সেনা অভ্যুত্থানের চেষ্টা-ঢাকার বাইরে পাঁচটি তদন্ত আদালত by কামরুল হাসান

সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টার ঘটনা অনুসন্ধানে আরও পাঁচটি তদন্ত আদালত গঠন করা হয়েছে। গত বুধবার এ-সংক্রান্ত আদেশ সংশ্লিষ্ট সেনানিবাসের জিওসিদের (জেনারেল অফিসার কমান্ডিং) কাছে পাঠানো হয়। আগামী রোববার থেকে তদন্ত আদালতগুলো কাজ শুরু করবেন বলে জানা গেছে।


তদন্ত আদালত গঠনের ব্যাপারে জানতে চাইলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, তাঁরা এ ব্যাপারে কিছু জানেন না। তবে উচ্চপর্যায়ের সেনাসূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছে, সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান ও নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতের ব্যর্থ চেষ্টার ঘটনার তদন্ত দ্রুত শেষ করতেই ঢাকার বাইরে আরও পাঁচটি আদালত গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তদন্ত আদালতের কার্যক্রম শেষ হওয়ার পরই অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের মুখোমুখি (কোর্ট মার্শাল) করা হবে।
সূত্রটি জানিয়েছে, নতুন পাঁচটি তদন্ত আদালত হলো কুমিল্লা, সাভার, ঘাটাইল, বগুড়া ও রংপুর সেনানিবাসে। ওই সব সেনানিবাসে কয়েকজন তরুণ কর্মকর্তার অভ্যুত্থান-চেষ্টায় সংশ্লিষ্টতার প্রাথমিক তথ্য মিলেছে। ঘটনার অন্যতম পরিকল্পনাকারী পলাতক মেজর সৈয়দ জিয়াউল হকের সঙ্গে টেলিফোনে এসব কর্মকর্তার কথা হয়েছিল। এ-সম্পর্কিত ফোনালাপের তথ্য ঢাকায় সেনাসদরে গঠিত তদন্ত আদালতের হাতে রয়েছে।
১৯ জানুয়ারি সেনা সদর দপ্তরের এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সেনাবাহিনীর সাবেক ও বর্তমান কিছু সদস্য দেশের গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত এবং সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থানের চেষ্টা করেন। গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর এ পরিকল্পনা সেনাবাহিনী জানতে পারে। এরপর ঘটনা তদন্তে ২৮ ডিসেম্বর সেনাসদর একটি তদন্ত আদালত গঠন করে।
জানা গেছে, ছয় সদস্যের এ তদন্ত আদালতের প্রধান হলেন একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদমর্যাদার কর্মকর্তা। সেনা কর্মকর্তারা আশা করছেন, ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে তদন্ত আদালত কাজ শেষ করবেন।
সেনাসূত্র জানায়, সেনাসদরের তদন্ত আদালতের অগ্রগতি নিয়ে পদস্থ কর্মকর্তারা বৈঠক করেন। তাঁদের বৈঠকে বলা হয়, একটি আদালত দিয়ে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে সবার তদন্ত একসঙ্গে করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এভাবে তদন্ত শেষ করতে হলে অনেক সময় চলে যাবে। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, তদন্ত স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ করতে হলে সংশ্লিষ্ট সেনানিবাসেই আদালত গঠন করতে হবে। এর পরই পাঁচটি সেনানিবাসে পৃথক আদালত গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। ঢাকায় তদন্ত আদালতের প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদের কর্মকর্তা হলেও বাইরের তদন্ত আদালতের প্রধান হলেন কর্নেল বা লে. কর্নেল পদমর্যাদার কর্মকর্তারা। আদালতের আকার কেমন হবে, জানতে চাইলে সেনা কর্মকর্তারা বলেন, এটি নির্ভর করবে জিওসিদের মতামতের ওপর। তাঁরা চাইলে তিন থেকে পাঁচ সদস্যের তদন্ত আদালত গঠন করতে পারবেন।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, প্রাথমিক পর্যায়ে ঢাকার বাইরে রংপুর, বগুড়া, কুমিল্লা, ঘাটাইল ও সাভারে একজন করে কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া গেছে। এঁরা সবাই মেজর পদের কর্মকর্তা। আগেই এসব কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে।
এদিকে সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান ও নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতের ব্যর্থ চেষ্টার ঘটনায় অভিযুক্ত কর্মকর্তার সংখ্যা আরও বাড়ছে। এই সংখ্যা দুই ডজনেরও বেশি হতে পারে বলে জানা গেছে।
এই ঘটনা তদন্তের জন্য গঠিত সেনাবাহিনীর তদন্ত আদালত ইতিমধ্যেই যেসব কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন, তাঁদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে মনে করা হচ্ছে, এ ব্যর্থ চেষ্টার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তার সংখ্যা দুই ডজনেরও বেশি। তবে তদন্ত সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংখ্যা সুনির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন সেনাসদরের একটি দায়িত্বশীল সূত্র। যদিও এর আগে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছিল, এ ঘটনার সঙ্গে সেনাবাহিনীর মধ্যম পর্যায়ের ১৪ থেকে ১৬ জন কর্মকর্তা জড়িত থাকতে পারেন।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ব্যর্থ অভ্যুত্থান-চেষ্টায় জড়িত থাকার অভিযোগে এ পর্যন্ত ১৪ জন কর্মকর্তাকে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া সন্দেহের তালিকায় থাকা আরও কিছু কর্মকর্তাকে রাখা হয়েছে নজরদারিতে। এ পর্যন্ত সংযুক্ত করা কর্মকর্তাদের মধ্যে একজন মেজর জেনারেল, একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, দুজন লে. কর্নেল এবং বাকিরা মেজর ও ক্যাপ্টেন পদের কর্মকর্তা। এঁদের কয়েকজনকে ঢাকায় লগ এরিয়া ও অন্যদের বিভিন্ন সেনানিবাসে কর্মস্থল থেকে প্রত্যাহার করে সংযুক্ত করা হয়েছে।
সূত্রটি জানায়, এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, এ অভ্যুত্থান-চেষ্টায় বিদেশ থেকে ইন্ধন জোগানো প্রবাসী বাংলাদেশি ইশরাক আহমেদ পৃথকভাবে পদস্থ দুই কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। কিন্তু এ দুজনের কেউই বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাননি।

No comments

Powered by Blogger.