শেকড়ের ডাক-জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও হরতাল by ফরহাদ মাহমুদ
সরকার চলতি সপ্তাহে জ্বালানি তেলের দাম আরেক দফা বাড়িয়েছে। অকটেন, পেট্রল, ডিজেল ও কেরোসিন তেলের দাম লিটারপ্রতি পাঁচ টাকা এবং ফারনেস অয়েলের দাম লিটারপ্রতি আট টাকা বাড়ানো হয়েছে। তেলের নতুন দাম ঘোষণার এক দিন পর রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস বা সিএনজির দামও প্রতি ঘনমিটারে পাঁচ টাকা বাড়ানো হয়েছে।
অন্যদিকে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো হরতাল আহ্বান করেছিল। তাদের যুক্তি ছিল, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার ফলে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাবে এবং তার ফলে বাড়বে জনদুর্ভোগ। তাই জনদুর্ভোগ বৃদ্ধির প্রতিবাদে তারাও কিছুটা জনদুর্ভোগ তৈরি করেছিল।
জ্বালানি তেলের দাম অতীতেও বহুবার বাড়ানো হয়েছে। বিএনপি কিংবা জোট সরকারের আমলেও দাম বেড়েছে। জনজীবনে তার প্রভাবও পড়েছে। তার পরও সামরিক শাসক, দীর্ঘমেয়াদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা গণতান্ত্রিক সরকার_কোনো আমলেই দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়াটি বন্ধ থাকেনি। বরং বর্তমান সরকার শুরুর দিকে জ্বালানি তেল ও সারের দাম না বাড়িয়ে কিংবা বলা যায়, সারের দাম কমিয়ে বেশি করে ভর্তুকি দেওয়ার রক্ষণশীল নীতিই আঁকড়ে ধরেছিল। কিন্তু বেশিদিন তারা সেই নীতি ধরে রাখতে পারেনি। বিশেষ করে জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতে তারাও বাধ্য হয়েছে। ফলে গত চার মাসে তারা দ্বিতীয় দফায় জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ (আইএমএফ) দাতা সংস্থাগুলো ভর্তুকি কমানোর জন্য সরকারকে অব্যাহতভাবে চাপ দিয়ে যাচ্ছিল। সর্বশেষ আইএমএফ প্রতিশ্রুত ১০০ কোটি ডলার না দেওয়ার কথাও বলেছিল। তাই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পরই অর্থমন্ত্রী নিউ ইয়র্কে গেলেন আইএমএফ বৈঠকে যোগ দিতে।
জ্বালানি তেল আমাদের আমদানি করতে হয় এবং প্রতিনিয়তই আমদানির পরিমাণ বাড়ছে। গত বছর আমদানি করা হয়েছিল ৫৪ লাখ টন, আর এ বছর আমদানির পরিমাণ গিয়ে দাঁড়াতে পারে ৭০ লাখ টনে। ফলে লিটারপ্রতি সমান ভর্তুকি দিলেও এ বছর মোট ভর্তুকির পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারেও ইতিমধ্যে তেলের দাম কিছুটা বেড়েছে এবং সেখানে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। ভারতেও ইতিমধ্যে তেলের দাম কয়েক দফা বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ বৃদ্ধির পর দিলি্লতে প্রতি লিটার পেট্রলের দাম হচ্ছে ৬৬ দশমিক ৮৪ রুপি, বাংলাদেশি টাকায় যার মূল্যমান ১০০ টাকার বেশি। এ ছাড়া কোনো কোনো রাজ্যে স্থানীয় ট্যাঙ্-লেভি দিয়ে দাম পড়বে ৭১ রুপির মতো। আর বাংলাদেশে পাঁচ টাকা বাড়ানোর পর পেট্রলের দাম দাঁড়িয়েছে ৮১ টাকায়। সেদিক থেকে বাংলাদেশ এখনো অনেক বেশি ভর্তুকি দিচ্ছে।
ভর্তুকি প্রদানের সমস্যা কোথায়, সে বিষয়টিও আমাদের ভেবে দেখা প্রয়োজন। এটি কি কেবলই আইএমএফ বা বিদেশি দাতা সংস্থার চাপ, নাকি এর প্রয়োজনও ছিল? প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, জ্বালানি তেলে ভর্তুকি দিতে গিয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে (বিপিসি) কেবল গত জুলাই ও আগস্ট মাসেই দেশের ব্যাংকগুলো থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ধার করতে হয়েছে। আর ব্যাংক থেকে সরকারের অতিরিক্ত ধার গ্রহণের কুফলও আমাদের অজানা থাকার কথা নয়। ইতিমধ্যেই এ ব্যাপারে অনেক সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে। সরকার অতিরিক্ত ঋণ নিলে ব্যাংকগুলোতে পুঁজির ঘাটতি দেখা দেয় এবং শিল্পোদ্যোক্তারা প্রয়োজনীয় মূলধন সংগ্রহ করতে পারে না। ফলে দেশে শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। আবার বাজেটের একটি বড় অংশ যদি ভর্তুকি দিতেই চলে যায়, তাহলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও বাধাগ্রস্ত হয়। অথচ দেশের উন্নয়নের গতি আরো বেগবান করার জন্যই আজ নতুন নতুন অবকাঠামো নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে। একইভাবে বিদ্যমান অবকাঠামোগুলোর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন সাধন করা কতটা জরুরি, তা তো আমরা বেহাল রাস্তাঘাট দেখেই বুঝতে পারি। এতে শুধু যাত্রীদেরই ভোগান্তি হয় না, দেশের শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেসব বিবেচনায় জ্বালানি তেলের দাম পাঁচ টাকা বাড়ানো খুব একটা অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত নয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এই পাঁচ টাকা বৃদ্ধির সুযোগ নিয়ে গাড়িভাড়া এবং গাড়িতে পরিবহন করা পণ্যের দাম হয়তো বেড়ে যাবে কয়েক গুণ। আর নিকট-অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বলে দিতে পারি, সেই কয়েক গুণ দাম বেড়ে যাওয়াকে সরকার সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। ফলে মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা থেকেই যায়। যেমন_তেল ও সিএনজির দাম বাড়ানোর পাশাপাশি সরকার বাসে প্রতি কিলোমিটারে পাঁচ পয়সা এবং অটোরিকশায় প্রতি কিলোমিটারে ১৪ পয়সা ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। বাস্তবে দেখা যায়, ভাড়া বেড়ে যাচ্ছে কিলোমিটারপ্রতি তার চেয়ে কয়েক গুণ। একটি ট্রাকের উত্তরবঙ্গ যাতায়াতে আড়াই শ থেকে তিন শ লিটার ডিজেল লাগে। তিন শ লিটার লাগলে তার বাড়তি খরচ হবে এক হাজার পাঁচ শ টাকা। কিন্তু টেলিভিশনের খবরে দেখলাম, ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করছেন, ট্রাকগুলো তিন থেকে চার হাজার টাকা বেশি দাবি করছে। আর সেই সুযোগে ব্যবসায়ীরা নিশ্চয় ক্রেতাদের পকেট কাটবেন আরো বেশি করে! তাই দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতা স্বীকার করেও কোনো কোনো অর্থনীতিবিদ তেলের দাম বাড়ানোর ফলে মূল্যস্ফীতি ও জনদুর্ভোগ বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। আসলে জনদুর্ভোগ তেলের দাম বাড়ানোর কারণে যতটা না বাড়বে, তার চেয়ে বেশি বাড়বে পরিবহন খাতের নৈরাজ্য দূর করতে না পারার কারণে। তেলের দাম বাড়ানোর আগে কি আমাদের সিএনজিকৃত অটোরিকশা, ট্যাঙ্কি্যাব মিটারে বা নির্ধারিত দামে চলেছে? তারা কি যাত্রীদের কাছ থেকে যেমন খুশি ভাড়া আদায় করেনি? বাসগুলো কি অতিরিক্ত ভাড়া নেয়নি? নূ্যনতম ভাড়া নির্ধারিত থাকলেও কোনো কোনো বাস কম্পানি যাত্রীদের কাছ থেকে প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া নিয়েছে। জ্বালানি তেল বা গ্যাসের দাম বাড়ানোকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করিয়ে তারা আবারও যথেচ্ছাচার শুরু করবে। অর্থাৎ পরিবহন খাতের এই নৈরাজ্য দাম বাড়ানোর আগেও ছিল, পরেও থাকবে। কাজেই আমরা এ কথা বলতেই পারি, পাঁচ টাকা দাম বাড়ানো বড় কোনো সমস্যা নয়, বড় সমস্যা হচ্ছে এই নৈরাজ্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতা এবং পরিবহন মালিকদের কাছে সরকারের অঘোষিত আত্মসমর্পণ।
কিন্তু এই অজুহাতে বিরোধী দলের হরতাল আহ্বান করার কোনো যুক্তি আছে কি? এক দিনের হরতালে রাষ্ট্রের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়, সেই হিসাব তো ক্ষমতায় থাকাকালে তারাও দিয়েছে। হরতালকে বলা হয় আন্দোলনের শেষ অস্ত্র। এই অস্ত্র প্রয়োগের আগে সঠিক 'টার্গেট' নির্বাচন করতে হয়। জ্বালানি তেলের দাম পাঁচ টাকা বৃদ্ধি করাটা সে ধরনের 'ইস্যু' নয়। তাই শেষ অস্ত্রটির ব্যবহারে বিরোধী দলকে আরো সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। তা না হলে শেষ অস্ত্রটিও একসময় ভোঁতা হয়ে যাবে কিংবা গুরুত্ব হারাবে। হরতাল ডাকার 'অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য' নিয়েও জনমনে প্রশ্ন সৃষ্টি হবে। আর তখন দেশ কেবল একটি সংঘাতময় রাজনীতির দিকেই এগিয়ে যাবে, যা আমাদের কাম্য নয়।
লেখক : সাংবাদিক
জ্বালানি তেলের দাম অতীতেও বহুবার বাড়ানো হয়েছে। বিএনপি কিংবা জোট সরকারের আমলেও দাম বেড়েছে। জনজীবনে তার প্রভাবও পড়েছে। তার পরও সামরিক শাসক, দীর্ঘমেয়াদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা গণতান্ত্রিক সরকার_কোনো আমলেই দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়াটি বন্ধ থাকেনি। বরং বর্তমান সরকার শুরুর দিকে জ্বালানি তেল ও সারের দাম না বাড়িয়ে কিংবা বলা যায়, সারের দাম কমিয়ে বেশি করে ভর্তুকি দেওয়ার রক্ষণশীল নীতিই আঁকড়ে ধরেছিল। কিন্তু বেশিদিন তারা সেই নীতি ধরে রাখতে পারেনি। বিশেষ করে জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতে তারাও বাধ্য হয়েছে। ফলে গত চার মাসে তারা দ্বিতীয় দফায় জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ (আইএমএফ) দাতা সংস্থাগুলো ভর্তুকি কমানোর জন্য সরকারকে অব্যাহতভাবে চাপ দিয়ে যাচ্ছিল। সর্বশেষ আইএমএফ প্রতিশ্রুত ১০০ কোটি ডলার না দেওয়ার কথাও বলেছিল। তাই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পরই অর্থমন্ত্রী নিউ ইয়র্কে গেলেন আইএমএফ বৈঠকে যোগ দিতে।
জ্বালানি তেল আমাদের আমদানি করতে হয় এবং প্রতিনিয়তই আমদানির পরিমাণ বাড়ছে। গত বছর আমদানি করা হয়েছিল ৫৪ লাখ টন, আর এ বছর আমদানির পরিমাণ গিয়ে দাঁড়াতে পারে ৭০ লাখ টনে। ফলে লিটারপ্রতি সমান ভর্তুকি দিলেও এ বছর মোট ভর্তুকির পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারেও ইতিমধ্যে তেলের দাম কিছুটা বেড়েছে এবং সেখানে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। ভারতেও ইতিমধ্যে তেলের দাম কয়েক দফা বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ বৃদ্ধির পর দিলি্লতে প্রতি লিটার পেট্রলের দাম হচ্ছে ৬৬ দশমিক ৮৪ রুপি, বাংলাদেশি টাকায় যার মূল্যমান ১০০ টাকার বেশি। এ ছাড়া কোনো কোনো রাজ্যে স্থানীয় ট্যাঙ্-লেভি দিয়ে দাম পড়বে ৭১ রুপির মতো। আর বাংলাদেশে পাঁচ টাকা বাড়ানোর পর পেট্রলের দাম দাঁড়িয়েছে ৮১ টাকায়। সেদিক থেকে বাংলাদেশ এখনো অনেক বেশি ভর্তুকি দিচ্ছে।
ভর্তুকি প্রদানের সমস্যা কোথায়, সে বিষয়টিও আমাদের ভেবে দেখা প্রয়োজন। এটি কি কেবলই আইএমএফ বা বিদেশি দাতা সংস্থার চাপ, নাকি এর প্রয়োজনও ছিল? প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, জ্বালানি তেলে ভর্তুকি দিতে গিয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে (বিপিসি) কেবল গত জুলাই ও আগস্ট মাসেই দেশের ব্যাংকগুলো থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ধার করতে হয়েছে। আর ব্যাংক থেকে সরকারের অতিরিক্ত ধার গ্রহণের কুফলও আমাদের অজানা থাকার কথা নয়। ইতিমধ্যেই এ ব্যাপারে অনেক সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে। সরকার অতিরিক্ত ঋণ নিলে ব্যাংকগুলোতে পুঁজির ঘাটতি দেখা দেয় এবং শিল্পোদ্যোক্তারা প্রয়োজনীয় মূলধন সংগ্রহ করতে পারে না। ফলে দেশে শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। আবার বাজেটের একটি বড় অংশ যদি ভর্তুকি দিতেই চলে যায়, তাহলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও বাধাগ্রস্ত হয়। অথচ দেশের উন্নয়নের গতি আরো বেগবান করার জন্যই আজ নতুন নতুন অবকাঠামো নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে। একইভাবে বিদ্যমান অবকাঠামোগুলোর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন সাধন করা কতটা জরুরি, তা তো আমরা বেহাল রাস্তাঘাট দেখেই বুঝতে পারি। এতে শুধু যাত্রীদেরই ভোগান্তি হয় না, দেশের শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেসব বিবেচনায় জ্বালানি তেলের দাম পাঁচ টাকা বাড়ানো খুব একটা অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত নয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এই পাঁচ টাকা বৃদ্ধির সুযোগ নিয়ে গাড়িভাড়া এবং গাড়িতে পরিবহন করা পণ্যের দাম হয়তো বেড়ে যাবে কয়েক গুণ। আর নিকট-অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বলে দিতে পারি, সেই কয়েক গুণ দাম বেড়ে যাওয়াকে সরকার সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। ফলে মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা থেকেই যায়। যেমন_তেল ও সিএনজির দাম বাড়ানোর পাশাপাশি সরকার বাসে প্রতি কিলোমিটারে পাঁচ পয়সা এবং অটোরিকশায় প্রতি কিলোমিটারে ১৪ পয়সা ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। বাস্তবে দেখা যায়, ভাড়া বেড়ে যাচ্ছে কিলোমিটারপ্রতি তার চেয়ে কয়েক গুণ। একটি ট্রাকের উত্তরবঙ্গ যাতায়াতে আড়াই শ থেকে তিন শ লিটার ডিজেল লাগে। তিন শ লিটার লাগলে তার বাড়তি খরচ হবে এক হাজার পাঁচ শ টাকা। কিন্তু টেলিভিশনের খবরে দেখলাম, ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করছেন, ট্রাকগুলো তিন থেকে চার হাজার টাকা বেশি দাবি করছে। আর সেই সুযোগে ব্যবসায়ীরা নিশ্চয় ক্রেতাদের পকেট কাটবেন আরো বেশি করে! তাই দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতা স্বীকার করেও কোনো কোনো অর্থনীতিবিদ তেলের দাম বাড়ানোর ফলে মূল্যস্ফীতি ও জনদুর্ভোগ বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। আসলে জনদুর্ভোগ তেলের দাম বাড়ানোর কারণে যতটা না বাড়বে, তার চেয়ে বেশি বাড়বে পরিবহন খাতের নৈরাজ্য দূর করতে না পারার কারণে। তেলের দাম বাড়ানোর আগে কি আমাদের সিএনজিকৃত অটোরিকশা, ট্যাঙ্কি্যাব মিটারে বা নির্ধারিত দামে চলেছে? তারা কি যাত্রীদের কাছ থেকে যেমন খুশি ভাড়া আদায় করেনি? বাসগুলো কি অতিরিক্ত ভাড়া নেয়নি? নূ্যনতম ভাড়া নির্ধারিত থাকলেও কোনো কোনো বাস কম্পানি যাত্রীদের কাছ থেকে প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া নিয়েছে। জ্বালানি তেল বা গ্যাসের দাম বাড়ানোকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করিয়ে তারা আবারও যথেচ্ছাচার শুরু করবে। অর্থাৎ পরিবহন খাতের এই নৈরাজ্য দাম বাড়ানোর আগেও ছিল, পরেও থাকবে। কাজেই আমরা এ কথা বলতেই পারি, পাঁচ টাকা দাম বাড়ানো বড় কোনো সমস্যা নয়, বড় সমস্যা হচ্ছে এই নৈরাজ্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতা এবং পরিবহন মালিকদের কাছে সরকারের অঘোষিত আত্মসমর্পণ।
কিন্তু এই অজুহাতে বিরোধী দলের হরতাল আহ্বান করার কোনো যুক্তি আছে কি? এক দিনের হরতালে রাষ্ট্রের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়, সেই হিসাব তো ক্ষমতায় থাকাকালে তারাও দিয়েছে। হরতালকে বলা হয় আন্দোলনের শেষ অস্ত্র। এই অস্ত্র প্রয়োগের আগে সঠিক 'টার্গেট' নির্বাচন করতে হয়। জ্বালানি তেলের দাম পাঁচ টাকা বৃদ্ধি করাটা সে ধরনের 'ইস্যু' নয়। তাই শেষ অস্ত্রটির ব্যবহারে বিরোধী দলকে আরো সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। তা না হলে শেষ অস্ত্রটিও একসময় ভোঁতা হয়ে যাবে কিংবা গুরুত্ব হারাবে। হরতাল ডাকার 'অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য' নিয়েও জনমনে প্রশ্ন সৃষ্টি হবে। আর তখন দেশ কেবল একটি সংঘাতময় রাজনীতির দিকেই এগিয়ে যাবে, যা আমাদের কাম্য নয়।
লেখক : সাংবাদিক
No comments