পুলিশের ভূমিকা সন্দেহজনক-মেয়র লোকমান হত্যা মামলা
যেকোনো খুনের বেলায় বড় প্রশ্ন, কে করল এবং কেন করল? নরসিংদীর পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগের নেতা লোকমান হোসেনের হত্যার ঘটনায় ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তাঁর ভাই। মামলার এজাহারে বিএনপির একজন ছাড়া অভিযুক্ত সবাই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী। তাঁদের মধ্যে একজন আবার স্থানীয় সাংসদ ও মন্ত্রীর ভাই।
নিহত লোকমানের স্বজনের মামলায় হত্যাকাণ্ডটি দলীয় কোন্দলের জের কি না, সে সন্দেহ আরও জোরালো হলো। তবু সুষ্ঠু তদন্ত ও আইনি প্রমাণ ছাড়া এ বিষয়ে এখনই শেষ কথা বলার উপায় নেই।
প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে। হত্যার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার হন বিএনপির নরসিংদী জেলা শাখার সভাপতি ও সাবেক সাংসদ খায়রুল কবির খোকন। এর অর্থ, তিনি পুলিশের সন্দেহভাজন। অথচ প্রয়াত মেয়রের ভাইয়ের করা মামলায় তাঁর নামই নেই। তাই খোকনকে গ্রেপ্তারের ভিত্তি কী, তা জানা দরকার। হত্যাকাণ্ডের পরের আরও কিছু ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও সংশয় জেগেছে। এসব সংশয় ও প্রশ্নের সদুত্তর না পেলে হত্যার তদন্তকাজ সুসম্পন্ন হওয়া কঠিন।
যে দ্রুততায় খোকনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, মামলা গ্রহণে ততটাই গড়িমসি করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ২০ মিনিটে মামলার এজাহার নিয়ে বাদী উপস্থিত হলেও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তা গ্রহণে দেরি করেন। গত শুক্রবারের প্রথম আলোর সংবাদ জানাচ্ছে, এ সময় তিনি বারবার ঊর্ধ্বতন কারও সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করছিলেন। এরপর মামলার নম্বর দিতেও একই রকম গাফিলতি করলে উপস্থিত দলীয় নেতা-কর্মীদের চাপের মুখে এজাহারটি নেন বটে, কিন্তু বিহিত না করে এজাহার নিয়ে থানার বাইরে কোথাও যান। মামলার নম্বর দেন সেখান থেকে ফিরে আসার পর। এখানেই শেষ নয়, মামলার পাশে নিয়মমাফিক আইনের ধারা লেখার বেলায়ও একাধিকবার সিদ্ধান্ত বদলান এবং সময়ক্ষেপণ করেন। পুলিশের এই জারিজুরির কারণ কী?
দ্বিতীয়ত, একজন জনপ্রিয় মেয়রের হত্যাকাণ্ডে স্বতঃস্ফূর্ত ক্ষোভ-বিক্ষোভ হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু ট্রেন পুড়িয়ে কার লাভ হলো? দিনব্যাপী বিক্ষোভ-অগ্নিসংযোগসহ বিশৃঙ্খলা ঘটলেও পুুলিশ কেন নিষ্ক্রিয় ছিল?
মেয়র লোকমান হোসেন হত্যার সুবিচার রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বন্ধের জন্য জরুরি। সেই বিচারের স্বার্থেই ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত হতে হবে। রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত সুষ্ঠু তদন্ত ছাড়া প্রকৃত অপরাধী যে ধরা পড়বে না, তা হলফ করে বলা যায়। এ কথাও কারও অজানা নয়, হত্যার বিচার কিংবা হত্যাকারীর উপযুক্ত শাস্তি না হলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে। গত বছরের ৮ অক্টোবর নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার চেয়ারম্যান বিএনপির নেতা সানাউল্লাহ নূর হত্যায় অভিযুক্ত ১১ জনই জামিনে মুক্ত হন। ভিডিওচিত্রে অপরাধীরা চিহ্নিত হলেও মূল হোতারা গ্রেপ্তার হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। নরসিংদীতে লোকমান হোসেন হত্যা মামলার বেলায় সেই লজ্জাজনক অধ্যায়ের পুনরাবৃত্তি বন্ধের দায় সরকারের।
No comments