রাষ্ট্রপতির ভাষণ-সংসদে সবার অংশগ্রহণ অপরিহার্য
বিরোধী দলকে সংসদে এসে তাদের প্রস্তাব, সুপারিশ ও অভিযোগ উত্থাপনের জন্য রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমানের আহ্বান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে রক্ষা ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যতাড়িত। গত বুধবার রীতি অনুযায়ী বছরের প্রথম সংসদ অধিবেশনের প্রথম কার্যদিবসে দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত ও বাধাগ্রস্ত করার অপচেষ্টা জাতি কখনও বরদাশত করবে না উল্লেখ করে বস্তুত গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি এখন কতটা শক্তিশালী, তাই প্রতিপন্ন করতে চেয়েছেন।
অতি সম্প্রতি নির্বাচিত সরকারকে অবৈধ পন্থায় উৎখাতের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার মধ্যে উলি্লখিত বক্তব্যের যথার্থতা মেলে। এটা সবাই জানেন ও মানেন যে, গণতন্ত্রে পরমতসহিষ্ণুতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশেষত, সংসদীয় গণতন্ত্রকে শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর অন্যতম শর্ত হচ্ছে সংসদকে প্রাণবন্ত ও সচল রাখা এবং সংসদ যাতে দেশের সব আইন প্রণয়ন ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু হয় সেটা নিশ্চিত করা। এ জন্য সরকারি দল এবং বিরোধী দল_ উভয় পক্ষেরই সংসদের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এ ব্যাপারে আমাদের বর্তমান সংসদসহ বিগত চারটি সংসদের স্মৃতি মোটেই উৎসাহব্যঞ্জক বা সুখকর নয়। দেখা গেছে, বিরোধী দল সংসদকে গুরুত্ব না দিয়ে রাস্তার আন্দোলনকেই উদ্দেশ্য সিদ্ধির হাতিয়ার করে। সরকারি দলও বিরোধীদের সংসদীয় কার্যক্রমে ফিরিয়ে আনতে ঐকান্তিক চেষ্টা নেওয়ার নজির এ পর্যন্ত গড়তে পারেনি। এভাবে বিরোধীদের লাগাতার বর্জন হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের জাতীয় সংসদের বিধিলিপি। এর ফলে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি এ দেশে স্থায়ী অবয়ব নিতে পারেনি। এখনও রাষ্ট্রপতিসহ গুরুত্বপূর্ণ নাগরিকদের গণতন্ত্র রক্ষার জন্য আহ্বান জানাতে হয়। আমরা অবশ্যই বিরোধী দলের লাগাতার সংসদ বর্জনকে সমর্থন করি না। কিন্তু বিরোধী দলকে সংসদে আনার ব্যাপারে সরকারি দলের প্রচেষ্টা কতটা আন্তরিক সে ব্যাপারে বিরোধী দলের নেতারাই প্রশ্ন তুলেছেন। তবে এটাও ঠিক যে, লাগাতার সংসদ বর্জনের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে সংসদকে কার্যকরের নতুন উদাহরণ সৃষ্টি করার অবকাশ বিরোধী দলের সামনে ছিল এবং এখনও আছে। তারা ইতিমধ্যে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতির ডাকা বৈঠকে যোগ দিয়ে রাজনৈতিক বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে। এ জন্য রাষ্ট্রপতিও তার ভাষণে বিরোধী দলের প্রশংসা করেছেন। রাজনৈতিক মহল থেকে শুরু করে দেশের সাধারণ মানুষ এ জন্য বিরোধী দলকে বাহবা দিয়েছে। তারা সংসদে এসে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাসহ তাদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে যুক্তিপূর্ণ প্রস্তাব উত্থাপন করতে পারেন। তাদের দাবি অনুযায়ী প্রস্তাব না পাস করা হলে তারা সংসদ অধিবেশন থেকে ওয়াকআউট করতে পারেন। আর এটাই সংসদীয় ব্যবস্থার রীতি। এখন সংসদের নিজস্ব টিভি রয়েছে, তাই এর সম্প্রচার সুবিধাও বিরোধী দল ব্যবহার করে জনগণের কাছে তাদের বক্তব্যের যথার্থতা তুলে ধরতে পারে। গণতন্ত্রকে রক্ষা ও শক্তিশালী করতে হলে সরকার ও বিরোধী দলের এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট সমঝোতা প্রয়োজন। লাগাতার সংসদ বর্জনের নেতিবাচক সংস্কৃতি ছেড়ে বিরোধী দলের উচিত সংসদীয় কার্যক্রমে অংশ নেওয়া। সরকারি দলের উচিত বিরোধীদের ব্যাপারে আরও সংবেদনশীল হওয়া। আমরা আশা করি, গণতন্ত্র রক্ষা ও শক্তিশালী করার জন্য রাষ্ট্রপতির আহ্বানের গুরুত্বকে সরকারি দল ও বিরোধী দল উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে।
No comments