সেনানিবাসে সেমিনার-সামরিক বাহিনী ও গণমাধ্যমের মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন

গণমাধ্যম রাষ্ট্রের অন্যতম শক্তি। এই শক্তির সঙ্গে রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানের সম্পর্কের উন্নয়ন প্রয়োজন। দেশের স্বার্থে সবার সম্মিলিতভাবে কাজ করা দরকার। সামরিক বাহিনীও জাতীয় শক্তির অংশ। এ কারণে গণমাধ্যম ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন তথা পারস্পরিক আস্থা ও সমন্বয় আরো বাড়ানো দরকার।


গতকাল রবিবার ঢাকা সেনানিবাসের ট্রাস্ট মিলনায়তনে সেনাবাহিনী এবং আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায় 'সামরিক বাহিনী ও গণমাধ্যম' শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। সেমিনারে সামরিক বাহিনীর প্রতিনিধিরা প্রতিরক্ষা বিষয়ক সাংবাদিকদের সঙ্গে খোলাখুলি মতবিনিময় করেন।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন সেনা সদরের চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মইনুল ইসলাম। সামরিক গোয়েন্দা পরিদপ্তরের (এমআই) পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রিদওয়ান-আল-মাহমুদ স্বাগত বক্তব্য দেন। সেনা সদরের একজন স্টাফ অফিসার, আইএসপিআরের পরিচালক ও একজন সহযোগী পরিচালক নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল মুনসুর আলোচ্য বিষয়ের ওপর তাঁর মতামত ব্যক্ত করেন।
সেমিনারে জাতীয় শক্তির অংশ হিসেবে সামরিক বাহিনীর ভূমিকা তুলে ধরে সেনাবাহিনীতে সম্প্রতি সংযোজিত 'সামরিক চেতনা ও মূল্যবোধ' সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। জানানো হয়, 'আমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন গর্বিত সদস্য, আমি সর্বদা মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং সংবিধানে বর্ণিত চেতনাকে সমুন্নত রাখব। আমি আমার দেশকে ভালোবাসি এবং দেশমাতৃকা ও দেশের সংবিধান রক্ষার্থে সর্বোচ্চ উৎসর্গ করতে সদা প্রস্তুত'- এগুলো সামরিক চেতনার উল্লেখযোগ্য কিছু অংশ। নতুন সংযোজিত মূল্যবোধে আরো রয়েছে সম্মান, গৌরব, সততা ও সত্যনিষ্ঠা, আনুগত্য, দেশপ্রেম, আস্থা, বিশ্বাস, শ্রদ্ধা, ন্যায়পরায়ণতা, নিঃস্বার্থ পেশাগত দায়িত্ব, সাহসিকতা ও সহযোদ্ধার প্রতি সহমর্মিতা।
প্রচার ও প্রকাশনামূলক কর্মকাণ্ডে সামরিক বাহিনীর সীমাবদ্ধতার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে বলা হয়, বর্তমানে ১৯৮২ সালের সাংগঠনিক কাঠামো নিয়ে সেনাবাহিনী গণমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে। সাংগঠনিক কাঠামো প্রণয়নের সময় দেশে কয়েকটি পত্রিকা ও একটি টিভি চ্যানেল ছিল। এখনো ৩০ বছর আগের মতো জনবল নিয়ে ৩০-৪০টি জাতীয় পত্রিকা এবং ১৭টির বেশি টিভি চ্যানেলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে হচ্ছে। তবে 'ফোর্সেস গোল-২০৩০' অনুযায়ী সেনাবাহিনী পুনর্গঠন কার্যক্রম শুরু হলে এ ধরনের সীমাবদ্ধতা থাকবে না।
সেমিনারে বলা হয়, 'সেনাবাহিনী একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এর মর্যাদা রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। আমরা যেমন আমাদের নিজ নিজ পরিবারের ঘটনাবলি ঐতিহ্য ও সুনাম রক্ষার স্বার্থে ঢালাওভাবে জনসমক্ষে প্রকাশ করি না, তেমনি সেনাবাহিনী সম্পর্কিত সব তথ্য জনসমক্ষে প্রচার যুক্তিসংগত নয়। সহযোদ্ধাদের সম্মানহানিকর কোনো সংবাদ সেনা সদস্যদের আহত করে এবং কিছুটা হলেও হীনমন্যতায় ভোগায়। কারণ সেনা সদস্যদের জব স্যাটিসফ্যাকশন অনেকাংশেই মনস্তাত্তি্বক। সামরিক চাকরি এবং সাংবাদিকতা দুটোই মহৎ পেশা। সামরিক বাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য চরম আত্মত্যাগে সদাপ্রস্তুত ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই রাষ্ট্র ও সমাজের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য সামরিক বাহিনী ও গণমাধ্যমের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও সমন্বয় খুবই প্রয়োজন।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মইনুল ইসলাম বলেন, সংবাদপত্র টাকা দিয়ে কিনতে হয়। পছন্দ ও বিশ্বাস করে বলেই লোকে কেনে এবং পড়ে। টিভি চ্যানেলগুলোর জনপ্রিয়তার বিষয়টি ভিন্ন। এ রকম একটি শক্তিশালী মাধ্যমের সঙ্গে দেশের সব সংগঠনই সম্পর্ক উন্নয়ন করতে চাইবে, সেটাই স্বাভাবিক। গণমাধ্যমের শক্তিকে উপেক্ষা করা ঠিক হবে না।
গত জানুয়ারি মাসে সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান চেষ্টার বিষয়ে তদন্তের ফলাফল ও জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে- জানতে চাইলে লে. জেনারেল মো. মইনুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি কিছু দিনের মধ্যে সংবাদ মাধ্যমকে জানানো হবে।
আইএসপিআর পরিচালক মো. শাহীনুল ইসলাম বলেন, সশস্ত্র বাহিনী সম্পর্কে মিডিয়ার স্বচ্ছ ধারণা থাকা অপরিহার্য। এ সেমিনারে শুধু জাতীয় গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। দেশের প্রতিরক্ষা বিষয়ে এবং বিশেষ সংকটকালে সশস্ত্র বাহিনীকে মূলত তাঁদের (আমন্ত্রিত প্রতিরক্ষা বিষয়ক সাংবাদিক) সঙ্গেই কাজ করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.