জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি-জনদুর্ভোগ যেন না বাড়ে, লক্ষ রাখা চাই

আবারও জ্বালানি তেলের দাম বাড়াল সরকার। নির্বাহী আদেশে এই দাম বাড়ার প্রতিক্রিয়া শুরু হবে শিগগিরই। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যেহেতু পণ্য পরিবহনসহ উৎপাদন ব্যয় সংশ্লিষ্ট, তাই সংগত কারণেই আশঙ্কা থেকে যায় দ্রব্যমূল্য আরেক দফা বাড়বে স্বল্প সময়ের মধ্যে। আর এই বৃদ্ধিও যে আনুপাতিক হারের চেয়ে বেশি হয়ে যাবে তা-ও সহজেই অনুমান করা যায়। অতীতেও দেখা গেছে তেমনি।


পণ্য পরিবহন ক্ষেত্রে বড় অংশ জ্বালানি বাবদ খরচ হলেও উৎপাদন ব্যয়ের সামান্য অংশই জ্বালানি তেলের ওপর গিয়ে পড়ে। পণ্য উৎপাদনের জন্য যে কয়টি খাতে ব্যয় প্রয়োজন হয় তার একটি মাত্র জ্বালানি তেল। তার পরও পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার সময় ব্যয় বৃদ্ধির তুলনা করা হয় না। যে কারণে আমাদের এখানে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ে যেটুকু, তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি বাড়ে জনদুর্ভোগ।
প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, গত বছর জ্বালানি তেলের চাহিদা ছিল ৩৮ লাখ টন; কিন্তু আগামী বছর সেই চাহিদা দ্বিগুণের চেয়েও বেশি বেড়ে যাবে। বাড়তি চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে তাই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিপিসিকে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত লোকসান দিতে হবে। এ পরিস্থিতিতে সরকারের সামনে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ছাড়া কোনো উপায়ও ছিল না। তবে দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া নিয়ে কথা উঠেছে। সাধারণ নিয়ম হচ্ছে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর জন্য গণশুনানির প্রয়োজন হয়। কিন্তু এবার দাম বাড়ানোর আগে কোনো গণশুনানি করা হয়নি। বিইআরসির উন্মুক্ত সভায় গণশুনানির আয়োজন করার বাধ্যবাধকতা থাকার পরও কোন কারণে সেই প্রক্রিয়া মানা হয়নি, তার কোনো ব্যাখ্য সরকারের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। সরকারের বিশাল লোকসান মোকাবিলা করার তথ্যটি যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে গণশুনানি না করার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। এ অবস্থায় গণশুনানিতে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা নিশ্চয়ই রাষ্ট্রীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতেন। ফলে এভাবে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কারণে সরকারের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
এই সরকারের আমলে যেখানে তেলের দাম কমানোরও উদাহরণ আছে, সেখানে এভাবে অস্বচ্ছতার অভিযোগের সুযোগ তৈরি করা হলো কেন? অন্যদিকে ভর্তুকি কমিয়ে আনতে হলে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো ছাড়া সরকারের সামনে কোনো পথ খোলা নেই। আর এ জন্যই জনগণকে সম্পৃক্ত করে কাজটি করলে ভালো হতো। এ পর্যায়ে সরকারকে এখনই পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির অছিলায় অযৌক্তিকভাবে যেন পরিবহন ব্যয় বাড়ানো না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে জনদুর্ভোগ বাড়বে এবং সরকারের ওপর মানুষের আস্থা হ্রাস পাবে।

No comments

Powered by Blogger.