চাই পরিপূর্ণ ইমান by সৈয়দ শামসুল হুদা

একজন মানুষ যখন নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করে তখনই সে মুমিন। আর সেই বিশ্বাসের আলোকে যখন নিজের জীবনকে সাজায় তখন সে হয় মুসলমান। বর্তমানে সংখ্যার দিক দিয়ে মুসলমানের সংখ্যা অনেক; কিন্তু আখলাক ও চরিত্রের দিক দিয়ে, ব্যবহার ও আমল দিয়ে কতজন মুসলমান তা বলা কঠিন।


ইসলাম তো দ্বিতীয় ধাপে আসবে, প্রথমে আমার ইমান ঠিক হয়েছে কি-না সেটাই বিবেচ্য। একজন মানুষ প্রথমে ইমান আনবে, অতঃপর সে অনুযায়ী কাজ করবে। প্রথম ধাপটি হলো মুমিন। দ্বিতীয় ধাপ হলো ইসলাম। ইসলামের পথিক হওয়ার জন্য যেসব বিষয়ে পরিপূর্ণ ইমান দরকার তা হলো_
১. আল্লাহতায়ালার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। আল্লাহর পক্ষ থেকে সবকিছু হয়, তিনিই সবকিছু করেন, তাঁর বাইরে আর কারও কোনো ক্ষমতা নেই। তিনি রিজিকদাতা, তিনিই শান্তিদাতা, তিনিই নিরাপত্তাদাতা, সবকিছুর উৎস তিনিই এই বিশ্বাস দৃঢ়ভাবে স্থাপন করা।
২. ফেরেশতাগণের প্রতি বিশ্বাস। এই জগৎকে সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনার জন্য আল্লাহতায়ালা অগণিত ফেরেশতা সৃষ্টি করেছেন। সেসব ফেরেশতার প্রতি একজন মুমিন বিশ্বাস স্থাপন করলেই সে মুমিন হতে পারবে। অন্যথায় নয়।
৩. আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে প্রেরিত আসমানি গ্রন্থগুলোর প্রতি ইমান। এসব কিতাবকে ঐশী বাণীও বলা হয়। এ কিতাবগুলোতে মানুষের করণীয় দিকনির্দেশনা রয়েছে। আমরা যদি নিজেদের পরিপূর্ণ মুমিন দাবি করি, তাহলে অবশ্যই আমাদের বাস্তব অনুশীলনের মাধ্যমে এসব কিতাবের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য প্রদর্শন এবং বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে।
৪. আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে প্রেরিত রাসুলগণের প্রতি ইমান। পথহারা বান্দাদের জন্য আল্লাহতায়ালা যুগে যুগে নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন, তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে বিভিন্ন বাণী ও বিধান নিয়ে এসেছেন। নবীগণ সত্য, তাদের আনীত বাণীও সত্য। পরিপূর্ণ এ বিশ্বাস যদি কারও মধ্যে থাকে তাহলেই সে মুমিন।
৫. একজন মুমিনকে ইমান আনতে হবে পরকালের প্রতি। মুমিনকে এই বিশ্বাস করতে হবে যে, আমি যে দুনিয়ায় আছি এটাই শেষ নয়। আরও একটি জগৎ আছে, যেখানে আমাকে জবাবদিহি করতে হবে। আমাকে আমার কাজের হিসাব দিতে হবে। এই একটি মাত্র বিশ্বাসই তো যথেষ্ট ছিল সৎ মানুষ হওয়ার, ভালো মানুষ হওয়ার জন্য। একজন মানুষ যখন এই বিশ্বাস অন্তরে লালন করবে যে, আমিই আমার পরিচালক তাহলে কি এ মানুষটির পক্ষে কোনো অপরাধ করা সম্ভব? কখনও নয়।
৬. তাকদিরের ভালো-মন্দ আল্লাহর পক্ষ থেকে হয় এ বিশ্বাসও একজন মুমিনকে করতে হবে। আমি যদি কোনো জিনিস প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হই, তাহলে এর জন্য যেমন ক্রোধান্বিত হওয়ার সুযোগ নেই, তেমনি যদি কোনো ভালো কিছুর সন্ধান পাই তাহলেও আনন্দে লাফিয়ে ওঠার কিছু নেই। যা কিছু হয় সবকিছু আল্লাহর পক্ষ থেকেই হয়, আমি সেই বিশ্বাসেই বিশ্বাসী। সর্বশেষ যে বিষয়টির প্রতি ইমান আনতে হবে_
৭. মৃত্যুর পর আবার পুনরুত্থানের প্রতি বিশ্বাস। একজন মুমিন বিশ্বাস করে আমাকে আল্লাহ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। আমাকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। এরপর আরও একটি জগৎ আছে সেটাকে বলে পরকাল। এসব বিষয়ের প্রতি মুখে ইমান আনতে হবে, অর্থাৎ মুখে স্বীকার করতে হবে, অতঃপর অন্তরে বিশ্বাস করতে হবে। মৌখিক স্বীকার ও অন্তরে বিশ্বাসের সঙ্গে মিলিয়ে বাস্তবে অনুশীলন করতে হবে। কেউ যদি এর কোনো একটি অস্বীকার করে তাহলে সে মুমিন নয়; মুসলমান তো নয়ই।
alhuda_wf@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.