আলোচনাই অপরিবর্তনীয় by শেখ রোকন
বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় যখন জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডে তৃতীয়বারের মতো ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছেন, তখন জার্মানির বন শহরে বৈশ্বিক এই বিপদ মোকাবেলায় অর্থ ও প্রযুক্তির সংস্থান নিয়ে বৈঠকে বসেছেন ১৮৩টি দেশের তিনশ'র বেশি প্রতিনিধি।
১২ দিন মেয়াদের এই সভা এ বছর ডিসেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে অনুষ্ঠিতব্য জলবায়ু পরিবর্তন শীর্ষ সম্মেলনের প্রস্তুতিপর্ব। বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধিরা এখানে যে খসড়া দলিল প্রস্তুত করবেন, সেটাই হবে ডারবান আলোচনার ভিত্তি। সেদিক থেকে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বৈশ্বিক উদ্যোগের রোডম্যাপে বন আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। কিন্তু কোনো এক অদ্ভুত কারণে সংবাদমাধ্যম এই সভার ব্যাপারে ততটা আলোকপাত করেনি। অবশ্য জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত খবরাখবরের প্রতি সংবাদমাধ্যমের মনোযোগ বেশ কিছুদিন ধরেই কমছে। কিন্তু এই সভার খবর, বিকল্পধারার দু'একটি সংবাদমাধ্যমের কথা বাদ দিলে, যেন ব্ল্যাক আউট। সেটা এতটাই প্রকট, সন্দেহবাদী কেউ যদি এর পেছনে পরাশক্তি ও করপোরেট মিডিয়ার ষড়যন্ত্র আবিষ্কার করেন, দোষ দেওয়া যায় না। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রবল ঝুঁকিতে থাকা বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমও তথৈবচ।
অবশ্য বনের প্রস্তুতি সভার ব্যাপারে যাই হোক, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বাংলাদেশের কোনো পক্ষের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। বস্তুত, আগেও বহুবার যেমনটি বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সামর্থের তুলনায় নীতিগত ও ব্যবহারিক প্রস্তুতি বেশিই গ্রহণ করেছে। কিন্তু বৈশ্বিক পর্যায়ে প্রস্তুতি যেন শূন্যের পর্যায়ে। কেবল বৈঠকের পর বৈঠক চলছে। নানা বৈঠক- শীর্ষ পর্যায়ে, মন্ত্রী পর্যায়ে, কারিগরি পর্যায়ে, বৈশ্বিক, আঞ্চলিক, দেশীয় প্রভৃতি। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় অর্থ ও প্রযুক্তির শিকে আর ছিঁড়ছে না।
প্রশ্ন হচ্ছে, এমন সভা আর কত দিন? ডারবানে কি বৈশ্বিক উদ্যোগের বিষয়টি সুরাহা হবে? বরং মীমাংসিত কিছু বিষয়ে তো অশনিসংকেতই দেখা যাচ্ছে। বহুপক্ষীয় আলোচনা যেন ভূতের মতো পেছনে হাঁটছে। কথা ছিল, ২০১২ সালে কিয়োটো প্রটোকলের মেয়াদ শেষে সব দেশ নতুন চুক্তিতে আবদ্ধ হবে। কিন্তু বাস্তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নতুন চুক্তির লক্ষণ তো নেই-ই, বরং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কানাডা, জাপান ও রাশিয়া কিয়োটো চুক্তিটির মেয়াদ বাড়ানোর বিরোধিতা করছে। কোপেনহেগেনে অঙ্গীকার করা হয়েছিল, ২০১০-১২ পর্যন্ত উন্নত দেশগুলো ৩০ বিলিয়ন ডলার দিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন তহবিল 'সূচনা' করবে; ২০২০ সাল নাগাদ সেটা একশ' বিলিয়নে পেঁৗছবে। কিন্তু ওয়ার্ল্ড রিসোর্স ইনস্টিটিউটের একটি সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, এ পর্যন্ত কেবল ১২ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ এবং সেটারও মাত্র ৩০ শতাংশ তহবিলে জমা পড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিশাল আয়োজনের অন্যান্য দিক দূর অস্ত! ওয়াকিবহাল মহল প্রত্যাশা কিংবা আশঙ্কা করছে, ডারবানে তো নয়ই, আরও ডজন ডজন শীর্ষ ও কারিগরি বৈঠকের পর হয়তো কার্যকর উদ্যোগের অস্পষ্ট রূপরেখা পাওয়া যেতে পারে।
অন্যদিকে, জলবায়ু পরিবর্তন চিত্রে ক্রমাবনতিই স্পষ্ট হচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি জানাচ্ছে, ২০১০ সালে ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি জ্বালানি উদ্গিরণ ঘটেছে। আবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মহাসাগর ও বায়ুমণ্ডল কর্তৃপক্ষ বলছে, মাত্র গত মে মাসে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের উপস্থিতি রেকর্ড মাত্রায় পেঁৗছেছে।
সব মিলিয়ে আমরা দেখছি, জলবায়ুতে সর্বনাশা পরিবর্তন ঘটেই চলছে; আর তা মোকাবেলার জন্য বৈশ্বিক আলোচনা রয়ে যাচ্ছে অপরিবর্তনীয়। একই আবর্তে বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে।
skrokon@gmail.com
অবশ্য বনের প্রস্তুতি সভার ব্যাপারে যাই হোক, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বাংলাদেশের কোনো পক্ষের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। বস্তুত, আগেও বহুবার যেমনটি বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সামর্থের তুলনায় নীতিগত ও ব্যবহারিক প্রস্তুতি বেশিই গ্রহণ করেছে। কিন্তু বৈশ্বিক পর্যায়ে প্রস্তুতি যেন শূন্যের পর্যায়ে। কেবল বৈঠকের পর বৈঠক চলছে। নানা বৈঠক- শীর্ষ পর্যায়ে, মন্ত্রী পর্যায়ে, কারিগরি পর্যায়ে, বৈশ্বিক, আঞ্চলিক, দেশীয় প্রভৃতি। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় অর্থ ও প্রযুক্তির শিকে আর ছিঁড়ছে না।
প্রশ্ন হচ্ছে, এমন সভা আর কত দিন? ডারবানে কি বৈশ্বিক উদ্যোগের বিষয়টি সুরাহা হবে? বরং মীমাংসিত কিছু বিষয়ে তো অশনিসংকেতই দেখা যাচ্ছে। বহুপক্ষীয় আলোচনা যেন ভূতের মতো পেছনে হাঁটছে। কথা ছিল, ২০১২ সালে কিয়োটো প্রটোকলের মেয়াদ শেষে সব দেশ নতুন চুক্তিতে আবদ্ধ হবে। কিন্তু বাস্তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নতুন চুক্তির লক্ষণ তো নেই-ই, বরং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কানাডা, জাপান ও রাশিয়া কিয়োটো চুক্তিটির মেয়াদ বাড়ানোর বিরোধিতা করছে। কোপেনহেগেনে অঙ্গীকার করা হয়েছিল, ২০১০-১২ পর্যন্ত উন্নত দেশগুলো ৩০ বিলিয়ন ডলার দিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন তহবিল 'সূচনা' করবে; ২০২০ সাল নাগাদ সেটা একশ' বিলিয়নে পেঁৗছবে। কিন্তু ওয়ার্ল্ড রিসোর্স ইনস্টিটিউটের একটি সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, এ পর্যন্ত কেবল ১২ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ এবং সেটারও মাত্র ৩০ শতাংশ তহবিলে জমা পড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিশাল আয়োজনের অন্যান্য দিক দূর অস্ত! ওয়াকিবহাল মহল প্রত্যাশা কিংবা আশঙ্কা করছে, ডারবানে তো নয়ই, আরও ডজন ডজন শীর্ষ ও কারিগরি বৈঠকের পর হয়তো কার্যকর উদ্যোগের অস্পষ্ট রূপরেখা পাওয়া যেতে পারে।
অন্যদিকে, জলবায়ু পরিবর্তন চিত্রে ক্রমাবনতিই স্পষ্ট হচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি জানাচ্ছে, ২০১০ সালে ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি জ্বালানি উদ্গিরণ ঘটেছে। আবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মহাসাগর ও বায়ুমণ্ডল কর্তৃপক্ষ বলছে, মাত্র গত মে মাসে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের উপস্থিতি রেকর্ড মাত্রায় পেঁৗছেছে।
সব মিলিয়ে আমরা দেখছি, জলবায়ুতে সর্বনাশা পরিবর্তন ঘটেই চলছে; আর তা মোকাবেলার জন্য বৈশ্বিক আলোচনা রয়ে যাচ্ছে অপরিবর্তনীয়। একই আবর্তে বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে।
skrokon@gmail.com
No comments