পাহাড় কাটার হিড়িক
প্রায় প্রতিবছরই পাহাড়ধসে মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটে। কখনো কখনো বড় ধরনের পাহাড়ধসে শতাধিক মানুষের মৃত্যুর পর সারা দেশে শোকাবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দুর্ঘটনার পরপর দেশব্যাপী পাহাড় কাটা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও প্রতিবাদ হয়। অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটাকে দায়ী করা হয়। অথচ প্রায় নিয়মিতভাবেই পাহাড় কাটা চলছে।
প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো পত্রিকায় পাহাড় কাটার খবর ছাপা হচ্ছে। প্রশাসন নির্বিকার। অথচ আইন অনুযায়ী ১৯৯৫ সাল থেকে দেশে পাহাড় কাটা নিষিদ্ধ।
লখিন্দরকে লোহার ঘরে রাখা হয়েছিল, যাতে সাপে না কাটতে পারে। কিন্তু কারিগর তাতে ছোট্ট একটি ফুটো রেখে দিয়েছিলেন। আর তা দিয়েই সাপ ঢুকে লখিন্দরকে দংশন করেছিল। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় (২০০৮ সালের জুলাই মাসে) পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছিলেন। প্রজ্ঞাপনে পাহাড় কাটা নিষিদ্ধ থাকার কথা, সর্বোচ্চ শাস্তির কথা উল্লেখ করেই বলা হয়েছে, তবে 'অনিবার্য প্রয়োজনে' পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে পাহাড় ও টিলা কাটা, এমনকি মুড়িয়েও ফেলা যাবে। আর সেই অনিবার্য প্রয়োজনের অজুহাত দিয়ে বৈধভাবে যেমন পাহাড় কাটা হচ্ছে, তেমনি পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের খুশি করে অবৈধভাবেও পাহাড় কাটা চলছে। আবার বর্তমান সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপিদের পরোক্ষ সহযোগিতায় পাহাড় কাটা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। কাজেই 'অনিবার্য প্রয়োজন' যত দিন থাকবে, তত দিন পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের পকেট ভারী হতে থাকবে, আর পাহাড় কাটাও চলতে থাকবে। এরপর আবার যখন বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটবে, তখন সরকার ও পুরো জাতি আবার অনেক হা-হুতাশ করবে। এটাই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে।
পাহাড় কাটার ফলে কেবল দুর্ঘটনা ঘটে_তা-ই নয়, দেশে প্রাকৃতিক পরিবেশও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। আর শুধু যে পাহাড় কাটা হচ্ছে, তা-ই নয়। পাহাড়ের প্রকৃতিও বদলে দেওয়া হচ্ছে। ফলে জীববৈচিত্র্যের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। পাহাড়ের বহু প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। কারণ এগুলোর অনেকের পক্ষেই সমতলে এসে টিকে থাকা সম্ভব নয়। এটা সত্য, জনগুরুত্বসম্পন্ন কোনো কোনো স্থাপনা কিংবা বিকল্পহীন অতি জরুরি কোনো রাস্তা নির্মাণের প্রয়োজনে কখনো কখনো কোনো কোনো পাহাড় কাটার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু তারও একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা প্রয়োজন। পাহাড়ের কতটুকু ক্ষতি হবে, তা নির্ধারণ করে বিকল্প বা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। আর সেই অনিবার্য প্রয়োজন নির্ধারণের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে একটি কমিটি থাকা প্রয়োজন। তা না হলে ফুটো দিয়ে বা 'অনিবার্য প্রয়োজন'-এর দোহাই দিয়ে অবিরাম পাহাড় কাটা চলতেই থাকবে।
পরিবেশবিদদের অনেকেই বলে থাকেন, পরিবেশ অধিদপ্তরই হচ্ছে পরিবেশের প্রধান শত্রু। আইন আছে, বনাঞ্চলের তিন কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ইটভাটা থাকতে পারবে না। কিন্তু কেবল চুনতি ও টেকনাফের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গা ঘেঁষে চালু রয়েছে ১৮টি ইটভাটা। এরা একদিকে ইট পোড়ানোর জন্য সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গাছ কেটে সাবাড় করছে, অন্যদিকে পাহাড় কেটে মাটি এনে ইট বানাচ্ছে। এদের কোনো কোনোটি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এ ব্যবসা চালিয়ে আসছে। আর এরা নিয়মিত পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পাচ্ছে এবং সেই ছাড়পত্র দেখিয়ে জেলা প্রশাসন থেকে লাইসেন্স নবায়ন করে নিচ্ছে। আমরা প্রতিবছরই পাহাড়ধসে মৃত্যুর ঘটনা এবং প্রকৃতির এমন বিনাশ আর দেখতে চাই না। আশা করি, সরকার বিষয়টি আন্তরিকতার সঙ্গে বিবেচনা করবে।
লখিন্দরকে লোহার ঘরে রাখা হয়েছিল, যাতে সাপে না কাটতে পারে। কিন্তু কারিগর তাতে ছোট্ট একটি ফুটো রেখে দিয়েছিলেন। আর তা দিয়েই সাপ ঢুকে লখিন্দরকে দংশন করেছিল। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় (২০০৮ সালের জুলাই মাসে) পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছিলেন। প্রজ্ঞাপনে পাহাড় কাটা নিষিদ্ধ থাকার কথা, সর্বোচ্চ শাস্তির কথা উল্লেখ করেই বলা হয়েছে, তবে 'অনিবার্য প্রয়োজনে' পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে পাহাড় ও টিলা কাটা, এমনকি মুড়িয়েও ফেলা যাবে। আর সেই অনিবার্য প্রয়োজনের অজুহাত দিয়ে বৈধভাবে যেমন পাহাড় কাটা হচ্ছে, তেমনি পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের খুশি করে অবৈধভাবেও পাহাড় কাটা চলছে। আবার বর্তমান সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপিদের পরোক্ষ সহযোগিতায় পাহাড় কাটা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। কাজেই 'অনিবার্য প্রয়োজন' যত দিন থাকবে, তত দিন পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের পকেট ভারী হতে থাকবে, আর পাহাড় কাটাও চলতে থাকবে। এরপর আবার যখন বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটবে, তখন সরকার ও পুরো জাতি আবার অনেক হা-হুতাশ করবে। এটাই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে।
পাহাড় কাটার ফলে কেবল দুর্ঘটনা ঘটে_তা-ই নয়, দেশে প্রাকৃতিক পরিবেশও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। আর শুধু যে পাহাড় কাটা হচ্ছে, তা-ই নয়। পাহাড়ের প্রকৃতিও বদলে দেওয়া হচ্ছে। ফলে জীববৈচিত্র্যের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। পাহাড়ের বহু প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। কারণ এগুলোর অনেকের পক্ষেই সমতলে এসে টিকে থাকা সম্ভব নয়। এটা সত্য, জনগুরুত্বসম্পন্ন কোনো কোনো স্থাপনা কিংবা বিকল্পহীন অতি জরুরি কোনো রাস্তা নির্মাণের প্রয়োজনে কখনো কখনো কোনো কোনো পাহাড় কাটার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু তারও একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা প্রয়োজন। পাহাড়ের কতটুকু ক্ষতি হবে, তা নির্ধারণ করে বিকল্প বা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। আর সেই অনিবার্য প্রয়োজন নির্ধারণের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে একটি কমিটি থাকা প্রয়োজন। তা না হলে ফুটো দিয়ে বা 'অনিবার্য প্রয়োজন'-এর দোহাই দিয়ে অবিরাম পাহাড় কাটা চলতেই থাকবে।
পরিবেশবিদদের অনেকেই বলে থাকেন, পরিবেশ অধিদপ্তরই হচ্ছে পরিবেশের প্রধান শত্রু। আইন আছে, বনাঞ্চলের তিন কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ইটভাটা থাকতে পারবে না। কিন্তু কেবল চুনতি ও টেকনাফের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গা ঘেঁষে চালু রয়েছে ১৮টি ইটভাটা। এরা একদিকে ইট পোড়ানোর জন্য সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গাছ কেটে সাবাড় করছে, অন্যদিকে পাহাড় কেটে মাটি এনে ইট বানাচ্ছে। এদের কোনো কোনোটি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এ ব্যবসা চালিয়ে আসছে। আর এরা নিয়মিত পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পাচ্ছে এবং সেই ছাড়পত্র দেখিয়ে জেলা প্রশাসন থেকে লাইসেন্স নবায়ন করে নিচ্ছে। আমরা প্রতিবছরই পাহাড়ধসে মৃত্যুর ঘটনা এবং প্রকৃতির এমন বিনাশ আর দেখতে চাই না। আশা করি, সরকার বিষয়টি আন্তরিকতার সঙ্গে বিবেচনা করবে।
No comments