ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক-নতুন স্বাদে বিরিয়ানি রান্না কি সম্ভব? by ইমতিয়াজ আহমেদ
বিরিয়ানি রন্ধন কৌশল যেহেতু রাতারাতি বদলানো যাবে না, তাই ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের এ সফর উপলক্ষে কয়েকটি বিষয় জরুরি ভিত্তিতে নিষ্পত্তির জন্য সচেষ্ট হওয়ার অনুরোধ থাকবে। এক. বাণিজ্য বাধা তুলে নেওয়া। ভারতে বাংলাদেশের সব ধরনের রফতানি পণ্যকে নেগেটিভ তালিকা থেকে অব্যাহতি প্রদান করতে হবে।
দুই. টিপাইমুখ বাঁধ সম্পর্কে স্পষ্ট করে বলা যে বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্ব ছাড়া কখনোই এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে না। তিন. যেহেতু ট্রানজিটের সঙ্গে উভয় দেশের স্বার্থ জড়িত, তাই এ ক্ষেত্রে যথাযথ প্রস্তুতির জন্য বাংলাদেশকে সময় প্রদান এবং পর্যায়ক্রমে তার বাস্তবায়ন
পররাষ্ট্রনীতি ও কর্মকৌশল কী ধরনের হওয়া উচিত সে বিষয়ে পশ্চিমা দেশগুলোতে একাধিক তত্ত্ব রয়েছে। তাত্তি্বকরা বলছেন নানাবিধ সূত্র ও ফর্মুলার কথা। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে তা কতটা প্রযোজ্য? এ অঞ্চলের চিন্তাবিদদের ধারণা যে, দক্ষিণ এশিয়ার পররাষ্ট্রনীতিতে নিজস্ব পদ্ধতি রয়েছে এবং তার প্রভাব আমরা নানাভাবে লক্ষ্য করছি।
বাংলাদেশের প্রায়-প্রতিবেশী এশীয় দেশ হচ্ছে চীন। তারাও পশ্চিমা তত্ত্বকে অনুকরণ করার চেষ্টা করে না। তাদের এ নিজস্ব পদ্ধতির কারণেই তারা পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে কখন কী কৌশল অনুসরণ করে সেটা ঠিক পশ্চিমা বিশ্ব বুঝে উঠতে পারে না। অনেক সময় বিভ্রান্তও হয়ে পড়ে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় চীনের তাইওয়ান নীতির কথা। তাদের রাজনৈতিক সম্পর্ক খুবই খারাপ। ক্ষুদ্র এ দ্বীপকে বেইজিং আদৌ পছন্দ করে না বলেই সাধারণ ধারণা। ঢাকায় তাইওয়ানের একটি বাণিজ্যিক অফিস চালুর পদক্ষেপ নিতে গিয়ে খালেদা জিয়ার সরকার চীন সরকারকে দারুণভাবে ক্ষুব্ধ করেছিল। কিন্তু এই তাইওয়ানেই রয়েছে চীনের বিপুল বিনিয়োগ। ভারতের সঙ্গেও চীনের রাজনৈতিক সম্পর্ক খারাপ। একাধিক ইস্যুতে বিরোধ প্রকাশ্য। যেমন, অরুণাচল সীমানা নিয়ে বিরোধ এবং তিব্বতের ধর্মগুরু দালাই লামা প্রসঙ্গ। কিন্তু চীন ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ বিপুল এবং তা ক্রমশ বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে চীনের তরফে উদ্যোগই বেশি লক্ষ্য করা যায়। আর এর মূলে রয়েছে চীনের রাষ্ট্রনীতি ও দর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য_ রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি প্রভৃতি ইস্যুতে নানা সমস্যা-ঝামেলা থাকতে পারে; কিন্তু তা পৃথক করতে জানা চাই। সবকিছু এক টেবিলে উপস্থাপনের দরকার নেই। যেটা জরুরি কিংবা এখনই সমাধান সম্ভব বা যা কাজ দেবে তাকে অগ্রাধিকার দিতে তারা পারঙ্গম। অনেকে এটা বলেন 'ইন ইয়াং দর্শন', যার মূল কথা ব্যালান্সিং অপজিট বা দণ্ডের মধ্যে ভারসাম্য আনা। একইভাবে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রনীতিতে নিজস্বতা যদি কিছু থাকে যেটাকে আমরা বলতে পারি 'বিরিয়ানি রন্ধন পদ্ধতি'। সুস্বাদু খাবার বিরিয়ানি, তবে শব্দটা এসেছে ফরাসি 'বিরিয়ান' থেকে। এতে রান্নার আগে চাল ভেজে নিতে হয় এবং উপকরণ একসঙ্গে দিতে হয়। উপমহাদেশে কীভাবে এ খাবার এসেছে, তা নিয়ে নানা মত। কেউ বলেন তৈমুর লং এনেছেন। কারওবা ধারণা এ হচ্ছে মোগলাই খানা, এসেছে মোগলদের হাত ধরে। সম্রাট শাহজাহানের প্রিয়তম পত্নী মমতাজ মহলকেও কেউ কেউ বিরিয়ানি চালুর কৃতিত্ব দিতে চান। আমাদের এখানে বিরিয়ানিতে আলু থাকে। এর কারণ মাংসের অপর্যাপ্ততা। প্রচলনের কারণ যাই হোক, হায়দ্রাবাদ-লক্ষেষ্টৗ-গুজরাট-ঢাকা যে কোনো অঞ্চলেই বিরিয়ানি রন্ধন প্রণালি বা কৌশলে রয়েছে অভিন্নতা_ চাল, মাংস, সবজি সব মিলিয়ে একটি সুস্বাদু পদ, যা প্রকৃতই 'ঘ্রাণে অর্ধেক ভোজন'।
সব বিরিয়ানি খেতে সুস্বাদু হলেই সব ব্যাপারে এর রন্ধন প্রণালি কাজ দেবে, এমন নয়। তবে আমরা কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার পররাষ্ট্রনীতিতে এ পদ্ধতি অনুসরণ করতে দেখি_ এখানের রাষ্ট্রনেতা ও কূটনীতিকরা সবকিছু এক হাঁড়িতে ফেলতে আগ্রহী। বাংলাদেশ-ভারত কিংবা ভারত-পাকিস্তান, সর্বত্রই সব এজেন্ডা এক টেবিলে আনার প্রবণতা।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০১০ সালের জানুয়ারিতে ভারত সফরের সময় স্বাক্ষরিত ৫০ দফার ইশতেহারের কথাই ধরুন। কী নেই তাতে? ১৯৭৪ সালের সীমান্ত ও ছিটমহল সংক্রান্ত চুক্তি, তিস্তার পানি বণ্টন, বাণিজ্যে নেগেটিভ লিস্ট, সীমান্তে বিএসএফের গুলিবর্ষণ, এমনকি ট্রানজিট-কানেকটিভিটি সবই তাতে স্থান পেয়েছে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশত জন্মবার্ষিকীও বাদ যায়নি। মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় এসবের কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে, তা পর্যালোচনা করা হবে। অনেকের এমনও ধারণা রয়েছে, গত চার দশকে কিংবা তারও আগে থেকে যেসব বড় বড় সমস্যা রয়েছে তার সবগুলো ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর দুই প্রধানমন্ত্রী আলোচনা করে নিষ্পন্ন করে ফেলতে পারেন। এ যেন মেসি-জাদু!
এখানেই প্রশ্ন_ বিরিয়ানি রন্ধন প্রণালি কি এ ক্ষেত্রে সফল হতে পারে? অনেক বিষয়, যার কোনো কোনোটির এমনকি অন্যটির সঙ্গে মিল নেই বা আদৌ সম্পর্কযুক্ত নয়, তা কেন এক বৈঠকে নিয়ে আসা? এভাবে দুই দেশের মধ্যে যে আস্থাহীনতা ও সংশয়, তা কি দূর করা সম্ভব?
আমরা ১৯৭৪ সালের সীমান্ত চুক্তির বিষয়টি বলতে পারি। এ চুক্তিতে ছিটমহল আদান-প্রদানের কথা বলা হয়েছে। জুলাই মাসে চুক্তি হয় এবং বাংলাদেশ অক্টোবর মাসেই সীমান্তে পরিবর্তন আনার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে সংবিধান সংশোধন করে। এতে বড় প্রতিবেশী ও স্বাধীনতা সংগ্রামকালীন ঘনিষ্ঠতম মিত্র দেশটির সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়নে যেমন সদিচ্ছা ছিল, তেমনি প্রকাশ পেয়েছে উদারতা। কিন্তু ডিসেম্বরে ভারত জানায়, চুক্তির কিছু বিষয় সংশোধনের দরকার। এটা এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে, যার জের এখনও চলছে। প্রায় চার দশক পর এখন আবার দুটি দেশ ১৯৭৪ সালের চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য উদ্যোগী হয়ে উঠেছে। এ ক্ষেত্রে যে সমস্যা রয়েছে তা একদিনে সমাধান নাও হতে পারে। সীমান্ত সংক্রান্ত বিরোধগুলো এক এক এলাকা ধরে পৃথক বৈঠক করে নিষ্পন্ন করা কেন যাবে না? অন্যান্য ইস্যুর সঙ্গেইবা তা মেলাতে হবে কেন?
বাণিজ্য ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করাও বড় সমস্যা। ভারতে বাংলাদেশের অনেক পণ্য রফতানির ওপর বিধিনিষেধ রয়েছে। এ তালিকা খুব বড়_ ৪৮০টি পণ্য। এ থেকে ৬১টি বাদ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এ বৈঠকে, যার মধ্যে ৫৪টি তৈরি পোশাক সংক্রান্ত। কেন ১৯৭৪ সালের সীমান্ত সংক্রান্ত চুক্তি এবং বাণিজ্য বিরোধ এক টেবিলে সমাধানের চেষ্টা? বাণিজ্য সংক্রান্ত বিরোধ তো সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বারবার বৈঠকে বসে সমাধান করে ফেলা যায়। এ জন্য শীর্ষ পর্যায়েও বৈঠক হতে পারে।
আরেকটি ইস্যু তিস্তার পানি বণ্টন সংক্রান্ত। এতে যথেষ্ট জটিলতা রয়েছে এবং যার কারণে শিবশংকর মেননকে এক সপ্তাহে দু'বার ঢাকায় আসতে হয়। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শেষ মুহূর্তে বেঁকে বসেছেন। নদী-সীমান্ত-বাণিজ্য সবই এক টেবিলে সমাধানের জন্য চলে আসছে। পানি বণ্টনের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে ভারতে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কেও রয়েছে জটিলতা। কিন্তু পররাষ্ট্রনীতির ধারাটাই এমন যে একই কুকিং পটে সব ফেলা চাই।
সীমান্তে বিএসএফের গুলিবর্ষণ ইস্যুও আলোচনার টেবিলে। প্রকৃত তথ্য হচ্ছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীদের গুলিতে দুই দেশের নাগরিকরাই মারা যাচ্ছে। কোনো কোনো হিসাবে তো বলা হচ্ছে, বাংলাদেশি ও ভারতীয়দের মৃত্যুর অনুপাত ৬০-৪০। সীমান্তে অস্থিরতার একটি কারণ গরু বাণিজ্য। ভারতে গরু নিয়ে স্পর্শকাতরতা রয়েছে। রাজনীতিকরা এটা নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা করতে চান না। এ পণ্য রফতানিতে রয়েছে নানা বিধিনিষেধ। অথচ এই গরুর কারণেই দুই দেশের নাগরিকরা মারা যাচ্ছেন এবং তার প্রভাবে দুই দেশের সম্পর্কে তৈরি হচ্ছে জটিলতা। ভারতে গরু রফতানি সংক্রান্ত আইনে যতদিন পরিবর্তন না আসবে ততদিন সীমান্তে শান্তি স্থাপন দুরূহ হবে বলেই অনেকে মনে করেন। এ ইস্যুটি কেন আলাদাভাবে নিষ্পত্তির চেষ্টা করা হয় না?
ট্রানজিটও আলোচনার টেবিলে। এ ইস্যুর সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি অর্থনীতির সম্পর্ক ব্যাপক। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা যদি মনে করেন, ভারতকে ট্রানজিট দেওয়া হলে তাদের উৎপাদিত পণ্যের রফতানি বাড়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে, তাহলে এতে তাদের আপত্তি থাকবে না বরং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে। আর যদি দেখে যে তেমন লাভ নেই এবং এমনকি আগের রফতানিও কমে যাওয়ার হুমকি আসতে পারে, তাহলে তারা এতে উৎসাহ দেখাবে না। ট্রানজিট সফল করার জন্য প্রয়োজন দুই দেশের শিল্প-বাণিজ্যের উদ্যোক্তাদের মধ্যে আলোচনা। উভয়পক্ষ যদি এ ধারণা পায় যে, তাদের ভালো লাভের সুযোগ রয়েছে, তাহলে এর সঙ্গে সম্পর্কিত যাবতীয় সমস্যার সমাধানে নিজেরাই উদ্যোগী হবে। জনগণও কিন্তু ট্রানজিটের সুফল চোখের সামনে দেখতে চাইবে।
এক কথা বলা যায়, এই বিরিয়ানি রন্ধন কৌশল কাজ দিচ্ছে না। অথচ চীন এ পদ্ধতি অনুসরণ করছে না এবং তাতে লাভবানই হচ্ছে। ভারত কেন তা অনুসরণ করতে পারছে না?
যারা এ অঞ্চলের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে এবং এ ক্ষেত্রে নতুন চিন্তা সামনে নিয়ে আসতে চান, তাদের উচিত হবে পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনায় সচেষ্ট হওয়া। একসঙ্গে সব উপকরণ মিলিয়ে রান্না করা হলে কোনো কোনো খাবার সুস্বাদু হতেই পারে। কিন্তু সব সমস্যার সমাধান একসঙ্গে করা যাবে না, এটা বুঝতে হবে। এমন চেষ্টা ভাবের বা কল্পনার জগতে আমাদের আটকে রাখছে। এর বিপরীতে বিরিয়ানি-পূর্ব ভারতবর্ষের সময়ে আমরা ফিরে যেতে পারি। সম্রাট অশোক কিংবা আকবরের আমলে তা অনুসরণ করা হয়েছে। আমরা ধাপে ধাপে এগোতে পারি। এভাবে তৈরি হতে পারে নতুন সম্পর্ক।
তবে বিরিয়ানি রন্ধন কৌশল যেহেতু রাতারাতি বদলানো যাবে না, তাই ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের এ সফর উপলক্ষে কয়েকটি বিষয় জরুরি ভিত্তিতে নিষ্পত্তির জন্য সচেষ্ট হওয়ার অনুরোধ থাকবে। এক. বাণিজ্য বাধা তুলে নেওয়া। ভারতে বাংলাদেশের সব ধরনের রফতানি পণ্যকে নেগেটিভ তালিকা থেকে অব্যাহতি প্রদান করতে হবে। দুই. টিপাইমুখ বাঁধ সম্পর্কে স্পষ্ট করে বলা যে বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্ব ছাড়া কখনোই এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে না। তিন. যেহেতু ট্রানজিটের সঙ্গে উভয় দেশের স্বার্থ জড়িত, তাই এ ক্ষেত্রে যথাযথ প্রস্তুতির জন্য বাংলাদেশকে সময় প্রদান এবং পর্যায়ক্রমে তার বাস্তবায়ন। এ বিষয়ে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী এবং সর্বস্তরের জনগণ যেন বুঝতে পারে যে বিষয়টি তাদের জন্য স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে সুফল এনে দেবে। চার. বিএসএফের গুলিবর্ষণ ইস্যুর স্থায়ী সমাধানের জন্য গরু রফতানির ইস্যুটি নতুন করে চিন্তা করা। পাঁচ. সমুদ্র সীমান্ত চিহ্নিত করার ইস্যুতে বাংলাদেশের ন্যায্য দাবি মেনে নেওয়া।
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সফরের সময় যদি এসব ইস্যুর নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়, তাহলে নতুন স্বাদে বিরিয়ানি তৈরি হতেই পারে। এ জন্য অবশ্যই প্রয়োজন দক্ষ বাবুর্চি। মনমোহন সিং অর্থনীতির পণ্ডিত এবং একই সঙ্গে বাস্তববাদী। তিনি অর্থনীতিতে সংস্কারের সাধন করেছেন এবং এ জন্য বিশ্বব্যাপী পেয়েছেন খ্যাতি। যদি তিনি উলি্লখিত কাজগুলো করতে পারেন তাহলে ১৯৭১ সালের মতোই বাংলাদেশের জনগণের মন জয় করতে পারবেন। ভারতেরও হবে জয়জয়কার। এই অঞ্চলের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সম্পর্কে এভাবেই ঘটতে পারে যুগান্তকারী পরিবর্তন। নতুন স্বাদের বিরিয়ানি রান্নায় তিনি কি নিজের পারদর্শিতা দেখাতে পারবেন?
ইমতিয়াজ আহমেদ : অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
পররাষ্ট্রনীতি ও কর্মকৌশল কী ধরনের হওয়া উচিত সে বিষয়ে পশ্চিমা দেশগুলোতে একাধিক তত্ত্ব রয়েছে। তাত্তি্বকরা বলছেন নানাবিধ সূত্র ও ফর্মুলার কথা। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে তা কতটা প্রযোজ্য? এ অঞ্চলের চিন্তাবিদদের ধারণা যে, দক্ষিণ এশিয়ার পররাষ্ট্রনীতিতে নিজস্ব পদ্ধতি রয়েছে এবং তার প্রভাব আমরা নানাভাবে লক্ষ্য করছি।
বাংলাদেশের প্রায়-প্রতিবেশী এশীয় দেশ হচ্ছে চীন। তারাও পশ্চিমা তত্ত্বকে অনুকরণ করার চেষ্টা করে না। তাদের এ নিজস্ব পদ্ধতির কারণেই তারা পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে কখন কী কৌশল অনুসরণ করে সেটা ঠিক পশ্চিমা বিশ্ব বুঝে উঠতে পারে না। অনেক সময় বিভ্রান্তও হয়ে পড়ে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় চীনের তাইওয়ান নীতির কথা। তাদের রাজনৈতিক সম্পর্ক খুবই খারাপ। ক্ষুদ্র এ দ্বীপকে বেইজিং আদৌ পছন্দ করে না বলেই সাধারণ ধারণা। ঢাকায় তাইওয়ানের একটি বাণিজ্যিক অফিস চালুর পদক্ষেপ নিতে গিয়ে খালেদা জিয়ার সরকার চীন সরকারকে দারুণভাবে ক্ষুব্ধ করেছিল। কিন্তু এই তাইওয়ানেই রয়েছে চীনের বিপুল বিনিয়োগ। ভারতের সঙ্গেও চীনের রাজনৈতিক সম্পর্ক খারাপ। একাধিক ইস্যুতে বিরোধ প্রকাশ্য। যেমন, অরুণাচল সীমানা নিয়ে বিরোধ এবং তিব্বতের ধর্মগুরু দালাই লামা প্রসঙ্গ। কিন্তু চীন ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ বিপুল এবং তা ক্রমশ বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে চীনের তরফে উদ্যোগই বেশি লক্ষ্য করা যায়। আর এর মূলে রয়েছে চীনের রাষ্ট্রনীতি ও দর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য_ রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি প্রভৃতি ইস্যুতে নানা সমস্যা-ঝামেলা থাকতে পারে; কিন্তু তা পৃথক করতে জানা চাই। সবকিছু এক টেবিলে উপস্থাপনের দরকার নেই। যেটা জরুরি কিংবা এখনই সমাধান সম্ভব বা যা কাজ দেবে তাকে অগ্রাধিকার দিতে তারা পারঙ্গম। অনেকে এটা বলেন 'ইন ইয়াং দর্শন', যার মূল কথা ব্যালান্সিং অপজিট বা দণ্ডের মধ্যে ভারসাম্য আনা। একইভাবে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রনীতিতে নিজস্বতা যদি কিছু থাকে যেটাকে আমরা বলতে পারি 'বিরিয়ানি রন্ধন পদ্ধতি'। সুস্বাদু খাবার বিরিয়ানি, তবে শব্দটা এসেছে ফরাসি 'বিরিয়ান' থেকে। এতে রান্নার আগে চাল ভেজে নিতে হয় এবং উপকরণ একসঙ্গে দিতে হয়। উপমহাদেশে কীভাবে এ খাবার এসেছে, তা নিয়ে নানা মত। কেউ বলেন তৈমুর লং এনেছেন। কারওবা ধারণা এ হচ্ছে মোগলাই খানা, এসেছে মোগলদের হাত ধরে। সম্রাট শাহজাহানের প্রিয়তম পত্নী মমতাজ মহলকেও কেউ কেউ বিরিয়ানি চালুর কৃতিত্ব দিতে চান। আমাদের এখানে বিরিয়ানিতে আলু থাকে। এর কারণ মাংসের অপর্যাপ্ততা। প্রচলনের কারণ যাই হোক, হায়দ্রাবাদ-লক্ষেষ্টৗ-গুজরাট-ঢাকা যে কোনো অঞ্চলেই বিরিয়ানি রন্ধন প্রণালি বা কৌশলে রয়েছে অভিন্নতা_ চাল, মাংস, সবজি সব মিলিয়ে একটি সুস্বাদু পদ, যা প্রকৃতই 'ঘ্রাণে অর্ধেক ভোজন'।
সব বিরিয়ানি খেতে সুস্বাদু হলেই সব ব্যাপারে এর রন্ধন প্রণালি কাজ দেবে, এমন নয়। তবে আমরা কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার পররাষ্ট্রনীতিতে এ পদ্ধতি অনুসরণ করতে দেখি_ এখানের রাষ্ট্রনেতা ও কূটনীতিকরা সবকিছু এক হাঁড়িতে ফেলতে আগ্রহী। বাংলাদেশ-ভারত কিংবা ভারত-পাকিস্তান, সর্বত্রই সব এজেন্ডা এক টেবিলে আনার প্রবণতা।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০১০ সালের জানুয়ারিতে ভারত সফরের সময় স্বাক্ষরিত ৫০ দফার ইশতেহারের কথাই ধরুন। কী নেই তাতে? ১৯৭৪ সালের সীমান্ত ও ছিটমহল সংক্রান্ত চুক্তি, তিস্তার পানি বণ্টন, বাণিজ্যে নেগেটিভ লিস্ট, সীমান্তে বিএসএফের গুলিবর্ষণ, এমনকি ট্রানজিট-কানেকটিভিটি সবই তাতে স্থান পেয়েছে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশত জন্মবার্ষিকীও বাদ যায়নি। মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় এসবের কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে, তা পর্যালোচনা করা হবে। অনেকের এমনও ধারণা রয়েছে, গত চার দশকে কিংবা তারও আগে থেকে যেসব বড় বড় সমস্যা রয়েছে তার সবগুলো ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর দুই প্রধানমন্ত্রী আলোচনা করে নিষ্পন্ন করে ফেলতে পারেন। এ যেন মেসি-জাদু!
এখানেই প্রশ্ন_ বিরিয়ানি রন্ধন প্রণালি কি এ ক্ষেত্রে সফল হতে পারে? অনেক বিষয়, যার কোনো কোনোটির এমনকি অন্যটির সঙ্গে মিল নেই বা আদৌ সম্পর্কযুক্ত নয়, তা কেন এক বৈঠকে নিয়ে আসা? এভাবে দুই দেশের মধ্যে যে আস্থাহীনতা ও সংশয়, তা কি দূর করা সম্ভব?
আমরা ১৯৭৪ সালের সীমান্ত চুক্তির বিষয়টি বলতে পারি। এ চুক্তিতে ছিটমহল আদান-প্রদানের কথা বলা হয়েছে। জুলাই মাসে চুক্তি হয় এবং বাংলাদেশ অক্টোবর মাসেই সীমান্তে পরিবর্তন আনার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে সংবিধান সংশোধন করে। এতে বড় প্রতিবেশী ও স্বাধীনতা সংগ্রামকালীন ঘনিষ্ঠতম মিত্র দেশটির সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়নে যেমন সদিচ্ছা ছিল, তেমনি প্রকাশ পেয়েছে উদারতা। কিন্তু ডিসেম্বরে ভারত জানায়, চুক্তির কিছু বিষয় সংশোধনের দরকার। এটা এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে, যার জের এখনও চলছে। প্রায় চার দশক পর এখন আবার দুটি দেশ ১৯৭৪ সালের চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য উদ্যোগী হয়ে উঠেছে। এ ক্ষেত্রে যে সমস্যা রয়েছে তা একদিনে সমাধান নাও হতে পারে। সীমান্ত সংক্রান্ত বিরোধগুলো এক এক এলাকা ধরে পৃথক বৈঠক করে নিষ্পন্ন করা কেন যাবে না? অন্যান্য ইস্যুর সঙ্গেইবা তা মেলাতে হবে কেন?
বাণিজ্য ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করাও বড় সমস্যা। ভারতে বাংলাদেশের অনেক পণ্য রফতানির ওপর বিধিনিষেধ রয়েছে। এ তালিকা খুব বড়_ ৪৮০টি পণ্য। এ থেকে ৬১টি বাদ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এ বৈঠকে, যার মধ্যে ৫৪টি তৈরি পোশাক সংক্রান্ত। কেন ১৯৭৪ সালের সীমান্ত সংক্রান্ত চুক্তি এবং বাণিজ্য বিরোধ এক টেবিলে সমাধানের চেষ্টা? বাণিজ্য সংক্রান্ত বিরোধ তো সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বারবার বৈঠকে বসে সমাধান করে ফেলা যায়। এ জন্য শীর্ষ পর্যায়েও বৈঠক হতে পারে।
আরেকটি ইস্যু তিস্তার পানি বণ্টন সংক্রান্ত। এতে যথেষ্ট জটিলতা রয়েছে এবং যার কারণে শিবশংকর মেননকে এক সপ্তাহে দু'বার ঢাকায় আসতে হয়। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শেষ মুহূর্তে বেঁকে বসেছেন। নদী-সীমান্ত-বাণিজ্য সবই এক টেবিলে সমাধানের জন্য চলে আসছে। পানি বণ্টনের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে ভারতে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কেও রয়েছে জটিলতা। কিন্তু পররাষ্ট্রনীতির ধারাটাই এমন যে একই কুকিং পটে সব ফেলা চাই।
সীমান্তে বিএসএফের গুলিবর্ষণ ইস্যুও আলোচনার টেবিলে। প্রকৃত তথ্য হচ্ছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীদের গুলিতে দুই দেশের নাগরিকরাই মারা যাচ্ছে। কোনো কোনো হিসাবে তো বলা হচ্ছে, বাংলাদেশি ও ভারতীয়দের মৃত্যুর অনুপাত ৬০-৪০। সীমান্তে অস্থিরতার একটি কারণ গরু বাণিজ্য। ভারতে গরু নিয়ে স্পর্শকাতরতা রয়েছে। রাজনীতিকরা এটা নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা করতে চান না। এ পণ্য রফতানিতে রয়েছে নানা বিধিনিষেধ। অথচ এই গরুর কারণেই দুই দেশের নাগরিকরা মারা যাচ্ছেন এবং তার প্রভাবে দুই দেশের সম্পর্কে তৈরি হচ্ছে জটিলতা। ভারতে গরু রফতানি সংক্রান্ত আইনে যতদিন পরিবর্তন না আসবে ততদিন সীমান্তে শান্তি স্থাপন দুরূহ হবে বলেই অনেকে মনে করেন। এ ইস্যুটি কেন আলাদাভাবে নিষ্পত্তির চেষ্টা করা হয় না?
ট্রানজিটও আলোচনার টেবিলে। এ ইস্যুর সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি অর্থনীতির সম্পর্ক ব্যাপক। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা যদি মনে করেন, ভারতকে ট্রানজিট দেওয়া হলে তাদের উৎপাদিত পণ্যের রফতানি বাড়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে, তাহলে এতে তাদের আপত্তি থাকবে না বরং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে। আর যদি দেখে যে তেমন লাভ নেই এবং এমনকি আগের রফতানিও কমে যাওয়ার হুমকি আসতে পারে, তাহলে তারা এতে উৎসাহ দেখাবে না। ট্রানজিট সফল করার জন্য প্রয়োজন দুই দেশের শিল্প-বাণিজ্যের উদ্যোক্তাদের মধ্যে আলোচনা। উভয়পক্ষ যদি এ ধারণা পায় যে, তাদের ভালো লাভের সুযোগ রয়েছে, তাহলে এর সঙ্গে সম্পর্কিত যাবতীয় সমস্যার সমাধানে নিজেরাই উদ্যোগী হবে। জনগণও কিন্তু ট্রানজিটের সুফল চোখের সামনে দেখতে চাইবে।
এক কথা বলা যায়, এই বিরিয়ানি রন্ধন কৌশল কাজ দিচ্ছে না। অথচ চীন এ পদ্ধতি অনুসরণ করছে না এবং তাতে লাভবানই হচ্ছে। ভারত কেন তা অনুসরণ করতে পারছে না?
যারা এ অঞ্চলের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে এবং এ ক্ষেত্রে নতুন চিন্তা সামনে নিয়ে আসতে চান, তাদের উচিত হবে পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনায় সচেষ্ট হওয়া। একসঙ্গে সব উপকরণ মিলিয়ে রান্না করা হলে কোনো কোনো খাবার সুস্বাদু হতেই পারে। কিন্তু সব সমস্যার সমাধান একসঙ্গে করা যাবে না, এটা বুঝতে হবে। এমন চেষ্টা ভাবের বা কল্পনার জগতে আমাদের আটকে রাখছে। এর বিপরীতে বিরিয়ানি-পূর্ব ভারতবর্ষের সময়ে আমরা ফিরে যেতে পারি। সম্রাট অশোক কিংবা আকবরের আমলে তা অনুসরণ করা হয়েছে। আমরা ধাপে ধাপে এগোতে পারি। এভাবে তৈরি হতে পারে নতুন সম্পর্ক।
তবে বিরিয়ানি রন্ধন কৌশল যেহেতু রাতারাতি বদলানো যাবে না, তাই ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের এ সফর উপলক্ষে কয়েকটি বিষয় জরুরি ভিত্তিতে নিষ্পত্তির জন্য সচেষ্ট হওয়ার অনুরোধ থাকবে। এক. বাণিজ্য বাধা তুলে নেওয়া। ভারতে বাংলাদেশের সব ধরনের রফতানি পণ্যকে নেগেটিভ তালিকা থেকে অব্যাহতি প্রদান করতে হবে। দুই. টিপাইমুখ বাঁধ সম্পর্কে স্পষ্ট করে বলা যে বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্ব ছাড়া কখনোই এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে না। তিন. যেহেতু ট্রানজিটের সঙ্গে উভয় দেশের স্বার্থ জড়িত, তাই এ ক্ষেত্রে যথাযথ প্রস্তুতির জন্য বাংলাদেশকে সময় প্রদান এবং পর্যায়ক্রমে তার বাস্তবায়ন। এ বিষয়ে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী এবং সর্বস্তরের জনগণ যেন বুঝতে পারে যে বিষয়টি তাদের জন্য স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে সুফল এনে দেবে। চার. বিএসএফের গুলিবর্ষণ ইস্যুর স্থায়ী সমাধানের জন্য গরু রফতানির ইস্যুটি নতুন করে চিন্তা করা। পাঁচ. সমুদ্র সীমান্ত চিহ্নিত করার ইস্যুতে বাংলাদেশের ন্যায্য দাবি মেনে নেওয়া।
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সফরের সময় যদি এসব ইস্যুর নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়, তাহলে নতুন স্বাদে বিরিয়ানি তৈরি হতেই পারে। এ জন্য অবশ্যই প্রয়োজন দক্ষ বাবুর্চি। মনমোহন সিং অর্থনীতির পণ্ডিত এবং একই সঙ্গে বাস্তববাদী। তিনি অর্থনীতিতে সংস্কারের সাধন করেছেন এবং এ জন্য বিশ্বব্যাপী পেয়েছেন খ্যাতি। যদি তিনি উলি্লখিত কাজগুলো করতে পারেন তাহলে ১৯৭১ সালের মতোই বাংলাদেশের জনগণের মন জয় করতে পারবেন। ভারতেরও হবে জয়জয়কার। এই অঞ্চলের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সম্পর্কে এভাবেই ঘটতে পারে যুগান্তকারী পরিবর্তন। নতুন স্বাদের বিরিয়ানি রান্নায় তিনি কি নিজের পারদর্শিতা দেখাতে পারবেন?
ইমতিয়াজ আহমেদ : অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
No comments