বিদ্যুতের দাবিতে বিক্ষোভ-সংকটের দ্রুত সমাধান প্রয়োজন

বিদ্যুৎ সংকটে মানুষের দুর্ভোগ এখন গুরুতর আকার ধারণ করেছে। সেই সঙ্গে আছে গ্যাস ও পানির সংকট। ফলে জনজীবন রীতিমতো দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। তাই বিদ্যুতের দাবিতে মানুষ আজ রাস্তায় নেমে এসেছে। পাঁচ দিন ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় গত মঙ্গলবার ঢাকা-বগুড়া মহাসড়ক অবরোধ করেছিল বগুড়া শহরতলির ভবেরবাজার এলাকার বাসিন্দারা।


এর আগে কোথাও কোথাও স্থানীয় বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলার ঘটনাও ঘটেছে। ইতিমধ্যে 'খুচরা' বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন এবং অনেক বেশি মূল্যে বিদ্যুৎ কেনার মাধ্যমে হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির কথা বলা হলেও বাস্তবে আমরা সেই বৃদ্ধির তেমন কোনো আলামত দেখতে পাচ্ছি না। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার আবাসিক প্রয়োজন মেটাতে প্রতিনিয়ত বাড়িঘর নির্মিত হলেও বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবে সেসব বাড়িঘরে মানুষ উঠতে পারছে না। ফলে আবাসন ব্যবসায় রীতিমতো ধস নামার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
আমরা অবাক হই, যখন দেখি শাক দিয়ে মাছ ঢাকার কিংবা উদোরপিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করা হয়। সরকারের কোনো কোনো নেতা বা আমলাকে বলতে শুনেছি, সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে একটি মহল বিদ্যুৎ সেক্টরে ষড়যন্ত্র করছে। আবার কেউ কেউ আন্দোলনকারী জনতাকে দোষারোপ করার বা রাজনৈতিক লেবাস চাপানোর চেষ্টা করেন। ষড়যন্ত্র কিংবা ধ্বংসাত্মক তৎপরতা থাকলে সেটা ধরার বা বন্ধ করার দায়িত্বও রাষ্ট্রের। তা না করে কেবল অন্যের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করাটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। দুর্ভোগে পড়লে আওয়ামী লীগ-বিএনপি থাকে না, সবাই ক্ষুব্ধ হয়, প্রতিবাদ জানায়। যেমন_গত ঈদের আগে সড়ক যোগাযোগ ভেঙে পড়ায় সবাই ক্ষুব্ধ হয়েছিল, সবাই প্রতিবাদ জানিয়েছিল।
এটা সত্য, জোট সরকার ও পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়েনি বললেই চলে। অথচ এই দীর্ঘ সময়ে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে কয়েক গুণ। কাজেই সমস্যাটি রাতারাতি দূর হবে না। কিন্তু বর্তমান সরকারের তিন বছরেও অবস্থা এতটা নাজুক থাকবে_এটাও মেনে নেওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে দ্রুত ও বাস্তবভিত্তিক উদ্যোগ নেওয়া খুবই জরুরি ছিল। কিন্তু বর্তমান সরকার সে ক্ষেত্রে অনেকটাই ব্যর্থ হয়েছে। তারাও প্রায় আগের সরকারগুলোর মতো একই ধারাবাহিকতা অনুসরণ করে গেছে। আগের ('৯৬-০১) আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গৃহীত প্রকল্প জোট আমলে এসে বাতিল হয়েছে। জোট সরকারের শেষ সময়ে গৃহীত প্রকল্প তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বাতিল করা হয়েছে। আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নেওয়া প্রকল্প, এমনকি টেন্ডার পর্যন্ত বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে বাতিল করে দিয়েছে। সেই সঙ্গে আছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং আরো অনেক প্রতিবন্ধকতা।
এখন সম্ভবত এ কথা বলা অত্যুক্তি হবে না, সরকারের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই দ্রুততম সময়ে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে এবং সে সময় পর্যন্ত জনতার বিক্ষোভকে যুক্তিসংগত উপায়ে মোকাবিলা করতে হবে। লাঠিপেটা করে বা অন্যকে দোষারোপ করে কোনো লাভ হবে না।

No comments

Powered by Blogger.