বীর মুক্তিযোদ্ধা-তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না
২৯৬ স্বাধীনতার চার দশক উপলক্ষে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ধারাবাহিক এই আয়োজন। এ এস ভূঁইয়া, বীর প্রতীক সাহসী এক যোদ্ধার কথা পাকিস্তানিদের সীমান্তঘাঁটি কামালপুর দখল করে মুক্তিযোদ্ধারা দ্রুত এগিয়ে যেতে থাকলেন। তাঁরা কয়েকটি দলে বিভক্ত। একটি দলের নেতৃত্বে এ এস ভূঁইয়া (গাজী আবদুস সালাম ভূঁইয়া)। তাঁদের সঙ্গে আছেন মিত্রবাহিনীর সেনারাও। তাঁদের পরবর্তী লক্ষ্য শেরপুর।
কিন্তু শেরপুরের উপকণ্ঠে তাঁরা পৌঁছামাত্র পাকিস্তানি সেনারা পশ্চাদপসরণ শুরু করল। তাঁরা ধাওয়া করে আক্রমণ চালালেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পশ্চাদপসরণরত বহরের ওপর। তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। কিন্তু অল্পক্ষণ পরেই পাকিস্তানি সেনারা রণেভঙ্গ দিল। এ ঘটনা ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বরের।
শেরপুর ভারত সীমান্ত-সংলগ্ন জেলা (১৯৭১ সালে ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্গত মহকুমা)। মুক্তিযুদ্ধকালে শেরপুর সদরে ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর শক্ত এক ঘাঁটি। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী যৌথভাবে পাকিস্তানিদের কামালপুর সীমান্তঘাঁটি দখল করে বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো ধাবিত হয় ঢাকার দিকে। সামনে ছিল অনেক প্রতিবন্ধকতা। তাই মুক্তিযোদ্ধারা কামালপুর থেকে দুটি কলামে বিভক্ত হয়ে এগোতে থাকে। এক দল শ্রীবরদী থেকে ঝগড়ার চরের কাঁচা রাস্তা ধরে সংক্ষিপ্ত পথে অগ্রসর হয়। অপর দল শ্রীবরদী-শেরপুরের পাকা সড়ক ধরে। এই দলে সহযোদ্ধাদের নিয়ে ছিলেন এ এস ভুঁইয়া।
এ এস ভুঁইয়া সহযোদ্ধাদের নিয়ে দ্রুতই শেরপুরের উপকণ্ঠে পৌঁছেন। তাঁরা আক্রমণের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। কিন্তু আক্রমণ শুরু করার আগেই পাকিস্তানি সেনারা শেরপুর থেকে পশ্চাদপসরণ করতে থাকে। এ এস ভূঁইয়া তাঁর সহযোদ্ধাদের নিয়ে পশ্চাদপসরণরত পাকিস্তানি সেনাদের ওপর আক্রমণ চালান। তখন তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা কিছুক্ষণ পর রণেভঙ্গ দিয়ে পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়ার সময় দুই-তিনজন পাকিস্তানি সেনা মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিহত হয়।
এ এস ভূঁইয়া চাকরি করতেন পাকিস্তান নৌবাহিনীতে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানে (বর্তমান পাকিস্তান)। মার্চ মাসে সেখান থেকে বাংলাদেশে ব্যাপক হারে সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্র পাঠাতে দেখে তাঁর মনে সন্দেহ দানা বাঁধে। তিনি ঢাকায় আসার সুযোগ খুঁজতে থাকনে। ২৫ মার্চ কৌশলে সেখান থেকে বিমানে ঢাকায় আসেন। সেই রাতেই পাকিস্তানি সেনারা হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। দুই-তিন দিন পর তিনি বিক্রমপুর-নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী-কিশোরগঞ্জ হয়ে নিজ এলাকায় যান। জুন মাসে ভারতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। প্রথমে ভারতে কিছুদিন প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। পরে যুদ্ধ করেন ১১ নম্বর সেক্টরে। তিনি একটি কোম্পানির কমান্ডার ছিলেন। কামালপুর-বকশিগঞ্জ-শ্রীবরদীসহ আরও কয়েক স্থানে সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। ১৫ নভেম্বরে কামালপুর যুদ্ধে ১১ নম্বর সেক্টরের আহত অধিনায়ককে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে নিরাপদ স্থানে নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য এ এস ভূঁইয়াকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ২৭৭। তাঁর প্রকৃত নাম গাজী আবদুস সালাম ভূঁইয়া।
এ এস ভূঁইয়ার পৈতৃক বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার নান্দাইল গ্রামে। বর্তমানে তিনি এখানেই বসবাস করেন। তাঁর বাবা শাহনেওয়াজ ভূঁইয়া মুক্তিযুদ্ধে শহীদ। তাঁকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এ-দেশীয় সহযোগী রাজাকাররা হত্যা করে। মা হালিমা খাতুন। স্ত্রী মেহেরুন নেছা। তাঁদের এক ছেলে, দুই মেয়ে।
সূত্র: এ এস ভূঁইয়া বীর প্রতীক এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর ১১।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.com
শেরপুর ভারত সীমান্ত-সংলগ্ন জেলা (১৯৭১ সালে ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্গত মহকুমা)। মুক্তিযুদ্ধকালে শেরপুর সদরে ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর শক্ত এক ঘাঁটি। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী যৌথভাবে পাকিস্তানিদের কামালপুর সীমান্তঘাঁটি দখল করে বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো ধাবিত হয় ঢাকার দিকে। সামনে ছিল অনেক প্রতিবন্ধকতা। তাই মুক্তিযোদ্ধারা কামালপুর থেকে দুটি কলামে বিভক্ত হয়ে এগোতে থাকে। এক দল শ্রীবরদী থেকে ঝগড়ার চরের কাঁচা রাস্তা ধরে সংক্ষিপ্ত পথে অগ্রসর হয়। অপর দল শ্রীবরদী-শেরপুরের পাকা সড়ক ধরে। এই দলে সহযোদ্ধাদের নিয়ে ছিলেন এ এস ভুঁইয়া।
এ এস ভুঁইয়া সহযোদ্ধাদের নিয়ে দ্রুতই শেরপুরের উপকণ্ঠে পৌঁছেন। তাঁরা আক্রমণের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। কিন্তু আক্রমণ শুরু করার আগেই পাকিস্তানি সেনারা শেরপুর থেকে পশ্চাদপসরণ করতে থাকে। এ এস ভূঁইয়া তাঁর সহযোদ্ধাদের নিয়ে পশ্চাদপসরণরত পাকিস্তানি সেনাদের ওপর আক্রমণ চালান। তখন তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা কিছুক্ষণ পর রণেভঙ্গ দিয়ে পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়ার সময় দুই-তিনজন পাকিস্তানি সেনা মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিহত হয়।
এ এস ভূঁইয়া চাকরি করতেন পাকিস্তান নৌবাহিনীতে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানে (বর্তমান পাকিস্তান)। মার্চ মাসে সেখান থেকে বাংলাদেশে ব্যাপক হারে সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্র পাঠাতে দেখে তাঁর মনে সন্দেহ দানা বাঁধে। তিনি ঢাকায় আসার সুযোগ খুঁজতে থাকনে। ২৫ মার্চ কৌশলে সেখান থেকে বিমানে ঢাকায় আসেন। সেই রাতেই পাকিস্তানি সেনারা হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। দুই-তিন দিন পর তিনি বিক্রমপুর-নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী-কিশোরগঞ্জ হয়ে নিজ এলাকায় যান। জুন মাসে ভারতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। প্রথমে ভারতে কিছুদিন প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। পরে যুদ্ধ করেন ১১ নম্বর সেক্টরে। তিনি একটি কোম্পানির কমান্ডার ছিলেন। কামালপুর-বকশিগঞ্জ-শ্রীবরদীসহ আরও কয়েক স্থানে সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। ১৫ নভেম্বরে কামালপুর যুদ্ধে ১১ নম্বর সেক্টরের আহত অধিনায়ককে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে নিরাপদ স্থানে নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য এ এস ভূঁইয়াকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ২৭৭। তাঁর প্রকৃত নাম গাজী আবদুস সালাম ভূঁইয়া।
এ এস ভূঁইয়ার পৈতৃক বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার নান্দাইল গ্রামে। বর্তমানে তিনি এখানেই বসবাস করেন। তাঁর বাবা শাহনেওয়াজ ভূঁইয়া মুক্তিযুদ্ধে শহীদ। তাঁকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এ-দেশীয় সহযোগী রাজাকাররা হত্যা করে। মা হালিমা খাতুন। স্ত্রী মেহেরুন নেছা। তাঁদের এক ছেলে, দুই মেয়ে।
সূত্র: এ এস ভূঁইয়া বীর প্রতীক এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর ১১।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.com
No comments