রাজশাহীতে দুই বছরে পাঁচ লাশ সেপটিক ট্যাংক, ম্যানহোল থেকে উদ্ধার by আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ
রাজশাহী জেলায় গত দুই বছরে সেপটিক ট্যাংক, ম্যানহোল ও নর্দমা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে পাঁচজনের লাশ। তাদের সবাইকে হত্যার পর লাশ ফেলে রাখে দুর্বৃত্তরা। সর্বশেষ গত বুধবার রাজশাহীর শিরোইল মঠপুকুর এলাকার একটি ছাত্রাবাসের সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করা হয় একাদশ শ্রেণীর ছাত্র নাদিমুজ্জামান ওরফে সাদের লাশ। র্যাবের হাতে ধরা পড়ার পর তিন বন্ধু সেপটিক ট্যাংকের ঢাকনা সরিয়ে নাদিমুজ্জামানের লাশ বের করে।
এর কিছুদিন আগে ৯ জানুয়ারি জেলার পুঠিয়া উপজেলার বদোপাড়া গ্রামে গালিবদের (২৪) বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করা হয় চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী প্রার্থনা সরকারের (১০) লাশ।
পুঠিয়া থানার পুলিশ জানিয়েছে, গালিব ও তার বন্ধু রতন কুমার মণ্ডল গত ১১ নভেম্বর প্রার্থনা সরকারকে ধর্ষণের পর হত্যা করে। এরপর শিশুটির কানের স্বর্ণের দুল খুলে তা বিক্রি করে দেয় গালিব। পরে প্রার্থনার লাশ গালিব তাদের বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে লুকিয়ে রাখে। ৮ জানুয়ারি রতনকে গ্রেপ্তারের পর উদ্ঘাটিত হয় প্রার্থনা হত্যাকাণ্ডের রহস্য।
তবে গালিবকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
এভাবে হত্যার পর লাশ সেপটিক ট্যাংকে ফেলে রাখার ব্যাপারে রাজশাহী মহানগর পুলিশের কমিশনার এম ওবায়দুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘যত দূর দেখা যাচ্ছে, এরা পেশাদার খুনি নয়। হয়তো কোনো শত্রুতার কারণে বা মত ও পথের অমিল হওয়ায় পূর্বপরিকল্পনা ছাড়াই খুন করে ফেলেছে। লুকানোর জায়গা না পেয়ে সেপটিক ট্যাংক বা নর্দমাকে তারা নিরাপদ স্থান বলে মনে করছে। তাদের ধারণা, এ রকম জায়গায় লাশ গোপন করলে কেউ খুুঁজে পাবে না।’
রাজশাহীতে হত্যার পর লাশ ম্যানহোলে লুকিয়ে রাখার ঘটনা প্রথম আলোড়ন সৃষ্টি করে ২০০৬ সালে। ওই বছরের ১ ফেব্রুয়ারি রাতে দুর্বৃত্তরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহেরকে হত্যা করে লাশ তাঁর বাসার ম্যানহোলে ফেলে রেখেছিল।
এর চার বছর পর ২০১০ সাল থেকে রাজশাহীতে আবার লাশ ম্যানহোলে ফেলে রাখার প্রবণতা দেখা গেছে। ওই বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীরা সশস্ত্র হামলা চালিয়ে ছাত্রলীগের কর্মী ফারুক হোসেনকে হত্যা করে লাশ ম্যানহোলে লুকিয়ে রাখে। পরের দিন সেখান থেকে ফারুকের লাশ উদ্ধার করা হয়।
ফারুক হত্যা মামলায় ৩৫ জনকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে ২৫ জন উচ্চ আদালতের মাধ্যমে জামিনে রয়েছেন। একজন মারা গেছেন। চারজন পলাতক রয়েছেন। অপর পাঁচ আসামি কারাগারে রয়েছেন। এ ছাড়া মামলার তদন্ত চলার সময় সন্দেহভাজন হিসেবে আরও ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী।
এরপর গত বছরের ২২ এপ্রিল রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ক্যানটিনের পেছনের নর্দমা থেকে মাহবুবুল আলম নামের এক তরুণের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী তাঁর দুই বন্ধু জ্যোতির্ময় সরকার ও সাব্বির হোসেনের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ ওঠে। তাঁদের মধ্যে জ্যোতির্ময় গ্রেপ্তার হয়েছেন। সাব্বির উচ্চ আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন।
গত বছরের ২৩ জুন জেলার মোহনপুর উপজেলার ধোরশা গ্রামের ফারুক হোসেনদের বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে প্রথম শ্রেণীর ছাত্রী সুইটি আক্তারের (৭) বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই দিন সকালে সহপাঠীদের সঙ্গে বিদ্যালয়ে যাচ্ছিল সুইটি। কিন্তু গ্রামের ফারুক (২০) শিশুটির স্বর্ণের দুলের লোভে তাকে হত্যা করেন। খবর পেয়ে ফারুককে গ্রেপ্তার এবং সুইটির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এসব হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে কথা হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মু. আবদুল কাদির ভূঁইয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সাধারণত বলা হয়, হতাশা থেকে মানুষ এ পথে নামে। কিন্তু এই ছেলেরা এখনো সেই পর্যায়ে যায়নি। অবস্থা দেখে মনে হয়, সামগ্রিকভাবে মানবিক মূল্যবোধের চর্চাটা মানুষের মধ্য থেকে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। যে চর্চাটা আগে পরিবার ও সমাজে ছিল।’
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন রাজশাহী মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক আবু মোত্তালেব বাদল প্রথম আলোকে বলেন, ‘এসব ঘটনার সঙ্গে মাদকের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। সেই সঙ্গে রাজশাহীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। যে জন্যই একের পর এক এসব ঘটনা ঘটছে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত এ পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।’
পুঠিয়া থানার পুলিশ জানিয়েছে, গালিব ও তার বন্ধু রতন কুমার মণ্ডল গত ১১ নভেম্বর প্রার্থনা সরকারকে ধর্ষণের পর হত্যা করে। এরপর শিশুটির কানের স্বর্ণের দুল খুলে তা বিক্রি করে দেয় গালিব। পরে প্রার্থনার লাশ গালিব তাদের বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে লুকিয়ে রাখে। ৮ জানুয়ারি রতনকে গ্রেপ্তারের পর উদ্ঘাটিত হয় প্রার্থনা হত্যাকাণ্ডের রহস্য।
তবে গালিবকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
এভাবে হত্যার পর লাশ সেপটিক ট্যাংকে ফেলে রাখার ব্যাপারে রাজশাহী মহানগর পুলিশের কমিশনার এম ওবায়দুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘যত দূর দেখা যাচ্ছে, এরা পেশাদার খুনি নয়। হয়তো কোনো শত্রুতার কারণে বা মত ও পথের অমিল হওয়ায় পূর্বপরিকল্পনা ছাড়াই খুন করে ফেলেছে। লুকানোর জায়গা না পেয়ে সেপটিক ট্যাংক বা নর্দমাকে তারা নিরাপদ স্থান বলে মনে করছে। তাদের ধারণা, এ রকম জায়গায় লাশ গোপন করলে কেউ খুুঁজে পাবে না।’
রাজশাহীতে হত্যার পর লাশ ম্যানহোলে লুকিয়ে রাখার ঘটনা প্রথম আলোড়ন সৃষ্টি করে ২০০৬ সালে। ওই বছরের ১ ফেব্রুয়ারি রাতে দুর্বৃত্তরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহেরকে হত্যা করে লাশ তাঁর বাসার ম্যানহোলে ফেলে রেখেছিল।
এর চার বছর পর ২০১০ সাল থেকে রাজশাহীতে আবার লাশ ম্যানহোলে ফেলে রাখার প্রবণতা দেখা গেছে। ওই বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীরা সশস্ত্র হামলা চালিয়ে ছাত্রলীগের কর্মী ফারুক হোসেনকে হত্যা করে লাশ ম্যানহোলে লুকিয়ে রাখে। পরের দিন সেখান থেকে ফারুকের লাশ উদ্ধার করা হয়।
ফারুক হত্যা মামলায় ৩৫ জনকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে ২৫ জন উচ্চ আদালতের মাধ্যমে জামিনে রয়েছেন। একজন মারা গেছেন। চারজন পলাতক রয়েছেন। অপর পাঁচ আসামি কারাগারে রয়েছেন। এ ছাড়া মামলার তদন্ত চলার সময় সন্দেহভাজন হিসেবে আরও ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী।
এরপর গত বছরের ২২ এপ্রিল রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ক্যানটিনের পেছনের নর্দমা থেকে মাহবুবুল আলম নামের এক তরুণের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী তাঁর দুই বন্ধু জ্যোতির্ময় সরকার ও সাব্বির হোসেনের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ ওঠে। তাঁদের মধ্যে জ্যোতির্ময় গ্রেপ্তার হয়েছেন। সাব্বির উচ্চ আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন।
গত বছরের ২৩ জুন জেলার মোহনপুর উপজেলার ধোরশা গ্রামের ফারুক হোসেনদের বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে প্রথম শ্রেণীর ছাত্রী সুইটি আক্তারের (৭) বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই দিন সকালে সহপাঠীদের সঙ্গে বিদ্যালয়ে যাচ্ছিল সুইটি। কিন্তু গ্রামের ফারুক (২০) শিশুটির স্বর্ণের দুলের লোভে তাকে হত্যা করেন। খবর পেয়ে ফারুককে গ্রেপ্তার এবং সুইটির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এসব হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে কথা হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মু. আবদুল কাদির ভূঁইয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সাধারণত বলা হয়, হতাশা থেকে মানুষ এ পথে নামে। কিন্তু এই ছেলেরা এখনো সেই পর্যায়ে যায়নি। অবস্থা দেখে মনে হয়, সামগ্রিকভাবে মানবিক মূল্যবোধের চর্চাটা মানুষের মধ্য থেকে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। যে চর্চাটা আগে পরিবার ও সমাজে ছিল।’
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন রাজশাহী মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক আবু মোত্তালেব বাদল প্রথম আলোকে বলেন, ‘এসব ঘটনার সঙ্গে মাদকের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। সেই সঙ্গে রাজশাহীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। যে জন্যই একের পর এক এসব ঘটনা ঘটছে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত এ পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।’
No comments