সীমান্তে বিনাবিচারে হত্যা
ভারতের আসাম সীমান্তে বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা রৌমারীর একটি গ্রাম ভন্দুরচর। গ্রামটির বেশিরভাগ মানুষ দরিদ্র, কৃষিজীবী কিংবা কৃষিশ্রমিক। জিঞ্জিরাম নামে একটি নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে রৌমারী উপজেলা সদর কিংবা প্রতিবেশী গ্রামগুলোর সঙ্গে এ গ্রামের যোগাযোগ বেশ কষ্টসাধ্য।
নদীটির ওপর কোনো সেতু নেই, আবার পারাপারের জন্য নৌকাও সব সময় পাওয়া যায় না। মূলত দারিদ্র্য ও কষ্টসাধ্য যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এ গ্রামের বেশিরভাগ ছেলেমেয়ে স্কুলে যায় না। তার ওপর দেশের বিভিন্ন সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশী নাগরিকদের হত্যাসহ নানাভাবে নির্যাতনের ঘটনায় সীমান্তবর্তী এ গ্রামটির মানুষ সব সময় এক ধরনের আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করেন। গত ৬ নভেম্বর ২০০৯ সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে মঞ্জুয়ারা খাতুন নামে এ গ্রামের ১২ বছর বয়সী এক কিশোরী বিএসএফের গুলিতে প্রাণ হারায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মাধ্যমে জানা যায়, প্রতিবেশী কিশোরী লাকি (১২) ও আরিফার (১৩) সঙ্গে সীমান্তের ১০৬৬ নম্বর মেইন পিলার সংলগ্ন এলাকায় ছাগল আনতে গেলে ভারতের সাহাপাড়া ক্যাম্পের বিএসএফ তাদের লক্ষ্য করে পর পর দুই রাউন্ড গুলি ছোড়ে, যদিও তখন তারা বাংলাদেশের সীমানায় অবস্থান করছিল। লাকি ও আরিফা দৌড়ে প্রাণরক্ষা করতে সক্ষম হলেও বিএসএফের গুলির নির্মম শিকারে পরিণত হয় মঞ্জুয়ারা। ঘটনার পর বিডিআরের সহযোগিতায় নিহতের পরিবার তার লাশ বাড়ি নিয়ে আসে। ওই দিন রাতে বিএসএফ হঠাত্ বাংলাদেশ সীমান্তের ভেতরে প্যারাসুট বোম ছোড়ে এবং প্যারাসুট বোমের আলোয় সব এলাকা আলোকিত হয়ে উঠলে আতঙ্কে ভন্দুরচরসহ পার্শ্ববর্তী আরও দুটি গ্রামের মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে রাতে ঘরবাড়ি ফেলে চলে যায়। এরপর প্যারাসুট বোমের আলোয় বিএসএফ ব্যাপক গুলিবর্ষণ করে। প্রতিবাদে বিডিআরও গুলিবর্ষণ করে। বিএসএফের গুলিতে নিরপরাধ কিশোরীর নিহত হওয়ার ঘটনায় ভন্দুরচরসহ প্রতিবেশী গ্রামগুলোর মানুষ চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
মানবাধিকার সংগঠন অধিকার ঘটনাটির ব্যাপারে সরেজমিন তথ্যানুসন্ধান করে। তথ্যানুসন্ধানকালে অধিকার কথা বলে—
মঞ্জুয়ারার পরিবার, প্রত্যক্ষদর্শী, স্থানীয় লোকজন, বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে।
আনোয়ার হোসেন মুন্সি, মঞ্জুয়ারার বাবা
মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সঙ্গে আলাপকালে আনোয়ার হোসেন মুন্সি (৫৫) বলেন, ৬ নভেম্বর ২০০৯ সন্ধ্যায় রৌমারী থেকে বাড়ি ফেরার পথে তিনি জানতে পারেন, মঞ্জুয়ারা বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছে এবং বিএসএফ ও বিডিআরের মধ্যে গোলাগুলির কারণে তাদের গ্রামসহ আশপাশের গ্রামগুলোর মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। লোকজন তাকে বাড়ি যেতে নিষেধ করলে তিনি ওই রাতেই আর বাড়ি যাননি। তিনি বলেন, ময়নাতদন্তের পর দিন ৭ নভেম্বর ২০০৯ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রৌমারী থানার পুলিশ মঞ্জুয়ারার লাশ তাদের কাছে ফেরত দেয়। মঞ্জুয়ারার বাবা বলেন, মঞ্জুয়ারার পিঠের ডান দিকে পেছন থেকে একটি গুলি লাগে এবং আরেকটি গুলি তার ডান বাহুতে লাগে। তিনি বলেন, তার মেয়ের লাশ বাংলাদেশ সীমান্তের ভেতরে পড়ে ছিল, যা প্রমাণ করে, সে ভারতীয় সীমানায় প্রবেশ করেনি; অথচ বিএসএফ সদস্যরা তার নিরপরাধ মেয়েটিকে হত্যা করেছে। তিনি এ ঘটনার জন্য দায়ী বিএসএফ সদস্যদের শাস্তি দাবি করেন।
মোসাম্মত্ মিতু, মঞ্জুয়ারার ভাবী, ভন্দুরচর, রৌমারী, কুড়িগ্রাম
মোসাম্মত্ মিতু (২৫) বলেন, ৬ নভেম্বর ২০০৯ সন্ধ্যায় মঞ্জুয়ারা ছাগল আনতে তাদের বাড়ির পাশে সীমান্তবর্তী মাঠে যায়। তিনি বলেন, ওই সময় তার সঙ্গে লাকি ও আরিফা নামে আরও দুই প্রতিবেশী কিশোরী ছিল। মিতু বলেন, সন্ধ্যা ৬টার দিকে তার প্রতিবেশী রেহেনা বেগম (৩০) এসে জানান, সীমান্তবর্তী মাঠে মঞ্জুয়ারা হঠাত্ করে মুখ থুবড়ে পড়ে গেছে; হয়তো বিএসএফ তাকে গুলি করেছে। তিনি বলেন, এর পরপরই ৪ জন বিডিআর সদস্য সেখানে চলে আসেন এবং ঘটনাস্থলের বিপরীতে ভারতীয় সীমান্তে অবস্থানরত বিএসএফ সদস্যদের লক্ষ করে দুই রাউন্ড গুলি করেন। বিডিআর কর্তৃক গুলিবর্ষণের পর বিএসএফ সদস্যরা ওই এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার পর বিডিআররা মঞ্জুয়ারাকে নিয়ে আসতে বললে দু’জন প্রতিবেশীকে সঙ্গে নিয়ে মিতু মাঠে গিয়ে দেখেন, মঞ্জুয়ারা আর বেঁচে নেই। তিনি বলেন, নিহতের পিঠের ডান দিকে একটি গুলি লাগে, যা ভেতরে থেকে যায় এবং আরেকটি গুলি ডান বাহুকে অল্প পরিমাণে আহত করে চলে যায়।
মোঃ বিল্লাল, প্রত্যক্ষদর্শী, ভন্দুরচর, রৌমারী, কুড়িগ্রাম
মোঃ বিল্লাল (১১) অধিকারকে বলেন, ঘটনার সময় সে সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থান করছিল। মঞ্জুয়ারা ও অপর দুই কিশোরী যখন ছাগল আনার জন্য সীমান্ত সংলগ্ন মাঠে যায়, তখন তিনজন বিএসএফ সদস্য পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ছিল। ওই তিন বিএসএফ সদস্যের মধ্যে একজন তিন কিশোরীকে লক্ষ্য করে পরপর দুই রাউন্ড গুলি করে। এ সময় অন্য দুই কিশোরী দৌড়ে আত্মরক্ষা করতে সক্ষম হলেও মঞ্জুয়ারা গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে পড়ে যায়।
নায়েক আবদুল করিম, ইজলামারী সীমান্ত ফাঁড়ি, বাংলাদেশ রাইফেল্স, রৌমারী, কুড়িগ্রাম
নায়েক আবদুল করিম বলেন, ৬ নভেম্বর ২০০৯ সন্ধ্যায় তিনি ৪ সদস্যের একটি টহল দলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে তিনি ভন্দুরচর গ্রামের কাছাকাছি অবস্থানকালে হঠাত্ ভন্দুরচর গ্রামের পাশে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ১০৬৬ মেইন পিলার সংলগ্ন এলাকায় পরপর দুটি গুলির শব্দ শুনতে পান। গুলির শব্দ শুনে তত্ক্ষণাত্ ওই এলাকায় ছুটে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে জানতে পারেন, মঞ্জুয়ারা নামের এক কিশোরী বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়ে মাঠে পড়ে আছে। তখন তারা লক্ষ্য করেন, সীমান্তের ওপারে একটি বিএসএফের গাড়িসহ কয়েকজন বিএসএফ সদস্য দাঁড়িয়ে আছেন। তখন তারা বিএসএফ সদস্যদের লক্ষ্য করে দুই রাউন্ড গুলি করেন এবং মঞ্জুয়ারার লাশ নিয়ে আসতে তার পরিবারকে সহযোগিতা করেন। তিনি আরও বলেন, মঞ্জুয়ারার পিঠের ডান পাশে একটি গুলি বিদ্ধ হয় এবং আরেকটি গুলি ডান বাহুতে সামান্য আঘাত করে চলে যায়। বিডিআর কর্মকর্তা বলেন, পরবর্তীতে তারা নিহতের লাশ রৌমারী থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন।
নায়েক করিম বলেন, ৬ নভেম্বর রাতে বিএসএফ বাংলাদেশ সীমান্তের ভেতরে প্যারাসুট বোমা ছোড়ার পর সব এলাকা আলোকিত হয়ে উঠলে ভন্দুরচরসহ সীমান্তবর্তী এলাকার লোকজন ভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেয়। তিনি বলেন, প্যারাস্যুট বোমা ছোড়ার পর বিএসএফ প্রায় দুশ’ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এর জবাবে বিডিআর প্রায় ১০০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে।
তিনি বলেন, পরদিন ৭ নভেম্বর ২০০৯ সকালে কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে এবং বিকেলে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে বিডিআর-বিএসএফের মধ্যে দুটি পতাকা বৈঠক হয়।
আবুল কালাম আজাদ, কোম্পানি কমান্ডার, রৌমারী কোম্পানি, বাংলাদেশ রাইফেল্স, রৌমারী, কুড়িগ্রাম
বিডিআরের রৌমারী কোম্পানি কমান্ডার আবুল কালাম আজাদ বলেন, কোম্পানি কমান্ডার আজাদ বলেন, বিএসএফ কর্তৃক নিরীহ কিশোরী মঞ্জুয়ারার ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনাটি ১৯৭৫ সালের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
তিনি বলেন, ৭ নভেম্বর ২০০৯ বেলা ১১টা ৪০ মিনিট থেকে ১২টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত অনুষ্ঠিত কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে অনুষ্ঠিত পতাকা বৈঠকে বিডিআরের পক্ষে তিনি এবং বিএসএফের পক্ষে ক্যাপ্টেন ব্রজেস ও ইন্সপেক্টর উদয় কুমার প্রতিনিধিত্ব করেন।
রৌমারী কোম্পানি কমান্ডার বলেন, বৈঠকে ভারতীয় পক্ষ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে এবং তদন্তসাপেক্ষে দায়ী বিএসএফ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেয়। একই সঙ্গে ভারতীয় পক্ষ এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না মর্মে প্রতিশ্রুতি দেয় বলে কোম্পানি কমান্ডার আবুল কালাম আজাদ উল্লেখ করেন।
বিডিআর কর্মকর্তা আজাদ বলেন, বিকালে দ্বিতীয় পতাকা বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় ৬ রাইফেল্স ব্যাটালিয়নের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মিজানুর রহমান এবং ভারতের ১৬২ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের কমান্ডার একে বিদ্যার্থীর মধ্যে। দ্বিতীয় বৈঠকেও বিএসএফ পক্ষ একই ধরনের প্রতিশ্রুতি দেয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।এসআই ফজলুল হক, মঞ্জুয়ারার নিহত হওয়ার ঘটনায় দাখিলকৃত সাধারণ ডায়েরির তদন্তকারী কর্মকর্তা, রৌমারী থানা, কুড়িগ্রাম
এসআই ফজলুল হক বলেন, বিএসএফের গুলিতে মঞ্জুয়ারার নিহত হওয়ার ঘটনায় ৬ নভেম্বর ২০০৯ তারিখে রৌমারী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি হয়, যার নম্বর ১৯৪। তিনি বলেন, ময়নাতদন্তের পর ৭ নভেম্বর ২০০৯ তারিখে মঞ্জুয়ারার লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
মানবাধিকার সংগঠন অধিকার ঘটনাটির ব্যাপারে সরেজমিন তথ্যানুসন্ধান করে। তথ্যানুসন্ধানকালে অধিকার কথা বলে—
মঞ্জুয়ারার পরিবার, প্রত্যক্ষদর্শী, স্থানীয় লোকজন, বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে।
আনোয়ার হোসেন মুন্সি, মঞ্জুয়ারার বাবা
মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সঙ্গে আলাপকালে আনোয়ার হোসেন মুন্সি (৫৫) বলেন, ৬ নভেম্বর ২০০৯ সন্ধ্যায় রৌমারী থেকে বাড়ি ফেরার পথে তিনি জানতে পারেন, মঞ্জুয়ারা বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছে এবং বিএসএফ ও বিডিআরের মধ্যে গোলাগুলির কারণে তাদের গ্রামসহ আশপাশের গ্রামগুলোর মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। লোকজন তাকে বাড়ি যেতে নিষেধ করলে তিনি ওই রাতেই আর বাড়ি যাননি। তিনি বলেন, ময়নাতদন্তের পর দিন ৭ নভেম্বর ২০০৯ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রৌমারী থানার পুলিশ মঞ্জুয়ারার লাশ তাদের কাছে ফেরত দেয়। মঞ্জুয়ারার বাবা বলেন, মঞ্জুয়ারার পিঠের ডান দিকে পেছন থেকে একটি গুলি লাগে এবং আরেকটি গুলি তার ডান বাহুতে লাগে। তিনি বলেন, তার মেয়ের লাশ বাংলাদেশ সীমান্তের ভেতরে পড়ে ছিল, যা প্রমাণ করে, সে ভারতীয় সীমানায় প্রবেশ করেনি; অথচ বিএসএফ সদস্যরা তার নিরপরাধ মেয়েটিকে হত্যা করেছে। তিনি এ ঘটনার জন্য দায়ী বিএসএফ সদস্যদের শাস্তি দাবি করেন।
মোসাম্মত্ মিতু, মঞ্জুয়ারার ভাবী, ভন্দুরচর, রৌমারী, কুড়িগ্রাম
মোসাম্মত্ মিতু (২৫) বলেন, ৬ নভেম্বর ২০০৯ সন্ধ্যায় মঞ্জুয়ারা ছাগল আনতে তাদের বাড়ির পাশে সীমান্তবর্তী মাঠে যায়। তিনি বলেন, ওই সময় তার সঙ্গে লাকি ও আরিফা নামে আরও দুই প্রতিবেশী কিশোরী ছিল। মিতু বলেন, সন্ধ্যা ৬টার দিকে তার প্রতিবেশী রেহেনা বেগম (৩০) এসে জানান, সীমান্তবর্তী মাঠে মঞ্জুয়ারা হঠাত্ করে মুখ থুবড়ে পড়ে গেছে; হয়তো বিএসএফ তাকে গুলি করেছে। তিনি বলেন, এর পরপরই ৪ জন বিডিআর সদস্য সেখানে চলে আসেন এবং ঘটনাস্থলের বিপরীতে ভারতীয় সীমান্তে অবস্থানরত বিএসএফ সদস্যদের লক্ষ করে দুই রাউন্ড গুলি করেন। বিডিআর কর্তৃক গুলিবর্ষণের পর বিএসএফ সদস্যরা ওই এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার পর বিডিআররা মঞ্জুয়ারাকে নিয়ে আসতে বললে দু’জন প্রতিবেশীকে সঙ্গে নিয়ে মিতু মাঠে গিয়ে দেখেন, মঞ্জুয়ারা আর বেঁচে নেই। তিনি বলেন, নিহতের পিঠের ডান দিকে একটি গুলি লাগে, যা ভেতরে থেকে যায় এবং আরেকটি গুলি ডান বাহুকে অল্প পরিমাণে আহত করে চলে যায়।
মোঃ বিল্লাল, প্রত্যক্ষদর্শী, ভন্দুরচর, রৌমারী, কুড়িগ্রাম
মোঃ বিল্লাল (১১) অধিকারকে বলেন, ঘটনার সময় সে সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থান করছিল। মঞ্জুয়ারা ও অপর দুই কিশোরী যখন ছাগল আনার জন্য সীমান্ত সংলগ্ন মাঠে যায়, তখন তিনজন বিএসএফ সদস্য পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ছিল। ওই তিন বিএসএফ সদস্যের মধ্যে একজন তিন কিশোরীকে লক্ষ্য করে পরপর দুই রাউন্ড গুলি করে। এ সময় অন্য দুই কিশোরী দৌড়ে আত্মরক্ষা করতে সক্ষম হলেও মঞ্জুয়ারা গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে পড়ে যায়।
নায়েক আবদুল করিম, ইজলামারী সীমান্ত ফাঁড়ি, বাংলাদেশ রাইফেল্স, রৌমারী, কুড়িগ্রাম
নায়েক আবদুল করিম বলেন, ৬ নভেম্বর ২০০৯ সন্ধ্যায় তিনি ৪ সদস্যের একটি টহল দলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে তিনি ভন্দুরচর গ্রামের কাছাকাছি অবস্থানকালে হঠাত্ ভন্দুরচর গ্রামের পাশে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ১০৬৬ মেইন পিলার সংলগ্ন এলাকায় পরপর দুটি গুলির শব্দ শুনতে পান। গুলির শব্দ শুনে তত্ক্ষণাত্ ওই এলাকায় ছুটে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে জানতে পারেন, মঞ্জুয়ারা নামের এক কিশোরী বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়ে মাঠে পড়ে আছে। তখন তারা লক্ষ্য করেন, সীমান্তের ওপারে একটি বিএসএফের গাড়িসহ কয়েকজন বিএসএফ সদস্য দাঁড়িয়ে আছেন। তখন তারা বিএসএফ সদস্যদের লক্ষ্য করে দুই রাউন্ড গুলি করেন এবং মঞ্জুয়ারার লাশ নিয়ে আসতে তার পরিবারকে সহযোগিতা করেন। তিনি আরও বলেন, মঞ্জুয়ারার পিঠের ডান পাশে একটি গুলি বিদ্ধ হয় এবং আরেকটি গুলি ডান বাহুতে সামান্য আঘাত করে চলে যায়। বিডিআর কর্মকর্তা বলেন, পরবর্তীতে তারা নিহতের লাশ রৌমারী থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন।
নায়েক করিম বলেন, ৬ নভেম্বর রাতে বিএসএফ বাংলাদেশ সীমান্তের ভেতরে প্যারাসুট বোমা ছোড়ার পর সব এলাকা আলোকিত হয়ে উঠলে ভন্দুরচরসহ সীমান্তবর্তী এলাকার লোকজন ভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেয়। তিনি বলেন, প্যারাস্যুট বোমা ছোড়ার পর বিএসএফ প্রায় দুশ’ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এর জবাবে বিডিআর প্রায় ১০০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে।
তিনি বলেন, পরদিন ৭ নভেম্বর ২০০৯ সকালে কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে এবং বিকেলে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে বিডিআর-বিএসএফের মধ্যে দুটি পতাকা বৈঠক হয়।
আবুল কালাম আজাদ, কোম্পানি কমান্ডার, রৌমারী কোম্পানি, বাংলাদেশ রাইফেল্স, রৌমারী, কুড়িগ্রাম
বিডিআরের রৌমারী কোম্পানি কমান্ডার আবুল কালাম আজাদ বলেন, কোম্পানি কমান্ডার আজাদ বলেন, বিএসএফ কর্তৃক নিরীহ কিশোরী মঞ্জুয়ারার ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনাটি ১৯৭৫ সালের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
তিনি বলেন, ৭ নভেম্বর ২০০৯ বেলা ১১টা ৪০ মিনিট থেকে ১২টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত অনুষ্ঠিত কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে অনুষ্ঠিত পতাকা বৈঠকে বিডিআরের পক্ষে তিনি এবং বিএসএফের পক্ষে ক্যাপ্টেন ব্রজেস ও ইন্সপেক্টর উদয় কুমার প্রতিনিধিত্ব করেন।
রৌমারী কোম্পানি কমান্ডার বলেন, বৈঠকে ভারতীয় পক্ষ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে এবং তদন্তসাপেক্ষে দায়ী বিএসএফ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেয়। একই সঙ্গে ভারতীয় পক্ষ এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না মর্মে প্রতিশ্রুতি দেয় বলে কোম্পানি কমান্ডার আবুল কালাম আজাদ উল্লেখ করেন।
বিডিআর কর্মকর্তা আজাদ বলেন, বিকালে দ্বিতীয় পতাকা বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় ৬ রাইফেল্স ব্যাটালিয়নের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মিজানুর রহমান এবং ভারতের ১৬২ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের কমান্ডার একে বিদ্যার্থীর মধ্যে। দ্বিতীয় বৈঠকেও বিএসএফ পক্ষ একই ধরনের প্রতিশ্রুতি দেয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।এসআই ফজলুল হক, মঞ্জুয়ারার নিহত হওয়ার ঘটনায় দাখিলকৃত সাধারণ ডায়েরির তদন্তকারী কর্মকর্তা, রৌমারী থানা, কুড়িগ্রাম
এসআই ফজলুল হক বলেন, বিএসএফের গুলিতে মঞ্জুয়ারার নিহত হওয়ার ঘটনায় ৬ নভেম্বর ২০০৯ তারিখে রৌমারী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি হয়, যার নম্বর ১৯৪। তিনি বলেন, ময়নাতদন্তের পর ৭ নভেম্বর ২০০৯ তারিখে মঞ্জুয়ারার লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
No comments