নিষ্পত্তির জন্য সরকারের জোরালো সদিচ্ছা প্রয়োজন-শেয়ার মামলাগুলো ঝুলেই আছে

আর্থিক খাতে অনিয়ম ও কেলেঙ্কারির নেতিবাচক প্রভাব সুদূরপ্রসারী হয়ে থাকে। আর যদি এসব অনিয়ম বা কেলেঙ্কারির কোনো বিচার না হয়, তাহলে পরবর্তী সময়ে এ ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা থেকে যায় এবং তখন তা হয় বড় আকারে ও ভিন্ন রূপে, যার পরিণামে ক্ষতির মাত্রাও বেশি হতে পারে।


আজ থেকে প্রায় ১৪ বছর আগে সংঘটিত দেশে শেয়ার কেলেঙ্কারির ঘটনাটির কথা মনে হলে একই সঙ্গে এই আশঙ্কার কথাও পাশাপাশি চলে আসে; বিশেষ করে, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের শেয়ারবাজার যখন ফুলে-ফেঁপে উঠছে ও বিপুলসংখ্যক ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ী শেয়ারবাজারমুখী হয়ে পড়েছেন। ১৯৯৬ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারির প্রভাবে পুঁজিবাজারে যে ধস নামে, তা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে অনেক বছর লেগেছে। তার পরও বাজার ঠিক পরিণত বা পরিপক্ব হতে পারেনি। আর শেয়ার কেলেঙ্কারির জন্য ১৯৯৭ সালে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ১৫টি প্রতিষ্ঠানের ৩৬ জনের বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো করেছিল, তার কার্যত কোনোই অগ্রগতি হয়নি।
অতিসম্প্রতি সরকারি প্রতিষ্ঠান-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ১৯৯৬ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারি মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য পদক্ষেপ নিতে তাগিদ দিয়েছে। কেন এত দিনে এসব মামলার নিষ্পত্তি হলো না, তা যাচাই করে দেখতে এবং মামলাগুলো নিষ্পত্তির জন্য নতুনভাবে আইনজীবী নিয়োগ করাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে একটি উপকমিটিও গঠন করা হয়েছে। শেয়ারবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যত্ বিবেচনায় এসব উদ্যোগকে তাত্পর্যপূর্ণ বলে অভিহিত করা যায়। বিশেষত, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন মহল থেকে শেয়ার কেলেঙ্কারির মামলা নিষ্পত্তির বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য একাধিকবার পরামর্শ দেওয়া হলেও প্রায় দেড় বছর হতে চলল, সরকারের তরফ থেকে এ বিষয়ে কোনো তত্পরতা দেখা যায়নি। নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (এসইসি) এ বিষয়ে সরকারের কাছ থেকে একাধিকবার সহযোগিতা চেয়েছে বলেও জানা যায় না। যে পক্ষ মামলা করল, সে পক্ষই যদি বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে সচেষ্ট না হয়, তাহলে তো বছরের পর বছর মামলাগুলো ঝুলেই থাকবে।
বস্তুত, শেয়ার কেলেঙ্কারির মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ার বিষয়টি পুঁজিবাজারসহ গোটা আর্থিক খাতকে ভুল বার্তা দিয়ে আসছে। বিশেষত, এ কেলেঙ্কারির প্রকৃত হোতা ও সুবিধাভোগীরা ভেবে নিতে পারে যে তাদের আর আইনের আওতায় এসে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে না। এ ধরনের ভাবনা অন্য অনিয়মকারীদের প্ররোচিত করতে পারে। তাই মামলাগুলোর নিষ্পত্তি হওয়া জরুরি। মামলার রায়ে কারা দোষী সাব্যস্ত হবেন বা হবেন না, তা নির্ধারণ করবেন আদালত। কিন্তু আদালতের কাছে তো যেতে হবে। আদালতের সামনে তথ্য-প্রমাণ, সাক্ষী-সাবুদ যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে হবে। এ জন্য সরকারের তরফ থেকে এসইসিকে সক্রিয় ও তত্পর হতে হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয়কে এগিয়ে আসতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, সরকারের দৃঢ় রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকতে হবে মামলাগুলো নিষ্পত্তিতে।

No comments

Powered by Blogger.