অগ্নিদগ্ধ রোগীর চিকিৎসা
অগি্নদগ্ধ হয়ে প্রতিদিনই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগী আসে গড়ে আড়াই শতাধিক। অথচ এখানে শয্যা আছে মাত্র ৫০টি। এই পরিসংখ্যানই বলে দেয়, একজন মানুষ কোনো কারণে অগি্নদগ্ধ হলে চিকিৎসা পাওয়া কতটা দুরূহ। সারা দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে এই শয্যাগুলোই আছে চিকিৎসার জন্য।
অথচ আগুনে পোড়া রোগীদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি নিম্ন-মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্নবিত্ত পরিবারের সদস্য, যাদের পক্ষে চিকিৎসার জন্য বাইরে যাওয়া সম্ভব নয়। আর এই রোগের চিকিৎসার জন্য সময়ক্ষেপণ করারও কোনো সুযোগ নেই। আগুনে পুড়ে গেলে রোগীকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসা দিতে না পারলে তাকে সুস্থ করে তোলা কঠিন হয়ে পড়ে। অথচ দূর-দূরান্ত থেকে রোগীদের ঢাকায় আনতে হয়। প্রত্যন্ত এলাকা থেকে কোনো রোগীর ঢাকায় আসার জন্য যে সময় নষ্ট হয়, তার সঙ্গে যোগ হয় রোগী এবং তার নিকটজনদের অসাবধানতাবশত সময়ক্ষেপণ। ফলে অগি্নদগ্ধ অসংখ্য রোগীকে সুচিকিৎসার অভাবে প্রাণ হারাতে হয়। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশের পোড়া রোগীদের ৪০ ভাগই মৃত্যুবরণ করে সময়মতো চিকিৎসা না পাওয়ায়। এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসাসেবাকে ঢাকার বাইরে সম্প্রসারণ করাটা খুবই জরুরি। আর সেই সুবিধা যাতে সরকারিভাবে হয়, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।
আশার কথা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাস্থ্যসেবাকে মানুষের দোরগোড়ায় পেঁৗছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পূরণের লক্ষ্যে ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোর সাতটিতে বার্ন ইউনিট খোলার নির্দেশ দিয়েছেন। সেই অনুযায়ী কাজও এগিয়ে চলেছে। কিন্তু তার পরও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৫০ শয্যার বার্ন ইউনিটটি দেড় কোটি মানুষের এই রাজধানীর উপযোগী নয়, এটা বলতেই হবে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটকে আরো সম্প্রসারণ এবং আধুনিকায়ন করার প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রতিটি জেলা সরকারি হাসপাতালে বার্ন ইউনিট বাস্তবায়ন করা জরুরি।
অগি্নদগ্ধ রোগীদের অধিকাংশই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় অজ্ঞতার কারণে। গ্রাম-গঞ্জের মানুষ বিষয়টি সম্পর্কে খুব একটা সচেতনও নয়। তাই চিকিৎসা সুবিধা সম্প্রসারণের পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধির কাজটিও করতে হবে সরকারকে। বিশেষ করে সরকারি প্রচারমাধ্যমে প্রাথমিক চিকিৎসা বিষয়ে জানানো গেলেও অনেক ক্ষেত্রে বড় রকমের ক্ষতি থেকে বেঁচে যাওয়া সম্ভব হতে পারে।
আগুনে পোড়া অনেক রোগীকে প্লাস্টিক সার্জারি করার প্রয়োজন হয়। অত্যন্ত ব্যয়বহুল এই চিকিৎসা সুবিধা গ্রহণ করাটা সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব হয় না। অন্যদিকে, দেশের প্লাস্টিক সার্জনদের উন্নত প্রশিক্ষণের বিষয়টিও ভাবতে হবে।
No comments