সুপারিশ বাস্তবায়নেই মনোযোগী হতে হবে-পিলখানা হত্যাকাণ্ডের দুই বছর

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের দুই বছর পূর্ণ হলো আজ। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে সে সময়ের বিডিআর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের নামে বিডিআর সদস্যরা যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিলেন, তা ছিল নৃশংস ও লোমহর্ষক। হতাহতের খবর জানতে দেশবাসীকে দুই দিন অপেক্ষা করতে হয়েছিল।


সেই নিষ্ঠুর ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন। নির্যাতনের শিকার হয়েছেন অনেক সেনা কর্মকর্তার পরিবারের সদস্যরা। হত্যা ও নির্যাতনের শিকার এই পরিবারগুলোর প্রতি জানাচ্ছি আমাদের গভীর সমবেদনা।
পিলখানার এই ঘটনাসেদিন পুরো দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। সরকার ও দেশের সব মহলের ধৈর্য ও সহনশীলতায় সে পরিস্থিতি সামলে ওঠা গেছে। এই ঘটনা দেশের ইতিহাসে যে ক্ষতের সৃষ্টি করেছে তা কোনো দিনই মুছে যাওয়ার নয়। অপরাধের সুষ্ঠু বিচার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মধ্যে যেমন কিছুটা স্বস্তি এনে দিতে পারে, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধেও ভূমিকা পালন করতে পারে। ঘটনার দুই বছর পর এটাই এখন আমাদের সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা।
এ ঘটনার বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করার বিষয়টিও ছিল খুবই জটিল। শেষ পর্যন্ত দুটি পর্যায়ে বিচারকাজ চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে—বিডিআর আইনে বিদ্রোহের বিচার এবং প্রচলিত আইনে হত্যা ও নির্যাতনের বিচার। ঢাকার পিলখানায় যে ঘটনার সূচনা হয়েছিল তা ছড়িয়ে পড়েছিল ৫৮টি ইউনিটে। বিদ্রোহের ঘটনার বিচারকাজ এখনো চলছে। এরই মধ্যে ২৪টি ইউনিটের বিচারকাজ শেষ হয়েছে। অন্যদিকে, দীর্ঘ তদন্ত শেষে হত্যা ও অস্ত্র-বিস্ফোরক আইনে পিলখানার ঘটনার অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ৮২৪ জন। দেশের ইতিহাসে কোনো একক মামলায় এতজন আসামি এবং এ ধরনের বিচারের ঘটনা এই প্রথম। এ জন্য বিশেষ আদালতও বানানো হয়েছে। যে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে তাতে কিছুটা অসংগতির অভিযোগ উঠেছে। মামলাটির গুরুত্ব বিবেচনা করে ন্যায়বিচারের স্বার্থে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে।
পিলখানার ঘটনার পর এরই মধ্যে বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) নাম পরিবর্তন করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) রাখা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির আইনের সংশোধন করা হয়েছে। বিদ্রোহের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করা হয়েছে। এসব পরিবর্তনের বাইরে অন্য আরও অনেক বিষয় রয়েছে, যেগুলোতে নজর দেওয়া জরুরি বলে মনে করি। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আলাদাভাবে দুটি তদন্ত কমিটি করেছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল বিদ্রোহের কারণ খুঁজে বের করা এবং ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা এড়ানো যায়, তার উপায় বের করা। এই তদন্ত কমিটি দুটির অধিকাংশ সুপারিশ এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। আমরা মনে করি, কমিটির সুপারিশগুলো বিবেচনায় নিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এর বাস্তবায়নেই সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে।
পিলখানার এই ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক তর্ক-বিতর্কেরও শেষ নেই। বিদ্রোহের বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হতে আর বেশি সময় লাগার কথা নয়। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের ঘটনার বিচারকাজ সুষ্ঠুভাবে শেষ করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। পিলখানার ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে থাকা অবস্থায় ৬৫ জন বিডিআর সদস্যের মৃত্যুর বিষয়টিকে স্বাভাবিক ধরে নেওয়া যাচ্ছে না। সে ব্যাপারে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। আমার চাই, এই হত্যাযজ্ঞের বিচারপ্রক্রিয়া এমনভাবে সম্পন্ন হোক, যাতে ভবিষ্যতে এ নিয়ে বিতর্কের সুযোগ না থাকে। বিচারপ্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার মাধ্যমেই তা সম্ভব।

No comments

Powered by Blogger.