আগামীকাল ২৩ সেপ্টেম্বর সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ আবু হেনা মোস্তফা কামালের মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে আমাদের বিশেষ আয়োজন প্রকাশিত হলো আজ আবু হেনা মোস্তফা কামালের ২২তম মৃত্যুবার্ষিকী-তাঁর খ্যাতির সীমানা বিস্তৃত by মুস্তাফা নূরউল ইসলাম
অনুজপ্রতিম আবু হেনা মোস্তফা কামাল সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পরিসরে কিছু লেখা দুরূহ। আবু হেনা মোস্তফা কামাল ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে জীবনের শেষ অবধি সর্বত্রই রেখে গেছেন কৃতিত্বের স্বাক্ষর। তাঁর কোন পরিচয়টি বড় তা নির্ণয় করা খুব দুরূহ। একজন সফল শিক্ষাবিদ, কবি, প্রাবন্ধিক, গীতিকার, সুবক্তা ইত্যাদি ক্ষেত্রে তাঁর পরিচিতি তো ব্যাপকভাবেই আছে, এর বাইরেও তাঁর দখলদারি কম ছিল না।
বিশেষ করে তাঁর বাচনভঙ্গির শৈল্পিক নিপুণতা তাঁকে একটা স্বতন্ত্র অবস্থানে দাঁড় করিয়েছিল। যেকোনো কারোর মুগ্ধ না হয়ে উপায় ছিল না তাঁর বাচনভঙ্গি প্রত্যক্ষ করে। এ এক অসাধারণ শক্তির অধিকারী ছিলেন আবু হেনা মোস্তফা কামাল। শিক্ষকতাকে জীবনের মহান ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্কটা বরাবরই ছিল খুব নিবিড়। তাঁর ছাত্রজীবনের দিকে যদি আলোকপাত করি তাহলে আজও বিস্ময়ে তাঁকে আবিষ্কারের নবচেষ্টায় নিমগ্ন হতে হয়। তিনি আজ প্রয়াত বটে, কিন্তু কোনোভাবেই বিগত নন। তিনি তাঁর কৃতকর্মের জন্যই আমাদের মাঝে আছেন সমহিমায়। তাঁর রচিত অনেক গান আজও অনুভূতির সব তন্ত্রিতে ঝড় তোলে। তাঁর কবিতা খুব করে টানে। তাঁর স্থান এসব কারণেই আমাদের হৃৎপিণ্ডে। একটু পেছন ফিরে দেখি তাঁকে।
১৯৫২ সালে পাবনা জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯৫৪ সালে ঢাকা কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। ম্যাট্রিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে ত্রয়োদশ স্থান এবং আইএ পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে সপ্তম স্থান অধিকার করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৮ সালে বাংলায় বিএ অনার্স এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৯ সালে বাংলায় এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর উভয় পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার তাঁর জীবনের বাঁক ঘুরিয়ে দেয়। ১৯৬৬-৬৯ সময় পরিসরে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর শিক্ষা লাভ করেন। এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে 'বেঙ্গলি প্রেস অ্যান্ড লিটারারি রাইটিং-১৮১৮-১৮৩১' শীর্ষক অভিসন্দর্ভ রচনা করে পিএইচডি লাভ করেন। পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ কলেজ ও রাজশাহী সরকারি কলেজে কিছুকাল অধ্যাপনা করেন। ১৯৬২ সালে সহকারী পরিচালক পদে জনসংযোগ পরিদপ্তরে (ইডেন বিল্ডিংয়ে) যোগদান করেন। প্রায় এক বছর এ পদে কর্মরত ছিলেন। ১৯৬৩ সালের ১৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রভাষক নিযুক্ত করেন। ১৯৬৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে সহকারী অধ্যাপক পদে যোগদান করেন। ১৯৭০ সালের ২০ ডিসেম্বর সহযোগী অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলার সময় রাজশাহী বেতারে পাকিস্তানের পক্ষে অনুষ্ঠান করার দায়ে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসে কিছুদিন কারাভোগ করেন। ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭৬ সালের ২৬ জুন অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। ১৯৭৮ সালের ১ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে অধ্যাপক পদে যোগদান করেন। ১৯৮৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক নিযুক্ত হন। এ পদে প্রায় দেড় বছর দায়িত্ব পালনের পর ১৯৮৬ সালের ১১ মার্চ বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালকের পদে যোগদান এবং মৃত্যুকাল অবধি এ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তাঁর সময়ে বাংলা একাডেমী এক নতুন মাত্রা লাভ করে এবং আমাদের আন্দোলন-সংগ্রামের স্মৃতিবিজড়িত এই প্রতিষ্ঠানটির আরো ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে তিনি ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। আগেই বলেছি, কবিতা, প্রবন্ধ ও গান লিখে সুনাম অর্জন করেন ব্যাপকভাবে। সুবক্তা, টেলিভিশনের বাককুশল রসিক উপস্থাপক ও আলোচক হিসেবে খ্যাত। তাঁর আলোচিত গ্রন্থাবলির মধ্যে রয়েছে কাব্য : 'আপন যৌবন বৈরী' (১৯৭৪), 'যেহেতু জন্মান্ধ' (১৯৮৪), 'আক্রান্ত গজল' (১৯৮৮); প্রবন্ধ গবেষণা : 'শিল্পীর রূপান্তর' (১৯৭৫), 'ঞযব ইবহমধষর চৎবংং ধহফ খরঃবৎধৎু ডৎরঃরহম' (১৯৭৭), 'কথা ও কবিতা' (১৯৮১)। আলাওল পুরস্কার (১৯৭৫), সুহৃদ সাহিত্য স্বর্ণপদক (১৯৮৬), একুশে পদক (১৯৮৭), আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ স্বর্ণপদক (১৯৮৯), সা'দত আলী আকন্দ স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯১)সহ অনেক পুরস্কার তাঁর হাত উঠেছে। তাঁর কর্ম ও খ্যাতির সীমানা কতটা বিস্তৃত তাও অল্প কথায় বর্ণনা করা কঠিন। এ সমাজে এমন গুণীজনের সংখ্যা এমনিতেই কম। দুই দশকেরও বেশি সময় অতিক্রান্ত হলো তাঁর মৃত্যুর পর, কিন্তু এখনো তাঁর উপস্থিতি টের পাই অন্য রকমভাবে।
১৯৮৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে আমাদের মধ্য থেকে শারীরিকভাবে বিদায় নেন। কিন্তু কোথায় নেই তিনি! তাঁর কবিতা, তাঁর গান, তাঁর প্রবন্ধ আমাদের হৃদয় ছুঁয়ে আছে। আবু হেনা মোস্তফা কামাল একজন বড়মাপের কর্মবীর ছিলেন_এটি সব প্রশ্নের ঊধর্ে্ব।
লেখক : শিক্ষাবিদ
১৯৫২ সালে পাবনা জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯৫৪ সালে ঢাকা কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। ম্যাট্রিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে ত্রয়োদশ স্থান এবং আইএ পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে সপ্তম স্থান অধিকার করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৮ সালে বাংলায় বিএ অনার্স এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৯ সালে বাংলায় এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর উভয় পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার তাঁর জীবনের বাঁক ঘুরিয়ে দেয়। ১৯৬৬-৬৯ সময় পরিসরে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর শিক্ষা লাভ করেন। এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে 'বেঙ্গলি প্রেস অ্যান্ড লিটারারি রাইটিং-১৮১৮-১৮৩১' শীর্ষক অভিসন্দর্ভ রচনা করে পিএইচডি লাভ করেন। পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ কলেজ ও রাজশাহী সরকারি কলেজে কিছুকাল অধ্যাপনা করেন। ১৯৬২ সালে সহকারী পরিচালক পদে জনসংযোগ পরিদপ্তরে (ইডেন বিল্ডিংয়ে) যোগদান করেন। প্রায় এক বছর এ পদে কর্মরত ছিলেন। ১৯৬৩ সালের ১৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রভাষক নিযুক্ত করেন। ১৯৬৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে সহকারী অধ্যাপক পদে যোগদান করেন। ১৯৭০ সালের ২০ ডিসেম্বর সহযোগী অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলার সময় রাজশাহী বেতারে পাকিস্তানের পক্ষে অনুষ্ঠান করার দায়ে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসে কিছুদিন কারাভোগ করেন। ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭৬ সালের ২৬ জুন অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। ১৯৭৮ সালের ১ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে অধ্যাপক পদে যোগদান করেন। ১৯৮৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক নিযুক্ত হন। এ পদে প্রায় দেড় বছর দায়িত্ব পালনের পর ১৯৮৬ সালের ১১ মার্চ বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালকের পদে যোগদান এবং মৃত্যুকাল অবধি এ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তাঁর সময়ে বাংলা একাডেমী এক নতুন মাত্রা লাভ করে এবং আমাদের আন্দোলন-সংগ্রামের স্মৃতিবিজড়িত এই প্রতিষ্ঠানটির আরো ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে তিনি ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। আগেই বলেছি, কবিতা, প্রবন্ধ ও গান লিখে সুনাম অর্জন করেন ব্যাপকভাবে। সুবক্তা, টেলিভিশনের বাককুশল রসিক উপস্থাপক ও আলোচক হিসেবে খ্যাত। তাঁর আলোচিত গ্রন্থাবলির মধ্যে রয়েছে কাব্য : 'আপন যৌবন বৈরী' (১৯৭৪), 'যেহেতু জন্মান্ধ' (১৯৮৪), 'আক্রান্ত গজল' (১৯৮৮); প্রবন্ধ গবেষণা : 'শিল্পীর রূপান্তর' (১৯৭৫), 'ঞযব ইবহমধষর চৎবংং ধহফ খরঃবৎধৎু ডৎরঃরহম' (১৯৭৭), 'কথা ও কবিতা' (১৯৮১)। আলাওল পুরস্কার (১৯৭৫), সুহৃদ সাহিত্য স্বর্ণপদক (১৯৮৬), একুশে পদক (১৯৮৭), আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ স্বর্ণপদক (১৯৮৯), সা'দত আলী আকন্দ স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯১)সহ অনেক পুরস্কার তাঁর হাত উঠেছে। তাঁর কর্ম ও খ্যাতির সীমানা কতটা বিস্তৃত তাও অল্প কথায় বর্ণনা করা কঠিন। এ সমাজে এমন গুণীজনের সংখ্যা এমনিতেই কম। দুই দশকেরও বেশি সময় অতিক্রান্ত হলো তাঁর মৃত্যুর পর, কিন্তু এখনো তাঁর উপস্থিতি টের পাই অন্য রকমভাবে।
১৯৮৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে আমাদের মধ্য থেকে শারীরিকভাবে বিদায় নেন। কিন্তু কোথায় নেই তিনি! তাঁর কবিতা, তাঁর গান, তাঁর প্রবন্ধ আমাদের হৃদয় ছুঁয়ে আছে। আবু হেনা মোস্তফা কামাল একজন বড়মাপের কর্মবীর ছিলেন_এটি সব প্রশ্নের ঊধর্ে্ব।
লেখক : শিক্ষাবিদ
No comments