খনিজ সম্পদ-লংমার্চে জাতীয়স্বার্থের পক্ষে জনস্রোত by আনু মুহাম্মদ
‘ভোট দিছি, দ্যাশ তো দেই নাই’—লংমার্চের এক তরুণ সহযাত্রী মিজানকে স্পষ্ট করে জানালেন নেত্রকোনার এক কৃষক। লিফলেট বিলি করতে করতে আনহা শোনেন গাজীপুরের মজুরের কথা, ‘প্যাটে ভাত থাকলে আমরাও যাইতাম। আপনারা হাঁটেন, ভাইবেন না আমরা নাই।
’ নাট্যকর্মী শাহেদকে ধরমপাশার নারী জমায়েত বলে, ‘দেখি, এদিকে কারা আমাদের জিনিস কাইড়্যা নিতে আসে।’ ত্রিশালে চায়ের ছোট্ট দোকানে বৃদ্ধ-তরুণ কয়েকজনের তর্ক-বিতর্ক হয় আমাদের আন্দোলনের ন্যায্যতা নিয়ে নয়, একে আরও কীভাবে শক্তিশালী করা যায়, তা নিয়ে। শম্ভুগঞ্জে বাসস্ট্যান্ডের পাশে পথসভা থেকে একটু দূরে কাজের ভিড়ের মধ্য থেকেই আরেকজনের কথার পিঠে শ্রমিকদের একজন বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় কি কোনো দল দেইখ্যা মানুষ গেছে? এই সংগ্রামেও দল নিয়া চিন্তার দরকার নাই।’
ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে টঙ্গী, গাজীপুর, মাওনা, ভালুকা, মাস্টারবাড়ী, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ, শম্ভুগঞ্জ, শ্যামগঞ্জ, নেত্রকোনা, মোহনগঞ্জ হয়ে সুনামগঞ্জের বাদশাগঞ্জ পর্যন্ত চার দিনের গণযাত্রা বা লংমার্চের মূল চালিকাশক্তি ছিল নিজের জমিনের ওপর নিজের হারানো মালিকানা প্রতিষ্ঠার তাগিদ। সংবিধান বলে, দেশের মালিক জনগণ। কিন্তু জনগণের অবস্থা হলো দলিলে আছে, দখলে নাই জমির মালিকের মতো। সেই মালিকের মধ্যে যদি মালিকানার বোধ আসে, যদি দখলদারদের সে চিহ্নিত করতে পারে, যদি সে তার অন্তর্গত শক্তির সন্ধান পায়, তবে কে তাকে ঠেকাতে পারে? সুতরাং শরীর ও আত্মার লড়াই হলো নিজের জমি, অর্থাৎ দেশকে দখলমুক্ত করা, হীনম্মন্যতা ও দাসত্ব থেকে নিজেকে মুক্ত করা।
এই লংমার্চে যতজন অংশ নিতে আগ্রহী ছিলেন, তার খুব কম অংশকেই আমরা নিতে পেরেছি। তার পরও অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা হাজার অতিক্রম করেছে, যাঁদেরবেশির ভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠ তরুণ। ছিলেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক, শ্রমিক, কৃষক, বেকার, আইনজীবী, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, লেখক, শিল্পী, সাংবাদিক, ব্লগার নারী-পুরুষ। আমাদের আর্থিক সামর্থ্য জনগণের মতোই, সীমিত; আমাদের আছে তথ্য, যুক্তি, নৈতিক শক্তি আর জনগণের সমর্থন। যাঁরা গেছেন, তাঁরা চাঁদা দিয়ে গেছেন। স্থানে স্থানে আমাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন স্থানীয় সংগঠকেরা। ব্যয়ভার বহন করেছেন স্থানীয় জনগণ। কৃষক, কুলি, জেলে, পরিবহন-শ্রমিকসহ স্বল্প আয়ের মানুষের অংশগ্রহণও কম ছিল না।
জনবহুল শহর-উপশহর দিয়ে আমরা হেঁটেছি, জনবিরল স্থানগুলো পার হয়েছি বাসে। পথে পথে সভা, শহরগুলোতে জনসভা, মানুষের গান, পথনাটকও প্রদর্শনী হয়েছে। যখন হেঁটেছি, তখন ছুটে ছুটে ছেলেমেয়েরা প্রচারপত্র বিতরণ করেছেন, কথা বলেছেন মানুষের সঙ্গে। চার দিনের এই দীর্ঘযাত্রায় অসংখ্য মানুষ আমাদের দাবিনামার সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন, পরামর্শ দিয়েছেন। আমরা সমৃদ্ধ হয়েছি, মানুষের মধ্যে আশার আলো দেখে নিজেরা আলোকিত হয়েছি।
কেন সুনেত্রমুখী এই লংমার্চ বা গণযাত্রা? সংক্ষেপে বলি। গত বছর সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলা দুটির সীমানা ধরে বিরাট গ্যাস মজুদ ধারণক্ষম একটি ভূতাত্ত্বিক কাঠামো চিহ্নিত করে বাংলাদেশের জাতীয় সংস্থা বাপেক্স। দুই জেলার নামের অংশ নিয়ে এই গ্যাসক্ষেত্রের নাম দেওয়া হয় ‘সুনেত্র’। সুনেত্র গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করার পরপরই গ্যাসক্ষেত্র উন্নয়ন করার জন্য বাপেক্স চার বছরের একটি পরিকল্পনা জমা দেয়। এ প্রস্তাবনা অনুযায়ী, জুন ২০১০ থেকে জুন ২০১৪ পর্যন্ত এই কাজ শেষ করতে ব্যয় ধরা হয় মাত্র ২৭৯ কোটি টাকা। এই একই কাজ বিদেশের কোম্পানি করে প্রায় ১০ গুণ বেশি খরচে, যা আবার তুলে নেয় বাংলাদেশের কাছ থেকেই।
স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে বাংলাদেশের জাতীয় সংস্থাগুলো যথেষ্ট দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছে। জাতীয় সক্ষমতা বিকাশের পক্ষে আন্দোলন ও জনমত বিকশিত হওয়ায় সরকার বাধ্য হয়েছে বাপেক্সকে কিছু সুযোগ দিতে। ফলে কিছুদিন আগেই বাপেক্সের একটি তরুণ বিশেষজ্ঞ দল হবিগঞ্জের রশিদপুরে আন্তর্জাতিক মানের থ্রিডি সিসমিক সার্ভের কাজ সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন করেছে, সেখানেও একটি বড় গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। প্রমাণিত হয়েছে, সুযোগ ও আর্থিক বরাদ্দের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা না হলে জাতীয় সক্ষমতা আরও বিকশিত হতো; বাপেক্স ভারত, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা অর্জন করত। বহুদিন থেকেই বাপেক্স বা জাতীয় প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা এবং তাদের পরিশ্রমলব্ধ তথ্যাদি বিদেশি কোম্পানির স্বার্থে করা হচ্ছে। সাব-কন্ট্রাক্টর হিসেবে জাতীয় প্রতিষ্ঠানকে আটকে রেখে, তার কাজের চাপকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে সম্পদ তুলে দেওয়ার ইচ্ছা অন্যের হাতে।
‘সুনেত্র’, ‘রশিদপুর’ গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে জাতীয় সংস্থার মাধ্যমে অবিলম্বে গ্যাস উত্তোলন ছিল আমাদের লংমার্চের অন্যতম দাবি। সে অনুযায়ী কাজ শুরু করলে: ১. অচিরেই দেশ গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকট থেকে মুক্ত হবে, ২. নিজেদের দেশের গ্যাস তুলতে বা কিনতে গিয়ে আর্থিক চাপে পড়তে হবে না, ৩. মাগুরছড়া বা টেংরাটিলার মতো ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের আশঙ্কা থাকবে না, ৪. অনেক কম দামে ও নিশ্চিতভাবে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হবে, ৫. গ্যাস ও বিদ্যুতের অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধির নতুন চাপ তৈরি হবে না, ৬. অঞ্চলগুলোতে এই গ্যাস ব্যবহারের মধ্য দিয়ে শিল্প ও কৃষিক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে, ৭. বিদ্যুৎ উৎপাদনে এ অঞ্চল অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করতে সক্ষম হবে, ৮. কর্মসংস্থানের সুযোগ সম্প্রসারিত হবে।
আমাদের উদ্বেগ এই কারণে যে এত সব সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বাপেক্সের প্রকল্প পুঁজির অভাব দেখিয়ে এখনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি। অথচ পেট্রোবাংলার কাছে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে গঠিত গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের এক হাজার ২০০ কোটি টাকা অলস পড়ে আছে। পাশাপাশি এই বিশাল গ্যাসক্ষেত্র জয়েন্ট ভেঞ্চার বা পিপিপির মাধ্যমে বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার ফাইল নড়ছে, একই উদ্দেশ্যে ‘পিএসসি ২০১১’ করারও প্রক্রিয়া চলছে।
আমরা যখন লংমার্চে, তখন সরকারের পক্ষ থেকে কেউ কেউ বলেছেন, বিদেশি কোম্পানিকে যুক্ত করলে অসুবিধার কিছু নেই। তাঁদের অসুবিধা নেই, অসুবিধা জনগণের। ১৯৯৩-৯৪ থেকে শুরু করে স্থলভাগে ও অগভীর সমুদ্রে সম্পাদিত বিভিন্ন তেল-গ্যাস চুক্তির কারণে এরই মধ্যে আমরা অপরিমেয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। গত সাত বছরে বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে গ্যাস কেনা হয়েছে ১৬ হাজার কোটি টাকায়। এই একই পরিমাণ গ্যাস বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানকে উত্তোলনের সুযোগ দিলে খরচ পড়ত মাত্র দুই হাজার কোটি টাকা। এই ১৪ হাজার কোটি টাকা জনগণের শিক্ষা, চিকিৎসাও বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় অনেক ভূমিকা পালন করতে পারত। কিন্তু এই টাকা ডলারে রূপান্তরিত হয়ে দেশত্যাগ করেছে, ডলারের ওপর চাপ বেড়েছে। মার্কিন ও কানাডীয় কোম্পানি মাগুরছড়া-টেংরাটিলায় আমাদের ৫০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস নষ্ট করেছে। এই পরিমাণ গ্যাস দিয়ে পুরো বাংলাদেশের প্রায় দুই বছরের বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব ছিল। এই ক্ষতিপূরণের ৪০ হাজার কোটি টাকা উদ্ধারের উদ্যোগ নেয়নি কোনো সরকার।
এসব চুক্তির জন্য ভর্তুকির টাকার জোগান দিতে গিয়ে জাতীয় ঋণের বোঝা বাড়ছে; বাড়ছে করের বোঝা। আবার ভর্তুকির চাপ কমাতে গিয়ে উপর্যুপরি গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে। এর ফলে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে, নতুন করে দারিদ্র্য বাড়ছে। শিল্প ও কৃষি উৎপাদন বিপর্যস্ত হচ্ছে।
লংমার্চের অন্যতম স্লোগান ছিল, ‘আমার মাটি আমার মা, নাইজেরিয়া হবে না’। কেন নাইজেরিয়া? নাইজেরিয়া বিশ্বের অন্যতম সম্পদশালী দেশ। তাদের গ্যাসের মজুদ বাংলাদেশের বর্তমান মজুদের ১০ গুণ; উপরন্তু তাদের তেলের মজুদ আফ্রিকার মধ্যে শীর্ষস্থানে। যে কাজগুলো করলে উন্নয়ন হবে বলে আমাদের সব সময় শোনানো হয়, সেগুলো হলো: বিদেশি কোম্পানির মাধ্যমে গ্যাস-তেল উত্তোলন, বিদেশি বিনিয়োগ এবং তেল-গ্যাস রপ্তানি। তার সবই নাইজেরিয়া করেছে। এসব করে নাইজেরিয়া এখন বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ। বিদ্যুতের সংকট ভয়াবহ, দারিদ্র্য আগের চেয়ে বেশি, জাতীয় আয় আশির দশকের তুলনায় কমে গেছে, শিক্ষা-চিকিৎসার জন্য টাকা নেই। তৈরি হয়েছে বিশাল কিছু ধনী।
অথচ এসব যুক্তি দেখিয়েই জ্বালানি খাতে বহুজাতিক কোম্পানি আনার প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। গত ১৬ জুন মার্কিন কোম্পানি কনোকোফিলিপসের সঙ্গে শতভাগ গ্যাস রপ্তানির বিধান ও ৮০ শতাংশ কোম্পানির মালিকানার সুযোগ রেখে চুক্তি করা হয়েছে। দুর্ঘটনার রাজা হিসেবে কুখ্যাত কনোকোফিলিপসের সঙ্গে করা এই চুক্তি বাংলাদেশের জ্বালানি যেমন, তেমনি জাতীয় নিরাপত্তাকেও হুমকির মুখে ফেলেছে। বাংলাদেশের জনগণকে দারিদ্র্যের মধ্যে আটকে রেখে শিল্প-কৃষি অচল করে, বিদ্যুতের সংকট টিকিয়ে রেখে গ্যাস বা কয়লা রপ্তানিমুখী কোনো চুক্তি কে মানতে পারে? সে জন্যই পথে পথে এই চুক্তির বিরুদ্ধে প্রবল জনমত দেখেছি।
আমরা যেদিন লংমার্চ শুরু করি, তার এক দিন আগে জ্বালানিবিষয়ক সংসদীয় কমিটি উন্মুক্ত খনির পক্ষে সুপারিশ পেশ করে। একদিকে সরকার থেকে বারবার বলা হচ্ছে, কয়লানীতি চূড়ান্ত করার আগে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নয়, অন্যদিকে জার্মানি সফর করে তার ভিত্তিতেই উন্মুক্ত খনির পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছে সংসদীয় কমিটি। লংমার্চের অন্যতম দাবিই ছিল, উন্মুক্ত খনন নিষিদ্ধ, এশিয়া এনার্জির বহিষ্কারসহ ফুলবাড়ীর ছয় দফা চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন। স্বাধীন বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ থেকেই আমাদের এ সিদ্ধান্ত এসেছে। আর সংসদীয় কমিটির সিদ্ধান্ত আসছে কোথা থেকে? উইকিলিকস জানাচ্ছে, তাদের সিদ্ধান্ত আসছে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের হুকুম আর বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানির তদবির থেকে। উন্মুক্ত খনি হলে ৯০ শতাংশ কয়লা ওঠে ঠিক। কিন্তু কার মালিকানায় এই কয়লা উঠবে? ছয় শতাংশ রয়্যালটি বাদে বাকি কয়লা যদি বিদেশি কোম্পানির মালিকানায় যায়, যদি ৮০ শতাংশ রপ্তানি হয়, যদি বাকি ১৪ শতাংশ তাদের কাছ থেকে আন্তর্জাতিক দামে কিনতে হয়—তাহলে যত বেশি কয়লা উঠবে, ততই তো বাংলাদেশের ক্ষতি। উপরন্তু এ পদ্ধতিতে কয়লা তুললে ১০০ টাকার কয়লা ওঠাতে ৫০০ টাকার ক্ষতি—আবাদি জমি, পানি আর মানুষের।
লংমার্চে এ কথাটাই বারবার এসেছে যে সরকার যখন জনগণের সম্পদ অন্যের হাতে তুলে দেয়, তখন দেশ ও দেশের সম্পদ বাঁচাতে জনগণকেই পাহারাদারের ভূমিকা নিতে হয়। সেই ডাক দিয়েই এই লংমার্চ পথে পথে জনগণের সমর্থন নিয়ে ৩১ অক্টোবর শেষ হয়েছে। ওই দিন ‘সুনেত্র ঘোষণা’য় বলা হয়েছে যে জনগণ ফুলবাড়ীর মতো নেত্রকোনা-সুনামগঞ্জ রশিদপুর অঞ্চলকে দুর্ভেদ্য দুর্গ হিসেবে গড়ে তুলবে, যাতে কোনো বিদেশি কোম্পানি জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন করতে আসতে না পারে।
মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা পদদলিত করে ৪০ বছরে দেশে চোরাই টাকার রাজনীতি ও অর্থনীতির দাপট তৈরি হয়েছে। সামরিক বা বেসামরিক আর দ্বিজোটীয় পালাবদলে কমিশনভোগী দখলদারদের মুখই কেবল বদল হয়েছে, জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতার ছেদ ঘটেনি। তারা জনগণের জীবন ও সম্পদ বিপন্ন করেই ক্ষান্ত হয়নি, বাংলাদেশে কমিশনভোগী ও দেশি-বিদেশি দখলদারদের স্থায়ী দখলিস্বত্ব প্রতিষ্ঠার প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়েছে। লংমার্চ থেকে বারবার উচ্চারিত হয়েছে যে এসব দল দেশি-বিদেশি লুটেরা ও সাম্রাজ্যবাদের কাছে মুচলেকা দিতে পারে; কিন্তু জনগণ দাসত্বের মুচলেকা দেয়নি, দেবেও না।
আনু মুহাম্মদ: অর্থনীতিবিদ ও অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে টঙ্গী, গাজীপুর, মাওনা, ভালুকা, মাস্টারবাড়ী, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ, শম্ভুগঞ্জ, শ্যামগঞ্জ, নেত্রকোনা, মোহনগঞ্জ হয়ে সুনামগঞ্জের বাদশাগঞ্জ পর্যন্ত চার দিনের গণযাত্রা বা লংমার্চের মূল চালিকাশক্তি ছিল নিজের জমিনের ওপর নিজের হারানো মালিকানা প্রতিষ্ঠার তাগিদ। সংবিধান বলে, দেশের মালিক জনগণ। কিন্তু জনগণের অবস্থা হলো দলিলে আছে, দখলে নাই জমির মালিকের মতো। সেই মালিকের মধ্যে যদি মালিকানার বোধ আসে, যদি দখলদারদের সে চিহ্নিত করতে পারে, যদি সে তার অন্তর্গত শক্তির সন্ধান পায়, তবে কে তাকে ঠেকাতে পারে? সুতরাং শরীর ও আত্মার লড়াই হলো নিজের জমি, অর্থাৎ দেশকে দখলমুক্ত করা, হীনম্মন্যতা ও দাসত্ব থেকে নিজেকে মুক্ত করা।
এই লংমার্চে যতজন অংশ নিতে আগ্রহী ছিলেন, তার খুব কম অংশকেই আমরা নিতে পেরেছি। তার পরও অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা হাজার অতিক্রম করেছে, যাঁদেরবেশির ভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠ তরুণ। ছিলেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক, শ্রমিক, কৃষক, বেকার, আইনজীবী, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, লেখক, শিল্পী, সাংবাদিক, ব্লগার নারী-পুরুষ। আমাদের আর্থিক সামর্থ্য জনগণের মতোই, সীমিত; আমাদের আছে তথ্য, যুক্তি, নৈতিক শক্তি আর জনগণের সমর্থন। যাঁরা গেছেন, তাঁরা চাঁদা দিয়ে গেছেন। স্থানে স্থানে আমাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন স্থানীয় সংগঠকেরা। ব্যয়ভার বহন করেছেন স্থানীয় জনগণ। কৃষক, কুলি, জেলে, পরিবহন-শ্রমিকসহ স্বল্প আয়ের মানুষের অংশগ্রহণও কম ছিল না।
জনবহুল শহর-উপশহর দিয়ে আমরা হেঁটেছি, জনবিরল স্থানগুলো পার হয়েছি বাসে। পথে পথে সভা, শহরগুলোতে জনসভা, মানুষের গান, পথনাটকও প্রদর্শনী হয়েছে। যখন হেঁটেছি, তখন ছুটে ছুটে ছেলেমেয়েরা প্রচারপত্র বিতরণ করেছেন, কথা বলেছেন মানুষের সঙ্গে। চার দিনের এই দীর্ঘযাত্রায় অসংখ্য মানুষ আমাদের দাবিনামার সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন, পরামর্শ দিয়েছেন। আমরা সমৃদ্ধ হয়েছি, মানুষের মধ্যে আশার আলো দেখে নিজেরা আলোকিত হয়েছি।
কেন সুনেত্রমুখী এই লংমার্চ বা গণযাত্রা? সংক্ষেপে বলি। গত বছর সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলা দুটির সীমানা ধরে বিরাট গ্যাস মজুদ ধারণক্ষম একটি ভূতাত্ত্বিক কাঠামো চিহ্নিত করে বাংলাদেশের জাতীয় সংস্থা বাপেক্স। দুই জেলার নামের অংশ নিয়ে এই গ্যাসক্ষেত্রের নাম দেওয়া হয় ‘সুনেত্র’। সুনেত্র গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করার পরপরই গ্যাসক্ষেত্র উন্নয়ন করার জন্য বাপেক্স চার বছরের একটি পরিকল্পনা জমা দেয়। এ প্রস্তাবনা অনুযায়ী, জুন ২০১০ থেকে জুন ২০১৪ পর্যন্ত এই কাজ শেষ করতে ব্যয় ধরা হয় মাত্র ২৭৯ কোটি টাকা। এই একই কাজ বিদেশের কোম্পানি করে প্রায় ১০ গুণ বেশি খরচে, যা আবার তুলে নেয় বাংলাদেশের কাছ থেকেই।
স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে বাংলাদেশের জাতীয় সংস্থাগুলো যথেষ্ট দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছে। জাতীয় সক্ষমতা বিকাশের পক্ষে আন্দোলন ও জনমত বিকশিত হওয়ায় সরকার বাধ্য হয়েছে বাপেক্সকে কিছু সুযোগ দিতে। ফলে কিছুদিন আগেই বাপেক্সের একটি তরুণ বিশেষজ্ঞ দল হবিগঞ্জের রশিদপুরে আন্তর্জাতিক মানের থ্রিডি সিসমিক সার্ভের কাজ সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন করেছে, সেখানেও একটি বড় গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। প্রমাণিত হয়েছে, সুযোগ ও আর্থিক বরাদ্দের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা না হলে জাতীয় সক্ষমতা আরও বিকশিত হতো; বাপেক্স ভারত, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা অর্জন করত। বহুদিন থেকেই বাপেক্স বা জাতীয় প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা এবং তাদের পরিশ্রমলব্ধ তথ্যাদি বিদেশি কোম্পানির স্বার্থে করা হচ্ছে। সাব-কন্ট্রাক্টর হিসেবে জাতীয় প্রতিষ্ঠানকে আটকে রেখে, তার কাজের চাপকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে সম্পদ তুলে দেওয়ার ইচ্ছা অন্যের হাতে।
‘সুনেত্র’, ‘রশিদপুর’ গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে জাতীয় সংস্থার মাধ্যমে অবিলম্বে গ্যাস উত্তোলন ছিল আমাদের লংমার্চের অন্যতম দাবি। সে অনুযায়ী কাজ শুরু করলে: ১. অচিরেই দেশ গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকট থেকে মুক্ত হবে, ২. নিজেদের দেশের গ্যাস তুলতে বা কিনতে গিয়ে আর্থিক চাপে পড়তে হবে না, ৩. মাগুরছড়া বা টেংরাটিলার মতো ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের আশঙ্কা থাকবে না, ৪. অনেক কম দামে ও নিশ্চিতভাবে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হবে, ৫. গ্যাস ও বিদ্যুতের অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধির নতুন চাপ তৈরি হবে না, ৬. অঞ্চলগুলোতে এই গ্যাস ব্যবহারের মধ্য দিয়ে শিল্প ও কৃষিক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে, ৭. বিদ্যুৎ উৎপাদনে এ অঞ্চল অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করতে সক্ষম হবে, ৮. কর্মসংস্থানের সুযোগ সম্প্রসারিত হবে।
আমাদের উদ্বেগ এই কারণে যে এত সব সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বাপেক্সের প্রকল্প পুঁজির অভাব দেখিয়ে এখনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি। অথচ পেট্রোবাংলার কাছে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে গঠিত গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের এক হাজার ২০০ কোটি টাকা অলস পড়ে আছে। পাশাপাশি এই বিশাল গ্যাসক্ষেত্র জয়েন্ট ভেঞ্চার বা পিপিপির মাধ্যমে বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার ফাইল নড়ছে, একই উদ্দেশ্যে ‘পিএসসি ২০১১’ করারও প্রক্রিয়া চলছে।
আমরা যখন লংমার্চে, তখন সরকারের পক্ষ থেকে কেউ কেউ বলেছেন, বিদেশি কোম্পানিকে যুক্ত করলে অসুবিধার কিছু নেই। তাঁদের অসুবিধা নেই, অসুবিধা জনগণের। ১৯৯৩-৯৪ থেকে শুরু করে স্থলভাগে ও অগভীর সমুদ্রে সম্পাদিত বিভিন্ন তেল-গ্যাস চুক্তির কারণে এরই মধ্যে আমরা অপরিমেয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। গত সাত বছরে বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে গ্যাস কেনা হয়েছে ১৬ হাজার কোটি টাকায়। এই একই পরিমাণ গ্যাস বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানকে উত্তোলনের সুযোগ দিলে খরচ পড়ত মাত্র দুই হাজার কোটি টাকা। এই ১৪ হাজার কোটি টাকা জনগণের শিক্ষা, চিকিৎসাও বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় অনেক ভূমিকা পালন করতে পারত। কিন্তু এই টাকা ডলারে রূপান্তরিত হয়ে দেশত্যাগ করেছে, ডলারের ওপর চাপ বেড়েছে। মার্কিন ও কানাডীয় কোম্পানি মাগুরছড়া-টেংরাটিলায় আমাদের ৫০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস নষ্ট করেছে। এই পরিমাণ গ্যাস দিয়ে পুরো বাংলাদেশের প্রায় দুই বছরের বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব ছিল। এই ক্ষতিপূরণের ৪০ হাজার কোটি টাকা উদ্ধারের উদ্যোগ নেয়নি কোনো সরকার।
এসব চুক্তির জন্য ভর্তুকির টাকার জোগান দিতে গিয়ে জাতীয় ঋণের বোঝা বাড়ছে; বাড়ছে করের বোঝা। আবার ভর্তুকির চাপ কমাতে গিয়ে উপর্যুপরি গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে। এর ফলে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে, নতুন করে দারিদ্র্য বাড়ছে। শিল্প ও কৃষি উৎপাদন বিপর্যস্ত হচ্ছে।
লংমার্চের অন্যতম স্লোগান ছিল, ‘আমার মাটি আমার মা, নাইজেরিয়া হবে না’। কেন নাইজেরিয়া? নাইজেরিয়া বিশ্বের অন্যতম সম্পদশালী দেশ। তাদের গ্যাসের মজুদ বাংলাদেশের বর্তমান মজুদের ১০ গুণ; উপরন্তু তাদের তেলের মজুদ আফ্রিকার মধ্যে শীর্ষস্থানে। যে কাজগুলো করলে উন্নয়ন হবে বলে আমাদের সব সময় শোনানো হয়, সেগুলো হলো: বিদেশি কোম্পানির মাধ্যমে গ্যাস-তেল উত্তোলন, বিদেশি বিনিয়োগ এবং তেল-গ্যাস রপ্তানি। তার সবই নাইজেরিয়া করেছে। এসব করে নাইজেরিয়া এখন বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ। বিদ্যুতের সংকট ভয়াবহ, দারিদ্র্য আগের চেয়ে বেশি, জাতীয় আয় আশির দশকের তুলনায় কমে গেছে, শিক্ষা-চিকিৎসার জন্য টাকা নেই। তৈরি হয়েছে বিশাল কিছু ধনী।
অথচ এসব যুক্তি দেখিয়েই জ্বালানি খাতে বহুজাতিক কোম্পানি আনার প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। গত ১৬ জুন মার্কিন কোম্পানি কনোকোফিলিপসের সঙ্গে শতভাগ গ্যাস রপ্তানির বিধান ও ৮০ শতাংশ কোম্পানির মালিকানার সুযোগ রেখে চুক্তি করা হয়েছে। দুর্ঘটনার রাজা হিসেবে কুখ্যাত কনোকোফিলিপসের সঙ্গে করা এই চুক্তি বাংলাদেশের জ্বালানি যেমন, তেমনি জাতীয় নিরাপত্তাকেও হুমকির মুখে ফেলেছে। বাংলাদেশের জনগণকে দারিদ্র্যের মধ্যে আটকে রেখে শিল্প-কৃষি অচল করে, বিদ্যুতের সংকট টিকিয়ে রেখে গ্যাস বা কয়লা রপ্তানিমুখী কোনো চুক্তি কে মানতে পারে? সে জন্যই পথে পথে এই চুক্তির বিরুদ্ধে প্রবল জনমত দেখেছি।
আমরা যেদিন লংমার্চ শুরু করি, তার এক দিন আগে জ্বালানিবিষয়ক সংসদীয় কমিটি উন্মুক্ত খনির পক্ষে সুপারিশ পেশ করে। একদিকে সরকার থেকে বারবার বলা হচ্ছে, কয়লানীতি চূড়ান্ত করার আগে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নয়, অন্যদিকে জার্মানি সফর করে তার ভিত্তিতেই উন্মুক্ত খনির পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছে সংসদীয় কমিটি। লংমার্চের অন্যতম দাবিই ছিল, উন্মুক্ত খনন নিষিদ্ধ, এশিয়া এনার্জির বহিষ্কারসহ ফুলবাড়ীর ছয় দফা চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন। স্বাধীন বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ থেকেই আমাদের এ সিদ্ধান্ত এসেছে। আর সংসদীয় কমিটির সিদ্ধান্ত আসছে কোথা থেকে? উইকিলিকস জানাচ্ছে, তাদের সিদ্ধান্ত আসছে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের হুকুম আর বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানির তদবির থেকে। উন্মুক্ত খনি হলে ৯০ শতাংশ কয়লা ওঠে ঠিক। কিন্তু কার মালিকানায় এই কয়লা উঠবে? ছয় শতাংশ রয়্যালটি বাদে বাকি কয়লা যদি বিদেশি কোম্পানির মালিকানায় যায়, যদি ৮০ শতাংশ রপ্তানি হয়, যদি বাকি ১৪ শতাংশ তাদের কাছ থেকে আন্তর্জাতিক দামে কিনতে হয়—তাহলে যত বেশি কয়লা উঠবে, ততই তো বাংলাদেশের ক্ষতি। উপরন্তু এ পদ্ধতিতে কয়লা তুললে ১০০ টাকার কয়লা ওঠাতে ৫০০ টাকার ক্ষতি—আবাদি জমি, পানি আর মানুষের।
লংমার্চে এ কথাটাই বারবার এসেছে যে সরকার যখন জনগণের সম্পদ অন্যের হাতে তুলে দেয়, তখন দেশ ও দেশের সম্পদ বাঁচাতে জনগণকেই পাহারাদারের ভূমিকা নিতে হয়। সেই ডাক দিয়েই এই লংমার্চ পথে পথে জনগণের সমর্থন নিয়ে ৩১ অক্টোবর শেষ হয়েছে। ওই দিন ‘সুনেত্র ঘোষণা’য় বলা হয়েছে যে জনগণ ফুলবাড়ীর মতো নেত্রকোনা-সুনামগঞ্জ রশিদপুর অঞ্চলকে দুর্ভেদ্য দুর্গ হিসেবে গড়ে তুলবে, যাতে কোনো বিদেশি কোম্পানি জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন করতে আসতে না পারে।
মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা পদদলিত করে ৪০ বছরে দেশে চোরাই টাকার রাজনীতি ও অর্থনীতির দাপট তৈরি হয়েছে। সামরিক বা বেসামরিক আর দ্বিজোটীয় পালাবদলে কমিশনভোগী দখলদারদের মুখই কেবল বদল হয়েছে, জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতার ছেদ ঘটেনি। তারা জনগণের জীবন ও সম্পদ বিপন্ন করেই ক্ষান্ত হয়নি, বাংলাদেশে কমিশনভোগী ও দেশি-বিদেশি দখলদারদের স্থায়ী দখলিস্বত্ব প্রতিষ্ঠার প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়েছে। লংমার্চ থেকে বারবার উচ্চারিত হয়েছে যে এসব দল দেশি-বিদেশি লুটেরা ও সাম্রাজ্যবাদের কাছে মুচলেকা দিতে পারে; কিন্তু জনগণ দাসত্বের মুচলেকা দেয়নি, দেবেও না।
আনু মুহাম্মদ: অর্থনীতিবিদ ও অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments