ভর্তিবাণিজ্য-এই নৈরাজ্য চলতে পারে না
বিভিন্ন বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির সময় নেওয়া বাড়তি টাকা ফেরতের নির্দেশ দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিগত সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। বুধবার রাজধানীতে অনুষ্ঠিত এ সংক্রান্ত এক গোলটেবিলে শিক্ষামন্ত্রীও এ ব্যাপারে জোর দিয়েছেন। রাজধানীর খ্যাতিমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অতিরিক্ত ফি ও মোটা অঙ্কের অনুদান আদায়ের ঘটনা নতুন নয়। কিন্তু তা কতটা চরমে পেঁৗছেছে, বৃহস্পতিবার সহযোগী একটি দৈনিকের প্রতিবেদনে তার খণ্ডচিত্র ফুটে উঠেছে।
একজন অভিভাবককে যদি সন্তানের ভর্তির জন্য বেতনের বাইরেই দুই লাখের বেশি টাকা ফি হিসেবে গুনতে হয়, সেটা নিছক 'গলা কাটা' বলে পার পেতে পারে না। বাড়তি অর্থ নেওয়া একাধারে বর্তমান শিক্ষানীতি ও ভর্তি নীতিমালার পরিপন্থী। এ মাসের গোড়ার দিকে উচ্চ আদালতও জানতে চেয়েছেন যে এভাবে অর্থ আদায়কারীarsorদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। এখন প্রয়োজন কেবল মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ। সামগ্রিক খরচ বিবেচনা করে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য নীতিমালার শর্ত খানিকটা শিথিল করা হয়েছিল। খ্যাতিমান কিছু বিদ্যালয় স্পষ্টতই সেই সদিচ্ছার মূল্য দেয়নি। বিনামূল্যে বই বিতরণ ও ভর্তির ক্ষেত্রে লটারি চালু করার মধ্য দিয়ে পরিস্থিতির যে উন্নতি আশা করা হয়েছিল, অতিরিক্ত ফি তাতে গুড়ে বালিই দিয়েছে মনে হয়। মেধাবীদের অধিকারের প্রশ্নটিও মনে রাখা জরুরি। উপযুক্ততা সত্ত্বেও কেবল অর্থের জোর না থাকায় কারও সম্ভাবনা হারিয়ে যেতে দিতে পারি না। আমরা আশা করি, নীতিগত সিদ্ধান্তটি অবিলম্বে প্রজ্ঞাপনে রূপ নেবে। এও জানা কথা যে, অধিকাংশ নামকরা স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির সঙ্গে রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাবশালীরা জড়িত। কিন্তু ন্যায্যতার প্রশ্নে কেউ ছাড় পেতে পারেন না। আলোচ্য গোলটেবিলে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক রাজনীতিকদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সম্পৃক্ত না করার যে সুপারিশ করেছেন, তা ভেবে দেখা যেতে পারে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম বা বঞ্চনার শিকার অভিভাবকের প্রতিকার প্রাপ্তির নির্দিষ্ট স্থানও থাকা দরকার বলে আমরা মনে করি। বস্তুত শিক্ষার এই বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধ করতে হবে সামাজিক ভারসাম্যের স্বার্থেই। এই নৈরাজ্য আর চলতে দেওয়া যায় না।
No comments