও শহর_সর্বস্তরে ব্যাপক রেশনিং-ব্যবস্থা চালু করেই দিন বদলকে নিশ্চিত করতে পারবে।
কৃষির বিষয়টির সঙ্গে আমরা অবশ্যই যোগ করতে চাই শিল্পক্ষেত্রের দিকটি। এটা আশা করা যায়, বিশেষ করে একদা এ দেশে সোনালি আঁশ বলে পরিচিত পাটের উৎপাদন এবং পাট ও পাটজাত-শিল্পের সব বন্ধ কল-কারখানা চালু ও নতুন নতুন কারখানার প্রসার ঘটানোর মাধ্যমেই দিন বদল ত্বরান্বিত হবে।
ইতিমধ্যে প্রাপ্ত সর্বশেষ খবর হচ্ছে, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মহাজোট সরকার একে একে বন্ধ হওয়া কল-কারখানাগুলো চালু করবে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীই এ ঘোষণা দিয়েছেন।
ইতিমধ্যে খুলনার খালিশপুর জুট মিল (আগের পিপলস জুট মিল) চালু হওয়ায় প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হবে। আগামীতে কওমীসহ আরো সাতটি পাটকল চালু হবে। প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি খুলনায় মহাজোটের জনসভায় এ ঘোষণা দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিএনপি আমলে দেশের পাটকলগুলো একে একে বন্ধ করে দেওয়া হয়। সারের দাবিতে আন্দোলন করলে গুলি করে ১৮ কৃষককে হত্যা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলে আরো জানান, পাট ক্রয়ে কল-কারখানাগুলোকে এক হাজার ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। পাটকলগুলোর কাছে ব্যাংকের পাওনা প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা মওকুফ করা হয়েছে। শ্রমিকদের মহার্ঘ ভাতা, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাসহ চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। যাতায়াত ব্যবস্থাসহ এ অঞ্চলের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষির উন্নয়নেও ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই পদ্মা সেতু নির্মাণ শুরু হবে, ফলে এ অঞ্চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন হবে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
এ কথা সত্য যে বিএনপি-জামায়াতের দেউলিয়া রাজনীতি, অব্যাহত বিদ্যুৎ সংকট, দেশের প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ব্যাপক দুর্নীতি, ঘুষ প্রায় প্রকাশ্য ও প্রাতিষ্ঠানিক হয়ে দাঁড়ানো, মধ্যবিত্তের নাভিশ্বাস ওঠানো নিত্যপণ্যের অনিয়ন্ত্রিত মূল্যবৃদ্ধি, ভয়াবহ যানজট অব্যাহত থাকা, খুনখারাবি-রাহাজানি বেড়ে চলা_এসব অন্ধকার দিক মানুষকে এ সরকারের প্রতি বীতশ্রদ্ধ করে তুলছে, কিন্তু পাশাপাশি এটা অত্যন্ত বাস্তব যে জাহাজশিল্প নির্মাণ, পদ্মা সেতু প্রকল্প আর বিশেষ করে বন্ধ পাটকল চালু ও পাটের জেনোম আবিষ্কারের মাধ্যমে সোনালি আঁশের দ্রুত গৌরব ফিরিয়ে আনার বাস্তব কার্যক্রম দেশের পশ্চাৎপদতা ঘোচানোর এক সুদৃঢ় আশ্বাসও বহন করে এনেছে। অর্থনীতির মূল দুই শাখা কৃষি ও শিল্পের যুগপৎ অগ্রগতি নিশ্চিতভাবেই দিন বদলকে ত্বরান্বিত করবে।
আরব মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ব্যাপক গণ-আন্দোলনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জীবন তছনছ হয়ে যাওয়ায় সাময়িকভাবে আমাদের একটি প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের উৎস সাংঘাতিকভাবে রুদ্ধ হওয়ার উপক্রম হলেও আমাদের বিশ্বাস, সরকারের বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি ও স্বচ্ছ কূটনীতি অচিরেই এ সংকটের অবসান ঘটাতে সক্ষম হবে। আর এই দুর্যোগের মুখে সরকারের শিল্প ও কৃষি খাতকে জোরদার করার উদ্যোগও অধিকতর জরুরি বলে গণ্য হচ্ছে। শিল্প ও কৃষির বিকাশ এবং অগ্রগতির ওপর সরকারের সার্বক্ষণিক গুরুত্ব অক্ষুণ্ন থাকলে বর্তমান মেয়াদকালেই দিন বদল যে বাস্তব রূপ নেবে, এ দৃঢ়প্রত্যয় সচেতন দেশবাসীর রয়েছে। দেশের ব্যাপক শিল্পায়ন আর কৃষি বিপ্লবই সমাজের গণতন্ত্রায়ণ, বৈপ্লবিক রূপান্তর এবং সর্বস্তরে ন্যায়নীতি ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অপরিহার্য পূর্বশর্ত।

০৭. ৩.২০১১

No comments

Powered by Blogger.