ব্রিটিশ নির্বাচন-জনমত জরিপে কোয়ালিশন সরকারের ইঙ্গিত by ওয়াহিদ নবী
৬ মে ব্রিটেনে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কিন্তু মনে হচ্ছে যে নির্বাচনের উত্তাপটা যেন একটু কম। অনেকটা বিলেতের মেঘে ঢাকা সূর্যের মতো। জনমত জরিপের ফলাফল অনুযায়ী মনে হচ্ছে, একটা কোয়ালিশন সরকার হবে; বিশেষ করে ব্যবসায়ীরা এ ব্যাপার ভীষণ উদ্বিগ্ন।
তাঁদের মতে, ‘ঝুলন্ত পার্লামেন্ট’ হলে সরকারের পক্ষে প্রয়োজনে দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হবে না। এতে করে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি হবে এবং পরিণতিতে দেশের আর্থিক ক্ষতি হবে। কোয়ালিশন সরকারের সমস্যা হচ্ছে, শরিক দলগুলোর মধ্যে সদ্ভাব সব সময় থাকে না। এর ফলে প্রায় সব সময় দরকষাকষি ও মনকষাকষি চলে। অবশ্য এটাই স্বাভাবিক। শরিক দলগুলোর আদর্শ এক থাকে না। ফলে বাস্তবায়নের পদ্ধতি হয় ভিন্ন ধরনের। ব্যক্তিত্বের দ্বন্দ্ব তো রয়েছেই। এসব কারণে কোয়ালিশন সরকারের কাজ চলে মন্থর গতিতে। অপ্রিয় কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার দরকার হলে কেউই দায়িত্ব নিতে চায় না। কোনো কাজে ভুল হয়ে গেলে একে অপরকে দোষারোপ করে।
কিন্তু এ অবস্থা হলো কেন, তা বোঝার চেষ্টা করা যাক। বর্তমান শ্রমিকদলীয় সরকার ক্ষমতায় এসেছিল ১৯৯৭ সালে। এর আগে রক্ষণশীল সরকার ক্ষমতায় ছিল ১৮ বছর। একটা সরকার বেশি দিন ক্ষমতায় থাকলে জনগণের একটা অংশ একঘেয়েমি বোধ করতে শুরু করে। তখন তারা সরকারে একটা পরিবর্তন চায়। এই পরিবর্তন ভালো না মন্দ হবে, এ কথা তারা চিন্তা করে না। গণতন্ত্রের কিছু সমস্যা রয়েছে। যদিও উইনস্টন চার্চিল বলেছিলেন যে ‘গণতন্ত্রের কিছু দুর্বলতা থাকলেও এর চেয়ে ভালো পন্থা এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।’ তবুও গণতন্ত্রের এসব সমস্যা সম্পর্কে সজাগ থাকা জনগণের জন্য ভালো। গণতন্ত্রের একটা সমস্যা হচ্ছে এই যে একটা সরকার পরিবর্তন করার জন্য অধিকাংশ লোকের দরকার হয় না। জনগণের একেকটা অংশ একেকটা রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে। দেশে যা কিছুই ঘটুক না কেন, এরা নিজের দলকে ভোট দেয়। এ কারণে ভোটারদের একটা ক্ষুদ্র অংশ, যাঁরা কোনো দলের সমর্থক নন, তাঁরাই নির্বাচনের ফলাফল স্থির করে দেন। দেশে কয়েকটি এলাকা থাকে, যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো কাছাকাছিসংখ্যক ভোট পায়। এ আসনগুলোর হাতবদল নির্বাচনের ভাগ্য স্থির করে দেয়। এসব কারণে মতামত জরিপের ফলাফল অনেক সময় ঠিক হয় না। বিলেতের মতামত জরিপের ফলাফলে যদিও দেখা যাচ্ছে, প্রধান তিনটি দল প্রায় একই রকম ভোট পাচ্ছে, আসল নির্বাচনে এমনটা নাও হতে পারে।
টেলিভিশনে প্রধান তিনটি দলের নেতাদের মধ্য বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এখানেও তিনটি দলের নেতারা একই রকম অনুমোদন পেয়েছেন জনগণের কাছ থেকে। এই ফলাফলের গুরুত্ব হচ্ছে, উদারপন্থী দলের নেতা নিক ক্লেগ বড় দুটি দলের নেতাদের মতোই জনপ্রিয় হয়েছেন। নিক ক্লেগ অপেক্ষাকৃত নতুন একটি দলের নেতা। দেখা যায়, জনগণের একটা অংশ নবাগতদের পছন্দ করে। এটি ছাড়া অন্য কোনো কারণ রয়েছে কি না, তা সময় বলে দেবে।
বিলেতের জনগণ স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে আর্থিক সচ্ছলতা উপভোগ করেছে বর্তমান শ্রমিকদলীয় সরকারের (লেবার পার্টি) প্রথম কয়েক বছরে। এ আর্থিক সচ্ছলতার কারণ গর্ডন ব্রাউন। অর্থমন্ত্রী হিসেবে তাঁর দক্ষতা জনগণকে আর্থিক সচ্ছলতা এনে দিয়েছিল। কিন্তু ইরাকের যুদ্ধ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ও শ্রমিকদলীয় সরকারের জনপ্রিয়তা কমিয়ে দেয়। এরপর আসে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা। দরিদ্র মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল গর্ডন ব্রাউন দক্ষতার সঙ্গে এই অবস্থার মোকাবিলা করেন। বিশ্বব্যপী মন্দার এই দুর্দিনেও বিলেতের মানুষকে খুব একটা দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি। রক্ষণশীল সরকারের আমলে যে মন্দা হয়েছিল, তাতে মানুষের ভোগান্তির শেষ ছিল না। ৩০ লাখ মানুষ বেকার হয়েছিল। সরকারের কোনো সহানুভূতি ছিল না মানুষের প্রতি। মন্ত্রীরা গর্ব করে বলতেন, ‘খারাপ অসুখের চিকিৎসা কড়া ওষুধ দিয়েই করতে হয়।’
গণতন্ত্রের আরেকটি সমস্যা হচ্ছে এই যে কিছু মানুষ নেতাদের চেহারা, পোশাক, চুল ইত্যাদি দেখে ভোট দেন। নেতাদের গুণের দিকটা তাঁরা ভালো করে দেখেন না। গর্ডন ব্রাউন নিজের চেহারা বা পোশাকের দিকে খুব একটা নজর দেন না। আশা করি, মানুষ তাঁর গুণকে দেখবে। আরেকটা সমস্যা হচ্ছে, কেউ কেউ কম বয়স্ক নেতাদের পছন্দ করেন, তাঁরা উপযুক্ত হন বা না হন। ব্রাউন আর দুজনের তুলনায় অভিজ্ঞ।
আব্রাহাম লিংকন একবার বলেছিলেন, ‘একজন মানুষ আসলে কেমন তা যদি জানতে চান, তবে তাঁকে কিছু ক্ষমতা দিন।’ উদারনৈতিক দলের নেতা নিক ক্লেগ কোনো ক্ষমতায় থেকে দায়িত্ব পালন করেননি। কাজেই তিনি এখনো পরীক্ষিত হননি। তিনি যে কথা মানুষ শুনতে চায়, সেসব কথা বলেন। মানুষের অধিকারের কথা ভাবেন এমন একটা ধারণা দিলেও আসলে রক্ষণশীল দলের চিন্তা বড়লোকদের নিয়ে। মার্গারেট থ্যাচার আর তাঁর অনুসারীদের আমলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কথা মানুষ এখনো ভোলেনি।
ধনীদের স্বার্থ রক্ষাকারী রক্ষণশীল দল নির্বাচনে জয়লাভ করে কীভাবে? শ্রমজীবী মানুষ ধনীদের পক্ষে ভোট না দিলে রক্ষণশীলদের জেতার কথা নয়। তাঁরা ভোট পাওয়ার জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করে মানুষকে বিভ্রান্ত করেন। শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে বিভেদ ধনীদের সাহায্য করে। শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে যাদের অবস্থা একটু ভালো হয়, তারা নিজেদের ধনী ভাবতে শুরু করে। কোনো কোনো সময় ক্ষমতা হাতে পেলে শ্রমজীবীদের কারও কারও মাথা গরম হয়ে যায়। সত্তরের দশকে ইউনিয়ন নেতাদের কেউ কেউ সামন্তদের মতো আচরণ করে। জনগণ এটা পছন্দ করেনি। ’৭৯ সালে রক্ষণশীলদের নির্বাচনে বিজয় কিছুটা ইউনিয়ন নেতাদের ব্যবহারের জন্য হয়েছিল। মধ্যবিত্তরা প্রায় সবাই রক্ষণশীলদের ভোট দেয়। ১৯৭৯ সালে শ্রমিকদলীয় সরকারের ওপর থেকে সামান্য কারণে উদারনৈতিক দল সমর্থন তুলে নেয়। এর ফলে ১৮ বছরের রক্ষণশীল সরকারের নিষ্পেষণ মানুষের ওপর। নির্বাচনে বিজয়ে সংবাদমাধ্যমের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা থাকে। বিলেতের সংবাদপত্রের মালিকদের প্রায় সবাই রক্ষণশীল দলের সমর্থক। রুপার্ট মার্ডকের পত্রিকা সান বেশ জনপ্রিয়। সান এবার রক্ষণশীলদের সমর্থন করছে। টেলিভিশন আর রেডিওর শিল্পীরা প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন। শ্রমজীবী পরিবারে জন্মালেও তাঁদের অনেকেই নিজেদের ধনী মনে করে রক্ষণশীলদের সেবা করেন।
এক বিজ্ঞ ব্যক্তি বলেছিলেন, ‘আমরা অন্যের ভুলের দ্বারা শিখতে পারি। নিজের ভুলের দ্বারা শিখতে গেলে আমাদের শত শত বছর লেগে যাবে।’ উইটাগেমো, কাউন্সিল অব টেনান্ট ইন চিফ, ম্যাগনাকার্টা, সপ্তদশ শতাব্দীর গৃহযুদ্ধ ইত্যাদি অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বিলেতের গণতন্ত্র আজকের অবস্থায় এসে পৌঁছেছে। এ দেশে নারীরা অনেক আন্দোলনের পর মাত্র ১৯৩০ সালে ভোটাধিকার পেয়েছেন। গণতন্ত্রের পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়। অগ্রগতি খুব দ্রুতগতিতে নাও আসতে পারে। গণতন্ত্র সফল হবে যদি বাক-স্বাধীনতা নিশ্চিত করা যায়। আমাদের মনে রাখতে হবে যে বিলেতের সিভিল সার্ভিস, সেনা ও পুলিশ দক্ষ ও সত্। রাজনীতিতে তাদের অভিলাষ নেই।
ওয়াহিদ নবী: লন্ডনপ্রবাসী চিকিৎসক ও গবেষক।
কিন্তু এ অবস্থা হলো কেন, তা বোঝার চেষ্টা করা যাক। বর্তমান শ্রমিকদলীয় সরকার ক্ষমতায় এসেছিল ১৯৯৭ সালে। এর আগে রক্ষণশীল সরকার ক্ষমতায় ছিল ১৮ বছর। একটা সরকার বেশি দিন ক্ষমতায় থাকলে জনগণের একটা অংশ একঘেয়েমি বোধ করতে শুরু করে। তখন তারা সরকারে একটা পরিবর্তন চায়। এই পরিবর্তন ভালো না মন্দ হবে, এ কথা তারা চিন্তা করে না। গণতন্ত্রের কিছু সমস্যা রয়েছে। যদিও উইনস্টন চার্চিল বলেছিলেন যে ‘গণতন্ত্রের কিছু দুর্বলতা থাকলেও এর চেয়ে ভালো পন্থা এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।’ তবুও গণতন্ত্রের এসব সমস্যা সম্পর্কে সজাগ থাকা জনগণের জন্য ভালো। গণতন্ত্রের একটা সমস্যা হচ্ছে এই যে একটা সরকার পরিবর্তন করার জন্য অধিকাংশ লোকের দরকার হয় না। জনগণের একেকটা অংশ একেকটা রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে। দেশে যা কিছুই ঘটুক না কেন, এরা নিজের দলকে ভোট দেয়। এ কারণে ভোটারদের একটা ক্ষুদ্র অংশ, যাঁরা কোনো দলের সমর্থক নন, তাঁরাই নির্বাচনের ফলাফল স্থির করে দেন। দেশে কয়েকটি এলাকা থাকে, যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো কাছাকাছিসংখ্যক ভোট পায়। এ আসনগুলোর হাতবদল নির্বাচনের ভাগ্য স্থির করে দেয়। এসব কারণে মতামত জরিপের ফলাফল অনেক সময় ঠিক হয় না। বিলেতের মতামত জরিপের ফলাফলে যদিও দেখা যাচ্ছে, প্রধান তিনটি দল প্রায় একই রকম ভোট পাচ্ছে, আসল নির্বাচনে এমনটা নাও হতে পারে।
টেলিভিশনে প্রধান তিনটি দলের নেতাদের মধ্য বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এখানেও তিনটি দলের নেতারা একই রকম অনুমোদন পেয়েছেন জনগণের কাছ থেকে। এই ফলাফলের গুরুত্ব হচ্ছে, উদারপন্থী দলের নেতা নিক ক্লেগ বড় দুটি দলের নেতাদের মতোই জনপ্রিয় হয়েছেন। নিক ক্লেগ অপেক্ষাকৃত নতুন একটি দলের নেতা। দেখা যায়, জনগণের একটা অংশ নবাগতদের পছন্দ করে। এটি ছাড়া অন্য কোনো কারণ রয়েছে কি না, তা সময় বলে দেবে।
বিলেতের জনগণ স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে আর্থিক সচ্ছলতা উপভোগ করেছে বর্তমান শ্রমিকদলীয় সরকারের (লেবার পার্টি) প্রথম কয়েক বছরে। এ আর্থিক সচ্ছলতার কারণ গর্ডন ব্রাউন। অর্থমন্ত্রী হিসেবে তাঁর দক্ষতা জনগণকে আর্থিক সচ্ছলতা এনে দিয়েছিল। কিন্তু ইরাকের যুদ্ধ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ও শ্রমিকদলীয় সরকারের জনপ্রিয়তা কমিয়ে দেয়। এরপর আসে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা। দরিদ্র মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল গর্ডন ব্রাউন দক্ষতার সঙ্গে এই অবস্থার মোকাবিলা করেন। বিশ্বব্যপী মন্দার এই দুর্দিনেও বিলেতের মানুষকে খুব একটা দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি। রক্ষণশীল সরকারের আমলে যে মন্দা হয়েছিল, তাতে মানুষের ভোগান্তির শেষ ছিল না। ৩০ লাখ মানুষ বেকার হয়েছিল। সরকারের কোনো সহানুভূতি ছিল না মানুষের প্রতি। মন্ত্রীরা গর্ব করে বলতেন, ‘খারাপ অসুখের চিকিৎসা কড়া ওষুধ দিয়েই করতে হয়।’
গণতন্ত্রের আরেকটি সমস্যা হচ্ছে এই যে কিছু মানুষ নেতাদের চেহারা, পোশাক, চুল ইত্যাদি দেখে ভোট দেন। নেতাদের গুণের দিকটা তাঁরা ভালো করে দেখেন না। গর্ডন ব্রাউন নিজের চেহারা বা পোশাকের দিকে খুব একটা নজর দেন না। আশা করি, মানুষ তাঁর গুণকে দেখবে। আরেকটা সমস্যা হচ্ছে, কেউ কেউ কম বয়স্ক নেতাদের পছন্দ করেন, তাঁরা উপযুক্ত হন বা না হন। ব্রাউন আর দুজনের তুলনায় অভিজ্ঞ।
আব্রাহাম লিংকন একবার বলেছিলেন, ‘একজন মানুষ আসলে কেমন তা যদি জানতে চান, তবে তাঁকে কিছু ক্ষমতা দিন।’ উদারনৈতিক দলের নেতা নিক ক্লেগ কোনো ক্ষমতায় থেকে দায়িত্ব পালন করেননি। কাজেই তিনি এখনো পরীক্ষিত হননি। তিনি যে কথা মানুষ শুনতে চায়, সেসব কথা বলেন। মানুষের অধিকারের কথা ভাবেন এমন একটা ধারণা দিলেও আসলে রক্ষণশীল দলের চিন্তা বড়লোকদের নিয়ে। মার্গারেট থ্যাচার আর তাঁর অনুসারীদের আমলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কথা মানুষ এখনো ভোলেনি।
ধনীদের স্বার্থ রক্ষাকারী রক্ষণশীল দল নির্বাচনে জয়লাভ করে কীভাবে? শ্রমজীবী মানুষ ধনীদের পক্ষে ভোট না দিলে রক্ষণশীলদের জেতার কথা নয়। তাঁরা ভোট পাওয়ার জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করে মানুষকে বিভ্রান্ত করেন। শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে বিভেদ ধনীদের সাহায্য করে। শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে যাদের অবস্থা একটু ভালো হয়, তারা নিজেদের ধনী ভাবতে শুরু করে। কোনো কোনো সময় ক্ষমতা হাতে পেলে শ্রমজীবীদের কারও কারও মাথা গরম হয়ে যায়। সত্তরের দশকে ইউনিয়ন নেতাদের কেউ কেউ সামন্তদের মতো আচরণ করে। জনগণ এটা পছন্দ করেনি। ’৭৯ সালে রক্ষণশীলদের নির্বাচনে বিজয় কিছুটা ইউনিয়ন নেতাদের ব্যবহারের জন্য হয়েছিল। মধ্যবিত্তরা প্রায় সবাই রক্ষণশীলদের ভোট দেয়। ১৯৭৯ সালে শ্রমিকদলীয় সরকারের ওপর থেকে সামান্য কারণে উদারনৈতিক দল সমর্থন তুলে নেয়। এর ফলে ১৮ বছরের রক্ষণশীল সরকারের নিষ্পেষণ মানুষের ওপর। নির্বাচনে বিজয়ে সংবাদমাধ্যমের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা থাকে। বিলেতের সংবাদপত্রের মালিকদের প্রায় সবাই রক্ষণশীল দলের সমর্থক। রুপার্ট মার্ডকের পত্রিকা সান বেশ জনপ্রিয়। সান এবার রক্ষণশীলদের সমর্থন করছে। টেলিভিশন আর রেডিওর শিল্পীরা প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন। শ্রমজীবী পরিবারে জন্মালেও তাঁদের অনেকেই নিজেদের ধনী মনে করে রক্ষণশীলদের সেবা করেন।
এক বিজ্ঞ ব্যক্তি বলেছিলেন, ‘আমরা অন্যের ভুলের দ্বারা শিখতে পারি। নিজের ভুলের দ্বারা শিখতে গেলে আমাদের শত শত বছর লেগে যাবে।’ উইটাগেমো, কাউন্সিল অব টেনান্ট ইন চিফ, ম্যাগনাকার্টা, সপ্তদশ শতাব্দীর গৃহযুদ্ধ ইত্যাদি অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বিলেতের গণতন্ত্র আজকের অবস্থায় এসে পৌঁছেছে। এ দেশে নারীরা অনেক আন্দোলনের পর মাত্র ১৯৩০ সালে ভোটাধিকার পেয়েছেন। গণতন্ত্রের পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়। অগ্রগতি খুব দ্রুতগতিতে নাও আসতে পারে। গণতন্ত্র সফল হবে যদি বাক-স্বাধীনতা নিশ্চিত করা যায়। আমাদের মনে রাখতে হবে যে বিলেতের সিভিল সার্ভিস, সেনা ও পুলিশ দক্ষ ও সত্। রাজনীতিতে তাদের অভিলাষ নেই।
ওয়াহিদ নবী: লন্ডনপ্রবাসী চিকিৎসক ও গবেষক।
No comments