এস. কে. লালা-ঢাকার উভয় সংকট

১৩ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ডেইলি স্টার পত্রিকার একটি সংবাদের শিরোনাম ছিল, 'মেট্রো রেল স্টপস অ্যাট এয়ার রেড সিগন্যাল (বিমানবাহিনীর নিষেধাজ্ঞায় মেট্রো রেল থেমে গেছে)। একই পত্রিকায় ১৪ সেপ্টেম্বর আরেকটি সংবাদের শিরোনাম ছিল, 'নাউ লুইস খানস জেএস মাস্টারপিসেস অ্যাট স্টেক।' যেকোনো সচেতন নাগরিকের জন্য এ সংবাদের বিষয়গুলো বিরক্তিকর এবং তাৎপর্যহীন।


পুরো বিষয়টি বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে তেজগাঁও থেকে উড্ডয়ন প্রশ্নে উঠে এসেছে। যুদ্ধকালীন বা জরুরি কোনো অবস্থায় বিমানবাহিনীর ব্যবহৃত কোনো ঘাঁটিতে তাদের সর্বোচ্চ তৎপরতা চালানোর সুবিধা নিশ্চিত করার যে গুরুত্ব, সে ব্যাপারে কারো কোনো প্রশ্ন নেই। কিন্তু তাদের অপারেশন সুবিধা পুরোপুরি অন্যত্র সরিয়ে নিলে কেমন হয়? কুমিল্লায় একটি ছোট বিমান ঘাঁটি রয়েছে, যা সম্পূর্ণ অব্যবহৃত পড়ে আছে। বিমানবাহিনীর তৎপরতার জন্য সেখানে স্থানান্তর করা হয় না কেন? এই দুটি স্থানের মধ্যে আকাশপথে মাত্র ১৫-২০ মিনিটের পথ। পত্রিকার রিপোর্টে বিমানবাহিনী প্রধানের হাদিসের বরাত উদ্ধৃত করা হয়েছে। হাদিসের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, জনগণের কল্যাণে প্রয়োজনে মসজিদও স্থানান্তর করা যেতে পারে। একই কারণে মেট্রো রেলকে ব্যাহত না করে এবং জাতীয় সংসদ এলাকাকে নষ্ট না করে বিমানবাহিনীর তৎপরতার জন্য অন্য স্থানে স্থানান্তর করাটা আরো যুক্তিসংগত। একটি সার্বভৌম জাতি হিসেবে বাইরের কোনো দেশের চাপের কাছে নত না হয়ে আমাদের জাতীয় ইস্যুতে নিজেদের সিদ্ধান্ত নেওয়াটাই জরুরি। কিন্তু একই সঙ্গে আমাদের অতি সতর্ক থাকা দরকার, আমরা যেন গুরুত্বহীন কারণে কোনো প্রকৃত বন্ধুর প্রতি শত্রুভাবাপন্ন না হই। তেমনটি হলে তা বিশ্বব্যাপী নজরে পড়বে এবং আমাদের জন্য একটি নির্বাসনের অবস্থা তৈরি হতে পারে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। একটি বিমান ঘাঁটি বা বিমান ওঠানামার স্থান হলো সবচেয়ে লক্ষ্যপূর্ণ এলাকা, যেখানে শত্রুপক্ষ বারবার আঘাত হানতে চেষ্টা করে এবং ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত আঘাত করতে থাকে।
ফলে এমন একটি ঘাঁটি এমন জায়গায় হওয়া উচিত, যেখানে জনসংখ্যা তুলনামূলক কম। বলার অবকাশ রাখে না যে সরকারের শুধু এই একটি বিবেচনায়ই বিমানবাহিনীর তেজগাঁও ঘাঁটি বন্ধ করা উচিত। সর্বোপরি তেজগাঁও যদি বিমানবন্দর হিসেবে রাখা হয় এবং সরকারের আইন অনুসারে বিমান চলাচল করানো হয়, তাহলে এ শহরের নির্মাণ ১৫০ ফুট উচ্চতার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে। এর মানে হলো, এখনই যে উঁচু ভবনগুলো গড়ে উঠেছে, সেগুলো ভেঙে ফেলতে হবে এবং ভবিষ্যতে ১৫ তলা ভবন বা তার কম উঁচু ভবন নির্মাণ করতে হবে। ঢাকা হয়ে পড়বে একটি বামুন শহর। আমাদের দেশ একটি ছোট দেশ। কিন্তু অসম্ভব ঘনবসতিপূর্ণ। আমাদের এ স্বল্প জায়গায় টিকে থাকার একমাত্র পথ হলো উঁচু ভবন নির্মাণ করা। সেটা সম্ভব শুধু তেজগাঁও বিমানবন্দর বর্তমান অবস্থান থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হলে। অধিকন্তু জরুরি প্রয়োজনে হেলিকপ্টার ব্যবহারই সহজ। সেটা তেজগাঁও থেকে করা যেতে পারে। জরুরি ক্ষেত্রে স্থির পাখার কোনো উড়োজাহাজ ব্যবহার করতে চাইলে সে জন্য শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সঙ্গে এয়ার স্ট্রিপ রয়েছে। সেটা ব্যবহার করা যেতে পারে।
যুদ্ধকালীন কোনো অপারেশনের কথা বিবেচনা করলে তা সুবিধামতো কোনো জায়গায় স্থানান্তর করা উচিত। এটাই যুক্তিসংগত এবং দেশের সব মানুষের জন্য ইতিবাচক। আমি আশা করি, আমাদের জাতীয় স্বার্থগুলো সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিতে দেখা হবে। সঠিক পথে ঝুঁকিমুক্ত রাজধানীসহ দেশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাবে।

লেখক : ব্যবস্থাপনা পরিচালক, কনকর্ড গ্রুপ
লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত

No comments

Powered by Blogger.