শিক্ষার্থীদের অপেক্ষার শেষ হোক
সন্তান যে কোনো মা-বাবার জীবনে শ্রেষ্ঠ সম্পদ। মা-বাবারা অনেক স্বপ্ন নিয়ে তাদের সন্তানদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পাঠান নিছক একটি সার্টিফিকেট অর্জনের জন্য নয়। প্রত্যেক মা-বাবাই তাদের সন্তানদের আদর্শবান, বিবেক ও মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন একজন সত্যিকারের মানুষ হিসেবে দেখতে চান, যে শিক্ষাটা পরিবারের পাশাপাশি ছেলেমেয়েরা শিক্ষকদের কাছ থেকেও পেয়ে থাকে।
কিন্তু আমাদের সন্তানদের দুর্ভাগ্য যে, তাদের শিক্ষকরা তাদের সামনে অনুসরণীয় কোনো দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেননি। আমরা মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড টেকনোলজি অ্যান্ড নিউট্রিশনাল সায়েন্স বিভাগের গত ১১ মাস ধরে বিএসসির (অনার্স) পরিবর্তে যৌক্তিক ও ন্যায়সঙ্গত বিএসসির (ইঞ্জিনিয়ারিং) দাবিতে আন্দোলনরত হতভাগ্য শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা বলছি। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোনো যৌক্তিক দাবির পক্ষে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতেই পারে। কিন্তু পৃথিবীতে মনে হয় এমন কোনো নজির পাওয়া যাবে না, যেখানে মানববন্ধনে দাঁড়ানো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শিক্ষকরা ব্যানার, ফেস্টুুন কেড়ে নিয়ে তাদের ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেন এবং ছাত্রীদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন কিংবা নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে পুলিশ গ্রেফতার করতে না চাইলেও শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের কলার ধরে জোর করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িতে করে থানায় পেঁৗছে দেন কিংবা অভিভাবকদের প্রতি অবজ্ঞাসূচক মন্তব্য অথবা শিক্ষকরা প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা ভঙ্গ করেন। আমরা আমাদের সন্তানদের নিয়ে গর্ব করি। কারণ গত ১১ মাস তারা তাদের আন্দোলনে ধ্বংসাত্মক উপায় অবলম্বন করার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কখনোই তা করেননি। যৌক্তিকতা না থাকলে শুধু আবেগের ওপর দাঁড়িয়ে কোনো আন্দোলন ১১ মাস টিকে থাকতে পারে না। বিভাগীয় শিক্ষকরা বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের মতামতের দোহাই দিয়ে দাবিটিকে যেভাবে অযৌক্তিক প্রমাণের চেষ্টা করেছেন তাতে এ বিভাগের একজন শিক্ষকের মতামত অবশ্যই উল্লেখ করতে হয়, যেখানে তিনি নিজের মুখে ছেলেমেয়েদের বলেছেন, 'আমরা শিক্ষকরাই চাই না তোমাদের ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি দেওয়া হোক।' তাহলে যেখানে এ বিভাগের শিক্ষকরা এবং প্রশাসনই শুরু থেকে দাবিটি যৌক্তিক হওয়া সত্ত্বেও বিরোধিতা করে আসছে সেখানে বিশেষজ্ঞদের মতামতের দোহাই দেওয়া কেন হচ্ছে?
আমাদের সন্তানরা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে গত ২০ মার্চ প্রথমবারের মতো টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আমরণ অনশন কর্মসূচি গ্রহণ করে এবং অনশনের তৃতীয় দিন ২২ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেননের হস্তক্ষেপে স্বয়ং ভাইস চ্যান্সেলর দাবি বাস্তবায়নের জন্য রিভিউ কমিটি গঠনের আশ্বাস দিয়ে ছেলেমেয়েদের অনশন ভঙ্গ করান। কিন্তু তারা তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কোনো রিভিউ কমিটি গঠন করেননি। সন্তানের জীবন যখন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে তখন অভিভাবকদের মন যে কতটা অস্থির হয়ে ওঠে তা অভিভাবক মাত্রই বুঝতে পারবেন। আমাদের সন্তানরা প্রতারিত হয়ে জীবনের মায়া ত্যাগ করে দ্বিতীয়বারের মতো নিরুপায় হয়ে গত ১৪ মে টাঙ্গাইল পৌর উদ্যানে আমরণ অনশনে যেতে বাধ্য হয়। ১০ দিনের অনশনে অনেক ছেলেমেয়েই অসুস্থ হয়ে পড়ে অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা একটিবারের জন্যও তাদের দেখতে যাননি। আমাদেরই তিন সন্তান মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাদের ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছিল। এই কি শিক্ষকের আচরণ? আমাদের সন্তানরা একটি ডিগ্রি চেয়ে কি খুব বড় কোনো অন্যায় করে ফেলেছে? প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাড়তি ৫০ শিক্ষার্থী ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বের হলে সেটা কি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অগৌরবের নাকি গৌরবের? গত ২৪ মে টাঙ্গাইল জেলা ও পুলিশ প্রশাসন এবং গণ্যমান্য রাজনৈতিক ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে প্রশাসন দ্বিতীয়বারের মতো দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়ে ছেলেমেয়েদের অনশন ভঙ্গ করান, যেখানে এই বিভাগের শিক্ষকরাও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু খুবই দুঃখের ব্যাপার, বর্তমানে বিভাগীয় শিক্ষকদের কিছু আচরণে আমাদের সন্তানরা আবারও শঙ্কাগ্রস্ত। শিক্ষকরাই যদি নিজেদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করেন এবং সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের কষ্টে বিগলিত না হয়ে তাদের জীবন নিয়ে ছেলেখেলা করেন তবে সেসব শিক্ষকের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অভিভাবক হিসেবে আমরা এবং এই দেশ কী আশা করতে পারে? আমাদের সন্তানদের জীবন থেকে ১১টি মাস কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এ সময়ে আমাদের এবং আমাদের সন্তানদের যে অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে তা লেখার মাধ্যমে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এ বিভাগেই অনেক ছেলেমেয়ে আছে, যারা খুব দরিদ্র পরিবার থেকে এসেছে। দ্রুত পড়াশোনা শেষ করে নিজের ও পরিবারের হাল ধরা তাদের জন্য খুবই জরুরি। এসব ছেলেমেয়ে কিংবা অভিভাবক হিসেবে আমাদের কষ্ট, এসবের কোনো কিছুই কি তাদের ছুঁয়ে যাচ্ছে না? আমাদের ছেলেমেয়েদের যে ক্ষতি হয়ে গেছে তা কখনও পূরণ হওয়ার নয়। এখন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রিটা হতে পারে তাদের জন্য শুধু একটু সান্ত্বনা মাত্র। আশা করি, প্রশাসন এবার মানবিকতার উৎকৃষ্ট পরিচয় দিয়ে তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে আমাদের সন্তানদের আর প্রতারিত করবে না।
হ শিক্ষার্থীদের অভিভাবক
ফুড টেকনোলজি অ্যান্ড নিউট্রিশনাল সায়েন্স বিভাগ, মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
আমাদের সন্তানরা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে গত ২০ মার্চ প্রথমবারের মতো টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আমরণ অনশন কর্মসূচি গ্রহণ করে এবং অনশনের তৃতীয় দিন ২২ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেননের হস্তক্ষেপে স্বয়ং ভাইস চ্যান্সেলর দাবি বাস্তবায়নের জন্য রিভিউ কমিটি গঠনের আশ্বাস দিয়ে ছেলেমেয়েদের অনশন ভঙ্গ করান। কিন্তু তারা তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কোনো রিভিউ কমিটি গঠন করেননি। সন্তানের জীবন যখন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে তখন অভিভাবকদের মন যে কতটা অস্থির হয়ে ওঠে তা অভিভাবক মাত্রই বুঝতে পারবেন। আমাদের সন্তানরা প্রতারিত হয়ে জীবনের মায়া ত্যাগ করে দ্বিতীয়বারের মতো নিরুপায় হয়ে গত ১৪ মে টাঙ্গাইল পৌর উদ্যানে আমরণ অনশনে যেতে বাধ্য হয়। ১০ দিনের অনশনে অনেক ছেলেমেয়েই অসুস্থ হয়ে পড়ে অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা একটিবারের জন্যও তাদের দেখতে যাননি। আমাদেরই তিন সন্তান মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাদের ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছিল। এই কি শিক্ষকের আচরণ? আমাদের সন্তানরা একটি ডিগ্রি চেয়ে কি খুব বড় কোনো অন্যায় করে ফেলেছে? প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাড়তি ৫০ শিক্ষার্থী ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বের হলে সেটা কি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অগৌরবের নাকি গৌরবের? গত ২৪ মে টাঙ্গাইল জেলা ও পুলিশ প্রশাসন এবং গণ্যমান্য রাজনৈতিক ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে প্রশাসন দ্বিতীয়বারের মতো দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়ে ছেলেমেয়েদের অনশন ভঙ্গ করান, যেখানে এই বিভাগের শিক্ষকরাও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু খুবই দুঃখের ব্যাপার, বর্তমানে বিভাগীয় শিক্ষকদের কিছু আচরণে আমাদের সন্তানরা আবারও শঙ্কাগ্রস্ত। শিক্ষকরাই যদি নিজেদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করেন এবং সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের কষ্টে বিগলিত না হয়ে তাদের জীবন নিয়ে ছেলেখেলা করেন তবে সেসব শিক্ষকের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অভিভাবক হিসেবে আমরা এবং এই দেশ কী আশা করতে পারে? আমাদের সন্তানদের জীবন থেকে ১১টি মাস কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এ সময়ে আমাদের এবং আমাদের সন্তানদের যে অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে তা লেখার মাধ্যমে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এ বিভাগেই অনেক ছেলেমেয়ে আছে, যারা খুব দরিদ্র পরিবার থেকে এসেছে। দ্রুত পড়াশোনা শেষ করে নিজের ও পরিবারের হাল ধরা তাদের জন্য খুবই জরুরি। এসব ছেলেমেয়ে কিংবা অভিভাবক হিসেবে আমাদের কষ্ট, এসবের কোনো কিছুই কি তাদের ছুঁয়ে যাচ্ছে না? আমাদের ছেলেমেয়েদের যে ক্ষতি হয়ে গেছে তা কখনও পূরণ হওয়ার নয়। এখন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রিটা হতে পারে তাদের জন্য শুধু একটু সান্ত্বনা মাত্র। আশা করি, প্রশাসন এবার মানবিকতার উৎকৃষ্ট পরিচয় দিয়ে তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে আমাদের সন্তানদের আর প্রতারিত করবে না।
হ শিক্ষার্থীদের অভিভাবক
ফুড টেকনোলজি অ্যান্ড নিউট্রিশনাল সায়েন্স বিভাগ, মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
No comments