জামায়াতের তাণ্ডব-গণতান্ত্রিক রাজনীতির নিয়ম মেনে চলতে হবে

জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীরা গতকাল রাজধানীসহ দেশের কয়েকটি স্থানে রীতিমতো তাণ্ডব চালিয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, রাজধানীতে পুলিশের পাঁচটি গাড়িসহ মোট ২০টি গাড়ি এবং ১৬টি মোটরসাইকেলে অগি্নসংযোগ করা হয়। ভাঙচুর করা হয় আরো অনেক গাড়ি। পুলিশের ওপর তারা কমান্ডো স্টাইলে আক্রমণ চালায়। সাংবাদিকরাও তাদের আক্রমণ থেকে রেহাই পাননি।


প্রথমে পুলিশ কিছুটা অসহায় হয়ে পড়লেও ঘটনাস্থলে দ্রুত অতিরিক্ত পুলিশ পাঠানো হয়। ফলে গতকাল বিকেলে রাজধানীর পল্টন-বিজয়নগর-কাকরাইল এলাকা রীতিমতো রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল। এতে অর্ধশত পুলিশসহ দেড় শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। প্রায় একই সময়ে চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ আরো কয়েকটি স্থানে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং ব্যাপক ভাঙচুর করে। কুমিল্লায় পুলিশ সুপার ও তিন কনস্টেবল গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলেও প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়। পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, জামায়াত-শিবিরের এই আক্রমণ ছিল পূর্বপরিকল্পিত। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন, এই হিংস্রতা কেন? যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধ এবং আটক পাঁচ জামায়াত নেতার মুক্তির দাবিতে জামায়াত আগেই দুই দিনের (১৮ ও ১৯ সেপ্টেম্বর) কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল। একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে রাজনৈতিকভাবে তারা বিক্ষোভ করবে, প্রতিবাদ জানাবে_এটাই প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও পত্রিকায় প্রকাশিত ছবিতে তাদের কর্মীদের যে রুদ্রমূর্তি দেখা যায়, তা কি গণতান্ত্রিক রাজনীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ?
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি এ দেশের একটি গণদাবি। বিগত নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট যুদ্ধাপরাধের বিচার করবে_এই প্রতিশ্রুতি দিয়েই বিপুল ভোটাধিক্যে ক্ষমতায় এসেছে। এ ব্যাপারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দেড় বছর ধরে সেই বিচারের প্রক্রিয়া এগিয়ে নিচ্ছে। সেখানে আটক জামায়াত নেতাদের পক্ষে নিয়োজিত আইনজীবীরা যুক্তিতর্ক উপস্থাপনসহ মামলা পরিচালনা করে আসছেন। এখন জামায়াত সেই ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করার দাবিতে এমন সহিংস আন্দোলনে নামছে কেন, তা আমাদের বোধগম্য নয়। তার পরও যদি ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানাতে হয়, রাস্তায় নামতে হয়, তাহলে গণতান্ত্রিক উপায়েই তা করা উচিত। রাস্তায় গাড়ি ভাঙচুর, অগি্নসংযোগ করে, মানুষের ক্ষয়ক্ষতি করে দাবি জানানো কোনোভাবেই কোনো গণতান্ত্রিক দলের আন্দোলনের পথ হতে পারে না। যে পুলিশের ওপর আজ গুলি চালানো হয়েছে, হামলা করা হয়েছে, সেই পুলিশবাহিনী কিছুদিন আগেও জামায়াত-বিএনপি জোট সরকারের হুকুম তামিল করেছে এবং আবারও যদি জামায়াত-বিএনপি জোট ক্ষমতায় আসে, তাহলে তাদের হুকুম তামিল করবে। কাজেই তারা তো কারো প্রতিপক্ষ হতে পারে না, বরং তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী এবং এ দেশের নাগরিক। জানা যায়, জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের হামলায় টিকতে না পেরে একদল পুলিশ কাকরাইল মোড়ে রূপায়ণ-করিম টাওয়ারে আশ্রয় নেন। জামায়াতকর্মীরা তাঁদের ধাওয়া করে সেই ভবনেও ঢোকার চেষ্টা করে, কিন্তু ঢুকতে না পেরে তারা সেই ভবনে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। দাবি জানাতে গিয়ে এতটা মারমুখী হওয়ার কী যুক্তি থাকতে পারে? তাই পুলিশের ওপর জামায়াত-শিবিরের এই হামলাকে কোনো সচেতন দেশবাসী ভালো চোখে দেখতে পারে না।
আমরা দেশে গণতান্ত্রিক রাজনীতি দেখতে চাই। সে কারণে সরকারি ও বিরোধী দল_উভয়ের কাছেই আমরা সহনশীলতা ও পরমতসহিষ্ণুতা আশা করি। আন্দোলন, বিক্ষোভ, এমনকি হরতাল দেওয়াটাও বিরোধী দলগুলোর গণতান্ত্রিক অধিকার। সেখানে বাধা দেওয়ার কোনো এখতিয়ার সরকারি দলকে দেওয়া হয়নি। আবার বিরোধী দলগুলোও সহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে মানুষের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি করার অধিকার রাখে না। আমাদের বিশ্বাস, দেশের রাজনৈতিক দলগুলো গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ও সংস্কৃতি মেনেই পরিচালিত হবে।

No comments

Powered by Blogger.