ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতির ট্রেনে কাটা লাশ উদ্ধার

ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক হাসান ইকবাল ওরফে সজীব (২৫) ময়মনসিংহে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছেন। জামালপুর রেলওয়ে থানার পুলিশ গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বিদ্যাগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের কাছ থেকে সজীবের লাশ উদ্ধার করে। পরে তাঁর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য জামালপুরে নেওয়া হয়।


ছাত্র ইউনিয়ন সজীবের মৃত্যুর ঘটনায় তিন দিনের শোক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। সজীবের বাড়ি কুষ্টিয়া শহরের ৩৩/১০৪ গোরস্থানপাড়া এলাকায়। তাঁর বাবা রফিকুল ইসলাম বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি কুষ্টিয়া জেলা শাখার সভাপতি। পরিসংখ্যান বিভাগের ছাত্র সজীব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের ১০১ নম্বর কক্ষে থাকতেন। বেশ কয়েকটি ঘটনায় তিনি মানসিকভাবে কিছুটা বিপর্যস্ত ছিলেন। গত সোমবার তিনি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বিদ্যাগঞ্জের নামাপাড়া এলাকায় এক বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন।
ছাত্র ইউনিয়ন ময়মনসিংহ জেলা কমিটির সভাপতি মনসুর আল হাদী প্রথম আলোকে জানান, সজীব বিদ্যাগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে রেললাইন ধরে হাঁটতে হাঁটতে ময়মনসিংহের দিকে আসছিলেন। প্রায় এক কিলোমিটার আসার পর ময়মনসিংহ আউটার স্টেশনের কাছে তিনি ট্রেনে কাটা পড়েন বলে ধারণা করা হচ্ছে। গতকাল ভোরে স্থানীয় লোকজন ট্রেনে কাটা তাঁর ছিন্নভিন্ন লাশ দেখতে পায়। পরে তারা লাশের পাশে পড়ে থাকা মুঠোফোন থেকে সজীবের বন্ধু ও পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে। খবর পেয়ে জামালপুর রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার শাকের আহমেদ পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করে। পরে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য জামালপুরে নেওয়া হয়।
ওসি শাকের আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, নিহত সজীবের পরনে কালো টি-শার্ট ও ট্রাউজার ছিল। তাঁর দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। কীভাবে তিনি মারা গেলেন, তা তদন্ত করা হচ্ছে।
সজীবের মৃত্যুতে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি ফেরদৌস আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম শুভ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকও সজীবের মৃত্যুর ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন।
গতকাল সজীবের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শোকে পাথর সবাই। সজীবের মা ফরিদা আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকাল নয়টা ৩৭ মিনিটে মুঠোফোন বেজে ওঠে। হাতে নিতেই দেখলাম, সজীবের ফোন। আমি জানতে চাই, বাবা, তুমি কখন রওনা দেবে। কিন্তু অপর প্রান্ত থেকে জানানো হলো, “আপনি কি এই নম্বরটা চেনেন? একটা লাশের পাশে ফোনটি পড়েছিল, এ জন্য ফোন দিয়েছি”।’
এসএসসিতে কুষ্টিয়া জিলা স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ ও কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন সজীব। বাবা রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘খুব চাপা স্বভাবের ছেলে ছিল সজীব। নিজের সমস্যা হলে কাউকে বলত না। কিন্তু অন্য কারও সমস্যা হলেই ছুটে যেত। কী কারণে তার মৃত্যু হয়েছে, তা ধারণা করতে পারছি না।’

No comments

Powered by Blogger.