পবিত্র কোরআনের আলো-মানুষকে কল্যাণের পথে আহবান করার একটি সম্প্রদায় থাকা উচিত

১০৪. ওয়াল্তাকুম মিন্কুম উম্মাতুঁ ইয়াদ্ঊ'না ইলাল খাইরি ওয়া ইয়া'মুরূনা বিল্মা'রূফি ওয়া ইয়ান্হাওনা 'আনিল মুন্কার; ওয়া উলায়িকা হুমুল মুফ্লিহূন। ১০৫. ওয়ালা তাকূনূ কাল্লাযীনা তাফার্রাক্বূ ওয়াখ্তালাফূ মিম বা'দি মা জা'আহুমুল বায়্যিনাত; ওয়া উলায়িকা লাহুম 'আযাবুন আজীম।


১০৬. ইয়াওমা তাব্ইয়াদ্বু উজূহুঁ ওয়া তাস্ওয়াদ্দু উজূহুন; ফা-আম্মাল্লাযীনাস্ওয়াদ্দাত উজূহুহুম; আকাফার্তুম বা'দা ঈমানিকুম ফাযূক্বুল 'আযাবা বিমা কুন্তুম তাক্ফুরূন।
[সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১০৪-১০৬]
অনুবাদ : ১০৪. তোমাদের মধ্যে এমন একটি সম্প্রদায় থাকা উচিত, যারা মানুষকে কল্যাণের দিকে ডাকবে, সত্য ও ন্যায়ের আদেশ দেবে, আর অসত্য ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখবে। এরাই হচ্ছে সফল।
১০৫. তোমরা কখনো তাদের মতো হয়ো না, যাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পরও তারা বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে নানা রকম মতানৈক্য সৃষ্টি করেছে। তারাই হলো সেসব মানুষ, যাদের জন্য কঠোর শাস্তি রয়েছে।
১০৬. শেষ বিচারের দিন কিছুসংখ্যক মানুষের চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠবে, আর কিছুসংখ্যক মানুষের চেহারা কালো হয়ে পড়বে। যাদের চেহারা কালো হয়ে পড়বে, তাদের জিজ্ঞেস করা হবে, ইমানের আলো পাওয়ার পরও কি তোমরা কুফরির পথ অবলম্বন করেছিলে? অতঃপর বলা হবে, তোমরা কুফরির প্রতিফল হিসেবে এই জঘন্য শাস্তি উপভোগ করতে থাকো।
ব্যাখ্যা : ১০৪ নম্বর আয়াতে মানবজাতিকে উদ্দেশ করে বলা হয়েছে, 'তোমাদের মধ্যে এমন একটি সম্প্রদায় থাকা উচিত, যারা কল্যাণের পথে মানুষকে আহ্বান জানাবে, সত্য ও ন্যায়ের আদেশ দেবে এবং অসত্য ও অন্যায় থেকে বিরত রাখবে।' এখানে যে কাজটির কথা বলা হয়েছে, এটা সাধারণভাবে সব মুসলমানেরই কর্তব্য। সুতরাং সাধারণ অর্থে এটা ফরজে আইন। আবার বিশেষ অর্থে এটা কিছু জ্ঞানবান, সামর্থ্যবান ও সক্ষম মানুষের কর্তব্য। সেই অর্থে এটা 'ফরজে কিফায়া'। মানুষকে কল্যাণের দিকে আহ্বান জানানোর জন্য জ্ঞান দরকার, সক্ষমতা দরকার। আহ্বানকারীকে ভালোভাবে জানতে হবে, কল্যাণ কিসে হয়, আর অকল্যাণ কিসে হয়। মানুষকে সত্য ও ন্যায়ের আদেশ দেওয়া এবং অসত্য ও অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করার জ্ঞান ও সক্ষমতা থাকতে হবে। সেই অর্থে এটা 'ফরজে কিফায়া'। এই আয়াতে যেভাবে বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে, তাতে ফরজে কিফায়ারই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
১০৫ নম্বর আয়াতে আগের আয়াতের অনুষঙ্গ ধরেই বলা হয়েছে, এ ব্যাপারে যেন দল-উপদলে বিভক্তি না ঘটে এবং বিভিন্ন বিষয়ে মতানৈক্য করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা না হয়। কারণ, আগের আয়াতে যে মহৎ ও সম্মানিত কাজটি করার কথা বলা হয়েছে, সেই কাজটি করার প্রসঙ্গ ধরেই অতীতে দল-উপদলে বিভক্ত হওয়ার নজির সৃষ্টি হয়েছে। এ প্রসঙ্গে নানা প্রশ্নে মতানৈক্য সৃষ্টি করে বিভ্রান্তিও ছড়ানো হয়েছে প্রচুর। ভবিষ্যতে মুসলমানদের মধ্যে যেন এ ধরনের অনভিপ্রেত ধারা সৃষ্টি করা না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে।
১০৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে শেষ বিচারের দিনের কথা। সেদিন কিছু মানুষের চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠবে এবং কিছু মানুষের চেহারা মলিন হয়ে যাবে। অর্থাৎ, তাদের যার যার কৃতকর্মের ফল জানতে পেরেই এমনটা ঘটবে। যারা পৃথিবীতে ভালো কাজ করেছে, কল্যাণের পথে চলেছে, তাদের চেহারা উজ্জ্বল হবে। আর যারা পৃথিবীতে অসৎ কাজ করেছে বা অকল্যাণের পথে চলেছে, তাদের চেহারা মলিন হয়ে যাবে। বিশেষ করে ইমানের আলো লাভ করার পর অর্থাৎ মুসলমান হওয়ার পরও যারা অবাধ্যতা বা কুফরি করেছে, তাদের ভাগ্য হবে সবচেয়ে করুণ।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.