শতভাগ পাস অসম্ভব নয় by মোঃ ফখরুল ইসলাম

এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর চট্টগ্রামের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এক ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা 'কোনো শিক্ষার্থী যেন ফেল না করে' তার আশাবাদ ব্যক্ত করে ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গণিত ও ইংরেজি বিষয়ের ক্লাসগুলো সংসদ টিভির মাধ্যমে দেশব্যাপী প্রচার করার প্রস্তাব করেন।


এটি নিঃসন্দেহে একটি ভালো প্রস্তাব। গণিত ও ইংরেজি বিষয়ে ফেলের হার কমানো গেলে পাসের হার আশানুরূপ পর্যায়ে পেঁৗছানো সম্ভব হবে। এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার ৮২ দশমিক ৩১, যা বিগত যে কোনো সময়ের তুলনায় ভালো।
দেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিএস) পরীক্ষার ফল আমরা দেখেছি। অংশ নেওয়া কোমলমতি শিশুদের মধ্যে ৩০ শতাংশই আটকে গেল জীবনের প্রথম পাবলিক পরীক্ষায়। জেএসসি ও জেডিসি উভয় পরীক্ষায় ফেল করেছে ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৫৫২ জন আর নিবন্ধন করেও অংশ নেয়নি ১ লাখ ১৩ হাজার ২৪৮ জন অর্থাৎ ৪ লাখ ৯৯ হাজার ৮০০ ছাত্রছাত্রীকে আমরা আপাতদৃষ্টিতে হারিয়েছি। এই প্রায় ৫ লাখ শিশুকে পরের বছর পরীক্ষামুখী করা ও পাস করার জন্য যে বিশেষ পরিচর্যা ও প্রণোদনা প্রয়োজন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রায় ১৪ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ৮ হাজার ৫৫৬ জন অর্থাৎ শূন্য দশমিক ৮৩ শতাংশ। ২০১০ সালের এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৭৯ দশমিক ৮৯ ভাগ আর জিপিএ-৫ প্রাপ্তের সংখ্যা ছিল ৮২ হাজার ৯৬১ জন।
ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের ফল খারাপ হয়েছে। অজপাড়াগাঁয়ের পরীক্ষার্থীর তুলনায় ঢাকা ও অন্যান্য বিভাগীয় শহরের পরীক্ষার্থীরা ভালো ফল করেছে অর্থাৎ শিক্ষায় সামাজিক ও পারিবারিক বিত্তের বৈষম্যের বিষয়টি ফুটে উঠেছে। জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিএস) উভয় পরীক্ষায় অংশ নেয় প্রায় ১৪ লাখ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ফেল করা ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৫৫২ জন শিক্ষার্থী ফেল করেছে মূলত ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞানে আর ৩৬৭টি প্রতিষ্ঠান থেকে কেউ পাস করেনি। শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় মনে করছেন, এই পরীক্ষার মাধ্যমে মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার রোধ করা যাবে। কিন্তু এখনই যারা ঝরে পড়ল তাদের কীভাবে আবার মূলধারায় ধরে রাখা যায় তা কর্তৃপক্ষকে ভাবিত করবে আশা করছি। দারিদ্র্যপীড়িত পরিবারগুলো তাদের অনুত্তীর্ণ শিশুকে আবার পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার বিষয়ে আগ্রহী হবে না তা নিশ্চিত করে বলা যায়। আশার কথা, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে মান উন্নয়নের জন্য ৩টি কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটিগুলোর কাছে এ অবস্থা থেকে দ্রুত বের হয়ে আসার একটি সুপারিশ যোগ করতে চাই। যেসব প্রতিষ্ঠানে কেউ পাস করেনি এবং যেসব প্রতিষ্ঠানে ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞানে পাসের হার খারাপ তাদের চিহ্নিত করে সেখানে ৩টি বিষয়ে পাঠদানের জন্য বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে নিযুক্তদের ডেপুটেশনে পাঠানো যেতে পারে। ২ অথবা ৩ বছরের জন্য এসব শিক্ষককে সব সুযোগ-সুবিধা প্রদান ও জ্যেষ্ঠতা খর্ব না করে বরং তাদের প্রণোদনামূলক কিছু সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা যেতে পারে। বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার থেকে ডেপুটেশনে যারা যাবেন তারা গণিত, ইংরেজি ও বিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের পাশাপাশি ৩টি বিষয়ে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের প্রশিক্ষিত করে তুলবেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে ৫ অথবা ১০ বছরের পরিকল্পনা তৈরি করে শুরু করতে পারে। ডেপুটেশনে অনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত শিক্ষক নিয়োগ করা যাবে না। এ সময়ের মধ্যে মাধ্যমিক স্তরকে তাদের গুণগত মান অর্জন করতে হবে। এর মাধ্যমে শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাবে, পরীক্ষায় পাসের হার কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে উন্নীত হবে। ঝরে পড়া বন্ধ হবে। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত 'শতভাগ পাস'।
fakhrul2011@gmail.com
 

No comments

Powered by Blogger.