দায়িত্বশীল মালিক আর সংযত শ্রমিকই শিল্পের প্রাণ-অসন্তোষের উত্তাপ

পোশাকশিল্পে শ্রমিক অসন্তোষের আগুন আবারও ধিকিধিকি জ্বলতে শুরু করেছে। গত মঙ্গলবার ঢাকার মিরপুরে শ্রমিক বিক্ষোভ ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে। গতকালসহ গত এক সপ্তাহে নারায়ণগঞ্জ ও সোনারগাঁয় বারে বারে বিক্ষোভ ও বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেছে।


সোনারগাঁয়ের একটি কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভ-ভাঙচুর ও তার জেরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে শ্রমিকসহ ৪৫ জন আহতও হন। এভাবে সপ্তাহজুড়েই সাভার, মানিকগঞ্জ, ধামরাই ও টঙ্গীতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। অসন্তোষের এ ব্যাপকতা অসন্তোষের তীব্রতাই প্রকাশ করছে। বিষয়টি তাই গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া প্রয়োজন।
বাংলাদেশের পোশাকশিল্পটি যেন চিরঅশান্তির ক্ষেত্র। কিছুদিন পরপর এ ধরনের অসন্তোষ ও বিশৃঙ্খলা কেবল শিল্পটির জন্যই নয়, অর্থনীতির জন্যও অশনিসংকেত। শোষণমূলক আচরণ, নারীশ্রমিকদের হয়রানিসহ বিভিন্ন রকম বঞ্চনার কারণে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয়ে থাকতে পারে। গত সোমবারের প্রথম আলোয় মানিকগঞ্জের একটি বিক্ষোভের কারণ হিসেবে উঠে এসেছে শ্রমিক ধর্ষণের ঘটনা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বেতন-ভাতার সমস্যা এবং নির্যাতনই শ্রমিকদের বিক্ষুব্ধ করে তোলে। কিন্তু শ্রমিকদের আন্দোলন ভাঙচুর বা সম্পত্তি ধ্বংসে পর্যবসিত হলে তা কারও জন্যই মঙ্গল বয়ে আনবে না। শ্রমিকেরা দায়িত্বশীল না হলে, আখেরে তা তাঁদের জীবিকাকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
বহুদিন থেকে পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের পক্ষ থেকে ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার এবং সম্মানজনক বেতন-ভাতার দাবি উঠছে। পোশাকশিল্পে জাতীয় ন্যূনতম মজুরিও এখন পর্যন্ত সন্তোষজনকভাবে ঠিক করা হয়নি। মালিকপক্ষের অনমনীয়তা এবং সরকারের শিথিলতার জন্য স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না। অর্থনীতিতে শ্রমিক ও মালিক—উভয়ের ভূমিকাই গুরুত্বপূর্ণ। শ্রমিক অসন্তোষের বিষয়টি তাই শক্তিশালী মালিক আর দুর্বল শ্রমিকের রেষারেষির ওপর ছেড়ে দেওয়া যায় না। অনেক সময় রাজনৈতিক ও কায়েমি স্বার্থেও শ্রমিকদের উসকে দিয়ে ফায়দা হাসিলের চেষ্টাও বিভিন্ন সময় লক্ষ করা গেছে। উভয় পক্ষের সংযত ও দায়িত্বশীল ভূমিকা ছাড়া পোশাকশিল্পে সুস্থিতি আসবে না।
পোশাকশিল্প প্রবাসী শ্রমিক খাতের পরই দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত। এ শিল্পের বিকাশে বিপুল সহযোগিতা দিয়ে চলেছে সরকার। কর মওকুফসহ বহুবিধ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ধন্য এ শিল্পে শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে টালবাহানা গ্রহণযোগ্য নয়। গ্রহণযোগ্য নয় শ্রমিকদের মানবেতর জীবন-যাপন। বিশেষত, দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি শ্রমিকদের জীবন-ধারণকেই যখন কঠিন করে তুলছে, তখন তাঁদের প্রাপ্য দিতে অসুবিধা কোথায়? পোশাকশিল্পের ভবিষ্যতের স্বার্থেই এসব প্রশ্নের বিহিত হওয়া দরকার।

No comments

Powered by Blogger.