পবিত্র কোরআনের আলো-কোরআন যে আল্লাহর তরফ থেকে নাজিল করা, এতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই

৯১. ওয়া মা ক্বাদারুল্লা-হা হাক্কা ক্বাদরিহি ইয্ ক্বা-লূ মা আনযালাল্লা-হু আ'লা বাশারিম্ মিন শাইয়িন; ক্বুল মান্ আন্যালাল কিতা-বাল্লাযী জা-আ বিহী মূছা নূরান ওয়া হুদান লিন্না-ছি তাজআ'লূনাহূ ক্বারা-ত্বীছা তুব্দূনাহা ওয়া তুখফূনা কাছীরা; ওয়া উ'লি্লমতুম্ মা লাম তা'লামূ আনতুম ওয়ালা আ-বা-উকুম; ক্বুলিল্লা-হু ছুম্মা যারহুম ফী খাওদ্বিহিম ইয়ালআ'বূন।


৯২. ওয়া হা-যা কিতা-বুন আনযালনা-হু মুবা-রাকুম্ মুসাদ্দিক্বুল্লাযী বাইনা ইয়াদাইহি ওয়া লিতুনযিরা উম্মাল ক্বুরা, ওয়া মান হাওলাহা; ওয়াল্লাযীনা ইউ'মিনূনা বিলআ-খিরাতি ইউ'মিনূনা বিহী, ওয়া হুম আ'লা সালা-তিহিম ইউহা-ফিযূন।
৯৩. ওয়া মান আযলামু মিম্মানিফ্তারা- আ'লাল্লা-হি কাযিবান আও ক্বা-লা ঊহিইয়া ইলাইয়্যা, ওয়া লাম ইঊহা ইলাইহি শাইউন ওয়া মান ক্বা-লা ছাউনযিলু মিছলা মা- আনযালাল্লাহু; ওয়া লাও তারা ইযিয্ যা-লিমূনা ফী গামারা-তিল মাওতি ওয়ালমালা-য়িকাতু বা-ছিত্বূ আইদীহিম; আখরিজূ আনফুছাকুম; আলইয়াওমা তুজযাওনা আ'যা-বাল হূনি, বিমা- কুনতুম তাক্বূলূনা আ'লাল্লা-হি গাইরাল হাক্কি, ওয়া কুনতুম আ'ন আয়াতিহী তাছতাকবিরূন। [সুরা : আল আনয়াম, আয়াত : ৯১-৯৩]
অনুবাদ : ৯১. আর তারা আল্লাহর মর্যাদা সেরূপ উপলব্ধি করে না, যেরূপ উপলব্ধি করা দরকার। যখন তারা বলে, আল্লাহতায়ালা কোনো মানুষের ওপর কোনো কিছু নাজিল করেননি। আপনি এদের জিজ্ঞেস করুন, মুসার কাছে যে কিতাব এসেছিল, যা মানুষের জন্য এসেছিল আলোকবর্তিকা ও পথনির্দেশ হিসেবে, যা তোমরা কাগজে লিখে রাখতে, যা তোমরা মানুষের সামনে প্রকাশ করতে এবং বেশ কিছু অংশ গোপনও করে রাখতে_সে কিতাবের মাধ্যমে তোমাদের এমন সব জ্ঞান শিক্ষা দেওয়া হতো, যার কিছুই তোমরা বা তোমাদের পূর্বপুরুষরা জানতে না, তা কে নাজিল করেছেন? আপনি বলুন, আল্লাহতায়ালাই তা নাজিল করেছেন। এরপর তাদেরকে তাদের অহেতুক কর্মে লিপ্ত থাকতে দিন।
৯২. আর এটা এমনই এক গ্রন্থ, যা আমি নাজিল করেছি পবিত্র গ্রন্থ হিসেবে এবং এটি আগের কিতাবগুলোর সত্যায়ন করে, যা তোমাদের সামনে আছে, আর এর মাধ্যমে আপনি মক্কাভূমি ও এর আশপাশের মানুষগুলোকে সতর্ক করবেন। যারা পরকালের ওপর ইমান আনে, তারা এ কিতাবের ওপরও ইমান আনে। আর তারা তাদের নামাজেরও হেফাজত করে।
৯৩. সেই ব্যক্তির চেয়ে বড় জালেম আর কে আছে, যে আল্লাহতায়ালার ওপর মিথ্যা আরোপ করে। অথবা বলে, আমার ওপর ওহি নাজিল হয়েছে। অথচ তার প্রতি কিছুই নাজিল করা হয়নি। আর এমনই সে ব্যক্তি যে বলে, আমি অচিরেই আল্লাহর নাজিল করা গ্রন্থের মতো কিছু নাজিল করে দেখাব। যদি এসব জালেমের মৃত্যুযন্ত্রণার সময় আপনি দেখতে পেতেন! যখন মৃত্যুর ফেরেশতারা তাদের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলবে, তোমাদের প্রাণবায়ু বের করে দাও। তোমরা আল্লাহ সম্পর্কে যেসব অন্যায় কথা বলতে এবং আল্লাহর আয়াতের ব্যাপারে যে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করতে, তার জন্য আজ অত্যন্ত অবমাননাকর শাস্তি তোমাদের দেওয়া হবে।
ব্যাখ্যা : ৯১ নম্বর আয়াতটির শানেনুজুল এ রকম : মালেক ইবনে সাইফ নামক একজন ইহুদি একবার রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে ধর্মবিষয়ক আলোচনা প্রসঙ্গে বললেন, 'কোনো মানুষের ওপরই আল্লাহ কোনো কিতাব নাজিল করেননি। অন্য এক রেওয়ায়েত মতে ইহুদির উক্তিটি ছিল, 'আল্লাহর কসম, আকাশ থেকে আল্লাহতায়ালা কোনো কিতাব নাজিল করেননি।' তখন এই আয়াতটি নাজিল হয়। এই আয়াতে ইহুদিরা যে আল্লাহকে উপলব্ধি করার ক্ষেত্রে ভ্রান্ত ধারণায় নিপতিত হয়, তা বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তারা যে তাদের কিতাব তাওরাতের বাণীগুলো উদ্দেশ্যমূলকভাবে পরিবর্তন করে ফেলত এবং কোনো কোনোটা প্রকাশ করত আর কোনো কোনোটা গোপন করত, সে কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বিশেষ করে তাওরাতে নবী মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে যে ভবিষ্যদ্বাণী ছিল, তা হয়তো গোপন করত অথবা সেগুলোর অপব্যাখ্যা দিত।
৯৩ নম্বর আয়াতটির শানেনুজুল এ রকম : আবদুল্লাহ ইবনে সাআদ মুসলমান হয়েছিলেন এবং ওহিলেখক ছিলেন। একদিন রাসুল (সা.)-এর সামনে বসে তিনি ওহি লিখছিলেন। আয়াতটি ছিল এ রকম : 'আমি মানুষকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর জমাট রক্ত থেকে এবং মাংসপিণ্ড থেকে।' তখন ওহিলেখক বিস্ময়ের সঙ্গে বলে উঠলেন, 'ফাতাবারাকাল্লাহু আহসানুল খালিক্কীন।' রাসুল (সা.) বললেন, হ্যাঁ, লেখো, সামনের দিকে এটাই আছে। এই ঘটনার পর থেকেই আবদুল্লাহ বিভ্রান্তির দিকে চলে গেলেন। তিনি বলতে লাগলেন, মুহাম্মদ (সা.) যদি সত্য নবী হয় তাহলে তো আমার প্রতিও ওহি আসছে। আমি যা বললাম, তিনিও তো তা-ই বললেন। এ সম্পর্কে এই আয়াতটি নাজিল হয়।
-গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.