দয়া করে ডোবাবেন না

সর্বত্র এখন ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে আলোচনা। আলোচনার কারণ, গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া। বাংলাদেশ ব্যাংক গত ২৮ ফেব্রুয়ারি এক চিঠিতে জানায়, গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে মুহাম্মদ ইউনূসের দায়িত্ব পালন আইনগতভাবে বৈধ নয়।


এরপর ২ মার্চ মুহাম্মদ ইউনূসকে অব্যাহতি দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক আরেকটি চিঠি পাঠায় গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানের কাছে। গ্রামীণ ব্যাংকের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ওই দিন এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, আইনজ্ঞদের মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে নিজের পদে বহাল আছেন তিনি। এরপর ড. ইউনূস এ ব্যাপারে হাইকোর্টে রিট করেন। পরদিন গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ৯ পরিচালক হাইকোর্টে আরেকটি রিট করেন। দীর্ঘ শুনানির পর হাইকোর্ট দুটি রিট আবেদনই খারিজ করে দেন। পর দিনই হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে দুটি আবেদন (সিএমপি) করা হয়েছে।
গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অব্যাহতির বিষয়টি ক্রমেই রাজনৈতিক বিষয়ে পরিণত হচ্ছে। দেশি-বিদেশি মিডিয়ার পাশাপাশি দেশেও অনেকে বলছেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। অনাবশ্যকভাবে এর সঙ্গে জড়িয়ে ফেলা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষ নিয়ে বলেছেন, 'ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের প্রতিহিংসার শিকার।' ড. ইউনূসের পক্ষে-বিপক্ষে মিডিয়ায় প্রচুর লেখালেখিও হয়েছে। কিন্তু চিহ্নিত একটি মিডিয়াচক্র সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ড. ইউনূসের প্রতিপক্ষ হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে। স্পষ্ট করেই এসব মিডিয়ায় প্রশ্ন করা হয়েছে, ড. ইউনূসের নোবেল পুরস্কার পাওয়ায় শেখ হাসিনা রুষ্ট কি না? সেই মিডিয়াচক্রটিকে বুঝে-না বুঝে খোরাক জুগিয়ে যাচ্ছে সরকারের এবং ক্ষমতাসীন দলেরই কিছু লোক। ড. ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকা না থাকার সঙ্গে শেখ হাসিনার কী সম্পর্ক থাকতে পারে? ড. ইউনূসের নোবেল পুরস্কার পাওয়ার বিষয়টিই বা তাঁকে কেন ঈর্ষাপরায়ণ করবে? কেউ ধান ভানতে শিবের গীত গাইলে তাকে কী বলা যাবে! ড. মুহাম্মদ ইউনূস, গ্রামীণ ব্যাংক এবং বিদেশি করপোরেট পুঁজির স্বার্থরক্ষাকারী একটি মহল এতে রুষ্ট হয়েছে। তারা এ নিয়ে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে। তাদের পক্ষে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাঁদের সেই বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণার আগুনে ঘি ঢেলে দেওয়াটা কি সমীচীন হচ্ছে? বিশেষ করে যাঁরা এই মামলায় রাষ্ট্রকে সমর্থন করছেন, তাঁরা যখন এ নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করেন, তখন প্রশ্ন ওঠাটাই স্বাভাবিক।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম গত মঙ্গলবার মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালকদের রিটের আদেশের পর নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, 'আপনারা নোবেল প্রাইজটাকে এত বড় করে দেখছেন কেন? বাংলাদেশে যদি শান্তির জন্য নোবেল প্রাইজ পেতে হয়, তাহলে আমি বলব, দুজনের পাওয়া উচিত ছিল_শেখ হাসিনা আর সন্তু লারমার।' যেখানে মামলার বিষয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকা না থাকা, সেখানে তিনি নোবেল পুরস্কার নিয়ে কথা বলতে গেলেন কেন?
করপোরেট পুঁজির সুবিধাভোগী একটি চক্র বিষয়টি নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পানি ঘোলা করার চেষ্ট করছে। এ অবস্থায় দায়িত্বশীলদের এমন কোনো মন্তব্য করা উচিত নয়, যাতে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সুবিধা পায়। এ মামলার সঙ্গে শেখ হাসিনার কোনো সম্পর্ক নেই, তাঁকে অনাবশ্যকভাবে টেনে আনারও প্রয়োজন নেই। তাঁকে তাঁর জায়গায়ই থাকতে দিন। দয়া করে তাঁকে ডোবাবেন না।

No comments

Powered by Blogger.