সমকালীন প্রসঙ্গ-নাজুক যাতায়াত ব্যবস্থা বনাম কথার রাজনীতি by মোহাম্মদ জাকারিয়া
যোগাযোগমন্ত্রী যতই আচমকা সক্রিয় (ফায়ার ফাইটিং) হোন, একটি দেশের যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন একটি দীর্ঘমেয়াদি ব্যাপার। রাতারাতি ঠিক করে ফেলেছি_ এমন দাবি নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠবে। বিশেষ করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে। কারা ফায়দাবাজিতে সক্রিয় স্থানীয় জনগণ তাদের চেনে।
স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ না থাকলে ব্যবধানের তিল তাল হতে থাকে। ভোটারদের শিক্ষার হার ক্রমে বাড়ছে। জনগণ অনেক বেশি প্রশ্নমুখর হচ্ছে। মিডিয়ার বদৌলতে অনেক বেশি তথ্য পাচ্ছে। গ্রামের সাধারণ মানুষ এখন অনেক বেশি খবর রাখে
প্রিয় মুখ তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের সড়ক দুর্ঘটনায় মর্মান্তিক মৃত্যু জাতির বিবেককে নাড়া দিয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় প্রতিদিনই মৃত্যু হচ্ছে। কিন্তু তারা দেশের সাধারণ নাগরিক। বিশেষ নাগরিকের মৃত্যু হলেই আমরা আন্দোলিত হই। তারেক-মুনীর তাই নিরাপদ সড়ক দাবির প্রতীক হয়ে উঠেছে। এরপর ঈদ উপলক্ষে নিরাপদ বাড়ি যাওয়ার দাবি আন্দোলনের পূর্বাবস্থার রূপ নেয় শহীদ মিনারকে ঘিরে। স্বাভাবিক মৃত্যুর দাবিতে দেশের বিবেকবান বুদ্ধিজীবী শ্রেণী সোচ্চার হয়ে ওঠে। ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে রাস্তা মেরামতের দাবিতে বাস মালিক সমিতির ধর্মঘট যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতাকে জনসমক্ষে নিয়ে আসে। মিডিয়া প্রতিদিন বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করে। আন্না হাজারের সাম্প্র্রতিক অনশন এখানেও যে প্রভাব ফেলছে না_ কে জানে। কিছুদিন আগে একজন সিনিয়র মন্ত্রী ও দু'জন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তার সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু আর মিডিয়াতে প্রতিদিন সাধারণ মানুষের মৃত্যুর খবর সমস্যাকে একটি সর্বজনীন রূপ দিয়েছে। সরকার যতই তির্যক কথা মুখে বলুক কিংবা আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা করুক_ যোগাযোগমন্ত্রীর সাম্প্র্রতিক ছোটাছুটিতে বোঝা যায়_ বিষয়টিকে মোটেই হালকাভাবে নেননি।
তবে প্রশ্ন উঠেছে_ এ সরকার ক্ষমতায় এসেছে আড়াই বছর আগে। এত লম্বা সময় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কী নিয়ে ব্যস্ত ছিল! ক্ষমতায় আসার পরপর নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের কাজের পরিকল্পনা, অর্থ জোগান, বাস্তবায়ন, মনিটরিং_ এসব নিয়ে ব্যস্ত হবেন জনগণ সে রকমই আশা করে। যোগাযোগমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী যেভাবে একে অপরকে দোষ দিচ্ছিলেন, তা ভোটারদের হতাশ করেছে। দিনবদলের সনদকে পবিত্র জ্ঞানে জনগণ বিপুল ভোটে এ সরকারকে জয়যুক্ত করেছিল। অন্য এক মন্ত্রীর ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে দায়িত্বহীন উক্তি সাধারণ মানুষকে চরম হতাশ করেছে; অধিকাংশ যাত্রী ঘাবড়ে গিয়ে সড়কপথের বিকল্প ট্রেন কিংবা জলপথের কথা ভেবেছে। অনেকে ঢাকা ছেড়ে যায়নি তা ঢাকার রাস্তায় বেরুলেই বোঝা যাচ্ছে। অন্য ঈদে যেভাবে রাস্তা জনশূন্য হতো এবার প্রথম ব্যতিক্রম দেখা গেল। আরেকটি ব্যতিক্রম হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের বড় অংশকে সরকারের কাজের সমালোচনায় মুখর হতে জাতি প্রথম দেখল। তারা রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দিয়ে অনুধাবন করেছেন এ বিফলতার দায় একদিন তাদের ওপরও বর্তাবে। দলীয় পরিচয়ের পাইকারি দায় তারা নিতে নারাজ।
এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সমস্যার মূলে রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা। মন্ত্রী, সচিব থেকে শুরু করে সর্বপর্যায়ে রুল ক্লারিটি না থাকলে যা হওয়ার এখন তাই হচ্ছে। মন্ত্রী পদত্যাগ করলে অথবা কোনো জাঁদরেল মন্ত্রী দায়িত্ব নিলেও যে লাউ সেই কদুই থেকে যাবে যদি প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতাকে অ্যাড্রেস করা না হয়। নীতি ভূমিকা (চড়ষরপু জড়ষব) আর বাস্তবায়ন (ঙঢ়বৎধঃরড়হ) ভূমিকার মধ্যে যে কেঁচে গণ্ডূষ অবস্থা চলছে সেখানেই রুট কজ (মূল কারণ) খুঁজতে হবে। নেতৃত্বকে অনুধাবন করতে হবে_ স্থানীয় সরকার যত শক্তিশালী হবে কেন্দ্রীয় সরকার তথা জাতি তত শক্তিশালী হবে। স্থানীয় সরকারের মাধ্যমেই জনঅংশগ্রহণের সহস্র সম্ভাবনার বিকাশ ঘটে। ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, এলজিইডি_ এদের যাতায়াত ব্যবস্থাপনা ও বিকাশে ভূমিকা সুনির্দিষ্ট করতে হবে। ক্যাডারভিত্তিক রাজনীতির নাগরিকমুখী রাজনীতিতে রূপান্তর না ঘটলে দৃশ্যপট বদলাবে বলে মনে হয় না। বলাবাহুল্য, রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনায় জনঅংশগ্রহণ ও স্থানীয় সরকারের জোরালো ভূমিকা ছাড়া গণতন্ত্র খোঁড়া এবং লাঠি ভর (উভয়ার্থে) করে চলে।
দিনবদলের বুলি শুরুতে মানুষ আস্থায় নিয়েছিল। ভোটের ধরনে তা প্রমাণিত। বিপুল বিজয় শেষে সনদের প্রজেক্ট ডিটেইলস, বাস্তবায়ন কৌশল, মনিটরিং, প্রসেস লার্নিং এবং পরবর্তী প্রান্তিকে লার্নিং পল্গানিংয়ে ফিড করা_ এগুলো আধুনিক রাষ্ট্র্র ব্যবস্থাপনার অংশ। মানুষ বদলাচ্ছে, জনগণের চিন্তা-চেতনা বদলাচ্ছে, প্রত্যাশা বাড়ছে অথচ রাজনীতি এক জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। গাণিতিক নিয়মেই দুইয়ের ব্যবধান বাড়ছে। এ ব্যবধান একটি অশনিসংকেত। সম্ভাবনার ইঙ্গিতও বটে। ভাংচুরের ভেতর দিয়ে নতুন সমাজ বিনির্মাণের সামষ্টিক আকাঙ্ক্ষা প্রবল হয়ে ওঠে। রাজনীতি আছে আর কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা_ এটা সবসময়ের জন্য সত্যি নাও হতে পারে। বিজ্ঞানের সূত্র বলে_ শূন্যস্থান পূরণ করতে চারদিক থেকে বায়ু দ্রুত আসতে থাকে। ফলে ঘূর্ণি সৃষ্টি হয়। সমাজবিজ্ঞানেও একই জিনিস ঘটে। তাকে আমরা আন্দোলন, বিপল্গব নানা নামে ডাকি। স্থবির সমাজে এটি বিলম্বে ঘটে। তথ্য সমাজে দ্রুত ঘটে। একটি তথ্য সমাজ যখন জ্ঞান সমাজের দিকে রূপান্তরিত হতে থাকে, ইতিবাচক পরিবর্তন তখন সহস্রমুখী ডানা মেলে। বাধা পেলে ফ্রাংকেনস্টাইন হয়ে ওঠে।
যোগাযোগমন্ত্রী যতই আচমকা সক্রিয় (ফায়ার ফাইটিং) হোন, একটি দেশের যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন একটি দীর্ঘমেয়াদি ব্যাপার। রাতারাতি ঠিক করে ফেলেছি_ এমন দাবি নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠবে। বিশেষ করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে। কারা ফায়দাবাজিতে সক্রিয় স্থানীয় জনগণ তাদের চেনে। স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ না থাকলে ব্যবধানের তিল তাল হতে থাকে। ভোটারদের শিক্ষার হার ক্রমে বাড়ছে। জনগণ অনেক বেশি প্রশ্নমুখর হচ্ছে। মিডিয়ার বদৌলতে অনেক বেশি তথ্য পাচ্ছে। গ্রামের সাধারণ মানুষ এখন অনেক বেশি খবর রাখে। 'ওরা যত বেশি জানে তত কম মানে।' অবাধ তথ্যপ্রবাহ তথা ডিজিটাল বাংলাদেশ এ সরকারেরই বড় প্রকল্প। প্রত্যাশার ক্ষুধা বাড়ানো আর প্রত্যাশা পূরণের প্রস্তুতির অনুপস্থিতি অপরিণামদর্শিতারই নামান্তর। জোড়াতালি দিয়ে সরকার চালানো সামনের দিনগুলোতে কঠিন হয়ে উঠবে। এ সত্য আমাদের রাজনীতিজীবীরা যত দ্রুত আমলে নেবেন ততই তাদেরও মঙ্গল, দেশেরও মঙ্গল। দেশ সবেমাত্র কৃষির খোলস ছেড়ে শিল্পায়নের পূর্বাবস্থায় হাঁটি হাঁটি পা পা করছে। ঘরকুনো বাঙালি আপন গণ্ডি ছাড়িয়ে মাত্র চলতে শুরু করেছে। এ সময় যাতায়াতে অব্যবস্থা তার চলার শক্তির সমূহ সম্ভাবনাকে পঙ্গু করে দেবে। চলাচলের এই স্নায়ুতন্ত্রে কলেস্টেরল পুরা সমাজদেহের জন্যই বড় বিপদ ডেকে আনবে। অতএব...!
মোহাম্মদ জাকারিয়া :গবেষক
প্রিয় মুখ তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের সড়ক দুর্ঘটনায় মর্মান্তিক মৃত্যু জাতির বিবেককে নাড়া দিয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় প্রতিদিনই মৃত্যু হচ্ছে। কিন্তু তারা দেশের সাধারণ নাগরিক। বিশেষ নাগরিকের মৃত্যু হলেই আমরা আন্দোলিত হই। তারেক-মুনীর তাই নিরাপদ সড়ক দাবির প্রতীক হয়ে উঠেছে। এরপর ঈদ উপলক্ষে নিরাপদ বাড়ি যাওয়ার দাবি আন্দোলনের পূর্বাবস্থার রূপ নেয় শহীদ মিনারকে ঘিরে। স্বাভাবিক মৃত্যুর দাবিতে দেশের বিবেকবান বুদ্ধিজীবী শ্রেণী সোচ্চার হয়ে ওঠে। ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে রাস্তা মেরামতের দাবিতে বাস মালিক সমিতির ধর্মঘট যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতাকে জনসমক্ষে নিয়ে আসে। মিডিয়া প্রতিদিন বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করে। আন্না হাজারের সাম্প্র্রতিক অনশন এখানেও যে প্রভাব ফেলছে না_ কে জানে। কিছুদিন আগে একজন সিনিয়র মন্ত্রী ও দু'জন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তার সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু আর মিডিয়াতে প্রতিদিন সাধারণ মানুষের মৃত্যুর খবর সমস্যাকে একটি সর্বজনীন রূপ দিয়েছে। সরকার যতই তির্যক কথা মুখে বলুক কিংবা আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা করুক_ যোগাযোগমন্ত্রীর সাম্প্র্রতিক ছোটাছুটিতে বোঝা যায়_ বিষয়টিকে মোটেই হালকাভাবে নেননি।
তবে প্রশ্ন উঠেছে_ এ সরকার ক্ষমতায় এসেছে আড়াই বছর আগে। এত লম্বা সময় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কী নিয়ে ব্যস্ত ছিল! ক্ষমতায় আসার পরপর নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের কাজের পরিকল্পনা, অর্থ জোগান, বাস্তবায়ন, মনিটরিং_ এসব নিয়ে ব্যস্ত হবেন জনগণ সে রকমই আশা করে। যোগাযোগমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী যেভাবে একে অপরকে দোষ দিচ্ছিলেন, তা ভোটারদের হতাশ করেছে। দিনবদলের সনদকে পবিত্র জ্ঞানে জনগণ বিপুল ভোটে এ সরকারকে জয়যুক্ত করেছিল। অন্য এক মন্ত্রীর ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে দায়িত্বহীন উক্তি সাধারণ মানুষকে চরম হতাশ করেছে; অধিকাংশ যাত্রী ঘাবড়ে গিয়ে সড়কপথের বিকল্প ট্রেন কিংবা জলপথের কথা ভেবেছে। অনেকে ঢাকা ছেড়ে যায়নি তা ঢাকার রাস্তায় বেরুলেই বোঝা যাচ্ছে। অন্য ঈদে যেভাবে রাস্তা জনশূন্য হতো এবার প্রথম ব্যতিক্রম দেখা গেল। আরেকটি ব্যতিক্রম হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের বড় অংশকে সরকারের কাজের সমালোচনায় মুখর হতে জাতি প্রথম দেখল। তারা রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দিয়ে অনুধাবন করেছেন এ বিফলতার দায় একদিন তাদের ওপরও বর্তাবে। দলীয় পরিচয়ের পাইকারি দায় তারা নিতে নারাজ।
এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সমস্যার মূলে রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা। মন্ত্রী, সচিব থেকে শুরু করে সর্বপর্যায়ে রুল ক্লারিটি না থাকলে যা হওয়ার এখন তাই হচ্ছে। মন্ত্রী পদত্যাগ করলে অথবা কোনো জাঁদরেল মন্ত্রী দায়িত্ব নিলেও যে লাউ সেই কদুই থেকে যাবে যদি প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতাকে অ্যাড্রেস করা না হয়। নীতি ভূমিকা (চড়ষরপু জড়ষব) আর বাস্তবায়ন (ঙঢ়বৎধঃরড়হ) ভূমিকার মধ্যে যে কেঁচে গণ্ডূষ অবস্থা চলছে সেখানেই রুট কজ (মূল কারণ) খুঁজতে হবে। নেতৃত্বকে অনুধাবন করতে হবে_ স্থানীয় সরকার যত শক্তিশালী হবে কেন্দ্রীয় সরকার তথা জাতি তত শক্তিশালী হবে। স্থানীয় সরকারের মাধ্যমেই জনঅংশগ্রহণের সহস্র সম্ভাবনার বিকাশ ঘটে। ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, এলজিইডি_ এদের যাতায়াত ব্যবস্থাপনা ও বিকাশে ভূমিকা সুনির্দিষ্ট করতে হবে। ক্যাডারভিত্তিক রাজনীতির নাগরিকমুখী রাজনীতিতে রূপান্তর না ঘটলে দৃশ্যপট বদলাবে বলে মনে হয় না। বলাবাহুল্য, রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনায় জনঅংশগ্রহণ ও স্থানীয় সরকারের জোরালো ভূমিকা ছাড়া গণতন্ত্র খোঁড়া এবং লাঠি ভর (উভয়ার্থে) করে চলে।
দিনবদলের বুলি শুরুতে মানুষ আস্থায় নিয়েছিল। ভোটের ধরনে তা প্রমাণিত। বিপুল বিজয় শেষে সনদের প্রজেক্ট ডিটেইলস, বাস্তবায়ন কৌশল, মনিটরিং, প্রসেস লার্নিং এবং পরবর্তী প্রান্তিকে লার্নিং পল্গানিংয়ে ফিড করা_ এগুলো আধুনিক রাষ্ট্র্র ব্যবস্থাপনার অংশ। মানুষ বদলাচ্ছে, জনগণের চিন্তা-চেতনা বদলাচ্ছে, প্রত্যাশা বাড়ছে অথচ রাজনীতি এক জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। গাণিতিক নিয়মেই দুইয়ের ব্যবধান বাড়ছে। এ ব্যবধান একটি অশনিসংকেত। সম্ভাবনার ইঙ্গিতও বটে। ভাংচুরের ভেতর দিয়ে নতুন সমাজ বিনির্মাণের সামষ্টিক আকাঙ্ক্ষা প্রবল হয়ে ওঠে। রাজনীতি আছে আর কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা_ এটা সবসময়ের জন্য সত্যি নাও হতে পারে। বিজ্ঞানের সূত্র বলে_ শূন্যস্থান পূরণ করতে চারদিক থেকে বায়ু দ্রুত আসতে থাকে। ফলে ঘূর্ণি সৃষ্টি হয়। সমাজবিজ্ঞানেও একই জিনিস ঘটে। তাকে আমরা আন্দোলন, বিপল্গব নানা নামে ডাকি। স্থবির সমাজে এটি বিলম্বে ঘটে। তথ্য সমাজে দ্রুত ঘটে। একটি তথ্য সমাজ যখন জ্ঞান সমাজের দিকে রূপান্তরিত হতে থাকে, ইতিবাচক পরিবর্তন তখন সহস্রমুখী ডানা মেলে। বাধা পেলে ফ্রাংকেনস্টাইন হয়ে ওঠে।
যোগাযোগমন্ত্রী যতই আচমকা সক্রিয় (ফায়ার ফাইটিং) হোন, একটি দেশের যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন একটি দীর্ঘমেয়াদি ব্যাপার। রাতারাতি ঠিক করে ফেলেছি_ এমন দাবি নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠবে। বিশেষ করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে। কারা ফায়দাবাজিতে সক্রিয় স্থানীয় জনগণ তাদের চেনে। স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ না থাকলে ব্যবধানের তিল তাল হতে থাকে। ভোটারদের শিক্ষার হার ক্রমে বাড়ছে। জনগণ অনেক বেশি প্রশ্নমুখর হচ্ছে। মিডিয়ার বদৌলতে অনেক বেশি তথ্য পাচ্ছে। গ্রামের সাধারণ মানুষ এখন অনেক বেশি খবর রাখে। 'ওরা যত বেশি জানে তত কম মানে।' অবাধ তথ্যপ্রবাহ তথা ডিজিটাল বাংলাদেশ এ সরকারেরই বড় প্রকল্প। প্রত্যাশার ক্ষুধা বাড়ানো আর প্রত্যাশা পূরণের প্রস্তুতির অনুপস্থিতি অপরিণামদর্শিতারই নামান্তর। জোড়াতালি দিয়ে সরকার চালানো সামনের দিনগুলোতে কঠিন হয়ে উঠবে। এ সত্য আমাদের রাজনীতিজীবীরা যত দ্রুত আমলে নেবেন ততই তাদেরও মঙ্গল, দেশেরও মঙ্গল। দেশ সবেমাত্র কৃষির খোলস ছেড়ে শিল্পায়নের পূর্বাবস্থায় হাঁটি হাঁটি পা পা করছে। ঘরকুনো বাঙালি আপন গণ্ডি ছাড়িয়ে মাত্র চলতে শুরু করেছে। এ সময় যাতায়াতে অব্যবস্থা তার চলার শক্তির সমূহ সম্ভাবনাকে পঙ্গু করে দেবে। চলাচলের এই স্নায়ুতন্ত্রে কলেস্টেরল পুরা সমাজদেহের জন্যই বড় বিপদ ডেকে আনবে। অতএব...!
মোহাম্মদ জাকারিয়া :গবেষক
No comments