গোদের ওপর বিষফোড়া-জনজীবনে মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে
জ্বালানি তেলের পর এবার বাড়ানো হলো রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাসের (সিএনজি) দাম। এরই মধ্যে সিএনজির দাম কার্যকর হয়েছে। এই মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে জনজীবনে। সরকার এই মূল্যবৃদ্ধিকে স্বাভাবিকভাবে দেখলেও সাধারণ মানুষ এটাকে স্বাভাবিকভাবে দেখতে পারছে না। সিএনজির মূল্যবৃদ্ধির খেসারত শেষ পর্যন্ত ভোক্তা পর্যায়েই দিতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে আরেক দফা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিরও আশঙ্কা থাকে।
এবার সিএনজির দাম বাড়ানো হয়েছে, সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী, 'জনস্বার্থে'। কোনো জিনিসের দাম যে জনস্বার্থে বাড়ানো যেতে পারে, বা জনস্বার্থে কোনো জিনিসের দাম যে বাড়ানো হতে পারে_এমন ধারণা বোধ হয় এই প্রথম অনুভব করা গেল। সরকারের যুক্তিটা কিন্তু বেশ। এর আগে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। এর প্রভাব পড়বে দেশের সর্বত্র। বিশেষ করে গণপরিবহনে প্রভাব পড়বেই। সরকার ভাবছে, এতে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে দেশের গণপরিবহনে। সেই বিশৃঙ্খলা রোধ করা সরকারের দায়িত্ব। সিএনজির দাম কম। এ ক্ষেত্রে সিএনজিচালিত গণপরিবহনও তেলের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে দাম বাড়িয়ে দিতে পারে। যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করতে পারে। সেই বাড়তি ভাড়া আদায় যাতে জায়েজ করা যায়, সে সুযোগ করে দেওয়াটা বোধ হয় খুব প্রয়োজনীয় ছিল। যেখানে ভোক্তা পর্যায়ে সাধারণ মানুষ প্রতারিত হবে না, এটা নিশ্চিত করবে সরকার, সেখানে সাধারণের পকেট খালি করার সহজতম একটা উপায় বের করে দেওয়া হয়েছে। এখন সিএনজিচালিত বাহনের অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বৈধ করে দেওয়া হলো। সরকার শুধু 'জনস্বার্থ' বিবেচনা করেনি। 'জনস্বার্থ' বিবেচনায় সরকারের ক্ষমতাও প্রয়োগ করেছে। সাধারণভাবে ধরে নেওয়া হয়, এ ধরনের মূল্যবৃদ্ধির আগে গণশুনানি করতে হবে। সেই গণশুনানির প্রভাব পড়বে গ্যাসের দামের ওপর। গত মে মাসে যখন দাম বাড়ানো হয়, তখন বলা হয়েছিল, পরবর্তী সময়ে দাম বাড়ানো হলে গণশুনানি করা হবে। কিন্তু ওই 'জনস্বার্থ' বিবেচনা করতে গিয়ে গণশুনানিকে বোধ হয় বিবেচনা করা যায়নি। তা ছাড়া দাম বাড়ানোর একটা এখতিয়ারও তো সরকারের বা যথাযথ কর্তৃপক্ষের আছে! আপাতত সেই ক্ষমতা দেখানোটাও হয়তো জরুরি ছিল। সেসব বিবেচনা থেকেই সিএনজির এই মূল্যবৃদ্ধিকে শুধু যথাযথ নয়, একটি 'সঠিক', 'যুগান্তকারী' ও 'জনকল্যাণমূলক' ব্যবস্থা হিসেবে দেখা যেতেই পারে!
গত মে মাসে বাড়ানো হয় সিএনজির দাম। কয়েক দিন আগে বেড়েছে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম। খুব স্বাভাবিকভাবেই এবার সিএনজির মূল্যবৃদ্ধিকে সাধারণের সাদামাটা চোখে গোদের ওপর বিষফোড়ার মতোই মনে হবে। এটাই স্বাভাবিক। ওদিকে নভেম্বর-ডিসেম্বরে বিদ্যুতের দামও নাকি বাড়ানো হবে। সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর সিএনজির মূল্যবৃদ্ধি যদি 'গোদের ওপর বিষফোড়া' হয়, এরপর বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে সেটা কী হবে? কথায় বলে 'পেটে খেলে পিঠে সয়', বেঁধে মারলেও নাকি অনেক সয়_দেশের মানুষ যে কিসের দায়ে বাঁধা পড়েছে!
No comments